শ্রী জগন্নাথ লীলামৃত
-----------------------------------
রথের রশি স্পর্শে কি ফল হয়?
----------------------------------
রথের রশির নাম বাসুকি!
জগন্নাথদেবের রথের রশি একটি বার স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন ভক্তরা।
পুরী, ইসকন নন্দনকাননের রথ কিংবা বিশ্বব্যাপী ইসকনের রথ ---সর্বত্রই রথের রশি ছুঁয়ে দেখার জন্য মানুষের ভীড় উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়।
আসলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না।
.
এক সময় পুুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হত
কোনো কোনও ভক্ত।
কেন এই অদ্ভুত মৃৃত্যুবরণ? মানুষের বিশ্বাস শ্রীপুরুষোত্তমের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গারোহণ নিশ্চিত করা যায়।
.
শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী অসুস্থতার কারণে একবার রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবের চলন্ত চাকার তলে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন।
তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন, সনাতন, এরকম দেহ ত্যাগে যদি কৃৃষ্ণকে পাওয়া যেত তাহলে এক মূহুর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পন করতাম।
কিন্তু দেহত্যাগে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যায় না।
এরকম দেহত্যাগ হচ্ছে তমোগুণ।
তমোগুণে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যাবে না।
ভক্তি ছাড়া, ভজন ছাড়া তাঁকে পাওয়ার উপায় নেই।
.
ইন্দ্রনীলময় পুুরাণের মতে, জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেও পুনর্জন্ম হয় না।
'পুনর্জন্ম ন ভূঞতে।' শ্রীজগন্নাথের বামন অবতার রথে। সেই রথ দর্শন করার পর একটু টানতে পারলেই পুনর্জন্ম হয় না সূতসংহিতায় রয়েছে -- ' রথে তু বামনাং দৃৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদতে। অতএব ধার্মিক সনাতনী বিশ্বাস করেন যে, রথের রশি ছোঁয়ার থেকে বড় পূর্ণ আর কিছুতে হয় না।'
.
রথযাত্রা নিয়ে কপিল সংহিতায় আছে-- গুন্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।' অর্থাৎ জগন্নাথদেব বলছেন, গুন্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি আমাকে দর্শন করবে সে কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ভুুবনে যাবে।
.
রথের রশি ছুঁয়ে রথ টানা শুধু নয়, বেশীর ভাগ মানূষ রথের রশি যতটুকু পারে ছিঁড়েও নেয়।
টুকরো টুকরো রথের রশির সুতো মাদুলি করে ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে ও গলায় পরিয়ে দেয়।
বড়রাও পরেন। মানুষের বিশ্বাস এই মাদুলি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে।
অসুখ- বিসুখ হলেও তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে, অনেকেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে ওঠে।
এরকম কারও মাথায় রশির টুকরো অংশ ছুঁইয়ে দিলে কিংবা তার বালিশের নীচে রেখে ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন আসে না।
.
স্কন্দপুরাণ, বামদেব সংহিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে, জগন্নাথদেবের রথের রড়ি ধরে টানতে পারলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
রথ বা উল্টোরথে দেখা যায় ছোট-ছেলেমেয়েরা খেলনা রথ টানে,পথচলতি বয়স্ক লোকেরাও সেই রথের রশি একবার স্পর্শ করে।
আসলে মানুষের বিশ্বাসটাই বড় কথা।
0 Comments