🌹🌻 আজ অভিরাম ঠাকুরের তিরোভাব তিথি🌹🌻


👉👉হুগলি জেলার খানাকুল কৃষ্ণনগরে  দ্বাদশ গোপালের অন্যতম অবতার শ্রীঅভিরাম গোপাল গোস্বামী ঠাকুরের শ্রীপাট।শ্রীঅভিরাম ঠাকুর ব্রজের শ্রীদাম সখা।শ্রীগৌর অবতারের পারিষদ মধ্যে শ্রীঅভিরাম গোপাল নামে খ্যাত হয়েছেন। শ্রীদাম সখা শ্রীকৃষ্ণের এক অন্যতম প্রিয় সখা। শ্রীভগবান বহু লীলা করেছেন বহু ক্রীড়া করেছেন শ্রীদামের সাথে।শ্রীকৃষ্ণ বিরহে ম্রিয়মান হয়ে শ্রীদাম ঘোর তপস্যায় গোবর্ধনে রত ছিলেন সুদূর দ্বাপর যুগ থেকে।



এদিকে শ্রীগৌরসুন্দরের আবির্ভাবের পর একে একে সকল পার্ষদগণ এসে নবদ্বীপে মিলিত হলেন।কিন্তু গৌরসুন্দরের মন ভরছে না। আমার প্রিয়সখা শ্রীদাম কোথায়? শ্রীদামের অভাবে মহাপ্রভু বড় চঞ্চল।

নিত্যানন্দ প্রভু মহাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন "ঠাকুর তুমি কার অভাবে এত উদ্বিগ্ন?"।তখন প্রানের ভাই নিতাইকে সকল কথা খুলে বললেন।


নিত্যানন্দ প্রভু চললেন শ্রীবৃন্দাবনে গোবর্ধনে যেখানে শ্রীদাম শ্রীকৃষ্ণ বিরহে ম্রিয়মান হয়ে আছেন। নিতাই শ্রীদামের সাথে মিলিত হয়ে শ্রীগৌরসুন্দরের আর্ত্তির কথা জানালেন।শ্রীদাম বললেন "আমি তো মাতৃগর্ভে জন্ম নিতে পারব না তাহলে এ দেহে কি করে গৌরলীলার সহায়ক হব?" নিত্যানন্দ প্রভু বোঝালেন একবার গৌরঙের  কাছে তো চলো তারপর তিনি কি ব্যবস্থা করেন দেখো!



শ্রীদামসখা নিত্যানন্দ প্রভু সমভিব্যাহারে নবদ্বীপে গৌরসুন্দরের কাছে এলেন।শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু তখন তাঁর প্রিয়সখাকে পেয়ে তাকে গৌরলীলার উপযোগী রূপ দিয়ে শ্রীঅভিরাম নাম দিলেন।তাই মাতৃগর্ভে জন্ম না নিয়েও শ্রীদাম গৌরপার্ষদগণের মধ্যে স্থান পেলেন। 


অভিরাম ঠাকুরের বহু অলৌকিক লীলার কথা শোনা যায়।তার অসীম ক্ষমতা ছিল।শ্রীমন্মহাপ্রভুর সন্ন্যাসলীলার পর তার সাথে যখন তিনি বৃন্দাবনে যান তখন তিনি নিজেকে চতুর্ব্যূহরূপে প্রকাশ করলেন। একব্যূহ রামদাস মোহন্তকে প্রভুর সঙ্গে পাঠালেন।একব্যূহ কন্যারূপ সৃষ্টি করে বাক্সকরে যমুনায় ভাসালেন।


সেই কন্যাকে পরে যবন কাজী পেয়ে পালন করলেন।তার নাম হল মালিনী। যথাসময়ে অভিরাম ঠাকুরের সাথে তার মিলন হল। বিল্লোক গ্রামে ষোলসাঙ্গের একটি কাঠের গুঁড়ি নিয়ে তা দ্বারা বংশীর ভঙ্গী করে ঐ কাঠটি কৃষ্ণনগরে এনে পুঁতে দিয়েছিলেন।সেই কাঠটি একটি বকুলবৃক্ষে পরিণত হল। গাছটিতে ফল হয় না।কিন্তু প্রচুর ফুল বারমাস ফুটে থাকে। 


