বহুলাকুন্ড - বহুলা গাভীর মহিমা


পরমেষশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের রক্ষা করার জন্য এই জগতে আসেন। ভক্তরা পূর্ণরূপে এটা বিশ্বাস করেন। অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ বিশ্বাসও পালন। বৃন্দাবন ধামে একটি গাভী ছিল ভগবান কৃষ্ণের সময় সে গাভীর নাম হল বহুলা। বহুলা যখন বনে ছড়ছিল সে সময় এক সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সাধারণত সিংহ আর গাভী বন্ধু না। সিংহের খাদ্য পশুরা তখন গাভীকে আক্রমণ করতে যায় সিংহ। গাভী তাকে অনুরোধ করেন, দয়া করে আমাকে এখন খাবেন না। কারণ আমার যে, পুত্র (বাচ্চুর) রয়েছে ঘরে সে জানে না তার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, সে অভুক্ত, আমার যে প্রভু বা মালিক যার তত্ত্ববধানে আমি আছি। সেইও আশা করে রয়েছে আমি বাড়িতে ফিরব আমাকে একটু সময় দেন। আমি বাড়িতে যায়, আমার প্রভুকে আমি বলি, আর আমার সন্তানকে আমি দুগদ্ধ পান করায়। তাকে বলে আসি তার সাথে আমার আর দেখা হবে না। তারপরে আমি আপনার কাছে ফিরে আসব, তখন আপনি আমাকে ভক্ষণ করবেন। প্রথমে, সিংহতো চমকে গেছে। এরকম কথা শুনে চমকে গিয়েও সে গাভীর কথা বিশ্বাস করে। ঠিক আছে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। তুমি বিদায় পেয়েছ, তোমার সন্তানকে এবং মালিকে বলে আস।আর গাভী (বহুলা) বাড়িতে ফিরে আসে। ফিরে এসে তখন সে মালিকে (ব্রাহ্মণ) এবং সন্তানকে বুঝিয়ে বলে আমার এই এই পরিস্থিতি। গাভীর যে করুণ অবস্থা সে তার সন্তানের সাথে শেষবারে মতো দেখা করছে। তার মালিকে সেই শেষবারের মতো বলছে আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। তিন জন মিলে প্রচুর ক্রদন করে মা, সন্তান ও ব্রাহ্মণ। সন্তান বলে মা সিংহের তো খাওয়া নিয়ে কাজ তুমি থাক আমি যাচ্ছি। এই ছোট শিশুর ক্রন্দন আর আর্তনাথ ও ভাব দেখে ব্রাহ্মণের হৃদয় গলে যায়। ব্রাহ্মণ তখন বলে, মাকে ছাড়া ছেলে কি করে থাকবে, তোমরা থাক আমি যাচ্ছি। আর সিংহ আমাকে খাবে।

গাভী বলে না না আপনি থাকুন, আপনি আমার সন্তানকে দেখা শুনা করুন। এভাবে অনেক কথা হওয়া ফলে কোন সিদ্ধান্তে উপণিত না হওয়ার ফলে তিন জনেই সিংহের সামনে আসে। গাভী, বাচ্চুর ও ব্রাহ্মণ। সিংহ এই তিন জনকে দেখে খুব খুশি হয়। এক গাভীর যে সততা, সেটা দর্শন করে, সেই আশ্চর্যন্বিত হয়ে যায় এবং সে ভাবে আমার আজ খুব ভালো দিন যে আমি গাভী, বাচ্চুর ও ব্রাহ্মণকে খেতে পারি। কিন্তু কোনটা আগে খাব। আমার অনেক দিনের কোন চিন্তা নেই। যখন চিন্তা করছে কাকে আগে খাবে। সে প্রথমে ভেবেছিল বাচ্চুরকে আগে খাবে। যখন ভেবেছে, সে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র নিয়ে উপস্থিত হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সে সিংহকে বলে তুমি যদি এদেরকে ছেড়ে দাও গাভী, বাচ্চুর এবং ব্রাহ্মণ তাহলে তোমার যশ, মহিমা চিরন্তর হয়ে থাকবে।

সবাই তোমার গুণ-মহিমা প্রকাশ করবে। ভগবানের শ্রীমুখ থেকে এটা শ্রবণ করে তখন সিংহ খুব খুশি হলেন একদিন না হয়, নাই খেলাম। একদিন না খাওয়ার ফলে যদি আমার যশ চিরন্তর হয়ে থাকবে অসুবিধা কোথায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ঠিক আছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সিংহ প্রণাম করে ঐ স্থান থেকে চলে যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই বহুলা বা গাভীর সততা দেখে ভগবান এত সন্তুষ্ট হয়েছে বৃন্দাবনে যে স্থানে যে বনের এই লীলাটা হয়েছিল। ভগবান বললেন তোমার সততাতে সন্তুষ্ট হয়ে এই বনের নাম রাখলাম ‘বহুলা বন’। আরো বললেন তুমি পরের জন্মে আমার প্রিয়শ্রী ও সখী হয়ে জন্মাবে। হরেকৃষ্ণ!

Post a Comment

0 Comments