আপনি কার কাছ থেকে #দীক্ষা নিবেন || সদগুরু কিভাবে চিনবেন, কোথায় পাবেন || অসদগুরু #ত্যাগ করার বিধান কি || অসদগুরু চিনার উপায় || শিষ্যের কর্তব্যগুলি কি || গুরু ছাড়া কি ভক্তি করা যায় না নিজের মনমতো|| দীক্ষা নিতে হলে কি কি নিয়ম পালন করতে হবে ||আমিষ খেয়ে কি দীক্ষা নেওয়া যায় ||
🌿 দীক্ষা কি❓
পারমার্থিক শ্রী গুরুদেব করুণাপূর্বক মায়া কবলিত জীবকে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিব্যজ্ঞান দান করেন ও বদ্ধজীব গুরুকৃষ্ণ পাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করে তাকে দীক্ষা বলে।
দিব্যাং জ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কুর্যাৎ পাপস্য সংক্ষয়ম |
তস্মাদ্দীক্ষেতি সা প্রোক্তা দেশিকৈস্তত্ত্বকোবিদৈঃ ||
অর্থাৎ "যাতে দিব্যজ্ঞান দান করে এবং পাপের সংক্ষয় করে ভগবততত্ত্ববিদগণ এজন্যই তাকে দীক্ষা বলে থাকেন। দিব্যজ্ঞান বলতে মন্ত্রে সাক্ষাৎ ভগবত স্বরূপ জ্ঞান এবং সেই ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধ জ্ঞান।
🌿 কে গুরু হতে হতে পারে ❓
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়ে গেছেন -
কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র কেনে নয় |
যে-ই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা,সে-ই গুরু হয় || (চৈ.চ. মধ্য ৮/১২৮)
অর্থাৎ, " যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু, তা তিনি ব্রাহ্মণ হোন, কিংবা সন্ন্যাসীই হোন অথবা শূদ্রই হোন,তাতে কিছু যায় আসে না। "
শ্রীপ্রেমবিবর্ত গ্রন্থেও বলা হয়েছে,
কিবা বর্ণী,কিবা শ্রমী,কিংবা বর্ণাশ্রমহীন |
কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা যেই, সেই আচার্যপ্রবীণ ||
অর্থাৎ, যে কোনো বর্ণে, যে কোনও যে কোনো আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত হোন না কেন এমনকি বর্ণ আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত না হলেও যদি কেউ কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হন, তবে তিনিই গুরু হতে পারেন।
শ্রীল রূপগোস্বামী পাদ শ্রীউপদেশামৃত গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন,
বাচবেগং মনসঃ ক্রোধবেগং
জিহ্বাবেগমুদরোপস্থবেগম|
এতান বেগান যো বিষহেত ধীরঃ
সর্বামপীমাং পৃথিবীং স শিষ্যাৎ || (উপদেশামৃত শ্লোক-১)
অর্থাৎ "বাক্যের বেগ, মনের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহবার বেগ, উদরের বেগ ও উপস্থের বেগ-- এই ছয়বেগ যে ব্যক্তির বিশেষরূপে সহ্য করতে সমর্থ হন, তিনিই এই নিখিল পৃথিবী শাসন করতে পারেন (অর্থাৎ শিষ্য করতে পারেন) তিনিই ষড়বেগজয়ী গোস্বামী জগৎগুরু। "
এখানে বাচোবেগ --কৃষ্ণসম্মন্ধছাড়া যত রকমের ইতরকথা, মনোবেগ --মনের দাস হওয়া, মন যা চায় তাই করা, ক্রোধবেগ-- কাম চরতার্থ করতে বাধার ফলে অতৃপ্তিজনিত ক্রোধ,জিহবাবেগ--সুস্বাদু দ্রব্য ভোজনে আগ্রহশীল,উদরবেগ --অতিরিক্ত ভোজন পরায়ণ, উপস্থবেগ-- যৌন সঙ্গ লালসা, এই ছয়বেগ যার বশে সর্বদা থাকতে পারে তিনিই গোস্বামী এবং জগৎগুরু হতে পারেন।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়ে নির্দেশ দিলেন---
যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ |
আমার আজ্ঞায় গুরু হঞা তার এই দেশ ||
অর্থাৎ "যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাকেই তুমি ভগবদগীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবতের প্রদত্ত শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ প্রদান কর। আমার আজ্ঞায় এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে তুমি এই দেশকে উদ্ধার কর।"
শ্রীল সনাতন গোস্বামী শ্রীল হরিদাস ঠাকুরকে বলছেন---
আপনে আচরে কেহ, না করে প্রচার |
প্রচার করেন কেহ, না করেন আচার ||
আচার,প্রচার -নামের করহ দুই কার্য |
তুমি সর্বগুরু, তুমি জগতের আর্য ||
"কিছু লোক আচরণ করছেন, কিন্তু প্রচার করছেন না, আবার কিছু লোক প্রচার করছেন কিন্তু আচরণ করছেন না। কিন্তু তুমি ভগবানের দিব্য নামের আচার ও প্রচার দুই কার্যই করছো। তাই তুমি সকলের গুরু এবং এই জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত। "
যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা গুরু তিনি অবশ্যই কৃষ্ণভক্ত এবং তিনি পরম্পরা আশ্রিত হবেন। ভগবান বলেছেন --
এবং পরম্পরা প্রাপ্তম রাজর্ষয়ো বিদুঃ | (গীতা)
অর্থাৎ পরম্পরা মাধ্যমেই ভগবৎতত্ত্বজ্ঞান প্রবাহিত হয়। ভগবৎ প্রতিনিধি গুরুদেব শ্রীমদ্ভাগবত নির্দিষ্ট কলির চতুর্বিধ কলুষিত কর্ম থেকে বিরত থাকবেন যেমন মাদকদ্রব্যের নেশা, আমিষ আহার, অবৈধ যৌনতা এবং জুয়া তাস ইত্যাদি তিনি বর্জন করে চলবেন। কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তনে তিনি ব্রতী হবেন। তিনি শাস্ত্র নির্দিষ্ট ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন ও জপ করবেন। তিনিই তার পূর্বতন আচার্যদের প্রিয়জন হবেন। তিনি কৃষ্ণসেবা বিরুদ্ধ ইন্দ্রিয়তর্পণ মূলক কোন কর্মেই জড়িত থাকেন না।
🌿 কে গুরু হতে পারেনা❓
শ্রী পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে --
ষট কর্মনিপুণো বিপ্রো মন্ত্রতন্ত্রবিশারদঃ |
অবৈষ্ণবো গুরুর্ন স্যাদ্বৈষ্ণবঃ শ্বপচো গুরু ||
" যজন, যাজন, অধ্যায়ন, অধ্যাপন, দান ও প্রতিগ্রহ --এই ছয় কর্মে নিপুণ এবং মন্ত্রতন্ত্রবিশারদ কোনও ব্রাহ্মণও গুরু হতে পারেন না, যদি না তিনি বৈষ্ণব হন। বরং চণ্ডালকূলে আবির্ভাব হয়েও বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ ব্যাক্তি গুরু হওয়ার যোগ্য। "