অমৃতানন্দ নামক এক ব্রহ্মচারী সেই গ্রামে এসে অপ্রাকৃত বকুল বৃক্ষটিকে ভস্মীভূত করলেন।ঠাকুর অভিরাম শুনে সেখানে এসে বৃক্ষটিকে পুনুরুজ্জীবিত করলেন।পরে সে ঠাকুরের শিষ্য হয়।


মালিনী যবনগৃহে ছিলেন।যবন কন্যাকে শ্রীঅভিরাম গ্রহন করেছেন বলে গ্রামবাসী ব্রাহ্মনগণ তাঁকে নিন্দা করতে লাগলেন।

এই সময় স্বপ্নে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ির পূর্ব দিকে কুণ্ড খোদাইকালে শ্রীগোপীনাথ শ্রীবিগ্রহ পাওয়া গেল।যা এখানে পূজিত। এই শ্রীবিগ্রহ বড়ই অদ্ভুত এরকম বিগ্রহ সচরাচর দেখা যায় না।


ভগবানের গোপিনীগণের বস্ত্রহরনলীলা এই বিগ্রহে প্রকটিত রাধারানী নেই।কদম্ববৃক্ষের তলায় শ্রীভগবান গোপীনাথ বংশীবাদনরত।দুই পাশে দুজন করে গোপী।নীচে যমুনা বহমান ও গাভিগণ বিচরনরত।

 

 শ্রীগোপীনাথের প্রকটোৎসবকালে শ্রীমন্মহাপ্রভু কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন।মহাপ্রভুর আদেশে শ্রীমালিনীদেবী রন্ধনকার্য করেন।মালিনীদেবীরন্ধিত গোপীনাথের ভোগ গ্রহণ কালে মহাপ্রভু সকলকে

বললেন "মালিনী সামান্য নারী নহেন, অভিরামের শক্তিরূপিণী।তাঁকে অবঞ্জা করলে অপরাধ হবে।"সকলে ভোজনে বসলেন।মালিনীদেবী পরিবেশন করতে গিয়ে সুবর্ন থলিতে অন্ন নিয়ে এলেন।এমন সময় পবন এসে মস্তকের বস্ত্র উড়িয়ে দিলে মালিনীকে লজ্জায় ফেলল।তখন ঠাকুরের আদেশে মালিনী চতুর্ভূজ হয়ে বস্ত্র সামলালেন।


 অভিরাম মনে করেছিলেন যে, গ্রামবাসী নিন্দুক ব্রাহ্মণগণ এই মহোৎসবে এসে ভোজন করলে মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্যে তাঁদের অপরাধ ক্ষান্ত হবে এবং তাঁদের চিত্তশুদ্ধি হবে কিন্তু তারা কেউই সেই উৎসবে না আসায় শ্রীঅভিরাম এক অপ্রাকৃত মার্জ্জার সৃষ্টি করে তাঁর দ্বারা সকলের গৃহে অলক্ষ্যে মহাপ্রসাদ তাঁদের অনশনের সাথে মিশিয়ে দিলেন।তা ভোজনান্তে সকলের অপরাধ দূরীবূত হল এবং তাঁরা ঠাকুরের ভিউতে পরিণত হলেন। ক্রমে সকলে সেখানে আসতে লাগল।


নিত্যানন্দ প্রভু মাঝে মাঝে এখানে আসতেন।শ্রীঅভিরাম ঠাকুরের কাছে এক চাবুক ছিল যা দিয়ে তিনি কাউকে স্পর্শ করলে তার কৃষ্ণপ্রেম উদয় হত।তা বর্তমানে নেই।এরপর কথিত আছে যে শ্রীঅভিরাম তাঁর শ্রীবিগ্রহে প্রবেশ করে লীলা সঙ্গোপন করেছেন।


এখানে গোপীনাথের পাশে শ্রীরাধিকা অনুপস্থিত শ্রীঅভিরাম ঠাকুরকেই শ্রীমতীজি সাজিয়ে রাসোৎসব পালিত হয়। শ্রীগোপীনাথের ডানদিকে শ্রীবলরাম এবং বাম দিকে শ্রীঅভিরাম দণ্ডায়মান।বলদেবের সামনে শ্রীমদনমোহন ও অভিরাম ঠাকুরের সামনে শ্রীরাধাব্রজগোপাল পূজিতে হচ্ছেন।


হরে কৃষ্ণ,

আমি সেই খানাকুলের অবিরাম ঠাকুরের শ্রীপাট এর কিছু ছবি পাঠাচ্ছি আপনারা দর্শন করুন।👇👇

Post a Comment

0 Comments