🌼আজ বলরাম জয়ন্তী।🌼


ভগবান বলরাম কৃষ্ণের প্রথম প্রকাশ।

গোলকে কৃষ্ণ প্রথম তার দক্ষিণ অঙ্গ থেকে বলরাম কে প্রকাশ করেছেন।

বলরাম থেকেই বৈকুণ্ঠের সব বিষ্ণুর প্রকাশ।

দ্বাপর যুগে যখন কৃষ্ণ তার লীলা বিলাস করতে পৃথিবীতে অবতরণ করেন তখন বলরামো তার বড়ো ভাই রুপে অবতরন করেন ও কৃষ্ণের সাথে লীলা বিলাস করে অন্তিমে আবার তাদের নিত্য আলয় গোলকে ফিরে যান।


 তবে বলরামকে অনন্তাবতার ও বলা হয় । যদিও অনন্ত বা শেষ নাগো বলরামেরি প্রকাশ। তবে যখন তিনি অবতরন করেন তখন অনন্ত কে মাধ্যম বানিয়ে অবতরন করেন। যেমন কৃষ্ণ বিষ্ণুকে মাধ্যম বানিয়ে অবতরন করেন।

                                      

#আর্বিভাব: বসুদেবের ঔরসে দেবকীর সপ্তম গর্ভসঞ্চার হলে যোগমায়া সে গর্ভ সঙ্কষর্ণ করে (স্থানান্তর) রোহিণী নামক বসুদেবের অপর এক স্ত্রীর গর্ভে এই সন্তান স্থাপন করেন।  ভগবান বলরাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভাবের শুধুমাত্র আটদিন পূর্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চান্দ্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এবং ঐ মাসের আটদিন পূর্বে চন্দ্রগ্রহণের সময় বলরাম আবির্ভূত হয়েছিলেন। 

কৃষ্ণ আবির্ভাবের পূর্বে বলরাম দেবকীর গর্ভে আবির্ভূত হন এবং সেখানে তিনি সাতমাস অবস্থান করেন। বলরাম কৃষ্ণ অবতরণের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করেন তারপর তাকে রোহিণীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয়। এজন্য বলরাম সঙ্কর্ষণ নামেও পরিচিত। 

যোগমায়ার ব্যবস্থাপনায় রোহিণীর গর্ভে কর্ষিত হন।বলরাম কৃষ্ণের প্রথম বিস্তার। বৃন্দাবনে কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং তাঁর প্রথম বিস্তার হচ্ছেন বলরাম। তারপর তিনি দ্বারকায় বাসুদেব,সঙ্কর্ষণ, প্রদ্রুম্ন এবং অনিরুদ্ধ রূপে বিস্তারিত করেছেন। এভাবে আমরা দেখতে পাই কৃষ্ণ লীলাতে বলরামের ভূমিকা ছিল।

পরিশেষে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (রাখী পূর্ণিমা) মাতা রোহিণীর গর্ভে জন্ম নেন এক বলশালী পুত্র সন্তান। এই পুত্রই হচ্ছেন বলরাম।


# সঙ্কর্ষণের ফলে জন্ম হয়েছিল বলে- এঁর অপর নাম সঙ্কর্ষণ । উন্নত চরিত্রের ছিলেন বলে- এঁর অপর নাম বলভদ্র ।বলরামের অস্ত্র ছিল হল বা লাঙ্গল । এর জন্য ইনি হলধর নামে পরিচিত হন । আর বয়সে কৃষ্ণের চেয়ে বড় ছিলেন বলে , এঁকে বলা হতো অচ্যুতাগ্রজ । 

   

#বৈশিষ্ট্যগত_প্রার্থক্য: কৃষ্ণের থেকে বলরামের চরিত্র ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন। শান্ত প্রকৃতির বলরাম রেগে গেলে মারাত্মক রূপ ধারণ করতেন। কৃষ্ণ যেমন মিষ্টি কথা ও মুখের হাসিতে সবার মন জয় করে নিতেন, বলরামের প্রকৃতি তা নয়। গঠনগত দিক থেকেও, দুই ভাই ভিন্ন প্রকৃতির। কৃষ্ণ যেমন কালো, কৃষ্ণবর্ণ তবে বলরাম ফর্সা। কৃষ্ণের পছন্দ হলুদ বর্ণের কাপড়, কিন্তু বলরাম সর্বদাই নীল বস্ত্র পরিধান করতেন। কৃষ্ণ শ্যামবর্ণ হলেও দাদা বলরাম কিন্তু গৌরবর্ণধারী।বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের অনুজ ভ্রাতা লক্ষণ, কিন্তু কলিকালে তিনি নিত্যানন্দ মহাপ্রভু হিসেবে শ্রীচৈতন্যদেবের হরিনাম আন্দোলনে সঙ্গী হতে আর্বিভূন হন।

