★☞প্রশ্নঃ- পিতামাতা দেহত্যাগ করলে আমরা মুখাগ্নি করি কেন? বা দেহ আগুনে পোড়াই কেন? তাৎপর্যসহ ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি কী?


★☞উত্তরঃ- অনেকের ভ্রান্ত ধারণা যে, সনাতন ধর্মে মৃতের মুখো অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাই অনেকে একে 'মুখাগ্নি' বলে থাকেন। কিন্তু শব্দটি 'মুখাগ্নি' নয়, 'মুখ্যাগ্নি'। 


প্রকৃতপক্ষে, অগ্নি মুখে নয়, ব্রহ্মতালুতে তথা মস্তকে দেয়া হয়। ‘সৎক্রিয়াসার পদ্ধতি গ্রন্থে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ব্রহ্মতালু দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যে পথে আত্মা বহির্গত হলে ঊর্ধ্বলোক প্রাপ্ত হয়। আত্মা ছাড়া দেহকে অপবিত্র ধরা হয়। তাই ব্রহ্মতালুতে অগ্নি স্পর্শ করে একে পবিত্র করা হয়। 


অগ্নি সংযোগ অনেকেই করতে পারেন। তবে, অগ্নিসংযোগে যিনি মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন অর্থাৎ জেষ্ঠ্য বা কনিষ্ঠ পুত্র অথবা তাদের অনুপস্থিতিতে বিকল্প কেউ, তার কার্যকে বলা হয় মুখ্যাগ্নি।


➠দেহ আগুনে পোড়ানোর কারণ: 

সনাতন ধর্মে মৃতদেহ সৎকারের তিনটি পন্থা নির্দেশিত- ভূমিতে সমাধিস্থ করা, গঙ্গা জলে ভাসিয়ে দেয়া এবং অগ্নিতে দাহ করা। ভূমিস্থ করার সময় শবদেহের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা হয়, তাতে রোগজীবাণু ছড়ায় না; 


আর গঙ্গাজল যে পরম পবিত্র এবং ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে, নাসার বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার প্রমাণ পেয়েছেন। সুতরাং এ দুটো পন্থাই বিজ্ঞানসম্মত । বাকি রইল অগ্নিসংযোগ। তমোগুণে আচ্ছন্ন অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা যারা আত্মতত্ত্ব বিষয়ে একেবারে অজ্ঞ, তারা দেহাত্মবুদ্ধিবশত শবদাহকে অমানবিক বলে মনে করে এর বিরোধিতা করতে চায়।


➠ধর্মীয় কারণ: 

সনাতন শাস্ত্র বলে, দেহের প্রতি আসক্তির ফলে দেহত্যাগের পর আত্মা কিছুদিন আশেপাশে অবস্থান করে। অগ্নিসংযোগের ফলে, পঞ্চমহাভূত (ভূমি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ) দ্বারা সৃষ্ট এ দেহ সবচেয়ে দ্রুত পঞ্চমহাভূতের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে আত্মা ঐ দেহের প্রতি আসক্তি সহজে ত্যাগ করার মাধ্যমে পারমার্থিক প্রগতি লাভ করতে পারে।


তাছাড়া, অগ্নিহোত্র যজ্ঞে যেমন বিভিন্ন দ্রব্য ভগবানের প্রীতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়, তেমনি বিধি অনুসারে শবদাহ প্রকরণের মাধ্যমে সেই দেহকে ভগবানের চরণে উৎসর্গ করা হয় এবং সেই সাথে প্রার্থনা করা হয় যেন ভগবান তার আত্মাকে আরো উন্নত দেহ প্রদান করেন। যা দ্বারা তিনি ভগবানের নিত্য সেবায় যুক্ত হতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments