🐽জীবন নৌকা চালানো শিখুন🐽


🐽ঈশপোনিষদে আছে কলিযুগে মানুষের আয়ু একশ বছর । অথচ অধিকাংশ মানুষই শত আয়ু পূৰ্ণ হতে না হতেই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে।

প্রাচীন বেদশাস্ত্ৰেও মানুষ শত আয়ু বলে কীৰ্তিত হয়েছে  অথচ শতবৰ্ষ আয়ু লোকে পাচ্ছে না। বেশীর ভাগ মানুষ শতকের পরিবর্তে ষাটেই

মারা যাচ্ছে।


🐽মহাভারতে এর কারন ধৃতরাষ্ট্রকে তার ছোট ভাই যিনি ছিলেন কৃষ্ণভক্ত বিদুর সুন্দর ভাবে ব্যাখা করেছেন, কেন মানুষের আয়ু কমে যায় ?


১) অতিমান = বদ্বজীব মনে করে আমি অনেক বড়, হামবড়া ভাব।

২) অতিবাদ = নিষ্ঠুর বাক্য প্ৰয়োগ, সবাইকে কটু বাক্য বলা।

৩) অতি অপরাধ = নিজের স্বার্থে গুরুতর পাপকৰ্ম  করতেও প্রস্তুত।

৪) ক্ৰোধ = নিজেকে বড় দেখাবার জন্য সবসময় রাগ করা।

৫) আত্মম্ভরিতা = নিজের স্বাৰ্থ ব্যতিত কোন কাজ করে না।

৬) মিত্ৰদ্ৰোহ = নিজের স্বার্থে  অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে শত্ৰুতা করা।


🐽কলির এই ছয়টি তীক্ষ বাণ স্বরুপ হয়ে মানুষের আয়ু ক্ষয় করে ও প্রাণহরণ করে। প্রতিটি মিথ্যা কথা বলার সঙ্গেসঙ্গে যে কারোর আয়ু কমে যায়। যেমন কোন হত্যাকারী রাতে নেশা না করলে সে ঘুমাতে পারে না এটা তার দ্রুত মৃত্যুর কারন।


 🐽দীৰ্ঘ আয়ু নিয়ে বাঁচতে হলে কি করতে হবে ? 


🐽এক সাধু এর উত্তরে ঠাট্টাচ্ছলে বলেছেন, ''এই জগতে একই শরীরে দীৰ্ঘ আয়ু নিয়ে বাঁচতে হলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বট বৃক্ষ হয়ে জন্ম নিতে হবে । তাতে কমপক্ষে এক হাজার বছর পর্যন্ত আয়ু নিয়ে থাকার আশা করা যাবে''।


🐽কিন্তু কলিযুগের মানুষকে তো মাত্ৰ একশ বছর পর্যন্ত আয়ুষ্কালের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে নানাবিধ অনাচার - দোষে আয়ু কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । 


🐽ভাগবতে উল্লেখ আছে, যতই দীৰ্ঘ আয়ু নিয়ে ব্ৰহ্মান্ডে বাস করুন না কেন আপনি মহাকালের কাছে তা অত্যন্ত তুচ্ছ ও ক্ষণিক । এমনকি ব্ৰহ্মালোকের ব্ৰহ্মার আয়ুও । প্ৰকৃত চিরায়ু নিত্য জীবন হচ্ছে বৈকুণ্ঠজগতে।


🐽আর সেখানে যেতে হলে কৃষ্ণভাবনাময় জীবন যাপন করতে হবে।


🐽মানবজাতির পিতা মহৰ্ষি মনু আমাদের দেহ সম্পৰ্কে সুন্দর তত্ত্ব দান করেছেন । তিনি বলেছেন এই দেহ হচ্ছে,

১)  অস্থিস্থুনং =  কতকগুলো অস্থি হাড়ের স্তম্ভে বাধা।

২)  স্নায়ুযুতং = জড়-সুখদুঃখ অনুভবের স্নায়ুরুপ তার দিয়ে বাধা।

৩) মাংস-শোণিতলেপনম্‌ = মাংস ও রক্ত দিয়ে প্ৰলেপ দেওয়া বস্তু।

৪)  চর্মাবনদ্ধং = চামড়া দিয়ে ঢাকা মাংসপেশির শরীর।

৫) দুৰ্গন্ধিপূৰ্ণং মূত্ৰপুরীষয়োঃ = মূত্ৰ ও বিষ্ঠা দিয়ে পূৰ্ণ দুৰ্গন্ধময় বস্তু। 

৬) জরাশোেক সমাবিষ্টং = জরা-শোকে আক্ৰান্ত এক দেহযন্ত্র।

৭) রোগােয়তনম্‌ = নানারকমের রোগের নিলয় এই দেহ। 

৮) আতুরম্‌ = ক্ষুধা পিপাসায় কাতর - ধৰ্ম বিশিষ্ট মাংসপিণ্ড। 

৯) রজস্বলম্‌ = কাম, ক্রোধ ও লোভ  দ্বারা গুনযুক্ত ।

১০) অনিত্যম্‌ = বেশীদিনের জন্য টেকসই নয়। 

১১) ভূতাবাসম্‌ = মাটি, জল, আগুন, বায়ু ও আকাশ দিয়ে তৈরী।


🐽একদিন এই পঁচা শরীর অবশ্যই ধ্বংস হবে এবং এর আয়ু এক বছর, একশ বছর নাকি এক হাজার বছর তাতে কি আসে যায়।


🐽সবার জড় দেহের প্রতি মায়া ত্যাগ করা উচিত । ভোগবাসনা পরিত্যাগ করা উচিত । যাতে পুনরায় এই রকম জড় দেহরুপ কারাগারে প্রবেশ করতে না হয় , সেরকম যত্ন করা সকলের কৰ্তব্য।


🐽শ্ৰীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে , ৮৪ লক্ষ জন্ম গাছপালা , কীটপতঙ্গ , পশুপাখি জন্মের পর জীবাত্মা মনুষ্যদেহ লাভ করে । 

এই শ্ৰেষ্ঠ ! মনুষ্যদেহ অত্যন্ত ক্ষীন হলেও আমরা বৰ্তমানে তা লাভ করেছি । এই দেহ ধারণ করে জীব শ্ৰীকৃষ্ণভক্তির অনুকুল জীবন যাপন করার সুদুৰ্লভ সুযোগ লাভ করতে পারে । 


🐽জন্ম মৃত্যু - জরা - ব্যাধির দুঃখময় ভবসংসার সমুদ্ৰ উত্তরণ করবার পক্ষে মনুষ্য দেহ একটি উপযুক্ত নৌকা স্বরুপ। এই নৌকা দিয়েই আমাদের এই ভবসাগর পাড়ি দিতে হবে। তাই এই নৌকা সুন্দরভাবে চালোনা শিখতে হবে। 


🐽তাই আসুন এই জীবনে কৃষ্ণভক্ত হয়ে সদগুরুর আশ্ৰয়ে থেকে , ভক্তিবিঘ্ন- সমূহ আমিষাহার, নেশা ভাং ,জুয়া - অবৈধ সঙ্গাদি বর্জন করে শ্ৰীকৃষ্ণনাম , শ্ৰীকৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত হই।


🐽তা হলেই জড়-পঁচা দেহ ত্যাগ করে নিত্য জীবনে অধিষ্ঠিত হয়ে সচ্চিদানন্দময় দেহে সচিদানন্দময় ধামে শ্ৰীকৃষ্ণের সেবায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করব।।🙏🙏

Post a Comment

0 Comments