ব্রজেন্দ্রনন্দন যেই, শচীসুত হৈল সেই বলরাম হইল নিতাই।


# বলরামের আবির্ভাব অত্যান্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ, কেননা বলরাম আবির্ভূত হন কৃষ্ণ অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে। বলরামের কাজই হচ্ছে কৃষ্ণকে প্রসন্নতা প্রদান করা। যা কিছু কৃষ্ণের সেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে বলরামের প্রকাশ। 

যখন কৃষ্ণের গর্ভ সমুদ্রে শয়ন করার প্রয়োজনীয়তা হয়, তখন বলরাম সর্পরূপে তাঁর শয্যায় পরিণত হন, অনন্তশায়ী। এইভাবে বলরাম কৃষ্ণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন।বৃন্দাবনে তিনি কৃষ্ণের বড় ভাই, তিনি কৃষ্ণের দেখাশোনা করতেন। বলরামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবা হচ্ছে, তিনি জীবদের কৃষ্ণের দিকে আকর্ষিত করেন। এই জন্য বলরাম হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক। বলরাম হচ্ছেন আদি গুরু, তিনি সবাইকে কৃষ্ণের দিকে আকর্ষণ করান। যেমন একজন কৃষক জমি চাষ করার পর তাঁর জমির সকল ফসল সংগ্রহ করেন, ঠিক তেমন বলরাম সমস্ত জীবের ফসল সংগ্রহ করার পর তা কৃষ্ণের কাছে পৌঁছে দেন। এজন্য বলরাম হচ্ছেন আদি গুরু এবং সকল গুরুরা তাঁর বিস্তার বলে বিবেচিত হন। সে জন্য বলরাম জয়ন্তী আমাদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।


# কংসের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এঁকে গোকুলে পাঠানো হয় । সেখানে নন্দ এঁকে কৃষ্ণের সাথে প্রতিপালন করেন ।

বলরামের রং ছিল সাদা । তিনি কৃষ্ণের সাথে বিভিন্ন লীলা করেন। মাখন চুরিও করেন। তিনি ছোট্ট বেলায় প্রলম্ভাসুর ,গর্ধবাসুর ও বিভিন্ন অসুর দের বধ করেন। কৃষ্ণের সমস্ত লীলায় তিনি কৃষ্ণ কে সহায়তা করতেন।শৈশবে কংস প্রেরিত অসুর ধেনুকা এবং দুই মুষ্টিযোদ্ধা প্রলম্ব ও মুষ্টিকাকে বধ করেন বলরাম। কৃষ্ণের মথুরা যাওয়ার সময় তিনি কৃষ্ণের সহকারী হিসেবে যান এবং কংস হত্যার সহায়তা করেন। তারপর জরাসন্ধ (কংসের শ্বশুর) মথুরা অবরোধ করলে কৃষ্ণ-বলরাম তাঁকে পরাজিত করেন।


# বলরাম ধেনুকাসুর নাম গাধার সংহার কর্তা।বৃন্দাবনের তাল বনে বিশাল বড় গাধা রুপ ধারি এই ধেনুকাসুর থাকত।ধেনুকাসুর তাল ফল সংগ্রহ করত, সে কাউকে এটা নিতে দিত না। সে এমনকি কৃষ্ণ ও তাঁর বন্ধুদের তাল ফল দেয় নি। তাই বলরাম ঐ অসুরকে বধ করলেন ও সবাই কে সুস্বাদু তার ফল ও ঐ বন সবার জন্য উন্মুক্ত করলেন।

আমরা গর্দভের মতোই, বুদ্ধিমত্তা থেকে অনেক দূরে, গাধার মতো মূর্খ।  তিনি আমাদের গাধা তুল্য ব্যক্তিত্বকে নাশ করেন। তিনি আমাদের কৃষ্ণের সেবাতে যুক্ত নয় এমন অবাঞ্ছিত বস্তু সংগ্রহ করার মানসিকতার নাশ করেন। আমরা হলাম জড় প্রকৃতির বোঝা বহন করা পশু। 

একইভাবে আমদের জীবনেও বলরাম আসুন এবং এই ধেনুকাসুরের বধ করুন, যে কৃষ্ণ সেবায় যুক্ত নয় এমন অবাঞ্ছিত বস্তু সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বলরাম আসুন এবং ঐ ধেনুকাসুরকে বধ করুন এবং আমাদের কৃষ্ণের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত করুন। বলরাম জয়ন্তীর এই দিনে ভগবান বলরামের কাছে এটাই হোক আমাদের প্রার্থনা।


# কংসের হত্যার পর সান্দীপন মুনীর কাছে বলরাম ও কৃষ্ণ বেদ, কলা, ধনু, ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর কৃষ্ণ-বলরামকে গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে চাইলে– সান্দীপন মুনি তার পুত্রকে উদ্ধার করে দিতে বলেন।উল্লেখ্য, পঞ্চজন নামক এক দৈত্য সান্দীপন মুনীর পুত্রকে হরণ করেছিলেন। কৃষ্ণ-বলরাম এই দৈত্যকে হত্যা করে গুরুপুত্রকে এনে গুরুদক্ষিণা দেন।বলরামের অস্ত্র বিশাল এক লাঙল। এ কারণে তিনি হলধারী নামেও পরিচিত। তাঁর আরেক অস্ত্রের নাম মুষল। 


