উপনিষদ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

 উপনিষদ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক







  • শ্লোক: 1

    হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
    হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
    ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম্।
    নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু দৃশ্যতে।।
    (কলিসন্তরণ উপনিষদ)
  • অনুবাদঃ-- হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের এই ষোলটি নাম বিশেষত কলিযুগের পাপ নাশের জন্যই উদ্দিষ্ট। নিজেকে কলিযুগের কলুষ থেকে মুক্ত রাখতে হলে এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মতো অন্য আর কোন উপায় নেই। যুগধর্ম হিসাবে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মতো অন্য কোন মহান পন্থা সমস্ত বৈদিক গ্রন্থে অনুসন্ধান করেও খুঁজে পাওয়া যায় না।
    ( প্রজাপতি ব্রহ্মা )

  • শ্লোক: 2

    ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ।
    তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ ধনম্ ।।
    (ঈশোপনিষদ-১)
  • অনুবাদঃ-- এই জগতের স্থাবর ও জঙ্গম সব কিছুরই নিয়ন্তা ও মালিক হলেন ভগবান। তাই, জীবন ধারণের জন্য আবশ্যক সম্পদ, যা ভগবান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, শুধু তাই গ্রহণ করতে হবে। অন্যের সম্পদে লোভ করা উচিত নয়।

  • শ্লোক: 3

    বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং
    আদিত্যবর্ণং তমসঃ পুরস্তাৎ।
    তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি
    নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায় ।।
    (শ্বেতাঃ ৩/৮)
  • অনুবাদঃ- আমি সেই পরম পুরুষকে জেনেছি যিনি অন্ধকারের উর্ধ্বে, যিনি সূর্যের মতোই ভাস্বর । তাঁকে যিনি জানেন, কেবল তিনিই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনকে অতিক্রম করতে পারেন। এ ছাড়া মুক্তি লাভের অন্য কোন পন্থা নেই।

  • শ্লোক: 4

    মন এব মনুষ্যাণাং কারণং বন্ধমোক্ষয়োঃ ।
    বন্ধায় বিষয়াসঙ্গো মুক্ত্যৈ নির্বিষয়ং মনঃ ।।
    (অমৃতবিন্দু উপনিষদ-২)
  • অনুবাদঃ- মনই মানুষের বন্ধন ও মুক্তির কারণ। বিষয়ে আসক্ত মনই বন্ধনের কারণ এবং বিষয়ে অনাসক্ত মনই মুক্তির কারণ। অতএব যে মন সর্বদাই শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত, তা পরম মুক্তির কারণ।

  • শ্লোক: 5

    যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা দেবে তথা গুরৌ।
    তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থাঃ প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ ।।
    (শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৬/৩৮)
  • অনুবাদঃ- সেই সব মহাত্মাগণ, যাঁদের গুরু ও ভগবানে পরা ভক্তি রয়েছে, কেবল তাঁদের কাছেই বৈদিক জ্ঞানের সমস্ত তাৎপর্য স্বতঃই প্রকাশিত হয়।

  • শ্লোক: 6

    উত্তিষ্ঠ জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত।
    ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া
    দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি ।।
    (কঠ উপঃ ১/৩/১৪)
  • অনুবাদঃ- হে জীবগণ, এই জড় জগতে তোমরা ঘুমিয়ে আছ! অনুগ্রহ করে জাগ এবং এই মনুষ্য- জন্মের সুযোগ গ্রহণ কর! পারমার্থিক উপলব্ধির পথ বড়ই দুর্গম। তা ক্ষুরের অগ্রভাগের মতোই ধারালো। এই হচ্ছে তত্ত্বদর্শী পণ্ডিতদের অভিমত।

  • শ্লোক: 7

    হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্ ।
    তৎ ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ।।
    (ঈশোপনিষদ ১৫)
  • অনুবাদঃ- হে ভগবান ! হে সর্বজীব-পালক ! আপনার জ্যোতির্ময় আলোক আপনার মুখারবিন্দকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। কৃপা করে এই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তকে আপনার সত্য স্বরূপ প্রদর্শন করুন।

  • শ্লোক: 8

    ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।
    পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।।
    (ঈশোপনিষদ, আবাহণ)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান সর্বতোভাবে পূর্ণ। তিনি সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ বলে এই দৃশ্যমান জগৎ-এর মতো তাঁর থেকে উদ্ভুত সব কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ। কিন্তু যেহেতু তিনি হচ্ছেন পরম পূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখণ্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন।

