শ্রীমতি রাধারাণীর আর্বিভাব স্থান
(২৬ই আগস্ট ২০২০ রাধাষ্টমী তথা শ্রীমতিরাধারাণীর আর্বিভাব তিথি। এ উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত উপবাস থেকে শ্রীকৃষ্ণ শক্তি এবং অভিন্ন শ্রীমতি রাধারাণীর চরণে প্রার্থনা নিবেদনের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। এই রাধাষ্টমীর পবিত্র দিনে চলুন শ্রীমতি রাধারাণীর আর্বিভাব স্থানের দিব্য দর্শন লাভ করি)
রাভেল- দিব্য জন্মস্থান
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য লীলাবিলাস স্থান শ্রীবৃন্দাবন। এ স্থানের ধূলিকণাও এত পবিত্র যে স্বয়ং শ্রীব্রহ্মাসহ সকল দেবতারা এইপবিত্র ভূমির ঘাস হয়ে জন্মাতে অভিলাষ করেন। শ্রীবৃন্দাবন ধাম সকলেরই আরাধ্য। কিন্তু কালের প্রভাবে একসময় এই ধাম অবলুপ্ত হলে কলিযুগের পাবনাবতারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই ধামের বহু স্থান উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি তার প্রিয় ষড় গোস্বামীদের উক্ত ধাম পরিচর্যার দায়িত্ব অর্পন করেন। ষড়গোস্বামীগণও বৃন্দাবনের বহু লুপ্ত স্থান উদ্ধার করেন।
বৃন্দাবনের নিকটবর্তী বর্ষাণা এলাকার অন্তর্গত রাভেল নামক অতি পবিত্র স্থানে বৃন্দাবনেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী আর্বিভূত হন। শ্রীমতি রাধারাণীর আবির্ভাব সম্বন্ধে যে বর্ণনা শাস্ত্রে রয়েছে,
তা হল, একদিন রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে যান। সেই সময়ে যমুনা নদী বর্ষাণার রাভেল স্থানটির পাশ দিয়ে বয়েযেত। ঐ স্থান দিয়ে এক কালে যমুনা নদী যে বয়ে যেত তা ভূতত্ত্বগত প্রমাণরয়েছে। সেই যাই হোক, রাজা বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন সহস্য সূর্যের আলোকের মতো জ্যোতির্ময় এক সোনার পদ্ম ঠিক যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে রয়েছে। আর সেই সোনার পদ্মের মধ্যে রয়েছে একটি ছোট শিশুকন্যা। প্রথমে রাজা বৃষভানু বিস্মিত হলেন। কিন্তু ব্রহ্মাজী তখন সেই স্থানে আর্বিভূত হয়েরাজা বৃষভানুর বিস্ময়ের নিরসন করলেন। তিনি জানালেন যে রাজা বৃষভানু ও তাঁর পত্নী কীর্তিদা পূর্বজন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা সম্পাদন করেছিলেন। সেই তপশ্চর্যার ফলস্বরূপ এই জন্মে তাঁরা স্বয়ং ভগবানের শক্তি তথা পত্নীকে এইভাবে কন্যারূপে লাভ করেছেন। ব্রহ্মাজীর কথা শুনে রাজা বৃষভানু সেই শিশুকন্যা শ্রীমতি রাধারাণীকে নিজ গৃহে নিয়েএলেন। কিন্তু দেখা গেল সেই শিশু রাধারাণী কিছুতেই চোখ খুলছেন না। তাঁর চোখসর্বদা বন্ধ রয়েছে। তবে কি এই শিশুকন্যা অন্ধ ? সকলের এই প্রশ্ন নিরসনেরউদ্দেশ্য অবশেষে নারদমুনি রাজা বৃষভানুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে শিশুর এইঅন্ধত্ব অবস্থা সত্ত্বেও শিশুর জন্মকালীন সকল ধরনের শুভ উৎসবাদির আয়োজনগৃহে করতে বললেন। নারদমুনীর কথা অনুযায়ী রাজা বৃষ্ণভানু গৃহে উৎসবের আয়োজনকরলেন। সেই উৎসবে নন্দ মহারাজ ও শিশু কৃষ্ণসহ সপরিবারে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে আগমন করে শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারাণীর দিকে এগিয়ে গেলেন, রাধারাণী তখন এক দিব্য সৌরভের ঘ্রাণ লাভ করলেন, আর সেই মুহুর্তে রাধারাণী চোখ খুলে প্রথমে দর্শন করলেন তার নিত্য পতি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে বর্ষাণা ক্ষেত্রের রাভেল নামক স্থানে এইসব ঘটনা ঘটেছিল।
এখন রাভেল অত্যন্ত নির্জন এক প্রান্তর । স্বল্প জনসংখ্যার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। তবে এখনও শ্রীমতি রাণারাণীর লীলাস্থলিগুলো বর্তমান। আসুন নিম্নে আমরা চিত্র অনুসারে সেই দিব্য তীর্থস্থান সমূহদর্শন করি :
বর্ষাণায় অনেকেই গমন করেন। কিন্তু রাধারাণীর মূল এই জন্মক্ষেত্র রাভেল অনেকের কাছেই হয়তো এখনো অজানা। এখনো অতি সাধারণ গ্রামটিতে শ্রীমতিরাধারাণীর দিব্য উপস্থিতি অনুভব করা যায়। তাই আপনি যদি শ্রীমতি রাধারাণীর কৃপা লাভ করতে চান তাহলে বৃন্দাবন পরিক্রমায় এই অপ্রাকৃত ধাম রাভেল দর্শন করে আসতে পারেন।
0 Comments