#বলরাম রাজা রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করেন । রেবতীর গর্ভে তাঁর দুটি পুত্র জন্মে । এঁরা ছিলেন নিশধ ও উল্মক ।


#দুর্যোধনের_শিষ্যত্ব_গ্রহণ 

অস্ত্রবিদ্যায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। ভীম ও দুর্যোধন তার কাছে গদাচালনা শিখেছিলেন। তবে তার মধ্যে দুর্যোধন বলরামের কাছে শিষ্যত্ব বরণ করার লীলা রয়েছে সেটা শ্রবণ করুন।

দুর্যোধনের কন্যা লক্ষ্মণার স্বয়ংবর সভায় কৃষ্ণের পুত্র শাম্ব উপস্থিত হলে কৌরবরা তখন শাম্বকে বন্দী করলেন। এই সংবাদ পেয়ে বলরাম সেখানে উপস্থিত হয়ে কৌরবদের কাছে শাম্বকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এতে কৌরবরা রাজি না হলে তিনি তার হলের অগ্রভাগ দ্বারা কৌরবপুরীকে গঙ্গায় নিক্ষেপের উদ্যোগ নেন। তার হলের আকষর্ণে কৌরবপুরী আন্দোলিত হতে থাকলে কৌরবরা তখন শাম্বকে বলরামের কাছে সমপর্ণ করেন। বলরামের এই বীরত্বপূর্ণ কার্যের জন্যই দুর্যোধন ভয় পায় এবং তার কাছে গদাযুদ্ধ শেখার জন্য শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।


#যমুনাদবীর_অগ্রাহ্য -একদা শ্রীবলরাম বৃন্দাবনে গোপীগণের (এরা শ্রীকৃষ্ণের নিত্যপার্ষদ গোপীদের থেকে ভিন্ন) সাথে লীলা করছিলেন। এমন সময় তারা নিকটস্থ একটি গাছের কোটর থেকে ক্ষরণশীল মধু পান করেন এবং কিঞ্চিৎ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।অতঃপর শ্রীবলরাম যমুনা দেবীকে ডেকে তাঁর সুশীতল জলে স্নানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু যমুনাদেবী নেশাগ্রস্ত দেখে কোন সাড়া দিলেন না। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে বলরাম তাঁর হলায়ুধ দিয়ে যমুনাকে সহস্র ধারায় বিভক্ত করবেন, এমন সময় অবস্থা বেগতিক দেখে যমুনা দেবী নদী থেকে উত্থীত হয়ে শ্রীবলরামের স্তুতি করেন এবং তার সুশীতল জলে অবগাহনের অনুমতি দিলেন।

# অর্জুন কৃষ্ণ-বলরামের বোন সুভদ্রাকে অপহরণ করলে , বলরাম অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করেন । কিন্তু কৃষ্ণের অনুরোধে ইনি নিজেকে সংযত করেন । সুভদ্রা ও অর্জুনের বিবাহ দেন।


# কুরু পাণ্ডবের যুদ্ধে ইনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তীর্থভ্রমণে বের হন । তীর্থভ্রমণ শেষে ইনি যখন কুরুক্ষেত্রে আসেন তখন দ্বৈপায়ন হ্রদের কাছে ভীম- দুর্যোধনকে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখতে পান । যুদ্ধে ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের উরুভঙ্গ করলে- ইনি ক্রুদ্ধ হয়ে ভীমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হলে কৃষ্ণ তাঁকে নিবৃত করেন । 


# শেষে যদু বংশকে ধ্বংস করে কৃষ্ণের পূর্বে ইনি দ্বারকার এক বটবৃক্ষের নিচে যোগ সমাহিত অবস্থায় কাটান । এই সময় এঁর মুখ থেকে রক্তবর্ণ ও সহস্রমুখ  অনন্ত নাগ নির্গত হয়ে সমুদ্রে চলে যায় । বলদেব ও লীলা সংবরন করে তার নিত্য ধাম গোলকে ফিরে যান  । 

#বলরামের_প্রণামমন্ত্র:

নমস্তে তু হলগ্রাম, নমস্তে মুষলায়ুধনমস্তে রেবতীকান্ত, নমস্তে ভক্ত-বৎসলনমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ, নমস্তে ধরণিধরপ্রলম্বারে! নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ-পূর্বজ।

জয় শ্রীকৃষ্ণ! জয় বলদেব! 

হরিবোল! রাধে রাধে🙏

হরে কৃষ্ণ।🙏

🌼🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌼

 

Post a Comment

0 Comments