  • শ্লোক: 9

    তদ্ ঐক্ষত বহু স্যাম্ ।
    (ছান্দোগ্য উপঃ ৬/২/৩)
  • অনুবাদঃ- ভগবান যখন বহু হতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি ঈক্ষণের (দৃষ্টি নিক্ষেপের) মাধ্যমে জড় জগতের প্রকাশ করেন।

  • শ্লোক: 10

    স ঐক্ষত
    (ঐতেরেয় উপঃ ১/১/১)
  • অনুবাদঃ- সেই পরমেশ্বর ভগবান জড়া শক্তির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন।

  • শ্লোক: 11

    স ইমাল্লোকান্ অসৃজত
    (ঐতেরেয় উপঃ ১/১/২)
  • অনুবাদঃ- তিনি (পররমেশ্বর ভগবান) সমগ্র জড় জগৎ সৃষ্টি করলেন ।

  • শ্লোক: 12

    যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে
    (তৈত্তিরীয় উপনিষদ ৩/১/১)
  • অনুবাদঃ- সমস্ত জীব পরমেশ্বর ভগবান থেকে উৎপন্ন হয়।

  • শ্লোক: 13

    নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো
    ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন ।
    যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্য-
    স্তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্ ।।
    (মুণ্ডক উপঃ ৩/২/৩ এবং কঠ উপঃ ১/২/২৩)
  • অনুবাদঃ- দক্ষ প্রবচনের দ্বারা, গভীর মেধার দ্বারা, এমন কি বহু শ্রবণের দ্বারাও পরমেশ্বর ভগবানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। ভগবান যাকে নির্বাচিত এবং পছন্দ করেন, তিনিই কেবল তাঁকে জানতে পারেন। সেই রকম ভক্তের কাছে ভগবান স্বয়ং নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেন।

  • শ্লোক: 14

    বালাগ্রশতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ ।
    ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয় ইতি চাহ পরা শ্রুতিঃ ।।
    (শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৫/৯)
  • অনুবাদঃ- কেশাগ্রের শতভাগকে শতভাগ বিভক্ত করলে যে সূক্ষ্মভাগ হয়, জীব- সেরূপই সূক্ষ্ম, প্রধান শ্রুতিতে এই কথা বলা হয়েছে।

  • শ্লোক: 15

    যস্মিন্ সর্বাণি ভূতান্যাত্মৈবাভূদ্ বিজানতঃ ।
    তত্র কো মোহঃ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ ।।
    (শ্রীঈশোপনিষদ ৭)
  • অনুবাদঃ- যিনি সর্বদা সমস্ত জীবকুলকে গুণগতভাবে শ্রীভগবানের সঙ্গে অভিন্ন, চিৎকণাস্বরূপ দর্শন করেন, তিনিই যথার্থ তত্ত্বদর্শী জ্ঞানী। তাঁর শোকই বা কি? মোহই বা কি? তাঁর মোহ বা শোক থাকে না।

  • শ্লোক: 16

    আচার্যবান্ পুরুষো বেদ
    (ছান্দোগ্য উপঃ ৬/১৪/২)
  • অনুবাদঃ- যিনি গুরু গ্রহণ করেন, তিনি পারমার্থিক উপলব্ধি সম্পর্কে সমস্ত বিষয় অবগত হন।

  • শ্লোক: 17

    তদ্বিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ
    সমিৎপাণিঃ শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম্ ।
    (মুণ্ডক উপঃ ১/২/১২)
  • অনুবাদঃ- সেই পারমার্থিক বিজ্ঞানকে উপলব্ধি করতে হলে অবশ্যই একজন সদগুরু গ্রহণ করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে গুরু গ্রহণেচ্ছু ব্যক্তিকে যজ্ঞকাষ্ঠ বহন করে গুরুর কাছে যেতে হবে। সদ্গুরুর লক্ষণ হচ্ছে যে, তিনি বৈদিক সিদ্ধান্তে পারঙ্গম এবং তাই সর্বদাই পরমেশ্বরের সেবায় নিযুক্ত থাকেন।

  • শ্লোক: 18

    যো বা এতদক্ষরং গার্গ্যবিদিত্বাস্মাল্লোকাৎ প্রৈতি স কৃপণঃ ।
    (বৃহদারণ্যক উপঃ ৩/৮/১০)
  • অনুবাদঃ- যে মানুষ আত্মতত্ত্ব-বিজ্ঞান উপলব্ধি না করে, কুকুর বিড়ালের মতো এই জগৎ ত্যাগ করে এবং মনুষ্য দেহ লাভ করেও জীবনের সমস্যার সমাধান করে না, সে একজন কৃপণ।

