পূরাণ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক

 পূরাণ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক





  • শ্লোক: 1

    হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্ ।
    কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা ।। (বৃহন্নারদীয় পূরাণ ৩/৮/১২৬)
  • অনুবাদঃ-- এই কলিযুগে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করা ছাড়া আর অন্য কোন গতি নেই, আর অন্য কোন গতি নেই, আর অন্য কোন গতি নেই ।

  • শ্লোক: 2

    নামাপরাধযুক্তানাং নামান্যেব হরন্ত্যঘম্ ।
    অবিশ্রান্তিপ্রযুক্তানি তান্যেবার্থকরাণি চ ।।
    (পদ্ম পূরাণ)
  • অনুবাদঃ-- হরিনামের প্রতি যারা অপরাধ করে, তাদেরও হরে কৃষ্ণ নাম জপের বিধান দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা যদি জপ করে চলে, ক্রমে ক্রমে তারা নিরপরাধে জপ করতে পারবে। শুরুতে যদিও বা অপরাধ হয়, তবুও পুনঃপুনঃ জপের ফলে সেই সব অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

  • শ্লোক: 3

    যে মে ভক্তজনাঃ পার্থ ন মে ভক্ত্যাশ্চ তে জনাঃ ।
    মদ্ভক্তানাং চ যে ভক্তাস্তে মে ভক্ততমাঃ মতাঃ ।।
    (আদি পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, "হে পার্থ! যারা কেবল আমারই ভক্ত, তাঁরা বস্তুত আমার ভক্ত নয়। কিন্তু যারা আমার ভক্তের ভক্ত তাদেরই উত্তম ভক্ত বলে জানবে।"

  • শ্লোক: 4

    ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা।
    যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ ।।
    (গরুড় পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- অপবিত্র হোক বা পবিত্র হোক, জড়-জাগতিক জীবনের সকল অবস্থা অতিক্রম করেও কেউ যদি কমললোচন শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেন, তা হলে অন্তরে ও বাইরে শুচিতা লাভ করেন।

  • শ্লোক: 5

    ষটকর্ম নিপুণো বিপ্রো মন্ত্রতন্ত্রবিশারদঃ ।
    অবৈষ্ণবো গুরুর্ন স্যাদ্ বৈষ্ণবঃ শ্বপচো শুরুঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- কোন ব্রাহ্মণ যদি ব্রাহ্মণের ছয়টি কর্মে নিপুণ হয় এবং মন্ত্রতন্ত্রে বিশারদও হয়, কিন্তু সে যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়, তা হলে সে গুরু হতে পারে না, পক্ষান্তরে চণ্ডাল কুলে উদ্ভূত ব্যাক্তিও যদি শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত হয়, তা হলে সেই গুরু হতে পারে।

  • শ্লোক: 6

    কলৌ শূদ্রাসম্ভবাঃ
    (স্কন্দ পূরাণ)
  • অনুবাদঃ- কলিযুগে সকলেই শূদ্ররূপে জন্মগ্রহণ করে।

  • শ্লোক: 7

    রাক্ষসাঃ কলিমাশ্রিত্য জায়ন্তে ব্রহ্মযোনিষু
    (বরাহ পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- রাক্ষসগণ কলিযুগের সুযোগ নিয়ে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে।

  • শ্লোক: 8

    অতঃ শ্রীকৃষ্ণনামাদি ন ভবেদ্গ্রাহ্যমিন্দ্রিয়ৈঃ ।
    সেবোন্মুখে হি জিহ্বাদৌ স্বয়মেব স্ফুরত্যদঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ, ভঃ রঃ সিঃ ১/২/২৩৪)
  • অনুবাদঃ- অতএব শ্রীকৃষ্ণের নাম-রূপ-লীলা কখনও প্রাকৃত চক্ষু, কর্ণ আদির গ্রাহ্য নয়। জীব যখন সেবোন্মুখ হন অর্থাৎ চিৎ-স্বরূপে কৃষ্ণোন্মুখ হন, তখনই অপ্রাকৃত জিহ্বা আদি ইন্দ্রিয়ে কৃষ্ণনাম আদি স্বয়ংই স্ফূর্তি লাভ করে।

  • শ্লোক: 9

    নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ ।
    জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- ব্রাহ্মণদের আরাধ্যদেব, গুরু ও ব্রাহ্মণদের হিতকারী এবং জগতের কল্যাণকারী শ্রীকৃষ্ণকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি। শ্রীকৃষ্ণ ও গোবিন্দ নামে পরিচিত সেই পরমেশ্বর ভগবানকে আমি পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি ।

