ঝুলন যাত্রা কি?

যাত্রা বলতে কি বুঝি? যাত্রার অর্থ হল কোনো লক্ষ্যবস্তুকে বা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্ধারিত পথে অভিষ্ট স্থানে পৌঁছে যাওয়া। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তারমধ্যে বিশেষ কিছু হল রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা, ঝুলনযাত্রা ইত্যাদি।
ঝুলনযাত্রা বহুযুগ আগে থেকে ব্রজভূমি বৃন্দাবনে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধিকা তাঁদের অষ্টসখী ইন্দুরেখা, চিত্রা, চম্পকলতা, ললিতা, বিশাখা, তুঙ্গবিদ্যা, সুদেবী এবং রঙ্গদেবীর সাথে লীলা করেছিলেন ঐ দিনে। ঝুলন হল বর্ষার লীলা যার অপর নাম হিন্দোলনলীলা। ব্রজবাসীরা এই সময় কদমগাছে ঝুলা বেঁধে রাধাকৃষ্ণকে দোল খাওয়ান। একাদশী থেকে শুরু হয় এই ঝুলনযাত্রা আর শেষ  হয় পঞ্চমদিনের পূর্ণিমাতে।   
রাধা কৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা বহিরাঙ্গিকভবে অনেক তাৎপর্যমন্ডিত। এই ঝুলনযাত্রা অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয় শ্রাবণ মাসে। শ্রাবণ মাসের প্রতিপদ তিথি থেকে পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত পাঁচ-দিন এই অনুষ্ঠানটি উদযাপন করা হয়। এই কয়েকদিন রাধা কৃষ্ণের প্রতিমা বা ছবি ঝুলনায়  বসিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঝুলানো হয়। এখানে প্রতীকী হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন-পরা প্রকৃতি বা পুরুষোত্তম আর রাধা হচ্ছেন-অপরা প্রকৃতি ভক্ত স্বরূপিনী। প্রকৃত অর্থে এ  হচ্ছে ভক্ত আর ভগবানের খেলা। পূর্বপশ্চিম দিক দিয়ে ঝুলানোর কারণ হলো সূর্যের উদয় অস্ত নির্দিষ্ট করেই করা হয়, কারণ সূর্য হলো পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস। আর পৃথিবীর গতি ধারা হচ্ছে-দু’টো। আহ্নিকগতি ও বার্ষিক গতি। রাধা কৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা অনুষ্ঠানটি কবে কোনো সময়ে সর্ব প্রথম আরম্ভ করা হয়েছিল, সেটা জানা নেই,তবে শাস্ত্র ধারণা মতে, এ অনুষ্ঠানটি  খুব সম্ভবত এগারো দশকে দ্বাপর যুগে আরম্ভ হয়েছিল,  গোপালকে দোলনায় তুলে মা যশোদা ঝুলাতেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণের  সঙ্গী সাথীরা গরু চরানোর সময় জঙ্গলের বড় বড় গাছের ডাল থেকে ঝুলানো ঝুলনায় কৃষ্ণকে বসিয়ে খেলা করতেন।  আবার কখনো কৃষ্ণকে নিয়ে গোপ সখা সখিরা সুন্দর সুন্দর ফুল পুষ্পমালা দিয়ে দোলনা সাজিয়ে ঝুলনার আনন্দ উপভোগ করতেন।

শাস্ত্র মতে ‘রাধা’ হচ্ছেন কৃষ্ণের হলাদিনী শক্তি মহামায়া। রাধা হচ্ছেন কৃষ্ণ ভক্ত শিরোমনি। কৃষ্ণ শক্তিতে, কৃষ্ণপ্রেমে তিনি আরাধিতা ও বলিয়ান তাই তো তিনি রাধা। তাকে বলা হয় জীবজগতের প্রতীকী স্বত্বা, কৃষ্ণ ভক্তের আরাধ্য দেবী। শ্রীকৃষ্ণের প্রেমভক্তিতে তিনি বলিয়ান তাই রাধা রানীর কৃপা হলে অতি সহজেই কৃষ্ণ কৃপা হয়। আবার রাধা শক্তিতে কৃষ্ণ বলবানতাই তো তারা উভয় মিলে এক ও অভিন্ন।

Post a Comment

0 Comments