কিছু বিষয়ে যত্ন না করলে ভক্তি জীবন অপূর্ণ থেকে যায়




কিছু বিষয়ে যত্ন না করলে ভক্তি জীবন অপূর্ণ থেকে যায়

(সম্বন্ধ,অভিধেয়, প্রয়োজন তত্ব কিভাবে ভক্তিকে প্রভাবিত করে):
        - ঠাকুর মহাশয় বললেন
  "হরি হরি ,আর কি এমন দশা হবো,
এ ভব সংসার ত্যাজী,পরম আনন্দে মজি,আর কবে ব্রজপুরে যাবো"  - কিন্তু ইহার নিগূঢ় ভাব বোঝা খুবই দুঃসাধ্য!বিশেষ করে আমাদের মতো গৃহমেধী বদ্ধ জীবের।
আধ্যাত্মিক সাধনায় মূল পরম তত্ব হলো শ্রীকৃষ্ণ -"মত্ত পরতরং ন অন্যৎ"- গীতা -আমি ছাড়া আর কোনো শ্রেষ্ঠ পরম তত্ব নাই।তাই কৃষ্ণ ভজনেই সাধক জীবনের পূর্ণতা।কৃষ্ণ রূপ রস ঐশ্বর্য মাধুর্যের খনি।
            ভক্ত জীবন খুবই দুর্লভ।মনুষ্য দেহধারণের এটাই সার্থকতা।একবার বিশুদ্ধ ভজন রসে মন ডুবলে আর জীবনে পার্থিব কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না।
গৌড়ীয় গগনে মূল ভজন হচ্ছে ব্রজের রাগানুগা ভাব প্রাপ্তি অর্থাৎ মাধুর্যময় কৃষ্ণ ভক্তি।তাই রূপ সনাতনের ভজন আদর্শের মুখ্য তত্ব "সম্বন্ধ-অভিধেয়-প্রয়োজন"- ইহাই ভজনের মূল ভিত্তি যা সঠিক ভাবে সকলের জানা দরকার,উপলব্ধি করা দরকার।
                 ব্রজের রাগানুগা ভজন এক আশ্চর্য মহিমায় বিরাজমান।এখানে সাধনার প্রাপ্তি সর্বোচ্চ আনন্দে পরিপূর্ণ যার কাছে মুক্তি,মোক্ষ বা বৈকুণ্ঠগতি 'এহো বাহ্য ,আগে কহ আর ' - মহাপ্রভুর এই সুদৃঢ় বিচার মুখ্য বিচার্য হয়ে পরে।
         যার যতটুকু ভজন সে ততটুকুই ভগবৎ আনন্দ উপলব্ধি করবে।ভজনে যার ভাব যতদূর সে ততদূর পৌঁছাবে।সর্বোচ্চ ভজন ভাব হল -"কৃপায়া বিতরতং নিজদাস্যম্"
                     -শ্রীল রূপ গোস্বামী।
     কৃষ্ণদাস্য,সখ্য,বাৎসল,ব্রজ মাধুর্য ও সর্বশেষ রাধারাণীর দাসী হয়ে যুগল সেবা প্রাপ্তি ও তার ফলস্বরূপ যুগল মাধুর্য আস্বাদন- ইহাই সাধন ক্রম।
      হরিভজনে মুক্তি বা মোক্ষ তা অনায়াসেই সিদ্ধ হয়ে যায় এবং তা গৌর ভক্তরা স্বীকার করেনা,এমনকি বৈকুন্ঠের বিলাস ঐশ্বর্য্যও ব্রজ অনুরাগী ভক্তকে মুগ্ধ করতে পারেনা।কারণ নিত্য গোলোকে রাধাকৃষ্ণ যুগল সেবা প্রাপ্তি ও তার মাধ্যমে যুগল মাধুর্য আস্বাদনই গৌর ভক্তের জীবনের সার।
    তাই রূপ রঘুনাথ নরোত্তম আদি গোস্বামীদের ভজনে সদা মঞ্জরী স্বরূপে রাধাদাসী ভাবই প্রকাশ পেয়েছে।এই উচ্চ ভাব আজ প্রচারের অভাবে জগতবাসী উপলব্ধি করতে পারছে না।
    তাই,এটা সত্যিই জগতমাঝে জানানোর দরকার আছে।হয়তো সবাই এই উচ্চ ভাব গ্রহণের যোগ্যতা নাই,কিন্তু মনে রাখা দরকার ভজন কৃপাসাধ্য বিষয় -তাই যার হৃদয়ে ভজনের লালসা জাগবে রাধারাণীর কৃপা ঠিকই তার উপর বর্ষিবে -এতে কোনো সন্দেহ নাই।তাই গোস্বামীদের ভজন তত্ব ঠিক ভাবে জানা দরকার -এতে ভক্তদের মনের সংকীর্ণতা কেটে ঐশ্বর্য্য আড়ম্বরে পূর্ণ গৌণ ভজন থেকে মন আরো উচ্চ নিসকিঞ্চন মাধুর্য ভজনে এ অনুরক্ত হবে।
