গুরু / শিষ্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

 গুরু / শিষ্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক




  • শ্লোক: 1

    তদ্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া ।
    উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ ।।
    (গীতা ৪/৩৪)
  • অনুবাদঃ- সদ্ গুরু শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর ৷ তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবেন।

  • শ্লোক: 2

    কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র কেনে নয় ।
    যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা, সেই 'গুরু' হয় ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ৮/১২৮)
  • অনুবাদঃ- যিনি কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু, তা তিনি ব্রাহ্মণ হোন, কিংবা সন্ন্যাসীই হোন অথবা শূদ্রই হোন, তাতে কিছুই যায় আসে না।

  • শ্লোক: 3

    গুরুর্ন স স্যাৎ স্বজনো ন স স্যাৎ
    পিতা ন স স্যাজ্জননী ন সা স্যাৎ ।
    দৈবং ন তৎস্যান্ন পতিশ্চ স স্যা-
    ন্ন মোচয়েদ্ যঃ সমুপেতমৃত্যুম্ ।।
    (ভাগবত ৫/৫/১৮)
  • অনুবাদঃ- যিনি তাঁর আশ্রিত জনকে সমুপস্থিত মৃত্যুরূপ সংসার মার্গ থেকে উদ্ধার করতে না পারেন, তাঁর গুরু, পিতা, পতি, জননী অথবা পূজ্য দেবতা হওয়া উচিত নয়।

  • শ্লোক: 4

    ষটকর্ম নিপুণো বিপ্রো মন্ত্রতন্ত্রবিশারদঃ ।
    অবৈষ্ণবো গুরুর্ন স্যাদ্ বৈষ্ণবঃ শ্বপচো শুরুঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- কোন ব্রাহ্মণ যদি ব্রাহ্মণের ছয়টি কর্মে নিপুণ হয় এবং মন্ত্রতন্ত্রে বিশারদও হয়, কিন্তু সে যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়, তা হলে সে গুরু হতে পারে না, পক্ষান্তরে চণ্ডাল কুলে উদ্ভূত ব্যাক্তিও যদি শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত হয়, তা হলে সেই গুরু হতে পারে।

  • শ্লোক: 5

    জন্মনা জায়তে শূদ্রঃ সংস্কারাদ্ ভবেদ্দ্বিজঃ ।
    বেদপাঠাদ্ ভবেদ্বিপ্রা ব্রহ্ম জানাতীতি ব্রাহ্মণঃ ।।
    (অজ্ঞাত উৎস)
  • অনুবাদঃ- জন্মসূত্রে প্রত্যেকেই শূদ্র, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে কেউ দ্বিজ বা ব্রাহ্মণ হতে পারে, বেদ পাঠ করলে বিপ্র হওয়া যায় এবং ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেছেন যিনি তিনিই ব্রাহ্মণ।

  • শ্লোক: 6

    মুচি হয়ে শুচি হয় যদি কৃষ্ণ ভজে ।
    শুচি হয়ে মুচি হয় যদি কৃষ্ণ ত্যজে ।।
  • অনুবাদঃ- একজন মুচি বা মুচিকুলে জাত ব্যক্তিও যদি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেন, তা হলে তিনি শুদ্ধ ব্রাহ্মণের স্তরে উন্নীত হতে পারেন। কিন্তু কোন ব্রাহ্মণ যদি কৃষ্ণভাবনামৃত ত্যাগ করেন, তা হলে তিনি একজন মুচি ছাড়া আর কিছুই নন।

  • শ্লোক: 7

    মাম্, হি, পার্থ, ব্যপাশ্রিত্য, যে, অপি, স্যুঃ, পাপযোনয়ঃ।
    স্ত্রিয়ঃ, বৈশ্যাঃ, তথা, শূদ্রাঃ, তে, অপি, যান্তি, পরাম্, গতিম্ ॥
    (গীতা ৯/৩২)
  • অনুবাদঃ- হে পার্থ ! যারা আমাকে বিশেষভাবে আশ্রয় করে, তারা স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র আদি নীচকুলে জাত হলেও অবিলম্বে পরাগতি লাভ করে।

  • শ্লোক: 8

    'কে আমি', 'কেনে আমায় জারে তাপত্রয়' ।
    ইহা নাহি জানি-- 'কেমনে হিত হয়' ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১০২)
  • অনুবাদঃ- আমি কে? কেন জড় জগতের তিনটি তাপ আমাকে নিরন্তর দুঃখ দেয়? আমি যদি তা না জানি, তা হলে কিভাবে আমার যথার্থ মঙ্গল সাধিত হবে?

