ভগবানের গল্প 

বৃন্দাবনের এক কৃষ্ণভক্ত সাধুর কাহিনীঃ

গল্পটি একবার পড়েই দেখুন মনটা ভক্তিতে ভরে উঠবেঃ

--------------------------------------------------------------------

🍂🍂 🌼🌼 🌿🌿 🌷🌷 🌿🌿 🌼🌼 🍂🍂


 বৃন্দাবনের এক কৃষ্ণ ভক্ত সাধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপর রেগে গিয়ে বলল :

তোমার নাম বাঁকা, 

তোমার কাজ বাঁকা,

তোমার ধাম বাঁকা,

তুমি নিজেও দাঁড়িয়ে থাক বাঁকা হয়ে কেন ? 


তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ওই সাধুকে কি উত্তর দিয়েছিলেন চলুন শুনি,


একবার বৃন্দাবনের এক সাধু অযোধ্যার গলিতে রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ জপ করতে লাগল। 


তখন অযোধ্যার এক রসিক সাধু বলল : আরে দাদাশ্রী,

কেন রাধাকৃষ্ণ নাম করছ,

জপ করতে হয় তো সীতারাম সীতারাম জপ কর। 

কেন এই বাঁকার নাম কর ?' 


এটা শুনে বৃন্দাবনের সাধু রেগে গেল। 

আর বলল : ভ্রাতাশ্রী মুখ সামলে কথা বলেন। 

মুখে মুখে রাম নাম করেন আর আমার ইষ্টদেবকে কেন বাঁকা বলছেন ? 


অযোধ্যার রসিক সাধু বলল : দাদাশ্রী, 

এটা তো সত্য কথাই বললাম,

সত্য কথা সব সময় কটু হয়। 

লোক সহ্য করতে পারে না।

দেখ না আপনি সত্য কথা শুনে রেগে গেলেন। 

সত্য তো  আর   লুকানো যায় না ।

অযোধ্যার রসিক সাধু আবার বাঁকা ভঙ্গী করে বলল : দাদাশ্রী,

তুমি কি প্রমাণ করতে পার যে তোমার কৃষ্ণ বাঁকা না?

উনার নাম বাঁকা, 

উনার ধাম বাঁকা,

উনার কাজ বাঁকা,

উনি নিজেও বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। 

কি সত্য বললাম তো!!!? 

আর আমার রামকে দেখ -- কত সোজা,

কত সরল,

পরম ভদ্র,

মহাপ্রভু " কি দেবো তার বর্ননা "। 


বৃন্দাবনের সাধু বললেন :  

কি বলছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম বাঁকা ?

ধাম বাঁকা ?

কাজ বাঁকা ? 


অযোধ্যার রসিক সাধু বললেন :  

হ্যাঁ ঠিক তো বললাম,

আপনি একটা কাগজ কলম নিন, 

আর  "কৃষ্ণ"  নাম লিখেন।


বৃন্দাবনের সাধু লিখলেন -- "কৃষ্ণ" 


অযোধ্যার রসিক সাধু বললেন : 

দেখুন, এই নাম সোজা না বাঁকা ? 


বৃন্দাবনের সাধু বললেন : 

" হ্যাঁ, বাঁকা তা তো ঠিক "..........। 


অযোধ্যার রসিক সাধু বললেন : 

এবার ধামের নাম লিখেন -- "বৃন্দাবন" । 

ওটাও বাঁকা। 

কি বিশ্বাস হল তো।


বৃন্দাবনের সাধু বললেন : 

হ্যাঁ মানলাম নাম ও ধাম বাঁকা। 

কিন্তু আপনি যে বললেন কাজ বাঁকা ও নিজে বাঁকা ,

এটা আপনি কি বললেন ? 


অযোধ্যার রসিক সাধু হেঁসে হেঁসে বললেন : 

আরে মিত্র,, 

এটাও বলতে হবে কী বাঁকা কাজ করে ? 

মাখন চুরি,

গোপীদের বস্ত্র চুরি করা,

মন চুরি করে লুকিয়ে যাওয়া,

এসব কী সরল লোকের সোজা কাজ ? 

আজ পর্যন্ত কেউ কোনদিন  কৃষ্ণকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখেছে ?

আপনি আমাকে বলুন ? 


এমন বিদ্রুপ কথা শুনে বৃন্দাবনের সাধুর ভগবান কৃষ্ণের উপর রাগ হল।


তিনি সোজা বৃন্দাবনে গিয়ে দুঃখ করে  বাঁকে বিহারীর বিগ্রহের সামনে সেই লড়াই করার কথা বলতে লাগলেন।


অতঃপর

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার ভক্তের কথা শুনতে লাগলেন,

আর মুচকি মুচকি হাঁসতে লাগলেন। 


অনেক রেগে অভিমান করে ভগবানকে বললেন :

খুব বোকা বানালে। 

আমি চললাম অযোধ্যায়,,,,,

 সহজ, সরল ভদ্র প্রেমনিধি প্রভু রামের শরণে।

 থাক তুমি বাঁকা বৃন্দাবনে ।


বৃন্দাবনের সাধু আরও বলল : 

তোমার নাম বাঁকা,

তোমার ধাম বাঁকা,

তোমার কাজ বাঁকা 

আবার নিজেও তুমি বাঁকা হয়ে দাঁড়াও,

তোমাকে কেউ কোনদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেখল না'।


এবার স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক সেবকের রুপ ধরে কুয়া থেকে জল তুলতে লাগলেন।

তাকে বুঝানোর জন্য হঠাৎ বালতিটা জলে ফেলে দিলেন।


শ্রীকৃষ্ণ তার রাগান্বিত ভক্তকে হাসি মুখে বললেন :  প্রভু , একটা লম্বা দন্ড আনুন পাত্রটি উঠাতে হবে।


 বৃন্দাবনের সাধুটি বাঁশের চিকন দন্ড আনলে শ্রীকৃষ্ণ ওটা দিয়ে পাত্রটি তোলার অভিনয় করতে লাগলেন,,,,,


তা দেখে বৃন্দাবনের সাধু বলল : 

প্রভু আপনার বুদ্ধি তেমন নেই। 

সোজা দন্ড দিয়ে পাত্র কি করে তোলা যাবে ? 

ওটা একটু বাঁকা করলে এত পরিশ্রম করতে হত না। একটু বাঁকা করলে পাত্র তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে ।


তখন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাহার আসল রুপ ধারণ করে মৃদু হাঁসতে লাগলেন ।

আর বললেন :  

একটু ভেবে দেখ,

সোঁজা দন্ড দিয়ে সামান্য ছোট কুয়া থেকে ছোট বালতি তোলা যায় না। 

তাহলে আমি সোঁজা থাকলে তোমাদের এই বিশাল ভবসাগর থেকে কি করে টেনে তুলব  ??

তাছাড়া আজকাল লোক এত গভীর পাপে ডুবে থাকে যে , ওদের পাপের সাগর থেকে তুলতে আমার মত বাঁকাই একমাত্র অবলম্বন। তাই আমি কৃষ্ণ রুপে বাঁকা হয়েই দাঁড়িয়ে থাকি'। 


তখন সাধু তার ভুল বুঝতে পারল ও সাষ্টাঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রনাম করতে লাগল। 


ততক্ষণে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপাসিন্ধু তার মূল স্বরুপ হরি বিষ্ণু মন্দিরের ভিতরে অন্তর্ধান করলেন।।


হরে কৃষ্ণ।।

 🌿🌼 🌼🌿

Post a Comment

0 Comments