গল্পে উপদেশ ~
এক গ্রামে এক রাজপুত ছিল । তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে একটি ছেলে ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না । সে সেই রাজপুতের বাড়িতে কাজ করতে লাগল । প্রত্যেক দিন ভোরে সে গোরু বাছুর চরাতে যেত আর ফিরে এসে খাবার খেত । এইভাবে দিন কাটছিল ।
একদিন দুপুরে সে গোরু চরিয়ে ফিরে এলে রাজপুতের পরিচারিকা তাকে ঠাণ্ডা রুটি খেতে দিল । তখন ছেলেটি বলল " একটু দই / ঘোল পেলে ভালো হত । " পরিচারিকা বলল -- " যা - যা তোর জন্য আবার এসব করতে পারব না । যা , এমনিই খেয়ে নে , না খেলে তোর যা ইচ্ছা কর । " সেই ছেলেটির তখন খুব রাগ হলো , সে ভাবল যে আমি এত রোদে গোরু চরিয়ে এলাম , একটু দই চাইলাম তো মুখ ঝাম্ টা দিল । সে ক্ষিধে নিয়েই সেখান থেকে চলে গেল ।
গ্রামের কাছেই একটি শহর ছিল । সেই শহরে একটি সাধুদের দল এসেছিল । ছেলেটি সেইখানে চলে গেল । সাধুরা তাকে খেতে দিল আর জিজ্ঞাসা করল - " তোমার সংসারে কে কে আছে ? " সে বলল , " কেউ নেই । " তখন সাধুরা বলল - " তুমি সাধু হয়ে যাও । " ছেলেটি সাধু হয়ে গেল । পরে সে পড়াশোনা করার জন্য কাশী গেল । সেখানে লেখাপড়া শিখে খুব বিদ্বান হলো । কয়েক বছর পরে সে মণ্ডলেশ্বর ( মোহন্ত ) নির্বাচিত হল । মণ্ডলেশ্বর হবার পর একদিন তার সেই পুরানো শহর থেকে নিমন্ত্রণ এলো । সেই সাধুটি তখন নিজের মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে সেখানে এলেন ।
যে রাজপুতের কাছে তিনি আগে কাজ করতেন , সেই রাজপুত বৃদ্ধ হয়েছিলো । সেই রাজপুত তাঁর কাছে এসে সৎসঙ্গ করলেন এবং প্রার্থনা জানালেন - " মহারাজ ! একবার আমার কুটিরে পদার্পণ করুন , যাতে আমার কুটির পবিত্র হয় । " মণ্ডলেশ্বর সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন ।
মণ্ডলেশ্বর তাঁর মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে রাজপুতের গৃহে গেলেন । খাবার সময় হলে পংক্তি ভোজনের ব্যবস্থা হলো এবং সকলে মিলে খেতে বসলেন । গীতার পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ করা হলো এবং তারপরে সকলে খেতে শুরু করলেন । মহারাজের সামনে নানাপ্রকার সুখাদ্য থরে থরে সাজানো ছিল । সেই রাজপুত মণ্ডলেশ্বর মহারাজের কাছে এলেন , তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিচারক হাতে হালুয়ার পাত্র নিয়ে এলো ।
রাজপুতও মহারাজকে অনুরোধ করতে লাগলেন যাতে তিনি অনন্তঃ একটু হালুয়া তাঁর হাত থেকে নেন । মহারাজ তাইতে হেসে ফেললেন । তাঁর হাসি দেখে রাজপুত আশ্বর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনি হাসছেন কেন ? " মহারাজ বললেন , " আমার একটা পুরানো কথা মনে পড়ে হাসি পেল । " রাজপুত জিজ্ঞাসা করলেন , " কি কথা , আমাকে বলুন ! "
মহারাজ তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন , " ওহে , তোমরা একটু অপেক্ষা করো , বসো , জমিদার একটি পুরোনো কথা জানতে চাইছেন , তাই বলি শোনো । " মহারাজ রাজপুতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনার জ্ঞাতির একজন আপনার সঙ্গে থাকত , সেই পরিবারের কেউ আছে কি ? " রাজপুত বললেন , " একটি ছেলে শুধু ছিল , সে কিছুদিন গোরু চরাত , তারপর কি জানি কোথায় চলে গেল ! অনেকদিন হয়ে গেল , আর সে ফিরে এলো না । "
মহারাজ বললেন , " আমিই সেই ছেলে ! কাছেই এক সাধুমণ্ডল এসেছিলো , আমি সেখানেই গিয়েছিলাম । পরে কাশী চলে যাই , সেখানে লেখাপড়া শিখে পরে মণ্ডলেশ্বর হয়েছি । এই সেই দালান , এখানেই একদিন আপনার বাড়ির পরিচারিকা আমাকে সামান্য একটু দই দিতে আপত্তি করেছিল । আজ সেই আমিই আর এই সেই দালান , আপনিও সেই একই ব্যক্তি , যিনি নিজের হাতে আমাকে মোহনভোগ দিয়ে বলছেন যে দয়া করে আমি যেন আপনার হাত থেকে একটু মোহন ভোগ খাই ! "
" চাইলে পাওয়া যায় না ঘোল , তবু হলাম ধন্য ।