  • শ্লোক: 9

    ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব ।
    গুরু-কৃষ্ণ প্রসাদে পায় ভক্তিলতা-বীজ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৫১)
  • অনুবাদঃ- জীব তার কর্ম অনুসারে ব্রহ্মাণ্ডে ভ্রমণ করে। কখনও সে উচ্চতর লোকে উন্নীত হয় এবং কখনও নিম্নতর লোকে অধঃপতিত হয়। এভাবেই ভ্রমণরত অসংখ্য জীবের মধ্যে কদাচিৎ কোন একটি জীব তার অসীম সৌভাগ্যের ফলে, শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় সদগুরুর সান্নিধ্য লাভ করে। এভাবেই গুরু ও কৃষ্ণ, উভয়ের কৃপার প্রভাবে জীব ভক্তিলতার বীজ প্রাপ্ত হয়।

  • শ্লোক: 10
    গুরুমুখপদ্মবাক্য, চিত্তেতে করিয়া ঐক্য,
    আর না করিহ মনে আশা ।।
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা)
  • অনুবাদঃ- শ্রীগুরুদেবের মুখপদ্ম-নিঃসৃত উপদেশকে তোমার চিত্তের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কর এবং অন্য আর কোন কিছুই আশা করো না ।

  • শ্লোক: 11
    আচার্যোপাসনম্
    (গীতা ১৩/৮)
  • অনুবাদঃ- অকৈতবে সদ্ গুরুর সেবা ।

  • শ্লোক: 12
    ব্রহ্মচারী গুরুকুলে বসন্দান্তো গুরুর্হিতম্ ।
    আচরন্ দাসবন্নীচো গুরৌ সুদৃঢ়সৌহৃদঃ ।।
    (ভাগবত ৭/১২/১)
  • অনুবাদঃ- (নারদ মুনি বললেন--) বিদ্যার্থীর কর্তব্য পূর্ণরূপে ইন্দ্রিয়-সংযম করার অভ্যাস করা। তার কর্তব্য বিনীতভাবে শ্রীগুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধাসহকারে সৌহার্দ্য পরায়ণ হওয়া এবং দাসবৎ আরচণ করা। এভাবেই মহান ব্রত সহকারে, কেবলমাত্র শ্রীগুরুদেবের হিতসাধনের জন্য ব্রহ্মচারীর গুরুকুলে বাস করা উচিত।
    (মহারাজ যুধিষ্ঠিরের নিকট নারদ মুনি)

  • শ্লোক: 13
    এবং জনং নিপতিতং প্রভবাহিকূপে
    কামাভিকামমনু যঃ প্রপতন্ প্রসঙ্গাৎ ।
    কৃত্বাত্মসাৎ সুরর্ষিণা ভগবান্ গৃহীতঃ
    সোহহং কথং নু বিসৃজে তব ভৃত্যসেবাম্ ।।
    (ভাগবত ৭/৯/২৮)
  • অনুবাদঃ- হে ভগবান! একের পর এক জড় বাসনার সঙ্গ প্রভাবে আমি সাধারণ মানুষদের অনুসরণ করে সর্পপূর্ণ অন্ধকূপে পতিত হয়েছি। আপনার সেবক নারদ মুনি কৃপা করে আমাকে তাঁর শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছেন এবং দিব্য স্থিতি প্রাপ্ত হওয়ার শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাই আমার সর্বপ্রথম কর্তব্য তাঁর সেবা করা। তাঁর সেবা আমি কি করে পরিত্যাগ করতে পারি?
    (ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের প্রতি প্রহ্লাদ মহারাজ)

