মহা রাসপূর্ণিমা তিথি । শারদ পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলা করেছিলেন ।
“রাস” শব্দের অর্থ কি ? একজন নট যখন বহু নটীর সাথে নৃত্য করেন তখন সেই যৌথ নৃত্যকে “রাস নৃত্য” বলা হয় ।
শারদ পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নানা রকম পুস্পে বিশেষত সুগন্ধযুক্ত মল্লিকা পুস্প দ্বারা সজ্জিত হলেন । অপরদিকে নিস্কাম গোপিনীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতি রূপে প্রাপ্তি করবার জন্য কাত্যায়নী দেবীর ব্রত করেছিলেন ।
ভগবান কৃষ্ণ যখন রাস অনুষ্ঠান করেন তখন তাঁর বয়স ছিলো ৮ বছর ।
জড় জগতের যে যুবক যুবতীরা নৃত্য করে তাঁর সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই দিব্য লীলার আকাশ পাতাল তফাৎ ।
ভগবানের দিব্যলীলা আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ, অপরদিকে জড় জগতের যুবক-যুবতীদের সেই নৃত্য জড়তায় পূর্ণ ।
ভগবানের মায়াশক্তি মহামায়ার প্রভাবে জড় জগতের যুবকযুবতীরা স্বেচ্ছাচারিতায় নিমগ্ন হয়ে অবশেষে মহাদুঃখে পতিত হয় ।
তাই শাস্ত্রের মত রাসলীলার অনুকরণ কদাপি এমনকি স্বপ্নেও করা উচিৎ না।
শাস্ত্রে গোপিনীদের কৃষ্ণপ্রেমকে নিস্কাম ও বাসনাবিহীন বলা হয়েছে ।
শারদ পূর্ণিমা তিথিতে তাঁরা ভগবানের বংশীধবনি শ্রবন করে ছুটে এসেছিলেন ।
সেইসময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক থেকে বহু হন যোগমায়া দেবীকে আশ্রয় করে ।
#শ্রীমদ্ভাভগবতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
“ভগবানপি তা রাত্রীঃশারদোৎফুল্লমল্লিকাঃ।
বীক্ষ্য রন্তুং মনশ্চক্রে যোগমায়ামুপাশ্রিতঃ ।।
(১০/২৯/১ )
তিনি প্রেমবতী গোপবালাগণের মধুর রস আস্বাদনে প্রবৃত্ত হইয়া যোগমায়া শক্তির পূর্ণ বিকাশ করলেন ।
যোগমায়া দেবী ভক্ত- ভগবানের মধ্যে দিব্যলীলার স্ফুরন ঘটান ।সমস্ত গোপিণীগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে চেয়েছিলেন বলে ভগবান নিজে বহু হয়ে রাসনৃত্যের অনুষ্ঠান করেন ।
এই রাসনৃত্যে কোনো রকম জাগতিক কামনা বাসনা ছিলো না।
গোপিণীগণ দিব্য মাধুর্য ভাবের সাধিকা ছিলেন। শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় এই প্রসঙ্গে “চৈতন্যচরিতামৃতে” বলেছেন-
আত্মেন্দ্রিয়প্রীতি বাঞ্ছা- তারে বলি ‘কাম’।
কৃষ্ণেন্দ্রিয়প্রীতি- ইচ্ছা ধরে ‘প্রেম’ নাম ।।
এর অর্থ নিজেদের ইন্দ্রিয়সুখের জন্য যে বাসনা তা “কাম”। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রসন্নতা বিধানের জন্য পূজা, অর্চনা, সাধনা ইত্যাদি ভক্তিমার্গ “প্রেম” নামে খ্যাত ।
গোপিনীগণ এই “প্রেম” সাধনার মাধ্যমেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্তি করেছিলেন ।
মহারাসে জীবাত্মা আর পরমাত্মার মিলন ঘটেছিলো ।
শ্রীকৃষ্ণ হলেন পূর্ণব্রহ্ম পরমাত্মা আর গোপিনীগণ জীবাত্মা ।
জীবাত্মা যখন পরমাত্মায় মিশে যায় তখন সেটাই হয় “মহারাস” ।
এইসব জটিল তত্ত্বের সাক্ষাৎ প্রতিভু হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের “রাসলীলা”।
তত্রাতিশুশুভে তাভিভগবান্ দেবকীসুতঃ ।
মধে মণীনাং হৈমানাং মহামারকতো যথা ।। ( শ্রীমদ্ভাগবত )
🌼শুকদেব গোস্বামী , মহারাজ পরিক্ষিৎ কে বললেন- “যে মণি গুলির রং সোনার মতো সে গুলিতে মাঝে মাঝে নীল রং এর মরকত মণি বসালে যেমন শোভা হয়, তেমনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের অর্থাৎ গোপীদের সঙ্গে সেখানে অতিশয় শোভা পেতে লাগলেন । ”
0 Comments