আত্মা ও পরমাত্মা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

 আত্মা ও পরমাত্মা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক



  • শ্লোক: 1

    দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা ।
    তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি ॥
    (গীতা ২/১৩)
  • অনুবাদঃ- দেহীর দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে তেমনই ঐ দেহী ( আত্মা ) এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা কখনও এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হন না ।

  • শ্লোক: 2

    অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম্ ।
    বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশ্চিৎ কর্তুমর্হতি ॥
    (গীতা ২/১৭)
  • অনুবাদঃ- যা সমগ্র শরীরে পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে, তাকে তুমি অবিনাশী বলে জানবে৷ সেই অব্যয় আত্মাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।

  • শ্লোক: 3

    ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
    অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
    ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥
    (গীতা ২/২০)
  • অনুবাদঃ- আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না৷ তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।

  • শ্লোক: 4

    বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
    তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
    ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥
    (গীতা ২/২২)
  • অনুবাদঃ- মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।

  • শ্লোক: 5

    নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ ।
    ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ ॥
    (গীতা ২/২৩)
  • অনুবাদঃ- আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানোও যায় না।

  • শ্লোক: 6

    অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ ।
    নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ ॥
    (গীতা ২/২৪)
  • অনুবাদঃ- এই আত্মা অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ী, সর্বব্যপ্ত, অপরিবর্তনীয়, অচল ও সনাতন।

  • শ্লোক: 7

    তত্র, তম্, বুদ্ধিসংযোগম্, লভতে, পৌর্বদেহিকম্,
    যততে, চ, ততঃ, ভূয়ঃ, সংসিদ্ধৌ, কুরুনন্দন ॥
    (গীতা ৬/৪৩)
  • অনুবাদঃ- হে কুরুনন্দন ! সেই প্রকার জন্মগ্রহণ করার ফলে তিনি পুনরায় তাঁর পুর্ব জন্মকৃত পারমার্থিক চেতনার বুদ্ধিসংযোগ লাভ করে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন।

  • শ্লোক: 8

    শরীরং যদবাপ্নোতি যচ্চাপ্যুৎক্রামতীশ্বরঃ ।
    গৃহীত্বৈতানি সংযাতি বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ ॥
    (গীতা ১৫/৮)
  • অনুবাদঃ- বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়ে অন্যত্র গমন করে, তেমনই এই জড় জগতে দেহের ঈশ্বর জীব এক শরীর থেকে অন্য শরীরে তার জীবনের বিভিন্ন ধারণাগুলি নিয়ে যায়।

  • শ্লোক: 9

    জীবের 'স্বরূপ' হয়- কৃষ্ণের 'নিত্যদাস' ।
    কৃষ্ণের 'তটস্থা-শক্তি,' 'ভেদাভেদ-প্রকাশ' ।।
    (চৈঃ চঃ মধ্য ২০/১০৮)
  • অনুবাদঃ- জীব তার স্বরূপে শ্রীকৃষ্ণের নিত্যদাস। সে শ্রীকৃষ্ণের তটস্থা শক্তি, তাই সে যুগপৎ শ্রীকৃষ্ণের ভেদ ও অভেদ প্রকাশ।

  • শ্লোক: 10

    অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্ ।
    জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ ॥
    (গীতা ৭/৫)
  • অনুবাদঃ- হে মহাবাহো ! এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্টা প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য-স্বরূপা ও জীবভূতা; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জড় জগৎকে ধারণ করে আছে।

  • শ্লোক: 11

    মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ ।
    মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি ॥
    (গীতা ১৫/৭)
  • অনুবাদঃ- এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্নাংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতিরূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্র্রাম করছে।

  • শ্লোক: 12

    কেশাগ্রশতভাগস্য শতাংশসদৃশাত্মকঃ ।
    জীবঃ সূক্ষ্মস্বরূপোহয়ং সংখ্যাতীতো হি চিৎকণঃ ।।
    (ভাগবত ১০/৮৭/৩১)
  • অনুবাদঃ- কেশের অগ্রভাগকে শত ভাগ করলে তার শত শতাংশ-সদৃশ স্বরূপই জীবের সূক্ষ্ম স্বরূপ; জীব-চিৎকণ ও সংখ্যাতীত।

  • শ্লোক: 13

    বালাগ্রশতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ ।
    ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয় ইতি চাহ পরা শ্রুতিঃ ।।
    (শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৫/৯)
  • অনুবাদঃ- কেশাগ্রের শতভাগকে শতভাগ বিভক্ত করলে যে সূক্ষ্মভাগ হয়, জীব- সেরূপই সূক্ষ্ম, প্রধান শ্রুতিতে এই কথা বলা হয়েছে।

  • শ্লোক: 14

    যথা প্রকাশয়ত্যেকঃ কৃৎস্নং লোকমিমং রবিঃ ।
    ক্ষেত্রং ক্ষেত্রী তথা কৃৎস্নং প্রকাশয়তি ভারত ॥
    (গীতা ১৩/৩৪)
  • অনুবাদঃ- হে ভারত ! এক সূর্য যেমন সমগ্র জগৎকে প্রকাশ করে, সেই রকম ক্ষেত্রী আত্মাও সমগ্র ক্ষেত্রকে প্রকাশ করে।

  • শ্লোক: 15

    অথবা বহুনৈতেন কিং জ্ঞাতেন তবার্জুন।
    বিষ্টভ্যাহমিদং কৃৎস্নমেকাংশেন স্থিতো জগৎ॥
    (গীতা ১০/৪২)
  • অনুবাদঃ- হে অর্জুন ! অথবা এই প্রকার বহু জ্ঞানের দ্বারা তোমার কি প্রয়োজন ? আমি আমার এক অংশের দ্বারা সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থিত আছি।

  • শ্লোক: 16

    ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত ।
    ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞয়োর্জ্ঞানং যত্তজ্ জ্ঞানং মতং মম ॥
    (গীতা ১৩/৩)
  • অনুবাদঃ- হে ভারত ! আমাকেই সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে যে জ্ঞান, সেই জ্ঞানই আমার অভিমত।

  • শ্লোক: 17

    উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ ।
    পরমাত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেহস্মিন্ পুরুষঃ পরঃ ॥
    (গীতা ১৩/২৩)
  • অনুবাদঃ- এই শরীরে আর একজন পরম পুরুষ রয়েছেন, যিনি হচ্ছেন উপদ্রষ্টা, অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর এবং তাঁকে পরমাত্মাও বলা হয়।

  • শ্লোক: 18

    ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি ।
    ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥
    (গীতা ১৮/৬১)
  • অনুবাদঃ- হে অর্জুন ! পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থান করছেন এবং সমস্ত জীবকে দেহরূপ যন্ত্রে আহরণ করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমণ করান।

  • শ্লোক: 19

    সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতির্জ্ঞানমপোহনং চ ।
    বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো
    বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্ ॥
    (গীতা ১৫/১৫)
  • অনুবাদঃ- আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমার থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও বিলোপ হয়। আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ।
  • Post a Comment

    0 Comments