অজ্ঞান তিমিরন্ধস্য
এক গ্রামে এক ভক্তের বাড়ীতে তাঁর গুরুদেব এসেছেন। গুরুদেবের লাবণ্যমন্ডিত দেহ, সুললিত কন্ঠস্বর, দেহের উজ্জ্বল কান্তি, সুন্দর কীর্ত্তণ শ্রবণ করে ও তাকে দর্শণ করে গ্রামবাসীগণ কয়েকদিন আনন্দের মধ্যে ছিলেন। গুরুদেব কয়েকদিন থাকার পর চলে গেলেন।
কিছুদিন পর সেই গ্রামে অন্য একজন ভক্তের বাড়ীতে তাঁর গুরুদেব এসেছেন। গুরুদেব ছিলেন রোগা, কালো, কর্কশ কন্ঠস্বর। এইসব দেখে গ্রামের লোক তাঁর কাছে আসেন না। শিষ্য গুরুদেবকে একদিন বললেন, “গুরুদেব। পাশের বাড়ীতে একজন গুরুদেব এসেছিলেন তিনি দেখতে যেমন, গানও তেমন, আচার-ব্যবহার খুবই সুন্দর। গ্রামবাসীরা তাঁর কাছে এসে তাঁর মুখে বক্তৃতা শুনত। কিন্তু আপনার কাছে কেউ আসেন না।” গুরুদেব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন,- “হু”। তোমরা গুরু-প্রণামমন্ত্র জান ? তাতে কি বলেছে বলতো।
অজ্ঞনতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ॥
অর্থাৎ, অজ্ঞানগুরু তিমির মত মোটা হয়। তাই তার গম্ভীর স্বর। কিন্তু জ্ঞানবান গুরু শলার মত রোগা হয়। তিনি মৃদু মৃদু কথা বলেন। তাই শাস্ত্রে বলেছেন অজ্ঞানী গুরুকে পরিত্যাগ করে শলার মতো জ্ঞানবান গুরুকে প্রণাম করি।” গুরুদেবের এই কথা শুনে সকলে স্থির হলেন ও হৃদয়ে শান্তি লাভ করলেন।
হিতোপদেশ।
জগতে যারা নিজেকে গুরু বলে জাহির করে, যারা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে জগতের মানুষকে বিপথগামী করে, তারা শিষ্যের মঙ্গল তো দূরের কথা গুরুশিষ্য উভয়েই নরকে গমন করে। এই সমস্ত গুরু হরি-গুরু-বৈষ্ণবকে লঙ্ঘন করে নিজে গুরু সাজতে চায়। এদের সঙ্গ করলে হরিভজন থেকে ছুটি নিতে হয়।

Post a Comment

0 Comments