শ্রীবিষ্ণুস্মৃতি গ্রন্থে বলা হয়েছে -
পরিচর্যা-যশোলিপ্সুঃ শিষ্যাদ গুরুর্ন হি ||
"শিষ্যের কাছে কেবল সেবা পরিচর্যা আর যশ লাভের বাসনা যিনি করেন তিনি নিশ্চই গুরুপদবাচ্য নন।"
শ্রীশিব পার্বতীদেবীকে বলছেন -
গুরবো বহবঃ সন্তি শিষ্যবিত্তাপহারকাঃ |
দুর্লভো সদগুরুর্দেবি শিষ্যসন্তাপহারকঃ||
" হে দেবি, শিষ্যের বিত্ত ধন অপহারক বহু গুরু এই জগতে আছে, কিন্তু শিষ্যের দুঃখ নাশক একজন সদগুরু দূর্লভ। "
আদি গুরু শ্রীকৃষ্ণ থেকে যাদের পরম্পরার ধারা নেই, যারা কলির চতুর্বিধ আড্ডায় জড়িত অর্থাৎ, যারা মাছ মাংস খায়,দোক্তা খৈনি চা জর্দা তামাক বিড়ি সিগারেট গাজা খায়, যারা জুয়া ভাগ্যলটারী খেলে, অবৈধ যৌনতার জড়িত তারা গুরু পদবাচ্য হয় না। যারা কলিযুগের যুগধর্ম ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে উপদেশ দেন না, শাস্ত্র বহির্ভূত নিজেদের মনগড়া নাম কীর্তন করেন তারা নিশ্চই গুরু পদবাচ্য নন।
🌿কোন অবস্থায় গুরু পরিত্যাজ্য হয়❓
সাধারণত ভগবৎ প্রতিনিধি গুরুদেব পরিত্যজ্য হন না। তবে ভুলক্রমে কাউকে গুরুরুপে গ্রহণ করা হলে তিনি যদি শাস্ত্র বিরুদ্ধাচারী হন তবে নির্দ্বিধায় শাস্ত্রীয় নিদিষ্ট পন্থায় সেই গুরুদেবকে ত্যাগ করে সদগুরু গ্রহণ করতে হয়।
শ্রীল জীবগোস্বামীপাদ ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে অযোগ্য কুলগুরুকে পরিত্যাগ করতেই নির্দেশ দিয়েছেন।
পরমার্থগুর্বাশ্র্য়ো ব্যাবহারিক গুর্বাদি পরিত্যাগানাপি কর্তব্য || (ভঃ সঃ ২১০)
"ব্যাবহারিক, লৌকিক, কৌলিক, অযোগ্য গুরুব্রুব পরিত্যাগ করে পারমার্থিক শ্রীগুরুর আশ্রয় গ্রহণ করবে। "
শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামী শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন -
অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ং ব্রজেৎ |
পুনশ্চ বিধিনা সম্যগ গ্রাহয়েদ্বৈষ্ণাবাদ গুরোঃ || (হরিভক্তিবিলাস ৪/১৪৪)
"স্ত্রীসঙ্গী কৃষ্ণভক্ত অবৈষ্ণবের উপদিষ্ট মন্ত্র লাভ করলে নরক গমন হয়। অতএব যথা শাস্ত্র পুনরায় বৈষ্ণব গুরুর নিকটেই মন্ত্র গ্রহণ করবে। "
শ্রী হরিভক্তিবিলাসে আরও বলা হয়েছে,
স্নেহাদ্বা লোভতো বাপি যো গৃহ্নীয়াদ দীক্ষয়া |
তস্মিন গুরৌ সশিষ্যে তদ্দেবতাশাপ আপতেৎ || (হরিভক্তিবিলাস ১/৫)
" স্নেহবশত বা লোভবশত যে গুরু দীক্ষা দেন এবং ভালোবাসার খাতিরে বা কোন রূপ জাগতিক লাভের আশায় যিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন, তারা উভয়েই দেবতার অভিশাপ প্রাপ্ত হন।"
মহাভারতে বলা হয়েছে --
গুরোরপ্যবলিপ্তস্য কার্যাকার্যমজানতঃ |
উৎপথপ্রতিপন্নস্য পরিত্যাগো বিধীয়তে || (মহাভারত উদ্যেগ পর্ব ১৭৯/২৫)
"জড়-জাগতিক ভোগ্য বিষয়ে লিপ্ত, কর্তব্য অকর্তব্য বিবেকরহিত, মূঢ় এবং শুদ্ধ ভক্তি ব্যতীত ইতর পন্থানুগামী ব্যক্তি নামে মাত্র গুরু, তাকে অবশ্যই পরিত্যাগ করাযই বিধি।"
🌿 সদগুরু আর অসদগুরুর মধ্যে পার্থক্য কি❓
সমাজে অনেকে গুরু সেজে পূজা লাভের পাত্র হয়েছেন, সেজন্য গুরুতত্ত্ব কে বুঝে নেবার জন্য সৎ ও অসৎ কথাটি ব্যবহার হয়েছে। সদ্গুরু হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি যিনি কৃষ্ণভক্তি শিক্ষা দিয়ে দুঃখময় সংসার বদ্ধ জীবকে উদ্ধার করে ভগবদ্ধামে নিয়ে যান।(ঔঁ অজ্ঞান্তিমিরান্ধাস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া...)।
তিনি অধর্মের চারটি পাপাচার যথা -- নেশা ভাং, মাছ মাংস আহার, জুয়া তাস খেলা এবং অবৈধ সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি কলিযুগের যুগধর্ম হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করেন, কৃষ্ণ প্রসাদ সেবন করেন, গীতা ভাগবত পাঠ ও অনুশীলন করেন এবং শিক্ষা দেন। তিনি হঠাৎ গুরু হয়ে যান না কিংবা কোন তান্ত্রিক যোগসিদ্ধি দেখিয়ে গুরু হন না। তিনি আদিগুরু শ্রীকৃষ্ণ থেকে পরম্পরা সূত্রে আগত ভগবৎ প্রতিনিধি আর অসদগুরু এইগুলির বিপরীত। এ নিয়মগুলো কিছুই পালন করেন না।
🌿বৈষ্ণব এবং অবৈষ্ণব কারা -চিনে নিন।
বৈষ্ণব মাত্রই বিষ্ণুর আরাধনা করেন, বিষ্ণুচিন্তা করেন, বিষ্ণুপ্রসাদ ভোজন করেন, বিষ্ণু সেবা করেন।
কিন্তু যারা আজেবাজে চিন্তা করেন, অপ্রসাদ ভোজন করে, বিষ্ণু কে বাদ দিয়ে মায়ার সেবায় আগ্রহী -তারা সব অবৈষ্ণব। তাদেরও কর্তব্য বিষ্ণু সেবা করা কিন্তু তারা তা করছে না বলেই তারা অবৈষ্ণব।
🌿আমরা দীক্ষিত। আমাদের গুরুদেব অবশ্য মাছ-মাংস ছাড়তে নির্দেশ দেননি। কলিযুগের যুগধর্ম হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপেরও নির্দেশ দেননি। কেবল ভোরে ও সন্ধ্যায় আমরা গুরুমন্ত্র জপ করে থাকি। এতে কি আমাদের জীবনের সদ্গতি হবে না❓
শ্রীমদভাগবত বলা হয়েছে,
তস্মাদ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম।
শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মণুপশ্মাশ্রয়ম ||
" নিজের সদ্গতি বা পরম মঙ্গল কি- সেই সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে সদ্গুরুর চরণআশ্রয় করতে হয়। সদগুরু হচ্ছেন তিনি যিনি শব্দব্রহ্ম অর্থাৎ বেদ শাস্ত্র সিদ্ধান্তে সুনিপুণ, পরব্রহ্মে নিষ্ণাত অর্থাৎ যিনি ভগবত অনুভূতি লাভ করেছেন। যিনি জাগতিক কোনও ক্ষোভের বশীভূত নন, তিনিই সদগুরু( ভাগবত 11/ 3/ 21)
আর বেদ শাস্ত্রের সিদ্ধান্তই হচ্ছে যে মাছ মাংস খাওয়া মহাপাপ এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রই এই কলিযুগে সদগতির একমাত্র পন্থা। (নাস্তব্য গতিরন্যথা)!