  • শ্লোক: 14
    তস্মাদ্ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম্ ।
    শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মণ্যুপশমাশ্রয়ম্ ।।
    (ভাগবত ১১/৩/২১)
  • অনুবাদঃ- অতএব কেউ যদি আন্তরিকভাবে প্রকৃত আনন্দ কামনা করেন, তাহলে তাঁকে দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন সদ্গুরুর আশ্রয় অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। সদ্গুরুর যোগ্যতা হচ্ছে যে, তিনি গভীরভাবে শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত উপলব্ধি করেছেন এবং অন্যদেরও সেই সব সিদ্ধান্ত বিষয়ে প্রত্যয় উৎপাদন করতে সক্ষম। যাঁরা জড় সুখ সুবিধাকে অগ্রাহ্য করে পরমেশ্বরের শরণ গ্রহণ করেছেন, সেই ধরনের মহান ব্যক্তিদেরই যথার্থ গুরু বলে বুঝতে হবে।
  • শ্লোক: 15

    আচার্যবান্ পুরুষো বেদ
    (ছান্দোগ্য উপঃ ৬/১৪/২)
  • অনুবাদঃ- যিনি গুরু গ্রহণ করেন, তিনি পারমার্থিক উপলব্ধি সম্পর্কে সমস্ত বিষয় অবগত হন।

  • শ্লোক: 16

    তদ্বিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ
    সমিৎপাণিঃ শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম্ ।
    (মুণ্ডক উপঃ ১/২/১২)
  • অনুবাদঃ- সেই পারমার্থিক বিজ্ঞানকে উপলব্ধি করতে হলে অবশ্যই একজন সদগুরু গ্রহণ করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে গুরু গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তিকে যজ্ঞকাষ্ঠ বহন করে গুরুর কাছে যেতে হবে। সদ্গুরুর লক্ষণ হচ্ছে যে, তিনি বৈদিক সিদ্ধান্তে পারঙ্গম এবং তাই সর্বদাই পরমেশ্বরের সেবায় নিযুক্ত থাকেন।

  • শ্লোক: 17

    এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ ।
    স কালেনেহ মহতা যোগো নষ্টঃ পরন্তপ ।।
    (গীতা ৪/২)
  • অনুবাদঃ- এভাবেই পরম্পরা মাধ্যমে প্র্রাপ্ত এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিলেন৷ কিন্তু কালের প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল এবং তাই সেই যোগ নষ্টপ্রায় হয়েছে।

  • শ্লোক: 18

    ন মেহভক্তশ্চতুর্বেদী মদ্ভক্তঃ শ্বপচঃ প্রিয়ঃ ।
    তস্মৈ দেয়ং ততো গ্রাহ্যং স চ পূজ্যো যথা হ্যহম্ ।।
    (হরিভক্তিবিলাস ১০/১২৭)
  • অনুবাদঃ- যে ব্যক্তি আমার শুদ্ধ ভক্ত নয়, তিনি যদি চতুর্বেদীও হন, তিনি আমার প্রিয় নন। অপরপক্ষে জ্ঞান ও কর্মবাসনা থেকে মুক্ত একজন শুদ্ধ ভক্ত যদি চণ্ডাল কুলেও জাত হন, তিনি আমার প্রিয়। প্রকৃতপক্ষে তাঁকেই দান করতে হবে, তাঁর থেকেই উচ্ছিষ্ট প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁকে আমার মতোই পূজা করতে হবে।

  • শ্লোক: 19

    রূপযৌবনসম্পন্ন বিশালকুলসম্ভবাঃ ।
    বিদ্যাহীনা ন শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকাঃ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- রূপযৌবন-সম্পন্ন ব্যক্তি এবং উচ্চকুলে জাত ব্যক্তিও যদি বিদ্যাহীন হন, তা হলে তার কোন শোভা নেই, ঠিক যেমন কিংশুক ফুল অত্যন্ত সুন্দর দেখালেও গন্ধহীন বলে তার কোন চমৎকারিত্ব বা মূল্য নেই।