গলায় বাধে মোহন ভোগ এতো সাধু সঙ্গের পুণ্য ।। "
সাধুদের শরণ গ্রহণ করলে এমনই হয় যে , যেখানে সামান্য ঘোল পাওয়া যায় না , সেখানে মোহন ভোগও গলায় আটকে যায় । যদি কেউ ভগবানের শরণ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সাধুদেরও বরণীয় হয়ে ওঠেন । লক্ষপতি বা কোটিপতি হলে নয় , ভগবানের শরণাগত হলে , ভগবানের ভক্ত হলে তবেই স্বাধীন হওয়া যায় এবং তা একমাত্র মনুষ্যজন্মেই সম্ভব ।
মনে রাখা দরকার যে , আমরা একজন ব্যক্তির বাইরে দেখে বিচার করি কিন্তু তার মধ্যে কি আছে তা আমরা জানি না । তাই যে যেমনই হোক না কেন কাউকে নিচু বা খারাপ মনে করা উচিত নয় । যেমন আজ যে সাধারণ সে হয়ত একজন ডাক্তার হবে আর চিকিৎসা করার জন্য তার কাছে যেতে হবে । যার জন্ম যেমনই হোক না কেন মানুষ তার কর্ম্মে পরিচিত হয় ।
ভগবান বুদ্ধ ও আগন্তুক
#একটি_লোভী_ইঁদুরের_কাহিনী
>>>>>>>>>হরেকৃষ্ণ<<<<<<<<<<
গৌতম মুনির আশ্রমে মহাতপা নামে এক মুনি বাস করতেন। তিনি ছিলেন পরম যোগী। ঋষি মহাতপা যখন ভগবানের মহিমা কীর্তন করতেন সেসময় একটি ইঁদুর এসে চুপটি করে ঋষির সামনে বসে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে সেই মহিমা শ্রবণ করত।ইঁদুরের মত একটি জীবের মধ্যেও এত ভক্তি দেখে ঋষি মহাতপার সেই ইদুরের প্রতি অত্যন্ত করুণা হল।তিনি ভাবলেন, এই ছোট্ট জীব ইঁদুরের সবসময় বৃহৎ জীবদের ভয়ে থাকতে হয়।যেকোনো সময় কোনো বৃহৎ জীবের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে।তিনি ঠিক করলেন এই ইঁদুরটির এরকম জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন যাতে সে ভয় না পেয়ে সসম্ভ্রমে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। ঋষি মহাতপার এমনই অলৌকিক শক্তি ছিল যে তিনি যাকে যা বলতেন সেটিই সত্যি হতো।তাই ইঁদুরটির দুঃখ দূর করার জন্য ঋষি মহাতপা ভগবানের কাছে ইঁদুরটিকে সিংহে রূপান্তরিত করার জন্য প্রার্থনা করলেন। আর তক্ষুনি সেই ছোট্ট ইঁদুরটি এক বিরাট সিংহে রূপান্তরিত হল। যেহেতু এখন সে সিংহ হয়েছে তাই সে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে গর্জন করতে করতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। অন্য জন্তুরা তাকে অবনত হয়ে সম্মান নিবেদন করতো এবং তার নামে 'জয় পশুরাজ কি -জয়' বলে জয়ধ্বনি দিত।বনের অন্যান্য পশুরা আসল ব্যাপারটি কিছুই জানতো না।প্রকৃত সত্যটি জানতেন শুধু ঋষি মহাতপা। কৃত্রিম সিংহটিও এই ব্যাপারে সচেতন ছিল যে তার প্রকৃত বংশপরিচয় জানেন শুধু ঋষি মহাতপা। তার মনে ভয় ছিল যে কোনদিন যদি কেউ তার আসল পরিচয় জেনে ফেলে যে সে সিংহ নয়,সে একটি ইঁদুর, তাহলে সেদিন থেকে কেউ আর তাকে ভয় পাবে না,সম্মান করবে না।তার এই মানসিক সমস্যা দূর করে নিশ্চিত হবার জন্য কৃত্রিম সিংহটি একদিন ভাবল,যদি ঋষি মহাতপাকে হত্যা করা যায় তাহলেই আর কেউ কিছু জানতে পারবে না। পরদিন সিংহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋষি মহাতপাকে হত্যা করতে এলো। কিন্তু ঋষি তাঁর যৌগিক ক্ষমতাবলে সিংহের অভিপ্রায় জানতে পারলেন। মূর্খ সিংহটি আসলে তার ক্ষমতা টিকে থাকার লোভে অন্ধ হয়ে একথা বুঝতে পারে নি যে, যেতাকে ইঁদুর থেকে সিংহে পরিণত করেছিল, সে পুনরায় তাকে ইঁদুর করে দিতে পারে।আর হলোও তাই।ঋষি মহাতপা সিংহের বদমতলব বুঝতে পেরে তাকে আবার ইঁদুরে পরিণত করে দিলেন।((হরিবোল))) হিতোপদেশঃ প্রথমত,ঋষি মহাতপার দিক দিয়ে দেখতে গেলে ইঁদুরের প্রতি তাঁর করুণা যথার্থ করুণা ছিল না।প্রকৃত করুণা হল সেটাই যার ফলে যেকোনো জীবই ভগবানের সান্নিধ্য লাভের যোগ্য হয়ে ওঠে। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইঁদুরটি ভক্তিভরে প্রতিদিন ভগবানের মহিমা শ্রবণ করত।