🌿 জাতিগত গোস্বামীরা সকল গৃহস্থের কাছেই খুবই সম্মানিয় হন। কিন্তু তারা আমিষ আহার, ধূমপান চা পান ইত্যাদি নিষিদ্ধ বিষয় বর্জন করেন না। তাহলে তারা "গোস্বামী" বলে পরিচিত হন কি করে?
~ 'গো' মানে ইন্দ্রিয় 'স্বামী' মানে প্রভু। যিনি তার ইন্দ্রিয় গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা বশীভূত করেন এবং কৃষ্ণৈকশরণ ষড়বেগবিজয়ী ব্যক্তি "গোস্বামী" পদবাচ্য হন।
শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন বৃন্দাবনে শ্রীরূপ গোস্বামী, শ্রী সনাতন গোস্বামী, শ্রী রঘুনাথ দাস গোস্বামী,শ্রী রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামী, শ্রীজীব গোস্বামী ও শ্রী গোপাল ভট্ট গোস্বামী এই ছয় জন একত্রে ষড়গোস্বামী নামে পরিচিত ছিলেন। তারা ছিলেন কৃষ্ণভক্তির সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত আদর্শ সৎ গুরু। তাই তাদের বলা হতো গোস্বামী। বৃন্দাবনের সমস্ত মন্দির তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেইসব মন্দিরের পূজার দায়িত্ব তাদের কয়েকজন গৃহস্থ শিষ্যের উপর ন্যস্ত করা হয়। সেই থেকে তারাও বংশানুক্রমিকভাবে গোস্বামী উপাধি ব্যবহার করে আসছেন। এভাবে বংশানুক্রমিক বা জাতিগতভাবে গোস্বামী উপাধি গ্রহণের প্রথা চলে আসছে। প্রকৃতপক্ষে যে সদগুরু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর ধারায় কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছেন এবং যার সমস্ত ইন্দ্রিয় সম্পূর্ণরূপে বশীভূত তিনিই গোস্বামী উপাধিতে অভিহিত হতে পারেন।(চৈঃ চঃ মধ্য ৯/২৮৯ তাৎপর্য)
আমিষ আহার, ধুমপানাদি- শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু তথা ষড়গোস্বামীর ধারার বহির্ভূত।।
🌿আমরা যে গুরুদেবের কাছে দীক্ষা নিয়েছি, তিনি আপনাদের মতো এত নিয়ম বলেননা, তিনি বলেছেন তোমরা কেবল দীক্ষা নাও। আমিষ, চা-বিড়ি এখন খেলেও ক্ষতি নেই। যখন মন ওসব খেতে চাইবে না তখন ছেড়ে দেবে। এটা কি ঠিক নয়❓
হ্যাঁ এটাও ঠিক এরকম যে, যখন নারকীয় কর্ম করতে মন চায় তখন করলে ক্ষতি নেই এবং নরক পথে গিয়ে অশেষ যাতনা ভোগ করলে কোনও ক্ষতি নেই। যখনই যাতনা ভোগ করতে নরকে যেতে মন চাইবে না তখন পাপ কর্ম ছেড়ে দিতে হবে। কলির চারটি পাপ কর্ম হল - আমিষ আহার, নেশা ভাং, জুয়া তাস খেলা ও অবৈধ যৌনসঙ্গ। আবার মন যখন এগুলো চাইছে তা করা যাক-- এরকম কথা কোনও বৈষ্ণব বলেন না। মন যা চায় তাই করো। একে বলে মনগড়া হুজুগে চলা। নেশাখোরের মন নেশা করতে চাইবে, আমিষ ভোজীর মন আমিষ খেতে চাইবে, ব্যাশ্যাগামীর মন বেশ্যালয় যেতে চাইবে। মন যেহেতু চাইছে অতএব এসব করলে ক্ষতি নেই- একথা কোন যুক্তিতে আপনি ঠিক বলে সমর্থন করলেন? ধার্মিক ব্যক্তির মনও তো ধর্মাচরণ করতেই চায়। আর তাই সে গুরুগ্রহণ করে। কিন্তু মানুষ ভালো মন্দ না বুঝেই তথাকথিত (অসদ)গুরু গ্রহণ করে থাকে।
শাস্ত্রে অবৈষ্ণব তথাকথিত গুরুকে পরিত্যাগ করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ং ব্রজেৎ |
পুনশ্চ বিধিনা সম্যগ গ্রাহয়েদ বৈষ্ণবাৎ গুরোঃ ||
"অবৈষ্ণবের উপদিষ্ট মন্ত্র গ্রহণ করলে নরকে গতি হয়। সেজন্যই যথা শাস্ত্র পুনরায় বৈষ্ণব গুরুর নিকটে মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়।"
( হরিভক্তিবিলাস৪/১৪৪)
🌿যারা আমিষ খায় তারা কি ভগবানের অর্চা বিগ্রহ পূজা করতে পারে?