  • শ্লোক: 20

    বেত্থ ত্বং সৌম্য তৎসর্বং তত্ত্বতস্তদনুগ্রহাৎ ।
    ব্রূয়ুঃ স্নিগ্ধস্য শিষ্যস্য গুরবো গুহ্যমপ্যুত ।।
    (ভাগবত ১/১/৮)
  • অনুবাদঃ- যেহেতু আপনি শ্রদ্ধাশীল ও বিনীত, তাই আপনার গুরুদেবেরা বিশেষভাবে অনুগ্রহ করেছেন। কারণ, স্নিগ্ধ স্বভাবসম্পন্ন অর্থাৎ প্রীতিশীল শিষ্যের কাছেই গুরুবর্গ অতি নিগূঢ় রহস্য ব্যক্ত করেন।
    (সূত গোস্বামীর প্রতি মুনি-ঋষিরা)

  • শ্লোক: 21

    চক্ষুদান দিল যেই, জন্মে জন্মে প্রভু সেই,
    দিব্যজ্ঞান হৃদে প্রকাশিত ।
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা)
  • অনুবাদঃ- যিনি চক্ষুদান করলেন, তিনিই জন্মে জন্মে আমার প্রভু। তাঁরই কৃপার প্রভাবে দিব্যজ্ঞান হৃদয়ে প্রকাশিত হয়।

  • শ্লোক: 22

    নীচ জাতি, নীচ-সঙ্গী, পতিত অধম ।
    কুবিষয়-কূপে পড়ি’ গোঙাইনু জনম ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/৯৯)
  • অনুবাদঃ- “অত্যন্ত নীচকুলে আমার জন্ম হয়েছিল, আমার সঙ্গীরা অত্যন্ত অধঃপতিত। পাপে পূর্ণ বিষয়রূপ কূপে পতিত হয়ে আমি আমার জীবন কাটিয়েছি।”

  • শ্লোক: 23

    আপনার হিতাহিত কিছুই না জানি ।
    গ্রাম্য-ব্যবহারে পণ্ডিত, তাই সত্য মানি ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১০০)
  • অনুবাদঃ- কি করলে যে আমার ভাল হবে এবং কি করলে আমার খারাপ হবে, সেই সম্বন্ধে কোন জ্ঞানই আমার নেই। কিন্তু তবুও, জাগতিক ব্যবহারে লোকেরা আমাকে পণ্ডিত বলে মনে করে এবং আমিও মনে করি যেন তা সত্যি ।

  • শ্লোক: 24

    কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ
    পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসম্মূঢ়চেতাঃ ।
    যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রুহি তন্মে
    শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ॥
    (গীতা ২/৭)
  • অনুবাদঃ- কার্পণ্যজনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি এবং আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়েছি ৷এই অবস্থায় আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর, তা আমাকে বল। এখন আমি তোমার শিষ্য এবং সর্বতোভাবে তোমার শরণাগত ৷ দয়া করে তুমি আমাকে নির্দেশ দাও ।

  • শ্লোক: 25

    অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ।
    গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ ॥
    (গীতা ২/১১)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- তুমি প্রাজ্ঞের মতো কথা বলছ, অথচ যে বিষয়ে শোক করা উচিত নয়, সে বিষয়ে শোক করছ। যাঁরা যথার্থই পণ্ডিত তাঁরা কখনও জীবিত অথবা মৃত কারও জন্যই শোক করেন না।

  • শ্লোক: 26

    লালয়েৎ পঞ্চবর্ষাণি দশবর্ষাণি তাড়য়েৎ ।
    প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত পুত্রকে লালন করবে। পরবর্তী দশ বছর তাকে শাসন করবে। কিন্তু কারও পুত্র যখন ষোল বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করা উচিত।

  • শ্লোক: 27

    লালনে বহবো দোষাস্তাড়নে বহবো গুণাঃ ।
    তস্মাৎ পুত্রং চ শিষ্যং চ তাড়য়েন্ন তু লালয়েৎ ।।
    (চাণক্য পণ্ডিত)
  • অনুবাদঃ- প্রশ্রয় বা লালন শিষ্য বা পুত্রের আচরণে বহু বদ্ গুণাবলীকে উৎসাহিত করে এবং কঠোরতা সদ্ গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করে। অতএব শিক্ষক বা পিতা-মাতার কর্তব্য শিশুকে প্রশ্রয় না দেওয়া, বরং মন্দ আচরণের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত।

