-:বহুলাষ্টমী:-
বৈকুণ্ঠাজ্জনিতো বরা মধুপুরী তত্রাপি রাসোৎসবাদ্
বৃন্দারণ্যমুদারপাণিরমণা-ত্তত্রাপি গোবর্ধন।
রাধাকুণ্ডমিহাপি গোকুলপতেঃ প্রেমামৃতাপ্লাবনাৎ
কুর্যাদস্য বিরাজতো গিরিতটে সেবাং বিবেকী ন কঃ।।
বৈকুণ্ঠ অপেক্ষা শ্রষ্ঠ মাথুর্মণ্ডল।তদপেক্ষা বৃন্দাবন যথা রাসস্থল।। তদপেক্ষা গোবর্ধন নিত্য কেলিস্থান।রাধাকুণ্ডে তদপেক্ষা প্রেমের বিঞ্জান।।
শ্রীনন্দন্দন আজ ও বনে গমন করে কুন্দ-কুসুম-মাল্যে তাঁর আনন্দময় শোভাবর্ধন পূর্বক গোপ ও গোধনসমূহ সঙ্গে প্রণয়ীগণের হর্ষ উৎপাদন করতে করতে যমুনা তটে বিহার করছে। সেইসময় বিশাল কুঁজ বিশিষ্ট, ভয়ংকর বৃষাকৃতির "অরিষ্টাসুর" গর্জন করতে করতে তীক্ষ্ণ শৃঙ্গ দ্বারা ভূমিতল বিদীর্ণ করছিল। এতে গোপ-গোপীগণ ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হলেন, তার তীক্ষ্ণ প্রতিধ্বনিতে গর্ভবতী ধেনু ও নারীগণের গর্ভস্রাব ভ্রুণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গৃহপালিত পশুগণ ভয়ে গোষ্ঠ পরিত্যাগ করেছিল। এই অবস্থায় ব্রজবাসীগণ "হে কৃষ্ণ, হে কৃষ্ণ' বলে চিৎকার করে শ্রীগোবিন্দের শরণাগত হয়েছিলেন।
এই পাহাড়সম অরিষ্টাসুরকে শ্রীকৃষ্ণ শৃঙ্গদ্বয় ধারণ করে ভূমিতে ফেলে বধ করলেন--
"অরিষ্ট অসুর আইলা বৃষরুপ ধরি।
পরম কৌতুকে তারে বধিলা শ্রীহরি।"
অতঃপর গোপীগণের নয়নের উৎসবস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ বলরামকে সঙ্গে নিয়ে গোষ্ঠে গমন করলেন। গোষ্ঠে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধারাণীর সাক্ষাৎ পেয়ে তাকে স্পর্শ করতে চাইলে তিনি বাধা দিলেন। শ্রীমতি হাস্যবদনে বললেন ইহা হবে না, কারণ তুমি বৃষ হত্যাকারী। তাই তুমি অপবিত্র হয়ে আছো।
"কৌতুকে শ্রীরাধা অঙ্গ স্পর্শিতে কৃষ্ণ চায়।
হাসিয়া রাধিকা বলে ইহা না যুয়ায়।
যদ্যপি অসুর সে ধরয়ে বৃষাকৃতি।
তারে বধ কৈলা, হৈলা অপবিত্র অতি।"
শ্রীকৃষ্ণ জিঞ্জাসা করলেন, রাধে! তাহলে এখন উপায়? শ্রীমতি বললেন, হে কৃষ্ণ তুমি সর্বতীর্থে স্নান করে আসলেই পবিত্র হতে পারবে।
"যদি সর্ব তীর্থে স্নান পার করিবারে।
তবে সে ঘুচিবে দোষ কহিল তোমারে।
হাসিয়া কহেন কৃষ্ণ সুমধুর বাণী।
এথাই করিব স্নান সর্ব্বতীর্থ আনি।।"
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ঠিক আছে রাধে, "আমি এখনি সর্বতীর্থ এখানে এনে স্নান করবো। এই বলে শ্রীকৃষ্ণ ভূতিতে পদাঘাত করলেন, এতে একটি কুণ্ড তৈরি হলো এবং সর্বতীর্থ জলে পরিপূর্ণ করলেন।
"এতবলি পদাঘাত কৈল মহিতলে।
পরিপূর্ণ হৈল কুণ্ড সর্ব তীর্থ জলে।"