কিন্তু ইঁদুরটিকে আরও বেশি করে ভগবানের মহিমা কীর্তন না শুনিয়ে বা ভগবানের প্রসাদ সেবন না করিয়ে(যার ফলস্বরূপ হয়তো ইঁদুরটি পরবর্তী জন্মে অধ্যাত্ম সাধনশীল মানবজন্ম লাভ করতে পারতো) তিনি তাকে সিংহে পরিণত করলেন। এটা এখানে বিধির উপর বিধানগিরির অপরাধ হয়ে গেল। ভগবানই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা, তিনি জানেন,জীবের কর্মফল অনুযায়ী কাকে কোন জীবন দান করলে তার মঙ্গল হবে।প্রকৃত ভক্ত তাই যোগীর ন্যায় অলৌকিক শক্তি কামনা করেন না,যার ফলে অহংকার উৎপন্ন হয়ে ভক্তিজীবনকে নষ্ট করে।অতএব পার্থিব করুণা প্রকৃত করুণা নয়।এর দ্বারা পরিশেষে কারোরই কল্যাণ হয় না। পারমার্থিক করুণাই প্রকৃত করুণা। দ্বিতীয়ত, সিংহ বা ইঁদুরটির দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমরা এই শিক্ষা লাভ করি যে আমরা এই জগতের কোনো শক্তি বা বিষয়ই যে আমার নয় এই কথা ভুলে গিয়ে লোভে বা অহমিকায় অন্ধ হয়ে যদি আমরা স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করি,তাহলে যা কিছু আমরা অর্জন করি না কেন তা সবই হারিয়ে ইঁদুরটির(পুনর্মুষিক ভবঃ) মতোই আমাদের অবস্থা হবে। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি হল,সকল সময়ে ভগবানের শরণাগত থাকা। গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতির কথা বা কি শিখতে পারলেন তা কমেন্টে জানাবেন। শেয়ার করে সকলকে জানার সুযোগ করে দিন।
"একটি শিক্ষামূলক গল্প সাধু - সন্তের শরণাগতি"
এক গ্রামে এক রাজপুত ছিল । তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে একটি ছেলে ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না । সে সেই রাজপুতের বাড়িতে কাজ করতে লাগল । প্রত্যেক দিন ভোরে সে গোরু বাছুর চরাতে যেত আর ফিরে এসে খাবার খেত । এইভাবে দিন কাটছিল ।
একদিন দুপুরে সে গোরু চরিয়ে ফিরে এলে রাজপুতের পরিচারিকা তাকে ঠাণ্ডা রুটি খেতে দিল । তখন ছেলেটি বলল " একটু দই / ঘোল পেলে ভালো হত । " পরিচারিকা বলল -- " যা - যা তোর জন্য আবার এসব করতে পারব না । যা , এমনিই খেয়ে নে , না খেলে তোর যা ইচ্ছা কর । " সেই ছেলেটির তখন খুব রাগ হলো , সে ভাবল যে আমি এত রোদে গোরু চরিয়ে এলাম , একটু দই চাইলাম তো মুখ ঝাম্ টা দিল । সে ক্ষিধে নিয়েই সেখান থেকে চলে গেল ।
গ্রামের কাছেই একটি শহর ছিল । সেই শহরে একটি সাধুদের দল এসেছিল । ছেলেটি সেইখানে চলে গেল । সাধুরা তাকে খেতে দিল আর জিজ্ঞাসা করল - " তোমার সংসারে কে কে আছে ? " সে বলল , " কেউ নেই । " তখন সাধুরা বলল - " তুমি সাধু হয়ে যাও । " ছেলেটি সাধু হয়ে গেল । পরে সে পড়াশোনা করার জন্য কাশী গেল । সেখানে লেখাপড়া শিখে খুব বিদ্বান হলো । কয়েক বছর পরে সে মণ্ডলেশ্বর ( মোহন্ত ) নির্বাচিত হল । মণ্ডলেশ্বর হবার পর একদিন তার সেই পুরানো শহর থেকে নিমন্ত্রণ এলো । সেই সাধুটি তখন নিজের মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে সেখানে এলেন ।
যে রাজপুতের কাছে তিনি আগে কাজ করতেন , সেই রাজপুত বৃদ্ধ হয়েছিলো । সেই রাজপুত তাঁর কাছে এসে সৎসঙ্গ করলেন এবং প্রার্থনা জানালেন - " মহারাজ ! একবার আমার কুটিরে পদার্পণ করুন , যাতে আমার কুটির পবিত্র হয় । " মণ্ডলেশ্বর সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন ।
মণ্ডলেশ্বর তাঁর মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে রাজপুতের গৃহে গেলেন । খাবার সময় হলে পংক্তি ভোজনের ব্যবস্থা হলো এবং সকলে মিলে খেতে বসলেন । গীতার পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ করা হলো এবং তারপরে সকলে খেতে শুরু করলেন । মহারাজের সামনে নানাপ্রকার সুখাদ্য থরে থরে সাজানো ছিল । সেই রাজপুত মণ্ডলেশ্বর মহারাজের কাছে এলেন , তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিচারক হাতে হালুয়ার পাত্র নিয়ে এলো ।