লোকে মাছ, পশু, পাখি হত্যা করে খায়। এটি জীব হিংসা। শাস্ত্রে বলা হয়েছে মাছ-মাংস ভোজীদের ভগবানের বিগ্রহ পূজা নিষিদ্ধ।
সেই মূর্তি করি যেবা ভজে নারায়ন |
জীবহিংসা করে যদি নাহি প্রয়োজন||(কৃঃ প্রেঃ তঃ ৭/৫/৩২)
🌿 কলিবদ্ধ জীব কোনও ধর্মীয় আচরণ বিধি না মেনে একান্তভাবে অন্তরে অন্তরে কৃষ্ণ প্রেমে মনকে জাগিয়ে রেখে এবং শ্রীকৃষ্ণের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখলে, তাতে কি কল্যাণ হবে না❓
✅ না, মোটেই কল্যাণ নয় সেটি হচ্ছে সমগ্র জগতের উৎপাত।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে
শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণাদি-পঞ্চরাত্র-বিধিং বিনা |
ঐকান্তিকী হরের্ভক্তিঃ উৎপাতায়ৈব কল্পতে ||
~" বৈদিক শাস্ত্র বিধি বাদ দিয়ে যে ঐকান্তিক ভক্তি সেটি সমাজের উৎপাত মাত্র "
কলিবদ্ধ জীবের কোন কল্যাণ নেই। আগে তাকে কলির কবল থেকে মুক্ত হতে হবে। কলির আচার ছাড়তে হবে। যেমন আমিষ আহার, নেশা ভাং, জুয়া তাস, অবৈধ যৌনতা- এসব অবশ্যই ছাড়তে হবে। আর যুগধর্ম হরিনাম গ্রহণ করতে হবে। যক্ষাগ্রস্থ রোগী যদি "দুধও খাবো,তামাকও খাবো" এভাবেই রোগমুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করে আর মনে মনে নিরোগ আনন্দময় অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করে তাহলে সেই উৎপাত রোগী কোনদিন সুস্থ হবে না।
শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া বিধি নির্দেশ পালন করে চলাই ভক্তি। অন্যথা বিধি না মেনে 'আমি ভগবান মানি', 'শ্রীকৃষ্ণ কে বিশ্বাস করি', 'শ্রীকৃষ্ণ আমার প্রিয় প্রভু',- এসব কথা বলা কেবল উৎপাতের পরিচায়ক মাত্র।
তাই বিধি ভক্তি করতে হবে, শাস্ত্রের নিয়মে ভক্তি করতে হবে, সদগুরুদেবের চরণাশ্রয় হয়ে ভক্তিজীবন এগিয়ে নিতে হবে।
🌿 কি করে বুজবেন কে আপনার গুরু হতে পারেন? গুরু-নির্ণয় করার পদক্ষেপ কি :-
[শ্রী শ্রী ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে(ইসকন) যেভাবে দীক্ষা দেয়]
🌼একবছর প্রস্ততিমূলক সময়কাল
> ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া
> চারটি বিধিনিষেধ কঠোর ভাবে পালন করা, যথা :-
i)আমিষাহার বর্জন (মাছ, মাংস, ডিম,রসুন, পিঁয়াজ, মসুর ডাল এগুলো বর্জন বর্জন করা)
ii) নেশা বর্জন ( বিড়ি, পান, তামাক, চা, কফি বর্জন করা )
iii) অবৈধ যৌন সঙ্গ বর্জন
iv)দ্যুত ক্রীড়া বর্জন (তাস, পাশা, লটারী,জুয়া এগুলোকে বর্জন করা)
> প্রাতঃকালিন অনুষ্ঠানে প্রতিদিন অংশগ্রহণ করা (মন্দিরবাসিরা)
> বাড়িতে বা নামহট্টে প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ( মন্দিরের বাইরের অধিবাসীরা)
* প্রভূপাদাশ্রয় (সম্প্রদায়ের/সংঘটনের সিনিয়র আচার্য) গ্রহন করা:-
> প্রধানতম শিক্ষা-গুরু হিসেবে শ্রীল প্রভূপাদের উপর মনোযোগ দেওয়া।
> প্রণাম করার সময় শ্রীল প্রভূপাদের প্রণাম মন্ত্র স্থব করা।
> জ্যোষ্ঠ ইসকন ভক্তদের দ্বারা পথপ্রদর্শন (শিক্ষ গুরু)
🌼দীক্ষা ও শিক্ষা-গুরু পদাশ্রয়
>প্রভুপাদের অন্ততঃ ছয় মাস পর, কেউ তার শিক্ষাগুরুর মধ্য থেকে একজন ইসকন অনুমোদিত দীক্ষাগুরু নির্ণয় করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে ছয় মাস সময়সীমাটি নূন্যতম সময়, কিন্তু এই নির্ণয় করতে যতটা সময় দরকার ততটাই নেওয়া যাবে।
> নিজেদের বিদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সুবিবেচকের মত দীক্ষাগুরু নির্ণয় করা শিষ্যদের দায়িত্ব।
> সুতারং পদ্ধতিটা হচ্ছে গুরু গ্রহন করার আগে কমপক্ষে একবছর ধরে তাঁর কাছ থেকে শ্রবন করা উচিৎ। আর তখন সে উপলব্ধি করতে পারে যে "হ্যা, ইনি এমনই একজন গুরু যিনি আমাকে শিক্ষা দিতে পারেন।" তখন মন থেকেই গুরু হিসেবে গ্রহন করা যায়। ঝোকের বশে গ্রহন করবে না।
(শ্রীমদ্ভাগবতম ১.১৬.২৫ তাৎপর্য, জানুয়ারী ২১, ১৯৭৪)
( এই সম্পর্কে একজন ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন শ্রীমৎ সুভগ স্বামী গুরুমহারাজকে মায়াপুরে যে কি করে একজন কনিষ্ঠ ভক্ত তার গুরু নির্বাচন করতে পারে তখন উনি বলেছিলেন যার কথা শুনে মনের জড়জাগতিক আসক্ত মুক্ত হচ্ছে এবং এই চারটি বিধিনিষেধ পালন করতে মনে উৎসাহিত বোধ করছেন মনে করবে সেই তার গুরু হবার যোগ্য)
> কোন আন্তরিক ভক্তের উচিৎ শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে সদগুরু নির্ণয় করা। শ্রীল জীব গোস্বামী বংশানুক্রমিকভাবে বা সামাজিক প্রথার বশবর্তী হয়ে কুলগুরু গ্রহন না করতে উপদেশ দিচ্ছেন। পারমার্থিক জীবনে যথার্থভাবে অগ্রসর হওয়ার জন্য সদগুরুর অনুসন্ধান করা অবশ্য কর্তব্য।
🌼সদ্ গুরুর যোগ্যতা কি:-
🔘শ্রীগুরুদেব সঠিক পরম্পরা ধারায় থাকবেন।(সঠিক সিদ্ধ সম্প্রদায় -৪সম্প্রদায়ের যে কোনো ১টি, ইসকনের গুরুদেবগন ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের)
🔘 কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হবেন।
🔘৪বিধিনিষেধ পালন করবেন।
🔘শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে আচার ও প্রচার করেন ও
🔘 হরিনাম পরায়ণ হবেন।
🌿 দীক্ষা কি❓
পারমার্থিক শ্রী গুরুদেব করুণাপূর্বক মায়া কবলিত জীবকে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিব্যজ্ঞান দান করেন ও বদ্ধজীব গুরুকৃষ্ণ পাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করে তাকে দীক্ষা বলে।