  • শ্লোক: 28

    আচার্যং মাং বিজানীয়ান্নাবমন্যেত কর্হিচিৎ ।
    ন মর্ত্যবুদ্ধ্যাসূয়েত সর্বদেবময়ো গুরুঃ ।।
    (ভাগবত ১১/১৭/২৭)
  • অনুবাদঃ- আচার্যকে আমার থেকে অভিন্ন বলে মনে করা উচিত এবং কখনও কোনভাবে তাঁকে অশ্রদ্ধা করা উচিত নয়। তাঁকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করে তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া উচিত নয়, কেন না তাঁর মধ্যে সমস্ত দেবতার অধিষ্ঠান আছে।
  • শ্লোক: 29

    সাক্ষাদ্ধরিত্বেন সমস্তশাস্ত্রৈ-
    রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সদ্ভিঃ ।
    কিন্তু প্রভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য
    বন্দে শুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।।
    (শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর, গুর্বষ্টক-৭ )
  • অনুবাদঃ- নিখিলশাস্ত্র যাঁকে সাক্ষাৎ শ্রীহরির অভিন্ন-বিগ্রহরূপে কীর্তন করেছেন এবং সাধুগণও যাঁকে সেইরূপেই চিন্তা করে থাকেন, কিন্তু যিনি ভগবানের একান্ত প্রেষ্ঠ, সেই (ভগবানের অচিন্ত্য-ভেদাভেদ-প্রকাশ-বিগ্রহ) শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

  • শ্লোক: 30

    গোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া
    (বাংলা প্রবাদ)
  • অনুবাদঃ- ঘোড়া বা গরু যখন গোড়া বা বেষ্টনী ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাদের পা ভাঙার সম্ভাবনা থাকে। দ্রঃ শ্রীল প্রভুপাদ এই প্রবাদের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন যে, গুরুকে ডিঙিয়ে কেউ কৃষ্ণকে লাভ করতে পারে না।

  • শ্লোক: 31

    যস্য প্রসাদাদ্ভগবদৎপ্রসাদো
    যস্যাপ্রসাদান্ন গতিঃ কুতোহপি ।
    ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রিসন্ধ্যং
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।।
    (শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর, গুর্বষ্টক-৮)
  • অনুবাদঃ- একমাত্র যাঁর কৃপাতেই ভগবদ্-অনুগ্রহ লাভ হয় এবং যিনি অপ্রসন্ন হলে জীবের আর কোথাও গতি থাকে নাম, আমি ত্রিসন্ধ্যা সেই শ্রীগুরুদেবের কীর্তিসমূহ স্তব ও ধ্যান করতে করতে তাঁর পাদপদ্ম বন্দনা করি।

  • শ্লোক: 32

    সাধু-শাস্ত্র-গুরু-বাক্য, চিত্তেতে করিয়া ঐক্য,
    (নরোত্তম দাস ঠাকুর, প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা-২)
    (আমরা যদি সাধু হতে চাই, তা হলে) আমাদের সাধু, শাস্ত্র ও গুরুর অনুসরণ করা উচিত।
  • অনুবাদঃ- (আমরা যদি সাধু হতে চাই, তা হলে) আমাদের সাধু, শাস্ত্র ও গুরুর অনুসরণ করা উচিত।

  • শ্লোক: 33

    জন্মে জন্মে সবে পিতামাতা পায় ।
    কৃষ্ণ-গুরু নাহি মিলে ভজহ হিয়ায় ।।
    (অজ্ঞাত উৎস)
  • অনুবাদঃ- জন্মে জন্মে সকলেই পিতা-মাতা লাভ করে। কিন্তু প্রতি জন্মে কৃষ্ণ বা গুরু লাভ হয় না। সুতরাং, এই দুর্লভ গুরু বা শ্রীকৃষ্ণ সেবার সুযোগ লাভ হলে হৃদয় দিয়ে তাঁদের ভজনা করা উচিত।