রাজপুতও মহারাজকে অনুরোধ করতে লাগলেন যাতে তিনি অনন্তঃ একটু হালুয়া তাঁর হাত থেকে নেন । মহারাজ তাইতে হেসে ফেললেন । তাঁর হাসি দেখে রাজপুত আশ্বর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনি হাসছেন কেন ? " মহারাজ বললেন , " আমার একটা পুরানো কথা মনে পড়ে হাসি পেল । " রাজপুত জিজ্ঞাসা করলেন , " কি কথা , আমাকে বলুন ! "
মহারাজ তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন , " ওহে , তোমরা একটু অপেক্ষা করো , বসো , জমিদার একটি পুরোনো কথা জানতে চাইছেন , তাই বলি শোনো । " মহারাজ রাজপুতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনার জ্ঞাতির একজন আপনার সঙ্গে থাকত , সেই পরিবারের কেউ আছে কি ? " রাজপুত বললেন , " একটি ছেলে শুধু ছিল , সে কিছুদিন গোরু চরাত , তারপর কি জানি কোথায় চলে গেল ! অনেকদিন হয়ে গেল , আর সে ফিরে এলো না । "
মহারাজ বললেন , " আমিই সেই ছেলে ! কাছেই এক সাধুমণ্ডল এসেছিলো , আমি সেখানেই গিয়েছিলাম । পরে কাশী চলে যাই , সেখানে লেখাপড়া শিখে পরে মণ্ডলেশ্বর হয়েছি । এই সেই দালান , এখানেই একদিন আপনার বাড়ির পরিচারিকা আমাকে সামান্য একটু দই দিতে আপত্তি করেছিল । আজ সেই আমিই আর এই সেই দালান , আপনিও সেই একই ব্যক্তি , যিনি নিজের হাতে আমাকে মোহনভোগ দিয়ে বলছেন যে দয়া করে আমি যেন আপনার হাত থেকে একটু মোহন ভোগ খাই ! "
" চাইলে পাওয়া যায় না ঘোল , তবু হলাম ধন্য ।
গলায় বাধে মোহন ভোগ এতো সাধু সঙ্গের পুণ্য ।। "
সাধুদের শরণ গ্রহণ করলে এমনই হয় যে , যেখানে সামান্য ঘোল পাওয়া যায় না , সেখানে মোহন ভোগও গলায় আটকে যায় । যদি কেউ ভগবানের শরণ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সাধুদেরও বরণীয় হয়ে ওঠেন । লক্ষপতি বা কোটিপতি হলে নয় , ভগবানের শরণাগত হলে , ভগবানের ভক্ত হলে তবেই স্বাধীন হওয়া যায় এবং তা একমাত্র মনুষ্যজন্মেই সম্ভব ।
মনে রাখা দরকার যে , আমরা একজন ব্যক্তির বাইরে দেখে বিচার করি কিন্তু তার মধ্যে কি আছে তা আমরা জানি না । তাই যে যেমনই হোক না কেন কাউকে নিচু বা খারাপ মনে করা উচিত নয় । যেমন আজ যে সাধারণ সে হয়ত একজন ডাক্তার হবে আর চিকিৎসা করার জন্য তার কাছে যেতে হবে । যার জন্ম যেমনই হোক না কেন মানুষ তার কর্ম্মে পরিচিত হয় ।
ভগবান বুদ্ধ ও আগন্তুক
রাজগৃহে অধিষ্ঠান করছিলেন ভগবান বুদ্ধ। একদিন এক আগন্তুক এলেন বুদ্ধের কাছে। প্রণাম করে প্রশ্ন করলেন, হে প্রভু, একটি জিজ্ঞাস্য আছে। যদি অনুমতি করেন তো প্রকাশ করি!
বুদ্ধ স্মিত হেসে বললেন, বলো, তোমার যা জিজ্ঞাস্য আছে।
আগন্তুক বললেন, প্রভু, আপনি কখনোই উগ্র হয়ে যান না, ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে কোনোদিন কটু বাক্য অব্দি বলেন না। এমনকি যখন কেউ আপনাকে উত্ত্যক্ত করার মারাত্মক ভুল করে, তাকেও আপনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। এই নম্র, শান্ত স্বভাব কিভাবে আপনি রপ্ত করেছেন যদি অনুগ্রহ করে বলেন!
বুদ্ধ সবটা মন দিয়ে শুনলেন। এবং শেষে আগন্তুককে কাছে ডেকে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি আর সাত দিন পরে তুমি মারা যাবে। তাই এইসব জিজ্ঞাসা ছেড়ে শেষ কটা দিন, নিজের পরিবার, পরিজনের সঙ্গে কাটাও।
বুদ্ধের মুখে এই কথা শুনে আগন্তুক স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিষণ্ন মনে বুদ্ধকে প্রণাম করে সেখান থেকে বিদায় নিল। পরের সাত দিন সে ভীষণ নিচু স্বরে, নম্রভাবে, সবার সঙ্গে শেষ দেখা সারলো। এবং জেনে না জেনে বিভিন্ন ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল।
৭ দিন পর আগন্তুক আবার রাজগৃহে এসে ভগবান বুদ্ধের পায়ে প্রণাম করে বললেন, হে প্রভু! আমার এই জীবনের আজ শেষ দিন। আপনার দর্শন এবং আশীর্বাদে জীবন শেষ হবে এই আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
বুদ্ধ হেসে বললেন, বিগত সাত দিনে তোমার আচরণ কেমন ছিল?
