রাধারাণীর কৃপা অপার

রাধারাণীর কৃপা অপার



বরসানাতে এক ভক্ত ছিল ব্রজদাস। তাঁর এক মেয়ে ছিল নাম ছিল রতিয়া। ব্রজদাসের পরিবার ছিল সেই মেয়ে। ব্রজদাস দিনে নিজের সকল কাজ করত আর সন্ধ্যায় শ্রীমতী রাধার মন্দিরে যেত দর্শন করত আর যত সাধুসন্ত আসত শ্রীজীর মন্দিরে তাদের সাথে সৎসঙ্গ করত। এই ছিল ব্রজদাসের নিয়ম।


একবার এক সাধু বললেন ব্রজদাসকে, "ভাইয়া আমি নন্দগ্রাম যাব। জিনিসপত্র আমার একটু বেশী।

পয়সাও নেই, যে একটা সেবক নেবো। তুমি আমাকে একটু নন্দগ্রামে পৌছে দিতে পারবে?

 " ব্রজদাস সাধুর কথাতে রাজি হয়ে গেল।   

তখন ছিল গরমকাল। ব্রজদাস বলল সাধুজীকে, "গরমের সময় সকালে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তাহলে আমি দশটা এগারোটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসতে পারব।"


সাধুজী  বললেন, "আমি ভোর চারটার সময় তৈরি থাকব।"

ব্রজদাস ঘরে এসে মেয়ে রতিয়াকে বলল, " এক সাধুজীকে নন্দগ্রাম পৌঁছাতে যাব। সময় মত চলে আসব। আমার প্রতিক্ষা করিস না।"

 ব্রজদাস সকালে উঠে রাধে রাধে বলতে বলতে খালি পায়ে সাধুর কাছে পৌছে গেল। সাধুজী ব্রজদাসকে নিজে জিনিসপত্র দিলেন আর সাধুজী নিজে ঠাকুরের জিনিসপত্র আর বাসনপত্র নিলেন।

রওনার সময় হল কিন্তু সাধুজীর একটা রোগ ছিল। কিছু দূর গিয়ে হাফিয়ে বসে যেতেন। এই রকম যেতে যেতে নন্দগ্রামে পৌছতে সময় লাগল সকাল এগারটা।

ব্রজদাস জিনিসপত্র রেখে যখন আসার অনুমতি চাইলে সাধুজী বললেন, "ভরদুপুরে এত গরমে যাবে একটু জল পান করো। কিছু খাবার খাও তারপর যেও।"

ব্রজদাস  বলল, " না সাধুজী, এটা হয় না। বৃষভানু নন্দিনী বিয়ে হয়েছিল নন্দগ্রামে। রাধা আমাদের মেয়ে তার বিয়ে হয়েছিল বলে এখানে জলও খেতে পারব না।"

এই কথা শুনে সাধুজীর চোখে অশ্রু এসে গেল। কত বছরের পুরানো এই কথা, কি গরীব লোক মনে কত ভক্তি, কত প্রেম। কত উঁচু তোমার প্রেমভক্তি।

ব্রজদাস রাধে রাধে বলতে বলতে বাড়ির পথে রওনা হল। উপরে গরম সূর্যের তেজ, তপ্ত মাটির পথ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ দয়া হল তার ভক্তের উপর। আজ ভক্তের পিছনে পিছনে ভগবান ছুটতে লাগল।

এক গাছের ছায়াতে ব্রজদাস বসল আর সে গাছের তলাতে এসে অজ্ঞান হয়ে গেল। ভগবান আজ ভক্তের কাছে এসে তার জ্ঞান ফিরানো চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু জ্ঞান আসল না ব্রজদাসের। 

ভগবান বিচার করতে লাগল অজামিল, গজরাজ গজেন্দ্রকে উদ্ধার হল, দ্রৌপদীকে সংকট থেকে বাঁচালাম। কিন্তু এই ভক্তের প্রাণ সংকট থেকে উদ্ধারের উপায় কিছুতে খুঁজে পাচ্ছি না।

