#বিবাহের জন্য জীবনসঙ্গী অন্বেষন গুরুমহারাজের বার্তা 🙏🙏🙏🙏


#আমার প্রিয় শিষ্যবৃন্দ ,


আমার আশীর্বাদ গ্রহন কর। শ্রীল প্রভুপাদের জয়।


যখন তোমরা একজন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর অনুসন্ধান করতে চেষ্টা করবে, তখন চারটি বিষয় বিবেচ্য –


(১) কাকে অনুসন্ধান করবে


(২) কোথায় অনুসন্ধান করবে


(৩) কিভাবে অনুসন্ধান করবে


(৪) কী কী বিষয় অনুসন্ধান করবে


উপরের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করাই হল সারমর্ম। তোমরা ধাপগুলো পরস্পরের সাথে মিশিয়ে ফেলতে কিংবা এড়িয়ে যেতে পারবে না। সেগুলো একটা নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় রয়েছে।


(১) কাকে অনুসন্ধান করবে –


বিগত বছরগুলিতে আমি আমার শিষ্যদের নির্দেশনা দিয়েছি যে, তাঁরা যেনো শুধুমাত্র ইসকনের ভক্তদের মধ্য থেকেই জীবনসংগী নির্বাচন করে। অন্যথায়, আমি এমনটি দেখেছি যে সেই সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী হয়ত বিবাহের পূর্বে কৃষ্ণভাবনামৃতে অনুকূলভাবাপন্ন ছিল, কিন্তু বিবাহের পরে সবকিছু বদলে যায় এবং যে বিবাহ কৃষ্ণভাবনামৃতে সহায়তা করার জন্যে সংঘটিত হয়েছিল, তা সমস্যায় পরিপূর্ন হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, তোমরা নিজেদের বিবাহে এসব সমস্যা চাও না।

আমি তোমাদের এমন অনেক দৃষ্টান্ত দিতে পারি। যেমন, আমার একজন শিষ্য একজন অভক্ত মহিলাকে বিবাহ করেছিল, যে প্রথমে কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু যখন তাদের একটা সন্তান হয়, সে বাচ্চাটিকে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ানো শুরু করল। এসব পরিস্থিতিতে কিইবা করার আছে? সুতরাং দয়া করে সতর্ক হও যেন এসব পরিস্থিতিতে জড়াতে না হয়।


(২) কোথায় অনুসন্ধান করবে-


মায়াপুরে আমার কার্যালয়ে এক বিবাহ সংক্রান্ত সেবা প্রদানের সুযোগ রয়েছে,যা VMB (বৈষ্ণব বিবাহ সংস্থা ) নামে পরিচিত। তোমরা সেখানে নিবন্ধন করতে পার এবং তারা তোমাকে কিছু ভক্তের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেবে। এছাড়াও আরও অনেক ভক্তদের ওয়েবসাইট রয়েছে, যদি তোমরা চাও সেগুলোও দেখতে পার। কিন্তু আমি সতর্ক করতে চাই যে, যখন তোমরা এসব ওয়েবসাইটে কোন প্রোফাইল দেখবে তখন পরীক্ষা করে নেবে যে সেই প্রোফাইলে কোন প্রবীণ ভক্তকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে কিনা, যাতে করে তোমরা যাচাই করতে পার সেই প্রার্থী সত্যিই যথার্থ ভক্ত কিনা। এটা না হলে তোমাদেরকে নিজেদের ঝুঁকিতে প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে হবে।


(৩) কিভাবে অনুসন্ধান করবে-


একবার যখন তোমরা আমার অফিস অথবা কোন ভক্তদের ওয়েবসাইট থেকে কিছু উপযুক্ত ভক্তের প্রোফাইল পাবে তখন দয়াকরে সিদ্ধান্ত নাও যে কোন ভক্তের সাথে তোমরা প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হতে চাও। তোমরা সকল ভক্তের সাথে প্রস্তাব নিয়ে একইসাথে অগ্রসর হবে না, এটা উচিত নয়। তোমাদের উচিত একই সময়ে শুধুমাত্র একটা প্রস্তাব নিয়েই অগ্রসর হওয়া ।


বিশেষ দ্রষ্টব্য : তোমার প্রোফাইলে যত বেশি শর্তাদি থাকবে, তোমার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করা ততই বেশি কঠিন হবে। সুতরাং প্রবীন এবং অভিজ্ঞ ভক্তদের থেকে সাহায্য এবং উপদেশ গ্রহন করাটা খুবই উপযোগী, যারা তোমাদেরকে বলতে পারবেন প্রকৃতপক্ষে তোমার জন্য কি প্রয়োজন এবং কোন বিষয়গুলো তোমাকে সাহায্য করতে পারে।