দিব্যাং জ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কুর্যাৎ পাপস্য সংক্ষয়ম |
তস্মাদ্দীক্ষেতি সা প্রোক্তা দেশিকৈস্তত্ত্বকোবিদৈঃ ||
অর্থাৎ "যাতে দিব্যজ্ঞান দান করে এবং পাপের সংক্ষয় করে ভগবততত্ত্ববিদগণ এজন্যই তাকে দীক্ষা বলে থাকেন। দিব্যজ্ঞান বলতে মন্ত্রে সাক্ষাৎ ভগবত স্বরূপ জ্ঞান এবং সেই ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধ জ্ঞান।
🌿 কে গুরু হতে হতে পারে ❓
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়ে গেছেন -
কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র কেনে নয় |
যে-ই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা,সে-ই গুরু হয় || (চৈ.চ. মধ্য ৮/১২৮)
অর্থাৎ, " যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু, তা তিনি ব্রাহ্মণ হোন, কিংবা সন্ন্যাসীই হোন অথবা শূদ্রই হোন,তাতে কিছু যায় আসে না। "
শ্রীপ্রেমবিবর্ত গ্রন্থেও বলা হয়েছে,
কিবা বর্ণী,কিবা শ্রমী,কিংবা বর্ণাশ্রমহীন |
কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা যেই, সেই আচার্যপ্রবীণ ||
অর্থাৎ, যে কোনো বর্ণে, যে কোনও যে কোনো আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত হোন না কেন এমনকি বর্ণ আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত না হলেও যদি কেউ কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হন, তবে তিনিই গুরু হতে পারেন।
শ্রীল রূপগোস্বামী পাদ শ্রীউপদেশামৃত গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন,
বাচবেগং মনসঃ ক্রোধবেগং
জিহ্বাবেগমুদরোপস্থবেগম|
এতান বেগান যো বিষহেত ধীরঃ
সর্বামপীমাং পৃথিবীং স শিষ্যাৎ || (উপদেশামৃত শ্লোক-১)
অর্থাৎ "বাক্যের বেগ, মনের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহবার বেগ, উদরের বেগ ও উপস্থের বেগ-- এই ছয়বেগ যে ব্যক্তির বিশেষরূপে সহ্য করতে সমর্থ হন, তিনিই এই নিখিল পৃথিবী শাসন করতে পারেন (অর্থাৎ শিষ্য করতে পারেন) তিনিই ষড়বেগজয়ী গোস্বামী জগৎগুরু। "
এখানে বাচোবেগ --কৃষ্ণসম্মন্ধছাড়া যত রকমের ইতরকথা, মনোবেগ --মনের দাস হওয়া, মন যা চায় তাই করা, ক্রোধবেগ-- কাম চরতার্থ করতে বাধার ফলে অতৃপ্তিজনিত ক্রোধ,জিহবাবেগ--সুস্বাদু দ্রব্য ভোজনে আগ্রহশীল,উদরবেগ --অতিরিক্ত ভোজন পরায়ণ, উপস্থবেগ-- যৌন সঙ্গ লালসা, এই ছয়বেগ যার বশে সর্বদা থাকতে পারে তিনিই গোস্বামী এবং জগৎগুরু হতে পারেন।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়ে নির্দেশ দিলেন---
যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ |
আমার আজ্ঞায় গুরু হঞা তার এই দেশ ||
অর্থাৎ "যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাকেই তুমি ভগবদগীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবতের প্রদত্ত শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ প্রদান কর। আমার আজ্ঞায় এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে তুমি এই দেশকে উদ্ধার কর।"
শ্রীল সনাতন গোস্বামী শ্রীল হরিদাস ঠাকুরকে বলছেন---
আপনে আচরে কেহ, না করে প্রচার |
প্রচার করেন কেহ, না করেন আচার ||
আচার,প্রচার -নামের করহ দুই কার্য |
তুমি সর্বগুরু, তুমি জগতের আর্য ||
"কিছু লোক আচরণ করছেন, কিন্তু প্রচার করছেন না, আবার কিছু লোক প্রচার করছেন কিন্তু আচরণ করছেন না। কিন্তু তুমি ভগবানের দিব্য নামের আচার ও প্রচার দুই কার্যই করছো। তাই তুমি সকলের গুরু এবং এই জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত। "
যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা গুরু তিনি অবশ্যই কৃষ্ণভক্ত এবং তিনি পরম্পরা আশ্রিত হবেন। ভগবান বলেছেন --
এবং পরম্পরা প্রাপ্তম রাজর্ষয়ো বিদুঃ | (গীতা)
অর্থাৎ পরম্পরা মাধ্যমেই ভগবৎতত্ত্বজ্ঞান প্রবাহিত হয়। ভগবৎ প্রতিনিধি গুরুদেব শ্রীমদ্ভাগবত নির্দিষ্ট কলির চতুর্বিধ কলুষিত কর্ম থেকে বিরত থাকবেন যেমন মাদকদ্রব্যের নেশা, আমিষ আহার, অবৈধ যৌনতা এবং জুয়া তাস ইত্যাদি তিনি বর্জন করে চলবেন। কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তনে তিনি ব্রতী হবেন। তিনি শাস্ত্র নির্দিষ্ট ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন ও জপ করবেন। তিনিই তার পূর্বতন আচার্যদের প্রিয়জন হবেন। তিনি কৃষ্ণসেবা বিরুদ্ধ ইন্দ্রিয়তর্পণ মূলক কোন কর্মেই জড়িত থাকেন না।
🌿 কে গুরু হতে পারেনা❓
শ্রী পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে --
ষট কর্মনিপুণো বিপ্রো মন্ত্রতন্ত্রবিশারদঃ |
অবৈষ্ণবো গুরুর্ন স্যাদ্বৈষ্ণবঃ শ্বপচো গুরু ||
" যজন, যাজন, অধ্যায়ন, অধ্যাপন, দান ও প্রতিগ্রহ --এই ছয় কর্মে নিপুণ এবং মন্ত্রতন্ত্রবিশারদ কোনও ব্রাহ্মণও গুরু হতে পারেন না, যদি না তিনি বৈষ্ণব হন। বরং চণ্ডালকূলে আবির্ভাব হয়েও বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ ব্যাক্তি গুরু হওয়ার যোগ্য। "
শ্রীবিষ্ণুস্মৃতি গ্রন্থে বলা হয়েছে -
পরিচর্যা-যশোলিপ্সুঃ শিষ্যাদ গুরুর্ন হি ||
"শিষ্যের কাছে কেবল সেবা পরিচর্যা আর যশ লাভের বাসনা যিনি করেন তিনি নিশ্চই গুরুপদবাচ্য নন।"