আগন্তুক বললেন, ভীষণ শান্ত এবং নম্র। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমি একটু একটু করে শেষের দিকে যাচ্ছি। তাই রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিমান করে এই অবশিষ্ট সামান্য সময়টুকু অপচয় করতে চাই নি। যার সঙ্গেই মিশেছি, নম্রভাবে, শান্তভাবে কথা বলেছি।
বুদ্ধ বললেন, তুমি বোধহয় তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। আমি তোমায় সরাসরি উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু তাহলে তুমি শুধু শুনতে, উপলব্ধি করতে পারতে না। এই জগতে আমরা সবাই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছি। কেউ জানে না কবে সে থেমে যাবে। তাই যতটুকু সময় বেঁচে আছি, ভালোবাসা, শান্তি, আর ক্রোধহীনভাবে থাকাই বাঞ্ছনীয়। আর হ্যাঁ, তুমি যাতে নিজে তা উপলব্ধি করো সেই কারণে তোমায় বলেছিলাম তুমি সাত দিন পরেই মারা যাবে। তুমি মারা যাচ্ছো না। নিশ্চিন্ত থাকো।
ছলছল চোখে আগন্তুক বললেন, প্রভু, ধন্য তুমি! তুমি আমার চোখ খুলে দিলে!
বুদ্ধ স্মিত হেসে বললেন, বলো, তোমার যা জিজ্ঞাস্য আছে।
আগন্তুক বললেন, প্রভু, আপনি কখনোই উগ্র হয়ে যান না, ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে কোনোদিন কটু বাক্য অব্দি বলেন না। এমনকি যখন কেউ আপনাকে উত্ত্যক্ত করার মারাত্মক ভুল করে, তাকেও আপনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। এই নম্র, শান্ত স্বভাব কিভাবে আপনি রপ্ত করেছেন যদি অনুগ্রহ করে বলেন!
বুদ্ধ সবটা মন দিয়ে শুনলেন। এবং শেষে আগন্তুককে কাছে ডেকে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি আর সাত দিন পরে তুমি মারা যাবে। তাই এইসব জিজ্ঞাসা ছেড়ে শেষ কটা দিন, নিজের পরিবার, পরিজনের সঙ্গে কাটাও।
বুদ্ধের মুখে এই কথা শুনে আগন্তুক স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিষণ্ন মনে বুদ্ধকে প্রণাম করে সেখান থেকে বিদায় নিল। পরের সাত দিন সে ভীষণ নিচু স্বরে, নম্রভাবে, সবার সঙ্গে শেষ দেখা সারলো। এবং জেনে না জেনে বিভিন্ন ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল।
৭ দিন পর আগন্তুক আবার রাজগৃহে এসে ভগবান বুদ্ধের পায়ে প্রণাম করে বললেন, হে প্রভু! আমার এই জীবনের আজ শেষ দিন। আপনার দর্শন এবং আশীর্বাদে জীবন শেষ হবে এই আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
বুদ্ধ হেসে বললেন, বিগত সাত দিনে তোমার আচরণ কেমন ছিল?
আগন্তুক বললেন, ভীষণ শান্ত এবং নম্র। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমি একটু একটু করে শেষের দিকে যাচ্ছি। তাই রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিমান করে এই অবশিষ্ট সামান্য সময়টুকু অপচয় করতে চাই নি। যার সঙ্গেই মিশেছি, নম্রভাবে, শান্তভাবে কথা বলেছি।
বুদ্ধ বললেন, তুমি বোধহয় তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। আমি তোমায় সরাসরি উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু তাহলে তুমি শুধু শুনতে, উপলব্ধি করতে পারতে না। এই জগতে আমরা সবাই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছি। কেউ জানে না কবে সে থেমে যাবে। তাই যতটুকু সময় বেঁচে আছি, ভালোবাসা, শান্তি, আর ক্রোধহীনভাবে থাকাই বাঞ্ছনীয়। আর হ্যাঁ, তুমি যাতে নিজে তা উপলব্ধি করো সেই কারণে তোমায় বলেছিলাম তুমি সাত দিন পরেই মারা যাবে। তুমি মারা যাচ্ছো না। নিশ্চিন্ত থাকো।
ছলছল চোখে আগন্তুক বললেন, প্রভু, ধন্য তুমি! তুমি আমার চোখ খুলে দিলে!