সকল তীর্থগণ এসে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করল। আর শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধিকাসহ সকল
সখীগণকে দেখাইয়া কুণ্ডে স্নান করলেন।
"নিজ নিজ পরিচয় দিয়া তীর্থগণ।
সাক্ষাৎ কৃষ্ণে করিলা স্তবন।
শ্রীরাধিকাসহ সখীগণে দেখাইয়া।
স্নান কৈল কৃষ্ণ তীর্থগণে সম্বোধিয়া।"
শ্রীকৃষ্ণ সৃষ্ট শ্রীশ্যামকুণ্ডে স্নান করার পর সখীগণসহ শ্রীরাধাকে বললেন কুণ্ডে স্নান করতে। শ্রীরাধা বললেন, এই কুণ্ডে বৃষহত্যা জনিত পাপ স্পর্শ লেগেছে। তিনি এই কুণ্ডে স্নান করবেন না। তাই শ্রীমতি ভূমিতে পদাঘাত করে আরেকটি কুণ্ড সৃষ্টি করে, তিনি আনন্দিত হয়ে সর্বতীর্থজল দ্বারা কুণ্ড পূর্ণ করতে চাইলেন। এতে অন্তর্যামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধিকার ভাব বুঝতে পেরে শ্রীশ্যামকুণ্ড হতে শ্রীরাধাকুণ্ড জলে পরিপূর্ণ করে দিলেন।
"শ্রীরাধিকা শুনি কৃষ্ণের প্রগলভ্য বচন।।
সখীগণসহ শীঘ্র কুণ্ড করিলা খনন।
হইল অপূর্ব রাধিকা সরোবর।"
দেখিয়া অতি আনন্দিত অন্তর।।
সর্বতীর্থময়ী শ্রীমানসী গঙ্গাজলে।
করিবেন কুণ্ডপূর্ণ অতি কুতুহলে।।
এই ইচ্ছা জানি কৃষ্ণ তীর্থে নির্দশিতে।।
প্রবেশে রাধাকুণ্ডে শ্যামকুণ্ড হৈতে।।
তীর্থগণ করি বহ স্তুতি রাধিকার।
মানায়ে সৌভাগ্য, মহাহর্ষ অনিবার।।
দুই কুণ্ড পরিপূর্ণ হৈল তীর্থজলে।
সখীসহ দোহে শোভা দেখে কুতুহলে।।"
যথা রাধা বিষ্ণোস্তস্যাঃ কুণ্ডং প্রিয়ং তথা।
সর্বগোপীষু সৈবৈকা বিষ্ণোরত্যন্তবল্লভা।।
রাধা যেরূপ শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়া, রাধাকুণ্ড ও তদ্রুপ প্রিয়স্থান, সমস্ত গোপীবর্গের মধ্যে রাধাই কৃষ্ণের অত্যন্ত বল্লভা।।
নানা বৃক্ষরাজী বেষ্টিত কণ্ডদ্বয়ে দুইজন স্নান সমাপন করতে করতে অর্ধরাত্র হয়ে গেল। সেই হতে অদ্যাবধি শ্রীশ্যাম কুণ্ডে ও শ্রীরাধাকুণ্ডে লোকজন স্নান করতে লাগলেন--
"নানা বৃক্ষলতায় বেষ্টিত কুন্ডদ্বয়।
দোহার আশ্চর্য্যকেলি স্নান এই হয়।।
অর্দ্ধরাত্র হইতেই হৈল সমাধান।
অদ্যাপিহ লোকে তৈছে কুন্ডে করেন স্নান।।"
"গোবর্দ্ধনগিরৌ রম্যে রাধাকুন্ডং প্রিয়ং হরেঃ।
কার্ত্তিকে বহুলাষ্টম্যাং তত্র স্নাত্বা হরে প্রিয়ঃ।।"
(ভক্তিরসামৃত ৫/৫০৪)
শ্রীহরির অতিপ্রিয় শ্রীরাধাকুন্ড শ্রীগোবর্দ্ধন পর্বতের মধ্যে বিরাজিত। কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণাষ্টমী, বহুলাষ্টমী তিথিতে শ্রীরাধাকুণ্ডে স্নান করলে লোক রাধাকুণ্ডবিহারী শ্রীহরির প্রিয়ভক্ত হতে পারে।
-:জয় জয় রাধাদামোদর:-
-----------------------------------------
0 Comments