শ্রীশিব পার্বতীদেবীকে বলছেন -
গুরবো বহবঃ সন্তি শিষ্যবিত্তাপহারকাঃ |
দুর্লভো সদগুরুর্দেবি শিষ্যসন্তাপহারকঃ||
" হে দেবি, শিষ্যের বিত্ত ধন অপহারক বহু গুরু এই জগতে আছে, কিন্তু শিষ্যের দুঃখ নাশক একজন সদগুরু দূর্লভ। "
আদি গুরু শ্রীকৃষ্ণ থেকে যাদের পরম্পরার ধারা নেই, যারা কলির চতুর্বিধ আড্ডায় জড়িত অর্থাৎ, যারা মাছ মাংস খায়,দোক্তা খৈনি চা জর্দা তামাক বিড়ি সিগারেট গাজা খায়, যারা জুয়া ভাগ্যলটারী খেলে, অবৈধ যৌনতার জড়িত তারা গুরু পদবাচ্য হয় না। যারা কলিযুগের যুগধর্ম ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে উপদেশ দেন না, শাস্ত্র বহির্ভূত নিজেদের মনগড়া নাম কীর্তন করেন তারা নিশ্চই গুরু পদবাচ্য নন।
🌿কোন অবস্থায় গুরু পরিত্যাজ্য হয়❓
সাধারণত ভগবৎ প্রতিনিধি গুরুদেব পরিত্যজ্য হন না। তবে ভুলক্রমে কাউকে গুরুরুপে গ্রহণ করা হলে তিনি যদি শাস্ত্র বিরুদ্ধাচারী হন তবে নির্দ্বিধায় শাস্ত্রীয় নিদিষ্ট পন্থায় সেই গুরুদেবকে ত্যাগ করে সদগুরু গ্রহণ করতে হয়।
শ্রীল জীবগোস্বামীপাদ ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে অযোগ্য কুলগুরুকে পরিত্যাগ করতেই নির্দেশ দিয়েছেন।
পরমার্থগুর্বাশ্র্য়ো ব্যাবহারিক গুর্বাদি পরিত্যাগানাপি কর্তব্য || (ভঃ সঃ ২১০)
"ব্যাবহারিক, লৌকিক, কৌলিক, অযোগ্য গুরুব্রুব পরিত্যাগ করে পারমার্থিক শ্রীগুরুর আশ্রয় গ্রহণ করবে। "
শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামী শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন -
অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ং ব্রজেৎ |
পুনশ্চ বিধিনা সম্যগ গ্রাহয়েদ্বৈষ্ণাবাদ গুরোঃ || (হরিভক্তিবিলাস ৪/১৪৪)
"স্ত্রীসঙ্গী কৃষ্ণভক্ত অবৈষ্ণবের উপদিষ্ট মন্ত্র লাভ করলে নরক গমন হয়। অতএব যথা শাস্ত্র পুনরায় বৈষ্ণব গুরুর নিকটেই মন্ত্র গ্রহণ করবে। "
শ্রী হরিভক্তিবিলাসে আরও বলা হয়েছে,
স্নেহাদ্বা লোভতো বাপি যো গৃহ্নীয়াদ দীক্ষয়া |
তস্মিন গুরৌ সশিষ্যে তদ্দেবতাশাপ আপতেৎ || (হরিভক্তিবিলাস ১/৫)
" স্নেহবশত বা লোভবশত যে গুরু দীক্ষা দেন এবং ভালোবাসার খাতিরে বা কোন রূপ জাগতিক লাভের আশায় যিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন, তারা উভয়েই দেবতার অভিশাপ প্রাপ্ত হন।"
মহাভারতে বলা হয়েছে --
গুরোরপ্যবলিপ্তস্য কার্যাকার্যমজানতঃ |
উৎপথপ্রতিপন্নস্য পরিত্যাগো বিধীয়তে || (মহাভারত উদ্যেগ পর্ব ১৭৯/২৫)
"জড়-জাগতিক ভোগ্য বিষয়ে লিপ্ত, কর্তব্য অকর্তব্য বিবেকরহিত, মূঢ় এবং শুদ্ধ ভক্তি ব্যতীত ইতর পন্থানুগামী ব্যক্তি নামে মাত্র গুরু, তাকে অবশ্যই পরিত্যাগ করাযই বিধি।"
🌿 সদগুরু আর অসদগুরুর মধ্যে পার্থক্য কি❓
সমাজে অনেকে গুরু সেজে পূজা লাভের পাত্র হয়েছেন, সেজন্য গুরুতত্ত্ব কে বুঝে নেবার জন্য সৎ ও অসৎ কথাটি ব্যবহার হয়েছে। সদ্গুরু হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি যিনি কৃষ্ণভক্তি শিক্ষা দিয়ে দুঃখময় সংসার বদ্ধ জীবকে উদ্ধার করে ভগবদ্ধামে নিয়ে যান।(ঔঁ অজ্ঞান্তিমিরান্ধাস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া...)।
তিনি অধর্মের চারটি পাপাচার যথা -- নেশা ভাং, মাছ মাংস আহার, জুয়া তাস খেলা এবং অবৈধ সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি কলিযুগের যুগধর্ম হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করেন, কৃষ্ণ প্রসাদ সেবন করেন, গীতা ভাগবত পাঠ ও অনুশীলন করেন এবং শিক্ষা দেন। তিনি হঠাৎ গুরু হয়ে যান না কিংবা কোন তান্ত্রিক যোগসিদ্ধি দেখিয়ে গুরু হন না। তিনি আদিগুরু শ্রীকৃষ্ণ থেকে পরম্পরা সূত্রে আগত ভগবৎ প্রতিনিধি আর অসদগুরু এইগুলির বিপরীত। এ নিয়মগুলো কিছুই পালন করেন না।
🌿বৈষ্ণব এবং অবৈষ্ণব কারা -চিনে নিন।
বৈষ্ণব মাত্রই বিষ্ণুর আরাধনা করেন, বিষ্ণুচিন্তা করেন, বিষ্ণুপ্রসাদ ভোজন করেন, বিষ্ণু সেবা করেন।
কিন্তু যারা আজেবাজে চিন্তা করেন, অপ্রসাদ ভোজন করে, বিষ্ণু কে বাদ দিয়ে মায়ার সেবায় আগ্রহী -তারা সব অবৈষ্ণব। তাদেরও কর্তব্য বিষ্ণু সেবা করা কিন্তু তারা তা করছে না বলেই তারা অবৈষ্ণব।
🌿আমরা দীক্ষিত। আমাদের গুরুদেব অবশ্য মাছ-মাংস ছাড়তে নির্দেশ দেননি। কলিযুগের যুগধর্ম হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপেরও নির্দেশ দেননি। কেবল ভোরে ও সন্ধ্যায় আমরা গুরুমন্ত্র জপ করে থাকি। এতে কি আমাদের জীবনের সদ্গতি হবে না❓
শ্রীমদভাগবত বলা হয়েছে,
তস্মাদ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম।
শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মণুপশ্মাশ্রয়ম ||
" নিজের সদ্গতি বা পরম মঙ্গল কি- সেই সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে সদ্গুরুর চরণআশ্রয় করতে হয়। সদগুরু হচ্ছেন তিনি যিনি শব্দব্রহ্ম অর্থাৎ বেদ শাস্ত্র সিদ্ধান্তে সুনিপুণ, পরব্রহ্মে নিষ্ণাত অর্থাৎ যিনি ভগবত অনুভূতি লাভ করেছেন। যিনি জাগতিক কোনও ক্ষোভের বশীভূত নন, তিনিই সদগুরু( ভাগবত 11/ 3/ 21)
আর বেদ শাস্ত্রের সিদ্ধান্তই হচ্ছে যে মাছ মাংস খাওয়া মহাপাপ এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রই এই কলিযুগে সদগতির একমাত্র পন্থা। (নাস্তব্য গতিরন্যথা)!