#একটি_লোভী_ইঁদুরের_কাহিনী
>>>>>>>>>হরেকৃষ্ণ<<<<<<<<<<
গৌতম মুনির আশ্রমে মহাতপা নামে এক মুনি বাস করতেন। তিনি ছিলেন পরম যোগী। ঋষি মহাতপা যখন ভগবানের মহিমা কীর্তন করতেন সেসময় একটি ইঁদুর এসে চুপটি করে ঋষির সামনে বসে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে সেই মহিমা শ্রবণ করত।ইঁদুরের মত একটি জীবের মধ্যেও এত ভক্তি দেখে ঋষি মহাতপার সেই ইদুরের প্রতি অত্যন্ত করুণা হল।তিনি ভাবলেন, এই ছোট্ট জীব ইঁদুরের সবসময় বৃহৎ জীবদের ভয়ে থাকতে হয়।যেকোনো সময় কোনো বৃহৎ জীবের হাতে তার প্রাণ যেতে পারে।তিনি ঠিক করলেন এই ইঁদুরটির এরকম জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন যাতে সে ভয় না পেয়ে সসম্ভ্রমে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। ঋষি মহাতপার এমনই অলৌকিক শক্তি ছিল যে তিনি যাকে যা বলতেন সেটিই সত্যি হতো।তাই ইঁদুরটির দুঃখ দূর করার জন্য ঋষি মহাতপা ভগবানের কাছে ইঁদুরটিকে সিংহে রূপান্তরিত করার জন্য প্রার্থনা করলেন। আর তক্ষুনি সেই ছোট্ট ইঁদুরটি এক বিরাট সিংহে রূপান্তরিত হল। যেহেতু এখন সে সিংহ হয়েছে তাই সে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে গর্জন করতে করতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। অন্য জন্তুরা তাকে অবনত হয়ে সম্মান নিবেদন করতো এবং তার নামে 'জয় পশুরাজ কি -জয়' বলে জয়ধ্বনি দিত।বনের অন্যান্য পশুরা আসল ব্যাপারটি কিছুই জানতো না।প্রকৃত সত্যটি জানতেন শুধু ঋষি মহাতপা। কৃত্রিম সিংহটিও এই ব্যাপারে সচেতন ছিল যে তার প্রকৃত বংশপরিচয় জানেন শুধু ঋষি মহাতপা। তার মনে ভয় ছিল যে কোনদিন যদি কেউ তার আসল পরিচয় জেনে ফেলে যে সে সিংহ নয়,সে একটি ইঁদুর, তাহলে সেদিন থেকে কেউ আর তাকে ভয় পাবে না,সম্মান করবে না।তার এই মানসিক সমস্যা দূর করে নিশ্চিত হবার জন্য কৃত্রিম সিংহটি একদিন ভাবল,যদি ঋষি মহাতপাকে হত্যা করা যায় তাহলেই আর কেউ কিছু জানতে পারবে না। পরদিন সিংহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋষি মহাতপাকে হত্যা করতে এলো। কিন্তু ঋষি তাঁর যৌগিক ক্ষমতাবলে সিংহের অভিপ্রায় জানতে পারলেন। মূর্খ সিংহটি আসলে তার ক্ষমতা টিকে থাকার লোভে অন্ধ হয়ে একথা বুঝতে পারে নি যে, যেতাকে ইঁদুর থেকে সিংহে পরিণত করেছিল, সে পুনরায় তাকে ইঁদুর করে দিতে পারে।আর হলোও তাই।ঋষি মহাতপা সিংহের বদমতলব বুঝতে পেরে তাকে আবার ইঁদুরে পরিণত করে দিলেন।((হরিবোল))) হিতোপদেশঃ প্রথমত,ঋষি মহাতপার দিক দিয়ে দেখতে গেলে ইঁদুরের প্রতি তাঁর করুণা যথার্থ করুণা ছিল না।প্রকৃত করুণা হল সেটাই যার ফলে যেকোনো জীবই ভগবানের সান্নিধ্য লাভের যোগ্য হয়ে ওঠে। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইঁদুরটি ভক্তিভরে প্রতিদিন ভগবানের মহিমা শ্রবণ করত।কিন্তু ইঁদুরটিকে আরও বেশি করে ভগবানের মহিমা কীর্তন না শুনিয়ে বা ভগবানের প্রসাদ সেবন না করিয়ে(যার ফলস্বরূপ হয়তো ইঁদুরটি পরবর্তী জন্মে অধ্যাত্ম সাধনশীল মানবজন্ম লাভ করতে পারতো) তিনি তাকে সিংহে পরিণত করলেন। এটা এখানে বিধির উপর বিধানগিরির অপরাধ হয়ে গেল। ভগবানই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা, তিনি জানেন,জীবের কর্মফল অনুযায়ী কাকে কোন জীবন দান করলে তার মঙ্গল হবে।প্রকৃত ভক্ত তাই যোগীর ন্যায় অলৌকিক শক্তি কামনা করেন না,যার ফলে অহংকার উৎপন্ন হয়ে ভক্তিজীবনকে নষ্ট করে।অতএব পার্থিব করুণা প্রকৃত করুণা নয়।এর দ্বারা পরিশেষে কারোরই কল্যাণ হয় না। পারমার্থিক করুণাই প্রকৃত করুণা। দ্বিতীয়ত, সিংহ বা ইঁদুরটির দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমরা এই শিক্ষা লাভ করি যে আমরা এই জগতের কোনো শক্তি বা বিষয়ই যে আমার নয় এই কথা ভুলে গিয়ে লোভে বা অহমিকায় অন্ধ হয়ে যদি আমরা স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করি,তাহলে যা কিছু আমরা অর্জন করি না কেন তা সবই হারিয়ে ইঁদুরটির(পুনর্মুষিক ভবঃ) মতোই আমাদের অবস্থা হবে। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি হল,সকল সময়ে ভগবানের শরণাগত থাকা। গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতির কথা বা কি শিখতে পারলেন তা কমেন্টে জানাবেন। শেয়ার করে সকলকে জানার সুযোগ করে দিন।
কৃষ্ণের মাথাব্যাথা
একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শয্যায় শায়িত অবস্থায় প্রচন্ড মাথা ব্যাথার ভান করছিলেন। অনেক রাজকীয় বৈদ্যগণ এসে নানা পথ্য দিলেন, কিন্তু তাতে শ্রীকৃষ্ণের কোন উপকারই হলো না। কৃষ্ণ বলল কোন বৈদ্যই আমাকে সারাতে পারবে না। যদি কোন ভক্ত আমাকে তার পায়ের ধূলি দান করে শুধুমাত্র তখনই আমার মাথা ব্যাথা সারতে পারে। ভক্তরা উঠে বলল না না আমরা কিভাবে কৃষ্ণকে আমাদের পায়ের ধুলি দিব। আমরা তা দিতে পারব না। আমরা যদি কৃষ্ণের মাথায় আমাদের পায়ের ধূলি দেই, তবে আমরা নরকে যাব। আমরা তা হতে দিতে পারি না। তাহলে কেউ যদি আমাকে পদধূলি দিতে রাজি না হও, তাহলে বৃন্দাবনে যাও এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় ভক্ত গোপীদের কাছে গিয়ে তা চাও।
তখন ভক্তগণ গিয়ে বললেন, “হে গোপীগণ, শ্রীকৃষ্ণ এক মারাত্মক মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত, তার সুস্থতার জন্য তোমাদের পদধূলি দরকার।”
কি! আমাদের কৃষ্ণের মাথা ব্যাথা! আর সে কিনা আমাদের পায়ের ধূলি চায়! দয়া করে তোমার যত খুশি ততো নিয়ে যাও।
ভক্ত শ্রেষ্ঠ নারদমুনি বললেন, “তোমরা কি জাননা যে কৃষ্ণের মাথায় যদি কেউ পদধূলি দেয়, তবে তাকে নরকে যেতে হবে।”
গোপীগণ বললেন, “তাতে যদি শ্রীকৃষ্ণের মাথা ব্যাথা সেরে যায়, তবে তার বিনিময়ে আমরা নরকে যেতেও রাজি আছি।”
তখন ভক্তগণ গিয়ে বললেন, “হে গোপীগণ, শ্রীকৃষ্ণ এক মারাত্মক মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত, তার সুস্থতার জন্য তোমাদের পদধূলি দরকার।”
কি! আমাদের কৃষ্ণের মাথা ব্যাথা! আর সে কিনা আমাদের পায়ের ধূলি চায়! দয়া করে তোমার যত খুশি ততো নিয়ে যাও।
ভক্ত শ্রেষ্ঠ নারদমুনি বললেন, “তোমরা কি জাননা যে কৃষ্ণের মাথায় যদি কেউ পদধূলি দেয়, তবে তাকে নরকে যেতে হবে।”
গোপীগণ বললেন, “তাতে যদি শ্রীকৃষ্ণের মাথা ব্যাথা সেরে যায়, তবে তার বিনিময়ে আমরা নরকে যেতেও রাজি আছি।”
হিতোপদেশ
শুধু ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের ইচ্ছা এবং তার সেবার বাসনাই ভক্তিযোগের প্রকৃত নির্যাস।
শ্রীল প্রভুপাদের গল্পে উপদেশ ~
ভগবানের দাস হও
এক গ্রামে এক গরীব বুড়ি বাস করত। জ্বালানীর অভাবে সে কিছু দূরে এক বনের মধ্যে ঢুকল। শুকনো ডালপালা জোগাড় করে একটি বড় বোঝা বাঁধল। বোঝাটি একটু ভারী হওয়ার জন্য কোনভাবে বুড়ি তা নিজের মাথায় তুলতে পারল না। বার বার চেষ্টা করেও বিফল হল। সাহায্য করার জন্য কাছাকাছি কোন লোকজনকেও সে দেখতে পেল না। তখন সে ভগবানকে ডাকতে লাগল-“হে ভগবান, ঘরে নাতি-নাতনিরা না খেয়ে আছে। আমি জ্বালানি নিয়ে গেলে ভাত রান্না হবে। হে দয়াময়, কৃপা করে এই বোঝাটি তুলে দাও। হে হরি, বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে আমাকে বোঝাটি তুলে দাও।” বুড়িমার কাতর মিনতি শুনে হঠাত এক সুন্দর বালক এসে হাজির হল।” আমারও সময় নেই, শীগগির বলো- কি করতে হবে আমাকে?” বালকটি বলল। বুড়িমা বলল “মাথায় বোঝাটি তুলে দাও।” অমনি বালকটি বোঝাটি তুলে দিয়ে বলল- “আর কি করতে হবে ?” উত্তরে বুড়িমা বলল-“ না বাবা, আর কিছু চাই না। তক্ষুনি ছেলেটি হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেল। বুড়ি কাউকে দেখতে না পেয়ে ঘরের দিকে বোঝা মাথায় চলতে লাগল।
হিতোপদেশ
বর্তমান যুগে অধিকাংশ মানুষই পরমেশ্বর ভগবানকে নিজেদের চাকর বা দাস বানাতে চায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন-“আমার প্রীতি সাধন করে আমার সেবায় নিয়োজিত হও তাহলে তোমার অভাব অভিযোগ আমি নিজের মাথায় বহন করব।’ কিন্তু সাধারণত; মানুষ নিজের স্ত্রী-পুত্র, নাতি-নাতনী, আত্মীয় স্বজনের প্রীতি সাধনের জন্য ভগবানের কাছ থেকে সেবা আদায় করতে চায়। তাদের প্রার্থনা এইরকম- হে ভগবান, আমার মেয়ের জন্য ভাল পাত্র এনে দাও, আমার ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে দাও, আমি যেন বেশী ভোট পেয়ে যাই তুমি কৃপা কর, আমাকে মামলায় জিতিয়ে দাও। ইত্যাদি, অর্থাত, তারা নিজের সুখের জন্য আত্মপ্রীতির জন্য ভগবানকে গোলাম মনে করে। তারা পরম প্রভুর সেবা না করে তাদের নিজেদের সেবা করার জন্য পরমেশ্বর ভগবানকে আহ্বান করে। এছাড়া এই বুড়ির মতো মানুষ এই ক্ষনস্থায়ী জগতের অত্যন্ত তুচ্ছ বস্তুর প্রতি আসক্ত। সর্বশক্তিমান ভগবান যা দিতে সক্ষম তা আমাদের কল্পনার অতীত। কিন্তু জড়ভোগে অন্ধ মানুষ শুধু সংসারের বোঝা অনাদি অনন্তকাল ধরে তাদের বইতে থাকে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু প্রার্থনা করেছেন-“হে জগদীশ! আমি ধন, জন বা সুন্দরী রমণী কামনা করি না; আমি কেবল এই কামনা করি যে জন্মে জন্মে তোমাতেই আমার অহৈতুকী ভক্তি হোক।