  • শ্লোক: 10

    ঐশ্বর্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।
    জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষণ্ণং ভগ ইতীঙ্গনা ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ ৬/৫/৭৪)
  • অনুবাদঃ- পূর্ণ সম্পদ, পূর্ণ শক্তি, পূর্ণ খ্যাতি, পূর্ণ সৌন্দর্য, পূর্ণ জ্ঞান ও পূর্ণ বৈরাগ্য -এগুলি হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের ছয়টি ঐশ্বর্য।

  • শ্লোক: 11

    নাহং তিষ্ঠামি বৈকুণ্ঠে যোগিণাং হৃদয়েষু বা ।
    মদ্ভক্তাঃ যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- হে নারদ! আমি বৈকুণ্ঠে থাকি না, যোগীদের হৃদয়েও থাকি না। আমার ভক্তগণ যেখানেই আমার লীলাবিলাসের গুণকীর্তন করে, আমি সেখানেই থাকি।

  • শ্লোক: 12

    নাম চিন্তামণিঃ কৃষ্ণশ্চৈতন্যরসবিগ্রহঃ ।
    পূর্ণ শুদ্ধো নিত্যমুক্তোহভিন্নত্বান্নামনামিনোঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- শ্রীকৃষ্ণের নাম চিন্ময় চিন্তামণি বিশেষ, তা চৈতন্যরসের বিগ্রহস্বরূপ। তা পূর্ণ অর্থাৎ মায়িক বস্তুর মতো আবদ্ধ ও খণ্ড নয়; তা শুদ্ধ, অর্থাৎ মায়া-মিশ্য নয়; তা নিত্য মুক্ত অর্থাৎ সর্বদা চিন্ময়, কখনও জড় সম্বন্ধে আবদ্ধ হয় না, যেহেতু নাম ও নামীর স্বরূপে কোন ভেদ নেই।

  • শ্লোক: 13

    যুবতীনাং যথা যূনি যুনাং চ যুবতৌ যথা ।
    মনোহভিরমতে তদ্বন্ মনো মে রমতাং ত্বয়ি ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ ১/২০/১৯)
  • অনুবাদঃ- যুবকদের দর্শনে যুবতীদের মন যেমন উৎফুল্ল হয় এবং যুবতীদের দর্শনে যুবকেরা যেমন উৎফুল্ল হয়, হে কৃষ্ণ! আমার মনও যেন শুধু তোমাতেই সেই রকম আনন্দ লাভ করে।

  • শ্লোক: 14

    স্মর্তব্যঃ সততং বিষ্ণুর্বিস্মর্তব্যো ন জাতুচিৎ ।
    সর্বে বিধিনিষেধাঃ স্যুরেতয়োরেব কিঙ্করাঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- সর্বদা বিষ্ণুকে স্মরণ করা উচিত এবং কখনই তাঁকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সমস্ত বিধি ও নিষেধ এই দুটি কথার অনুগত ।

  • শ্লোক: 15

    স হানিস্তন্ মহচ্ছিদ্রং স মোহঃ স চ বিভ্রমঃ ।
    যন্মুহূর্তং ক্ষণং বাপি বাসুদেবং ন চিন্তয়েৎ ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- এক মুহূর্ত ক্ষণও যদি বাসুদেবকে স্মরণ না করে অতিক্রান্ত হয়, তা হলে সেই হানিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় হানি। সেটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মোহ এবং সবচেয়ে বড় বিভ্রম।

  • শ্লোক: 16

    মায়াবাদমসচ্ছাস্ত্রং প্রচ্ছন্নং বৌদ্ধমুচ্যতে ।
    ময়ৈব বিহিতং দেবি কলৌ ব্রাহ্মণমূর্তিনা ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- শিব পার্বতীকে বললেন, “হে দেবী! আমি কলিকালে ব্রাহ্মণমূর্তি ধারণ করে অসৎ শাস্ত্রের দ্বারা মায়াবাদরূপ প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধমত স্থাপন করি।”

  • শ্লোক: 17

    অশ্বমেধং গবালম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকম্ ।
    দেবরেণ সুতোৎপত্তিং কলৌ পঞ্চ বিবর্জয়েৎ ।।
    (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, কৃষ্ণ-জন্ম-খণ্ড ১৮৫/১৮০)
  • অনুবাদঃ- এই কলিযুগে অশ্বমেধ-যজ্ঞ, গোমেধ-যজ্ঞ, সন্ন্যাস-আশ্রম গ্রহণ, পিতৃপুরুষদের শ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন এবং দেবরের দ্বারা সন্তানোৎপাদন—এই পাঁচটি কর্ম নিষেধ করা হয়েছে।

  • শ্লোক: 18

    একদেশস্থিতস্যাগ্নের্জ্যোৎস্না বিস্তারিণী যথা ।
    পরস্য ব্রহ্মণঃ শক্তিস্তথেদমখিলং জগৎ ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ ১/২২/৫৩)
  • অনুবাদঃ- একই স্থানে অবস্থিত অগ্নির প্রভা বা আলোক যেমন সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়, সেই রকম পরব্রহ্মের শক্তি অখিল জগৎ জুড়ে ব্যাপ্ত হয়ে আছে।