ব্রজদাস রাধারাণীর ভক্ত। তিনি একমাত্র পারবে তাঁর প্রিয় ভক্তের প্রাণ রক্ষা করতে। এখন রাধারাণীকে ডাকতে হবে।

ভগবান এই ভরদুপুরে ভক্তের জন্য রাধারাণীর কাছে শ্রীমতী মহলে পৌছালেন। রাধারাণী অবাক হয়ে হঠাৎ আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন শ্যামকে।

ভগবানও একটু ঘুরিয়ে উত্তর দিলেন। তিনি বললেন,  "তোমার বাবা বরসানা আর নন্দগ্রামের রাস্তাতে অজ্ঞান অবস্থায় আছে। তুমি গিয়ে একটু দেখে আসো।"

রাধারাণী বললেন, "কোথায় কোন বাবা ❔" 

শ্রীকৃষ্ণ তখন  সব কথা খুলে বললেন। আর যাওয়ার জন্য বললেন শ্রীমতীকে। এই বললেন "ও রাধে তোমাকে তোমার সেই প্রিয় ভক্তের মেয়ের রূপে তার সামনে যেতে হবে। জল আর ভোজন নিয়ে যেতে হবে।"

শ্রীমতি রাধারাণী তৈরি হলেন ব্রজদাসের মেয়ের রূপ নিয়ে। সেখানে গিয়ে ব্রজদাসকে ডাকতে লাগলেন, " বাবা, বাবা!" 

ব্রজদাস জেগে উঠল। উঠে মেয়েকে দেখে বলল, "আজ তুই বাঁচিয়ে দিলি রে । আজ তো আমার প্রাণ চলে যেত। জানিস আজ তোর কথা খুব মনে পড়ছিল।"

 রাধারাণী বলল," আরে বাবা। প্রত্যেক বাবা তার মেয়েকে ভালবাসে। আগে তুমি বাবা ভোজন তো করো।"

ব্রজদাস ভোজন করতে লাগল। রাধাজী তখন বলল, "বাবা ঘরে কিছু অতিথি এসেছে। আমাকে এখন ঘরে গিয়ে ওদের সেবা করতে হবে।" কিছু দূর গিয়ে রাধারাণী রূপী ব্রজদাসের মেয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। ব্রজদাস আজকের মত অমৃত ভোজন আগে কোনদিন করে নি। এত তৃপ্তি কোনদিন পায় নি আগে।

সন্ধ্যায় ঘরে এসে ব্রজদাস আজ মেয়ের কাছে এসে বলল, "তুই ভোজন না আনলে আমি মরে যেতাম রে। জল আর ভোজন এনে তুই আজ আমাকে বাঁচালি।"

তার মেয়ে বলল, "কোথায় বাবা! আমি তো আজ কোথাও যাইনি।" 

ব্রজদাস বলল, " আচ্ছা তুই যে তখন বললে, অতিথি এল। কোথায় সেই অতিথি ❔"

ব্রজদাসের মেয়ে বলল, " কি বলছো বাবা, আমি ত কিছু বুঝতে পারছি না। কিসের অতিথি ❔

কোন অতিথি তো আসে নি। 

আমিও কোথাও যাই নি আজ। "

তখন ব্রজদাস সব কথা বুঝতে পারলেন। কি হল আজ। তখন সে তার মেয়েকে বলল, "আজ তোর রূপ ধরে রাধারাণী দর্শন দিলেন।

আমি তো বুঝতে পারলাম না।

ভাব বিভোর হয়ে গেল ব্রজদাস, বলতে লাগল, আমার কিশোরী আমার মত অধমের জন্য এত প্রচন্ড গরমে কষ্ট করল। আমার মেয়ের রূপ ধরে এসে আমাকে ভোজন করালো আর জল খাওয়ালো নিজের হাতে। আমি তো আমার কিশোরীকে চিনতে পারলাম না। এখন তো একটা নিরন্তর আশা আবার যেন আমার কিশোরীজীর দর্শন পাই।"

এই বলে কাঁদতে লাগল ভক্ত ব্রজদাস।

Post a Comment

0 Comments