শ্রীল প্রভুপাদের গল্পে উপদেশ
ছয় অন্ধ এবং একটি হাতি
একদা ছয় অন্ধ লোক তাদের জীবনে প্রথমবারের মত একটি হাতির সান্নিধ্যে এসেছিল। প্রত্যেকে হাতির শরীরের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাতি সম্পর্কে বলা শুরু করল।
একজন অন্ধ ব্যক্তি যে হাতির একদিকে স্পর্শ করেছি সে বলল “ হাতি হচ্ছে ভাঙ্গা দেয়ালের মতো যা যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।” দ্বিতীয় অন্ধলোকটি, যে হাতির দাঁতগুলো স্পর্শ করেছিল সে বলল “হাতি হচ্ছে মসৃণ এবং ধারালো তীরের মতো।” তৃতীয় অন্ধ লোকটি যে হাতির শুঁড়টি স্পর্শ করেছিল সে বলল “ তোমরা কেন বুঝতে পারছ না যে “হাতি হচ্ছে একটি সাপের মতো।” চতুর্থ লোকটি হাতির একটি পা ধরেছিল এবং তার কাছে মনে হল হাতি যেন একটি বৃক্ষের মতো। পঞ্চম লোকটি হাতির একটি কান ধরে সে বলল “ যত সব মূর্খের দল! তোমরা কেন বোঝ না যে হাতি একটি কুলোর মতো।”
এভাবে তারা হাতি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করতে লাগল যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন দৃষ্টি সম্পন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তি তাদেরকে নিবৃত্ত করলেন। বিজ্ঞ ব্যক্তিটি তাদের প্রতি করুণা অনুভব করলেন এবং তাদেরকে হাতির পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদান করলেন। ছয় অন্ধ ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট হলেন।
একজন অন্ধ ব্যক্তি যে হাতির একদিকে স্পর্শ করেছি সে বলল “ হাতি হচ্ছে ভাঙ্গা দেয়ালের মতো যা যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।” দ্বিতীয় অন্ধলোকটি, যে হাতির দাঁতগুলো স্পর্শ করেছিল সে বলল “হাতি হচ্ছে মসৃণ এবং ধারালো তীরের মতো।” তৃতীয় অন্ধ লোকটি যে হাতির শুঁড়টি স্পর্শ করেছিল সে বলল “ তোমরা কেন বুঝতে পারছ না যে “হাতি হচ্ছে একটি সাপের মতো।” চতুর্থ লোকটি হাতির একটি পা ধরেছিল এবং তার কাছে মনে হল হাতি যেন একটি বৃক্ষের মতো। পঞ্চম লোকটি হাতির একটি কান ধরে সে বলল “ যত সব মূর্খের দল! তোমরা কেন বোঝ না যে হাতি একটি কুলোর মতো।”
এভাবে তারা হাতি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করতে লাগল যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন দৃষ্টি সম্পন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তি তাদেরকে নিবৃত্ত করলেন। বিজ্ঞ ব্যক্তিটি তাদের প্রতি করুণা অনুভব করলেন এবং তাদেরকে হাতির পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রদান করলেন। ছয় অন্ধ ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট হলেন।
যেরূপভাবে ছয় অন্ধব্যক্তি তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হাতিটি সম্পর্কে জানতে পারেনি, ঠিক সেই কারণে আমরা এই জড়জগত সম্পর্কে এবং পরম সত্য সম্পর্কে শুধুমাত্র নিজ প্রচেষ্টার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ এবং নির্ভূল জ্ঞান লাভ করতে পারি না কেননা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো সীমাবদ্ধ এবং ভ্রান্ত। এক অন্ধ ব্যক্তি যেমন হাতিটির লেজ স্পর্শ করে এক একটি দড়ি বলে বর্ণনা করেছিল ঠিক তেমনিভাবে আমরাও পরমসত্য সম্পর্কে আংশিক উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের এই আংশিক উপলব্ধি যদিও তা সত্য তবুও সেটি পরম সত্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেয় না।
হিতোপদেশ
আমরা তত্ত্বদ্রষ্টা পারমার্থিক শিক্ষাগুরুর শরণাপন্ন হই, যিনি তাঁর চিন্ময় চক্ষু দিয়ে সেই পরম সত্যকে দর্শন করেছেন। কেবল এইরকম ব্যক্তিই পরম সত্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান প্রদান করতে পারেন। কেননা তিনি নিজে পুরোপুরিভাবে সেই সত্যকে উপলব্ধি করেছেন। এইরকম প্রামাণিক ব্যক্তি থেকে শ্রবণ করে এবং সেই শিক্ষাকে বাস্তবে প্রয়োগ করে আমরাও পরমসত্যকে উপলব্ধি করতে পারি। হরে কৃষ্ণ ।
0 Comments