    দ্রঃ কৃপণ কথাটির বিপরীত শব্দ হচ্ছে ব্রাহ্মণ। যিনি জীবনের সমস্যার সমাধান জেনে দেহত্যাগ করেন, তিনিই ব্রাহ্মণ। শ্লোকটির অবশিষ্ট অংশ নিম্নরূপ –

  • শ্লোক: 19

    যো বা এতদক্ষরং গার্গি বিদিত্বাস্মাল্লোকাৎ প্রৈতি স ব্রাহ্মণঃ ।।
    (বৃহদারণ্যক উপঃ ৩/৮/১০)
  • অনুবাদঃ- যিনি জীবনের মূল সমস্যার (জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধির) সমাধান সম্পর্কে অবগত হয়ে দেহত্যাগ করেন, তিনিই ব্রাহ্মণ।

  • শ্লোক: 20

    অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মামৃতং গময়।
    (বৃঃ আরণ্যক উপঃ ১/৩/২৮)
  • অনুবাদঃ- অসত্যে থেকো না, নিত্য সত্যের জগতে গমন কর। অন্ধকারে থেকো না, জ্যোতির্ময় লোকে গমন কর। জড় দেহ গ্রহণ করে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরে মর না, অমরত্ব লাভ কর।

  • শ্লোক: 21

    হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্ ।
    তৎ ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ।।
    (ঈশোপনিষদ ১৫)
  • অনুবাদঃ- হে ভগবান! হে সর্বজীবের-পালক! আপনার জ্যোতির্ময় আলোক আপনার মুখারবিন্দকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। কৃপা করে এই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তকে আপনার সত্য স্বরূপ প্রদর্শন করুন।

  • শ্লোক: 22

    নিত্যো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাম্ ।
    একো বহূনাং যো বিদধাতি কামান্ ।।
    (কঠ উপঃ ২/২/১৩, শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৬/১৩)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর হচ্ছেন নিত্য এবং জীবসকলও নিত্য। পরমেশ্বর হচ্ছেন চেতন এবং জীবসকলও চেতন। পার্থক্য শুধু এই যে, সেই পরমেশ্বর সমস্ত জীবের প্রয়োজন সরবরাহ করছেন।

  • শ্লোক: 23

    যস্মিন্ বিজ্ঞাতে সর্বমেবং বিজ্ঞাতং ভবতি
    (মুণ্ডক উপঃ ১/৩)
  • অনুবাদঃ- কেউ যদি পরম নিয়ন্তা ভগবানকে জানতে পারেন, তা হলে তিনি অন্য সব কিছুই জানতে পারেন।

  • শ্লোক: 24

    ন তস্য কার্যং করণং চ বিদ্যতে
    ন তৎ সমশ্চাভ্যধিকশ্চ দৃশ্যতে ।
    পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রুয়তে
    স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়া চ ।।
    (শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৬/৮)
  • অনুবাদঃ- সেই ভগবানের প্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কোন কার্য নেই, যেহেতু তাঁর কোন প্রাকৃত শরীর বা ইন্দ্রিয় নেই। কোন কিছুই তাঁর সমান বা তাঁর থেকে অধিক বলে দৃশ্য হয় না। তিনি বিবিধ অচিন্ত্য পরা শক্তির আধার। এক হয়েও সেই স্বাভাবিক পরা শক্তি জ্ঞান, বল ও ক্রিয়া ভেদে ত্রিবিধা।

  • শ্লোক: 25

    অপানিপাদো জবনো গ্রহিতা
    পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ ।
    (শ্বেতাশ্বতর উপঃ ৩/১৯)
  • অনুবাদঃ- যদিও পরম পুরুষ ভগবানকে হস্ত-পদ বিহীন বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তবুও তিনি সমস্ত যজ্ঞের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন এবং দ্রুত গমন করেন। তাঁর কোন জড় চক্ষু নেই, তবুও তিনি সব কিছু দর্শন করেন। তাঁর কোন জড় কর্ণ নেই, তবুও তিনি সব কিছুই শ্রবণ করেন।

  • শ্লোক: 26

    রসো বৈ সঃ
    (তৈত্তিরীয় উপঃ ২/৭/১)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবানই হচ্ছেন সমস্ত দিব্য রসের উৎস ।
  • Post a Comment

    0 Comments