  • শ্লোক: 34

    মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্ ।
    যৎকৃপা তমহং বন্দে শ্রীগুরুং দীন তারিণম্ ।।
    (অজ্ঞাত উৎস)
  • অনুবাদঃ- যাঁর কৃপা বোবাকে বাচাল করতে পারে এবং পঙ্গুকে গিরি লঙ্ঘন করাতে পারে, সেই পতিত জীবদের উদ্ধারকারী শ্রীগুরুদেবকে আমি বন্দনা করি।

  • শ্লোক: 35

    যথা কাঞ্চনতাং যাতি কাংস্যং রসবিধানতঃ ।
    তথা দীক্ষাবিধানেন দ্বিজত্বং জায়তে নৃণাম্ ।।
    (হরিভক্তিবিলাস ২/১২)
  • অনুবাদঃ- ঠিক যেমন কাঁসার সঙ্গে পারদের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে কাঁসাকে সোনায় রূপান্তরিত করা যায়, তেমনই সদগুরুর দ্বারা যিনি যথাযথভাবে দীক্ষা ও শিক্ষা লাভ করেছেন, তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রাহ্মণরূপে রূপান্তরিত হন।

  • শ্লোক: 36

    ত্বং নঃ সন্দর্শিতো ধাত্রা দুস্তরং নিস্তিতীর্ষতাম্ ।
    কলিং সত্ত্বহরং পুংসাং কর্ণধার ইবার্ণবম্ ।।
    (ভাগবত ১/১/২২)
  • অনুবাদঃ- আমরা মানুষের সদ্ গুণ অপহরণকারী কলিকালরূপ দুর্লঙ্ঘ্য সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে ইচ্ছুক। সমুদ্রের পরপারে গমন করতে ইচ্ছুক মানুষের কাছে কর্ণধার সদৃশ আপনাকে বিধাতাই আমাদের কাছে পাঠিয়ে আপনার দর্শন লাভ ঘটিয়েছেন ।
    (সূত গোস্বামীর প্রতি মুনি-ঋষিরা)

  • শ্লোক: 37

    নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বৎপ্রসাদান্ময়াচ্যুত ।
    স্থিতোহস্মি গতসন্দেহঃ করিষ্যে বচনং তব ॥
    (গীতা ১৮/৭৩)
  • অনুবাদঃ- অর্জুন বললেন- হে অচ্যুত ! তোমার কৃপায় আমার মোহ দূর হয়েছে এবং আমি স্মৃতি লাভ করেছি৷ আমার সমস্ত সন্দেহ দূর হয়েছে এবং য্থাজ্ঞানে অবস্থিত হয়েছি৷এখন আমি তোমার আদেশ পালন করব।

  • শ্লোক: 38

    চতুর্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
    স্বাদন্নতৃপ্তান্ হরিভক্তসঙ্ঘান্ ।
    কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃ সদৈব
    বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।।
    (শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর, গুর্বষ্টক-৪)
  • অনুবাদঃ- যিনি শ্রীকৃষ্ণভক্তবৃন্দকে চর্ব্য, দূষ্য, লেহ্য ও পেয়- এ চতুর্বিধ রসসমন্বিত সুস্বাদু প্রসাদান্ন দ্বারা পরিতৃপ্ত করে (অর্থাৎ প্রসাদ-সেবন জনিত প্রপঞ্চ-নাশ ও প্রেমানন্দের উদয় করিয়ে) স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

  • শ্লোক: 39

    ওঁ অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া
    চক্ষুরুন্মীলিয়তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
    (গৌতমীয় তন্ত্র, শ্রীগুরু প্রণাম)
  • অনুবাদঃ- অজ্ঞানের অন্ধকারের দ্বারা আমার চক্ষুদ্বয় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যিনি জ্ঞানের আলোকের দ্বারা তা উন্মীলিত করেছেন, সেই আমার গুরুদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
  • Post a Comment

    0 Comments