💁🏾‍♂️ #প্রশ্ন:- গলায় তুলসীমালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে পরতে হয়? এক প্যাঁচ দিয়ে পরতে নেই কেন⁉️

📚#উত্তর:- 
স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে,—

"যৎকন্ঠে তুলসী নাস্তি,তে নরা মুঢ় মানসাঃ।"
সুনো বিষ্ঠা সমং চান্নং জলং চ মদিরা সমং॥"

যে ব্যক্তি নিজের গলায় তুলসী মালা ধারন করেনা, ওই মুঢ় ব্যক্তি যদি জল স্পর্শ করে তাহলে ঐ জল মদের সমান হয়ে যায়,আর যদি অন্ন স্পর্শ করে তাহলে সেই অন্ন রাজহংসের বিষ্ঠা (মল) সম হয়ে যায়।" তাই প্রত্যেক মানুষের তুলসী মালা পরিধান করা একান্ত কর্তব্য।

পদ্মপুরানে বলা হয়েছে,—

"স্নানকালে তু যস্যাঙ্গে,দৃশ্য তে তুলসী শুভাঃ।
  সর্ব তীর্থেসু স্নানং,ভবতি তে ন ন সংশয়॥"

যখন কোন মানুষ গলায় তুলসী মালা ধারণ করে স্নান করে তখন ওই তুলসীকে স্পর্শ করে জল সর্বাঙ্গে স্নাত হয়, ঐ ব্যক্তির এই পৃথিবীর সর্ব তীর্থ স্নানের পূণ্যফল প্রাপ্তি হয়ে যায়।" শ্রীল ব্যাসদেব পদ্মপুরানে এই সত্য লিখেছেন এতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা।

এইবার তুলসী মালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে গলায় ধারণ করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা যাক!

শাস্ত্র-সম্মতভাবে গলায় তিন প্যাঁচ দিয়েই তুলসী মালা ধারণ করা কর্তব্য, কারণ স্মৃতিশাস্ত্রে তিন প্যাঁচ দিয়ে তুলসীমালা ধারণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তিন প্যাঁচ দিয়ে তুলসী মালা ধারণ করার সময় তিনটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়,—

১)প্রথম প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয় "আমি নিজেকে উদ্ধার করিব হরিনামের দ্বারা।"

২)দ্বিতীয় প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয়--"আমি আমার পরিবারকে উদ্ধার করিব হরিনামের দ্বারা।"

৩)তৃতীয় প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয়,"আমি যাহাকে দেখিব, তাহাকে বলিব হরিনাম, উদ্ধার হইবে সে হরিনামের দ্বারা।"

⏩ তুলসীমালার প্রথম প্যাঁচে নির্দেশ করে "সম্বন্ধ তত্ত্ব" অর্থাৎ "জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্য দাস"। কৃষ্ণের সঙ্গে যে আমার নিত্য সম্বন্ধ রয়েছে সেই সম্বন্ধকে স্মরণ করে গভীর প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

⏩ তুলসীমালার দ্বিতীয় প্যাঁচ নির্দেশ করে, "অভিধেয় তত্ত্ব" অর্থাৎ কৃষ্ণের সঙ্গে যে একমাত্র সম্বন্ধ রয়েছে তাকে পাওয়ার একমাত্র উপায় হল "ভক্তি"। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র তাই ভগবদ্ভক্তির পন্থাকে "অভিধেয়" বলে বর্ণনা করা হয়েছে! তাই এই তুলসীর দ্বিতীয় প্যাঁচ দিয়ে আমি যেন সেই ভক্তি লাভ করতে পারি।*_

⏩ তুলসীমালার তৃতীয় প্যাঁচ নির্দেশ করে, "প্রয়োজন তত্ত্ব"। সমস্ত জীবের একমাত্র প্রয়োজন হল "কৃষ্ণপ্রেম" লাভ করা!

        "কৃষ্ণবিষয়ক প্রেমা-পরমপুরষার্থ।
       যার আগে তৃণতুল্য চারি পুরুষার্থ॥"

আমরা ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার পুরুষার্থ লাভকে প্রয়োজন মনে করি কিন্তু "পরম পুরুষার্থ" (পঞ্চম পুরুষার্থ) ""কৃষ্ণপ্রেম"" -এর কাছে এই চার পুরুষার্থ তৃণসম অর্থহীন। কৃষ্ণপ্রেমের আনন্দ একটি অমৃতের সমুদ্রের মতো, যার তুলনায় ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের আনন্দ এক বিন্দুর মতোও নয়।

➡️ তুলসী মালার তিন প্যাঁচ "স্বত্ব, রজ ও তম" -এই তিন গুণের ভারসাম্যকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ "সৃজন, পালন ও সংহার (সৃষ্টি,স্থিতি, লয়) তত্ত্বের অধিপতি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে" নির্দেশ করে।

➡️ তুলসী মালার এই তিন প্যাঁচ পবিত্র তীর্থ "গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী "নদীর স্রোতকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ "ব্রহ্ম ("ওঁ"যোগীর কাছে), পরমাত্মা (জ্ঞানীর কাছে), ও ভগবান (ভক্তের কাছে)" এই তিন তত্ত্বকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ  "বৈধী ভক্তি, রাগানুগা ভক্তি, ও রাগাত্মিকা ভক্তি "এই তিন প্রকার ভক্তিকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ "শ্রীভগবান, ভক্তি আর ভক্ত" এই তিন তত্ত্বকে নির্দেশ করে যার মধ্যে ভেদ নেই।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ "গুরু, বৈষ্ণব আর ভগবান"-এই তিন তত্ত্বকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ "গৌর, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত এই তিন বিষ্ণুতত্ত্বকে নির্দেশ করে।

➡️ তুলসীমালার এই তিন প্যাঁচ সেব্য (প্রভু), সেবক (দাস)ও দুইজনের মধ্যে সম্বন্ধকে নির্দেশ করে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে তুলসী মালা সর্বদাই তিন প্যাঁচ দিয়ে গলায় ধারণ করা উচিত। যারা এক প্যাঁচ দিয়ে ধারণ করেন, তারা শাস্ত্রের নিয়মকে অমান্য করেন, তা দোষযুক্ত। যারা তিন প্যাঁচের বেশি প্যাঁচ দিয়ে ধারণ করেন, তা তাঁদের নিজস্ব ভাব, তাতে দোষ নেই।

হরে কৃষ্ণ!!🌿🙌🏾🙏🏾
--------------------------------------------------------------------------

Post a Comment

0 Comments