     গৌড়ীয় ধারায় যে"সম্বন্ধ","অভিধেয়", "প্রয়োজন" তত্ব -তা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করা দরকার -
        আমাদের "প্রয়োজন" তত্ব হল রাধাদাসী হয়ে যুগল মাধুর্য আস্বাদন,
আর তাই "অভিধেয়" তত্ব হল-সেই স্তর প্রাপ্তির জন্য ভজন -মানস সিদ্ধদেহ গোপীভাবে ভজন যা পুরুষ দেহ স্বরূপে কদাপি সম্ভব নয় -"সবে এক সখীগণের হয় অধিকার"/"নিজ মনে সিদ্ধ দেহ করিয়া ভজন রাত্রিদিন চিন্তে রাধাকৃষ্ণ সেবন"- চৈ.চ।
আর তার জন্যই সর্বপ্রথম দরকার রাধারাণীর গণে "সম্বন্ধ" স্থাপন অর্থাৎ যিনি রাধারাণীর দাসী মঞ্জরী স্বরূপে ভজন করছেন তাঁর কৃপা ও আনুগত্যে সেই স্বরূপের সম্বন্ধ প্রাপ্তি অর্থাৎ সিদ্ধপ্রণালী ও নিজ গুরুপ্রদত্ত "মঞ্জরী স্বরূপ" প্রাপ্তি ও তার সাথে মূলসেবা,কুঞ্জ,নাম,বয়স তথা একাদশ ভাবরূপ স্বরূপ প্রাপ্ত হওয়া যা রূপ সনাতন নরোত্তম আদি সকল সাধকের সিদ্ধ ভজন স্বরূপে দেখা যায় অসংখ্য ভজন রসগ্রন্থে  -ইহাই তো সাক্ষাৎ মহাপ্রভুর মহাদান।
      মনে রাখতে হবে গুরুপ্রদত্ত এই মঞ্জরী স্বরূপ মানস ভজনযোগ্য এক চিন্ময় দেহ যার দ্বারা রাধাকৃষ্ণের যুগল সেবা সাধন হয় এবং অন্তিমে "সাধনে ভাবিবে যাহা সিদ্ধ দেহে পাবো তাহা,রাগ পথের এই সে উপায়"-প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা।
     তাই ব্রজ অনুরাগী বাবাজী বা গোস্বামীবর্গ যাদের এই উচ্চ ভজন প্রনালী, সম্বন্ধ তত্ত্ব প্রাপ্ত আছে ও  ভজননিষ্ঠা আছে তাদের কাছ থেকে এই সম্বন্ধ তত্ব স্বীকার করেই এই রাগানুগা ভজনে আমাদের প্রবৃত্ত হতে হবে।।
     তাই,এই উচ্চ ভাব কে এড়িয়ে না গিয়ে যত্ন করা প্রয়োজন।তার জন্য সেইসমস্ত উচ্চ ভজনশীল সাধুর সঙ্গ করার জন্য নির্দ্বিধায় সর্বদা ছুটে যাওয়া দরকার।মনে রাখা দরকার লক্ষ লক্ষ সাধনাতেও এই ভাব মিলে না কারন ইহা অতীব নিগূঢ় তত্ব যা উদ্ধব,নারদ,শিব,ব্রহ্মা আদি দেবতাদের কাছেও ইহা বিস্ময়ের,তাহা আজ কলিযুগ পাবন গৌর কৃপায় ভক্তগণ লাভ করার সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়েছে।
এইগুলি গুপ্ত ভজনীয় বিষয়,সর্বজনের কাছে ব্যক্ত করা উচিত নয়।কিন্তু আজ যখন গৌণ কিছু বৈষ্ণবীয় ভক্তি আচরণই কেবল মুখ্য হয়ে উঠছে,আর আসল ভক্তি  তত্ব ঢেকে যাচ্ছে সর্বত্র,তখন এটা সর্বজনে জানানো প্রয়োজন বলে মনে করছি।
ভক্ত জীবনে গোস্বামীগনের এই উচ্চ রাধাদাস্য ভাব বা বিষয় কে আমাদের যত্ন করা উচিত।ইহা সত্যিই দুর্লভ।
        সকল ভক্তের হৃদয়ে শ্রী গৌরাঙ্গের মহাদান এই রাধাদাস্য ভাব তথা ব্রজের রাগানুগা ভজনের উচ্চ ভাবনা স্থান লাভ করুক এবং গুরু কৃপায় সকল ভক্ত এই মধুর  রাগ ভজনে ডুব দিক,এই অধমের মনও সেই ভক্তিরসে মগ্ন থাকুক- এই প্রার্থনা করি।
রাধে রাধে।।
          

Post a Comment

0 Comments