  • শ্লোক: 19

    অপ্রারব্ধফলং পাপং কূটং বীজং ফলোন্মুখম্ ।
    ক্রমেনৈব প্রলীয়েত বিষ্ণুভক্তি-রতাত্মনাম্ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- পাপময় জীবনে পাপকর্মের সুপ্ত প্রতিক্রিয়াগুলির বিভিন্ন স্তর রয়েছে। কিছু প্রতিক্রিয়া প্রায় ফলোন্মুখ, কিছু প্রতিক্রিয়া আরও সুপ্ত (কূট) কিংবা কিছু রয়েছে একেবারে বীজ আকারে। তবে সর্ব অবস্থাতেই, বিষ্ণুভক্তিতে রত ব্যক্তির সমস্ত প্রকার পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া ক্রমে ক্রমে লয় প্রাপ্ত হয়।

  • শ্লোক: 20

    অর্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীর্গুরুষু নরমতির্বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধি-
    র্বিষ্ণোর্বা বৈষ্ণবানাং কলিমলমথনে পাদতীর্থেহম্বুবুদ্ধিঃ ।
    শ্রীবিষ্ণোর্নাম্নিমন্ত্রে সকলকলুষহে শব্দসামান্যবুদ্ধি-
    র্বিষ্ণৌ সর্বেশ্বরেশে তদিতরমসধীর্যস্য বা নারকী সঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- যে ব্যক্তি পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে পাথর, কাঠ বা ধাতু-নির্মিত বলে মনে করে, ভগবানের নিত্য পার্ষদ শ্রীগুরুদেবকে একজন সাধারণ মরণশীল মানুষ বলে গণ্য করে, বৈষ্ণব ভক্তকে কোন বিশেষ জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে, কিংবা কলিযুগের সমস্ত কলুষ নাশ করতে সক্ষম বিষ্ণু বা বৈষ্ণবের চরণধৌত জলকে সাধারণ জল বলে মনে করে, সকল কলুষ হরণকারী ভগবানের পবিত্র নাম বা ভগবান সম্বন্ধীয় মন্ত্রকে সাধারণ শব্দের সমতুল্য বলে মনে করে এবং সর্বেশ্বরেশ্বর বিষ্ণুকে দেবতাদের সমকক্ষ বলে মনে করে, সেই ব্যক্তি নারকীয় বুদ্ধির অধিকারী। যে ব্যক্তি এভাবেই চিন্তা করে, সে নিঃসন্দেহে নরকের বাসিন্দা।

  • শ্লোক: 21

    দ্বৌ ভূতসর্গৌ লোকেহস্মিন্ দৈব আসুর এব চ ।
    বিষ্ণুভক্তঃ স্মৃতো দৈব আসুরস্তদ্বিপর্যয়ঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- এই জগতে দৈব ও অসুর ভেদে দুই প্রকার মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে এক প্রকার মানুষ দৈব ভাবযুক্ত, আর এক প্রকার মানুষ আসুরিক স্বভাবযুক্ত। বিষ্ণুভক্তেরা সুর এবং যারা বিষ্ণুভক্ত নয়, তারা তার বিপরীত অর্থাৎ অসুর।

  • শ্লোক: 22

    অবৈষ্ণব মুখোদ্ গীর্ণং পূতং হরিকথামৃতং ।
    শ্রবণং নৈব কর্তব্যং সর্পোচ্ছিষ্টং যথা পয়ঃ ।।
    (পদ্ম পুরাণ)
  • অনুবাদঃ- অবৈষ্ণবের মুখ থেকে উদ্গীর্ণ হরিকথা শ্রবণ করা উচিত নয়। সর্পোচ্ছিষ্ট দুধ যেমন বিষাক্ত হয়ে যায়, তেমনই হরিকথা পবিত্র হলেও, অবৈষ্ণবের মুখ থেকে নির্গত হলে তা বিষাক্ত হয়ে যায়।

  • শ্লোক: 23

    বর্ণাশ্রমাচারবতা পুরুষেণ পর পুমান্ ।
    বিষ্ণুরারাধ্যতে পন্থা নান্যত্তত্তোষকারণম্ ।।
    (বিষ্ণু পুরাণ ৩/৮/৯)
  • অনুবাদঃ- পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু বর্ণধর্ম ও আশ্রমধর্মের আচারযুক্ত পুরুষদের দ্বারা আরাধিত হন। বর্ণাশ্রম আচার ব্যতীত তাঁকে পরিতুষ্ট করার অন্য কোন উপায় নেই।
  • Post a Comment

    0 Comments