🌿 জাতিগত গোস্বামীরা সকল গৃহস্থের কাছেই খুবই সম্মানিয় হন। কিন্তু তারা আমিষ আহার, ধূমপান চা পান ইত্যাদি নিষিদ্ধ বিষয় বর্জন করেন না। তাহলে তারা "গোস্বামী" বলে পরিচিত হন কি করে?
~ 'গো' মানে ইন্দ্রিয় 'স্বামী' মানে প্রভু। যিনি তার ইন্দ্রিয় গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা বশীভূত করেন এবং কৃষ্ণৈকশরণ ষড়বেগবিজয়ী ব্যক্তি "গোস্বামী" পদবাচ্য হন।
শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন বৃন্দাবনে শ্রীরূপ গোস্বামী, শ্রী সনাতন গোস্বামী, শ্রী রঘুনাথ দাস গোস্বামী,শ্রী রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামী, শ্রীজীব গোস্বামী ও শ্রী গোপাল ভট্ট গোস্বামী এই ছয় জন একত্রে ষড়গোস্বামী নামে পরিচিত ছিলেন। তারা ছিলেন কৃষ্ণভক্তির সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত আদর্শ সৎ গুরু। তাই তাদের বলা হতো গোস্বামী। বৃন্দাবনের সমস্ত মন্দির তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেইসব মন্দিরের পূজার দায়িত্ব তাদের কয়েকজন গৃহস্থ শিষ্যের উপর ন্যস্ত করা হয়। সেই থেকে তারাও বংশানুক্রমিকভাবে গোস্বামী উপাধি ব্যবহার করে আসছেন। এভাবে বংশানুক্রমিক বা জাতিগতভাবে গোস্বামী উপাধি গ্রহণের প্রথা চলে আসছে। প্রকৃতপক্ষে যে সদগুরু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর ধারায় কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছেন এবং যার সমস্ত ইন্দ্রিয় সম্পূর্ণরূপে বশীভূত তিনিই গোস্বামী উপাধিতে অভিহিত হতে পারেন।(চৈঃ চঃ মধ্য ৯/২৮৯ তাৎপর্য)
আমিষ আহার, ধুমপানাদি- শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু তথা ষড়গোস্বামীর ধারার বহির্ভূত।।
🌿আমরা যে গুরুদেবের কাছে দীক্ষা নিয়েছি, তিনি আপনাদের মতো এত নিয়ম বলেননা, তিনি বলেছেন তোমরা কেবল দীক্ষা নাও। আমিষ, চা-বিড়ি এখন খেলেও ক্ষতি নেই। যখন মন ওসব খেতে চাইবে না তখন ছেড়ে দেবে। এটা কি ঠিক নয়❓
হ্যাঁ এটাও ঠিক এরকম যে, যখন নারকীয় কর্ম করতে মন চায় তখন করলে ক্ষতি নেই এবং নরক পথে গিয়ে অশেষ যাতনা ভোগ করলে কোনও ক্ষতি নেই। যখনই যাতনা ভোগ করতে নরকে যেতে মন চাইবে না তখন পাপ কর্ম ছেড়ে দিতে হবে। কলির চারটি পাপ কর্ম হল - আমিষ আহার, নেশা ভাং, জুয়া তাস খেলা ও অবৈধ যৌনসঙ্গ। আবার মন যখন এগুলো চাইছে তা করা যাক-- এরকম কথা কোনও বৈষ্ণব বলেন না। মন যা চায় তাই করো। একে বলে মনগড়া হুজুগে চলা। নেশাখোরের মন নেশা করতে চাইবে, আমিষ ভোজীর মন আমিষ খেতে চাইবে, ব্যাশ্যাগামীর মন বেশ্যালয় যেতে চাইবে। মন যেহেতু চাইছে অতএব এসব করলে ক্ষতি নেই- একথা কোন যুক্তিতে আপনি ঠিক বলে সমর্থন করলেন? ধার্মিক ব্যক্তির মনও তো ধর্মাচরণ করতেই চায়। আর তাই সে গুরুগ্রহণ করে। কিন্তু মানুষ ভালো মন্দ না বুঝেই তথাকথিত (অসদ)গুরু গ্রহণ করে থাকে।
শাস্ত্রে অবৈষ্ণব তথাকথিত গুরুকে পরিত্যাগ করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ং ব্রজেৎ |
পুনশ্চ বিধিনা সম্যগ গ্রাহয়েদ বৈষ্ণবাৎ গুরোঃ ||
"অবৈষ্ণবের উপদিষ্ট মন্ত্র গ্রহণ করলে নরকে গতি হয়। সেজন্যই যথা শাস্ত্র পুনরায় বৈষ্ণব গুরুর নিকটে মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়।"
( হরিভক্তিবিলাস৪/১৪৪)
🌿যারা আমিষ খায় তারা কি ভগবানের অর্চা বিগ্রহ পূজা করতে পারে?
