বামন দ্বাদশী

 বামন দ্বাদশী




"আজ বামন দ্বাদশী। একাদশীর দিনের উপবাস পরবর্তী দিন পরিগণিত হবে। শ্রীল প্রভুপাদ যখন বামন দ্বাদশী নিয়ে প্রবচন দিচ্ছিলেন, তখন সেখানে আমি ছিলাম। যেমনটি আমি বলেছিলাম, ওনাম উৎসবের সময় আমি কেরালায় ছিলাম, যেখানে বলি মহারাজ খুব প্রসিদ্ধ। ভারতের কিছু স্থানে ভগবানের বামনাবতার লীলা এত সমারোহপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় যে, দেখে মনে হবে এটি তাদের ক্রিসমাস, বামনদেব ও বলি মহারাজের লীলা উপলক্ষ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রভুপাদ যখন বামনদেব সম্পর্কে বলা শুরু করলেন, তিনি বললেন, ''হ্যাঁ, যদি আমরা ভগবানের কোন একটি প্রকাশ বা অবতার নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে সব অবতার নিয়েই আমাদের আলোচনা চলে আসে। কারণ চূড়ান্তভাবে তাঁরা সবাই কৃষ্ণ থেকেই প্রকাশিত হয়েছেন। বিভিন্ন লীলা, বিভিন্ন উদ্দেশ্য।"


বামন অবতারে কৃষ্ণ একজন খর্বাকৃতির ব্রাহ্মণ রূপে দেবতাদের সভায় আসেন। বলি মহারাজ ছিলেন প্রহ্লাদ মহারাজের পৌত্র। কিন্তু তিনি ছিলেন দৈত্যদের রাজা। প্রহ্লাদ মহারাজ হিরণ্যকশিপুর পুত্র, যিনি ছিলেন অসুর। পৃথিবীব্যাপী বিশেষ কিছু প্রজাতি রয়েছে, যারা আসুরিকভাবাপন্ন। এবং শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনানুযায়ী অসুর নামক এক শ্রেণীর জীব প্রজাতি রয়েছে। এই সমস্ত অসুরেরা এমনকি অধঃস্তন গন্ধর্ব এবং অন্যান্য দেবতাদের চেয়েও অধিক শক্তিশালী। তাদের নিজস্ব গ্রহলোক এবং অলৌকিক শক্তি রয়েছে। মাঝে মাঝে তারা এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে ভ্রমণ করতে পারে। একজন মানুষ তাদের দশ ভাগের এক ভাগের সমতুল্য।


তাই তারাই একমাত্র জীব, যারা মাঝে মাঝে দেবতাদেরও পরাজিত করতে পারে। কিন্তু সাধারণতঃ তারা পরাজিত করতে পারে না, বরং পরাজিত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সর্বদা দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। তাই প্রভুপাদ এখানে ইন্দ্রদেবের কথা উল্লেখ করেন। কারণ ইন্দ্রদেব একজন ভক্ত, কিন্তু তাঁর জড়বাসনা রয়েছে। এ সমস্ত অসুরদের সাথে ইন্দ্রের সর্বদা বিরোধ চলে। তিনি সর্বদা ভীত থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু বলি মহারাজ, তিনি বিষ্ণুপূজা করেছিলেন এবং পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে তার গুরুর নির্দেশ পালন করেছিলেন, তাই তিনি অনতিক্রম্য ছিলেন এবং তাই তিনি ইন্দ্রকেও পরাজিত করেছিলেন।


তাই এই বামনাবতার লীলায় বেশ কিছু শিক্ষণীয় প্রসঙ্গ রয়েছে। ভগবানের নিকট, কৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণের গুরুত্ব, ভগবানের সাথে ভক্তের ব্যক্তিগত সম্পর্কের চমৎকারিত্ব, এরকম অনেক কিছু.... একবার আপনি কৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করুন, তাহলে আর কোন উদ্বেগই থাকবে না। গুরুর মাধ্যমে কেউ কৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করলে, তিনি সুরক্ষিত, কারণ কৃষ্ণ সম্পূর্ণরূপে তার যত্নগ্রহণ করছেন। কৃষ্ণ বলেন, ''আমার ভক্তের বিনাশ নেই।'' তারপর আমরা এই লীলা থেকে আরো একটি শিক্ষা লাভ করি যে, গুরু এবং শিষ্যের মধ্যে কি সম্পর্ক?  তাহলে, এখান থেকে আমরা অনেক শিক্ষাই লাভ করতে পারি। এমন নয় যে, বিনোদনের জন্য গল্প আকারে বামনদেব ও বলি মহারাজের লীলাটি এখানে বর্ণিত হয়েছে। এর একটি অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে, যখন আপনি একজন যথার্থ পারমার্থিক গুরুর তত্ত্বাবধানে থেকে পুরাণে বর্ণিত এই বিশেষ লীলা পাঠ করবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, এর একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক রয়েছে এবং সেই সমস্ত পরিস্থিতিতে সেসব মহান ভক্তরা কিরূপ আচরণ করছেন, তা দেখেও আমরা বিশেষ শিক্ষা লাভ করতে পারি। তাঁদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, মহাজন যেনঃ গত স পন্থা। অর্থাৎ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, সংকটপূর্ণ অবস্থাতে, বিশেষ দৃষ্টান্তমূলক পরিস্থিতিতে তাঁদের পরীক্ষা করা হয় এবং যেহেতু তাঁরা মহান, তাই তাঁরা সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তাঁরা যথার্থ কাজটি করেন অথবা এমনকি তাঁরা ভুলও করেন। যাই হোক, তখন আমরা তাদের পরিণতিও দেখতে পাই। তাই আমাদের জন্য একটি বিশেষ শিক্ষা হল, আমাদের উচিত উৎকৃষ্ট উদাহরণরূপে মহান ব্যক্তিদের অনুসরণ করা এবং যারা ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আচরণ বর্জন করা।" 


শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ,

বামন দ্বাদশী, ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৩।

আটলান্টা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

Post a Comment

0 Comments