কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।


কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।





কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।
নাম হৈতে হয় সর্ব জীবের নিস্তার।‌
নাম বিনা কলিকালে নাহি আর ধর্ম।
সর্বমন্ত্রসার নাম এই শাস্ত্র মর্ম।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত আদি-১৭/২২,৭/৭৪।

কলিবদ্ধ জীবের উদ্ধারের জন্য কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু গোলকের প্রেমধন হরিনাম সংকীর্তন-

হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণকৃষ্ণ হরেহরে
হরেরাম হরেরাম রামরাম হরেহরে

এই মহামন্ত্র প্রদান করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন
এই দিব্য হরিনাম থেকেই সর্বসিদ্ধি হইবে সবার।
শ্রীমদ্ভাগবতে নির্দেশ রয়েছে-

কলের্দোষনিধে রাজন্ অস্তি হ্যেকো মহান্ গুণঃ।
কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গ পরং ব্রজেৎ॥

অর্থঃ হে রাজন্!কলিযুগ সমস্ত দোষের আকর।কিন্তু এই কলিযুগে একটি মাত্র মহান গুণ রয়েছে।তা হল কেবল মাত্র শ্রীকৃষ্ণের নাম কীর্তন করে,জীব সংসার বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবানকে লাভ করতে পারে।

শ্রীচৈতন্যভাগবতে(আদি ৭/৭৩)তাই বলা হয়েছে,

কৃষ্ণমন্ত্র হৈতে হবে সংসার মোচন।
কৃষ্ণনাম হৈতে পাবে কৃষ্ণের চরণ॥

শ্রীমদ্ভাগবতে (১২/৩/৫১-৫২) বলা হয়েছে-

কৃতে যৎ ধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ।
দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ হরিকীর্তনাৎ॥

অর্থঃ,সত্যযুগে ধ্যান,ত্রেতাযুগে যজ্ঞ,দ্বাপরযুগে অর্চন দ্বারা যা লাভ হয়,আর কলিযুগে কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণনাম সংকীর্তন দ্বারা তা লাভ হয়ে থাকে।

শ্রীবিষ্ণুরহস্যে উল্লেখ রয়েছে-

এতদেব পরং জ্ঞানম্ এতদেব পরং তপঃ।
এতদেব পরং তত্ত্বং বাসুদেবস্য কীর্তনম্॥

অর্থঃ, শ্রীকৃষ্ণের নাম কীর্তনই পরম জ্ঞান,শ্রেষ্ঠ তপস্যা এবং পরম তত্ত্ব বলে অবিহিত।

বৈষ্ণব চিন্তামণি শাস্ত্রে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে শ্রীনারদ মুনি উপদেশ দিচ্ছেন যে,হে রাজন!ভগবানের নাম করতে দেশ বা কালের কোনও নিয়ম নেই,এই বিষয়ে কারও সন্ধিগ্ধ হওয়া উচিত নয়।এই পৃথিবীতে দান,যজ্ঞ,স্নান এবং মন্ত্রাদি বিষয় সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।কিন্তু শ্রীহরির নাম সংকীর্তন করতে কোনও সময়ের অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।প্রায় সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হরিনাম পরম পবিত্রকারী,তাঁর নাম কীর্তনে শৌচ-অশৌচের কোনও বিচার নেই।সর্বদা এবং সর্বত্র তাঁর নাম কীর্তন করা কর্তব্য।

শ্রীবৃহন্নারদীয় পুরাণে ভগবদ্ভক্ত শ্রীবলি মহারাজ শুক্রাচার্যের কাছে বলেছিলেন-

জিহ্বাগ্রে বর্ততে যস্য হরিরিত্যক্ষরদ্বয়ম্।
বিষ্ণোর্লোকমবাপ্নেতি পুনরাবৃত্তিদুর্লভম্॥

অর্থঃ,যাঁর জিহ্বাতে হরিনামের দুটি অক্ষর বিরাজমান থাকে,তাঁর বিষ্ণুলোকে গতি লাভ হয়,তাঁকে কখনও আর এই দুঃখপূর্ণ সংসারে ফিরে আসতে হয় না।

শ্রীনারদ মুনি নির্দেশ দিয়েছেন-

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা॥

অর্থঃ, কেবলমাত্র হরিনাম,কেবলমাত্র হরিনাম, কেবলমাত্র হরিনাম কীর্তনই কলিযুগের মানুষের একমাত্র পথ।এ ছাড়া অন্য কোন গতি বা উপায় নেই, নেই,নেই।(শ্রীবৃহন্নারদীয় পুরাণ)

আরও বলা হয়েছে যে,একবার মাত্র চৈতন্যময় হরির দিব্য নাম উচ্চারণে যে ফললাভ হয়,সহস্রমুখ অনন্তদেব এবং চতুর্মুখ ব্রহ্মাও সেই ফল বর্ণনায় সমর্থ হন না।

আদি পুরাণে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন,হে অর্জুন!শ্রদ্ধা বা অবহেলাক্রমে যারা আমার নাম জপ করে,সর্বদা আমার হৃদয়ে তাদের নাম জাগরিত থাকে।আর অধিক বলতে কি,আমার নামের সদৃশ জ্ঞান,আমার নামের তুল্য ব্রত,ধ্যান,দান,শান্তি, পুণ্য গতি আর কিছুই নেই।এই নামই পরম মুক্তি, নামই পরম গতি,নামই পরম শান্তি,নামই পরম স্থিতি, নামই পরম বুদ্ধি,নামই পরম প্রীতি,নামই পরম স্মৃতি, নামই পরম প্রভু এবং এই নামই পরম আরাধনার বিষয়।

শ্রীপদ্ম পুরাণের বৈশাখ মাহাত্ম্যে বর্ণিত হয়েছে-
পাপী ব্যক্তিরা যদি হরিনাম জপে একান্ত আসক্তচিত্ত হয়, তা হলে যমরাজের ভীষণ দূতেরা তার কাছেও অগ্রসর হতে পারেন না।

শ্রীলঘুভাগবতামৃতে শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদ বর্ণনা করেছেন,

তে সভাগ্যা মনু্ষ্যেষু কৃতার্থা নৃপ নিশ্চিতম্।
স্মরন্তি যে স্মারয়ন্তি হরের্নাম কলৌ যুগে॥

অর্থঃ, হে নৃপ!যারা কলিযুগে কেবল হরিনাম স্মরণ করে,বা অন্যকে হরিনাম স্মরণ করিয়ে দেয়,তারাই এই মানব সমাজে ভাগ্যবান এবং কৃতার্থ।

শ্রীল রূপ গোস্বামী কৃষ্ণনাম স্তোত্রে ব্যাখ্যা করেছেন-
ভগবৎ নামরূপ সূর্যের আভাসেই সংসারের অন্ধকার বিনষ্ট হয় এবং তত্ত্বজ্ঞানহীন অন্ধ ব্যক্তি ভক্তিচক্ষু লাভ করতে পারে।এই জগতে কোনও বিদ্বান ব্যক্তিই শ্রীনামের মহিমা সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে সমর্থ হন না।.

Post a Comment

0 Comments