লোকে মাছ, পশু, পাখি হত্যা করে খায়। এটি জীব হিংসা। শাস্ত্রে বলা হয়েছে মাছ-মাংস ভোজীদের ভগবানের বিগ্রহ পূজা নিষিদ্ধ।
সেই মূর্তি করি যেবা ভজে নারায়ন |
জীবহিংসা করে যদি নাহি প্রয়োজন||(কৃঃ প্রেঃ তঃ ৭/৫/৩২)
🌿 কলিবদ্ধ জীব কোনও ধর্মীয় আচরণ বিধি না মেনে একান্তভাবে অন্তরে অন্তরে কৃষ্ণ প্রেমে মনকে জাগিয়ে রেখে এবং শ্রীকৃষ্ণের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখলে, তাতে কি কল্যাণ হবে না❓
✅ না, মোটেই কল্যাণ নয় সেটি হচ্ছে সমগ্র জগতের উৎপাত।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে
শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণাদি-পঞ্চরাত্র-বিধিং বিনা |
ঐকান্তিকী হরের্ভক্তিঃ উৎপাতায়ৈব কল্পতে ||
~" বৈদিক শাস্ত্র বিধি বাদ দিয়ে যে ঐকান্তিক ভক্তি সেটি সমাজের উৎপাত মাত্র "
কলিবদ্ধ জীবের কোন কল্যাণ নেই। আগে তাকে কলির কবল থেকে মুক্ত হতে হবে। কলির আচার ছাড়তে হবে। যেমন আমিষ আহার, নেশা ভাং, জুয়া তাস, অবৈধ যৌনতা- এসব অবশ্যই ছাড়তে হবে। আর যুগধর্ম হরিনাম গ্রহণ করতে হবে। যক্ষাগ্রস্থ রোগী যদি "দুধও খাবো,তামাকও খাবো" এভাবেই রোগমুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করে আর মনে মনে নিরোগ আনন্দময় অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করে তাহলে সেই উৎপাত রোগী কোনদিন সুস্থ হবে না।
শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া বিধি নির্দেশ পালন করে চলাই ভক্তি। অন্যথা বিধি না মেনে 'আমি ভগবান মানি', 'শ্রীকৃষ্ণ কে বিশ্বাস করি', 'শ্রীকৃষ্ণ আমার প্রিয় প্রভু',- এসব কথা বলা কেবল উৎপাতের পরিচায়ক মাত্র।
তাই বিধি ভক্তি করতে হবে, শাস্ত্রের নিয়মে ভক্তি করতে হবে, সদগুরুদেবের চরণাশ্রয় হয়ে ভক্তিজীবন এগিয়ে নিতে হবে।
🌿 কি করে বুজবেন কে আপনার গুরু হতে পারেন? গুরু-নির্ণয় করার পদক্ষেপ কি :-
[শ্রী শ্রী ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে(ইসকন) যেভাবে দীক্ষা দেয়]
🌼একবছর প্রস্ততিমূলক সময়কাল
> ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া
> চারটি বিধিনিষেধ কঠোর ভাবে পালন করা, যথা :-
i)আমিষাহার বর্জন (মাছ, মাংস, ডিম,রসুন, পিঁয়াজ, মসুর ডাল এগুলো বর্জন বর্জন করা)
ii) নেশা বর্জন ( বিড়ি, পান, তামাক, চা, কফি বর্জন করা )
iii) অবৈধ যৌন সঙ্গ বর্জন
iv)দ্যুত ক্রীড়া বর্জন (তাস, পাশা, লটারী,জুয়া এগুলোকে বর্জন করা)
> প্রাতঃকালিন অনুষ্ঠানে প্রতিদিন অংশগ্রহণ করা (মন্দিরবাসিরা)
> বাড়িতে বা নামহট্টে প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ( মন্দিরের বাইরের অধিবাসীরা)
* প্রভূপাদাশ্রয় (সম্প্রদায়ের/সংঘটনের সিনিয়র আচার্য) গ্রহন করা:-
> প্রধানতম শিক্ষা-গুরু হিসেবে শ্রীল প্রভূপাদের উপর মনোযোগ দেওয়া।
> প্রণাম করার সময় শ্রীল প্রভূপাদের প্রণাম মন্ত্র স্থব করা।
> জ্যোষ্ঠ ইসকন ভক্তদের দ্বারা পথপ্রদর্শন (শিক্ষ গুরু)
🌼দীক্ষা ও শিক্ষা-গুরু পদাশ্রয়
>প্রভুপাদের অন্ততঃ ছয় মাস পর, কেউ তার শিক্ষাগুরুর মধ্য থেকে একজন ইসকন অনুমোদিত দীক্ষাগুরু নির্ণয় করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে ছয় মাস সময়সীমাটি নূন্যতম সময়, কিন্তু এই নির্ণয় করতে যতটা সময় দরকার ততটাই নেওয়া যাবে।
> নিজেদের বিদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সুবিবেচকের মত দীক্ষাগুরু নির্ণয় করা শিষ্যদের দায়িত্ব।
> সুতারং পদ্ধতিটা হচ্ছে গুরু গ্রহন করার আগে কমপক্ষে একবছর ধরে তাঁর কাছ থেকে শ্রবন করা উচিৎ। আর তখন সে উপলব্ধি করতে পারে যে "হ্যা, ইনি এমনই একজন গুরু যিনি আমাকে শিক্ষা দিতে পারেন।" তখন মন থেকেই গুরু হিসেবে গ্রহন করা যায়। ঝোকের বশে গ্রহন করবে না।
(শ্রীমদ্ভাগবতম ১.১৬.২৫ তাৎপর্য, জানুয়ারী ২১, ১৯৭৪)
( এই সম্পর্কে একজন ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন শ্রীমৎ সুভগ স্বামী গুরুমহারাজকে মায়াপুরে যে কি করে একজন কনিষ্ঠ ভক্ত তার গুরু নির্বাচন করতে পারে তখন উনি বলেছিলেন যার কথা শুনে মনের জড়জাগতিক আসক্ত মুক্ত হচ্ছে এবং এই চারটি বিধিনিষেধ পালন করতে মনে উৎসাহিত বোধ করছেন মনে করবে সেই তার গুরু হবার যোগ্য)
> কোন আন্তরিক ভক্তের উচিৎ শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে সদগুরু নির্ণয় করা। শ্রীল জীব গোস্বামী বংশানুক্রমিকভাবে বা সামাজিক প্রথার বশবর্তী হয়ে কুলগুরু গ্রহন না করতে উপদেশ দিচ্ছেন। পারমার্থিক জীবনে যথার্থভাবে অগ্রসর হওয়ার জন্য সদগুরুর অনুসন্ধান করা অবশ্য কর্তব্য।
🌼সদ্ গুরুর যোগ্যতা কি:-
🔘শ্রীগুরুদেব সঠিক পরম্পরা ধারায় থাকবেন।(সঠিক সিদ্ধ সম্প্রদায় -৪সম্প্রদায়ের যে কোনো ১টি, ইসকনের গুরুদেবগন ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের)
🔘 কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হবেন।
🔘৪বিধিনিষেধ পালন করবেন।
🔘শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে আচার ও প্রচার করেন ও
🔘 হরিনাম পরায়ণ হবেন।
0 Comments