(৪) কি অনুসন্ধান করবে-


একবার যখন তুমি সিন্ধান্ত নেবে যে, কোন প্রোফাইল নিয়ে তুমি অগ্রসর হতে চাও তখন পরবর্তীতে জ্যোতিষশাস্ত্রীয় সঙ্গতি (কুষ্ঠী বা কুন্ডলী) যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি তোমাদের জানাতে চাই, শ্রী শ্রীমৎ প্রহ্লাদানন্দ মহারাজ যিনি জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করেছেন এবং কুড়ি বছরের অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে কৃষ্ণভাবনাময় বিবাহের সাফল্যের ক্ষেত্রে জ্যোর্তিবিজ্ঞান শুধুমাত্র ২০% অবদান রাখতে পারে। বাকি ৮০% সাফল্যের জন্যে ভক্তিযোগে অনুরাগ, সেবা অভিলাষ এবং শ্রীল প্রভুপাদের মিশনের প্রতি ঐকান্তিকতা প্রভৃতি প্রয়োজন। সুতরাং যদি জ্যোতিষশাস্ত্রীয় সঙ্গতি অনুকূল ফলাফল প্রদান নাও করে, তারপরও তোমরা পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশা পত্র বিনিময় করতে পার (এপ্রসঙ্গে আমি এই পত্রের পরের দিকে বর্ননা করেছি ) এবং যাচাই করতে পার কোন বিষয়গুলি প্রতিকূল এবং কিভাবে সেগুলো সমাধান বা প্রশমিত করা যায়, যাতে করে পরবর্তীতে সেগুলো কৃষ্ণভাবনায় বাধা সৃষ্টি না করে। এক্ষেত্রে কিভাবে জ্যোতিষশাস্ত্রীয় অসঙ্গতিগুলো নিয়ন্ত্রন বা প্রশমিত করা যায় সে প্রসঙ্গে সাধারন নির্দেশনা তোমরা প্রবীন এবং অভিজ্ঞ গৃহস্থ ভক্তদের কাছ থেকে পেতে পার, যার সাথে তুমি আলোচনা করতে চাও। যদি এক্ষেত্রে অসংগতি খুবই মারাত্মক হয় যেমন, কোন একজন সঙ্গীর মৃত্যুর সম্ভবনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে তুমি যদি চাও তাহলে প্রস্তাবটি বাতিল করতে পার।


যখন তুমি জ্যোতিষশাস্ত্রীয় সঙ্গতির পরীক্ষায় পাশ করে যাবে তখন পরবর্তী ধাপ হল, প্রত্যাশিত জীবনসঙ্গীর গুরুদেব যদি আমি ছাড়া অন্য কেউ হন, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাকে তাঁর শিক্ষা শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক থাকবেন। একইভাবে প্রত্যাশিত সঙ্গী তার গুরুদেবের অনুমতিক্রমে, আমার শিক্ষা-শিষ্য হওয়ার অনুরোধ করে আমাকে লিখতে পারে। এভাবে যদি উভয় সঙ্গী অপরজনের দীক্ষাগুরুর দ্বারা শিক্ষা-শিষ্য হিসাবে স্বীকৃত হয় তখন তা একটি স্বচ্ছন্দ বিবাহ পরবর্তী পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অনুকূল হবে। শ্রী শ্রীমৎ রাধানাথ মহারাজ এবং শ্রী শ্রীমৎ গোপাল কৃষ্ণ মহারাজ এইরকম বিবাহের ক্ষেত্রে আমার শিষ্যদের তাঁদের শিক্ষা-শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করার পূর্ব-অনুমতি প্রদান করেছেন। একইভাবে তাঁদের শিষ্যরাও আমার শিক্ষা-শিষ্য হওয়ার পূর্ব-অনুমতি লাভ করেছে।


এই দুইটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর পরবর্তী ধাপ হল বিবাহিত জীবনে সঙ্গীর প্রতি কি কি প্রত্যাশা রয়েছে সেগুলো বিনিময় করা। বৈষ্ণবীয় ম্যারেজ ব্যুরো (VMB) – একটা বিবাহ প্রশ্নাবলি পর্ব আছে, যেটা তোমরা ব্যবহার করতে পার। প্রত্যাশা বিনিময় করার পূর্বে সেই প্রত্যাশিত সঙ্গীর সাথে প্রথমে ফোন, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না। সাধারণত যেটা হয় যে, যখন প্রত্যাশিত ভক্ত সঙ্গী প্রথমে যোগাযোগ করতে চায়, তখন তাদের শরীরের হরমোনের প্রভাবে তারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ে, যা একে অন্যের সম্পর্কে অভীষ্ট বিষয়াদির মূল্যায়নকেও আচ্ছন্ন করে তুলে। সুতরাং দয়া করে প্রত্যাশাগুলি বিনিময় করার পূর্বে তোমার প্রত্যাশিত সঙ্গীর সাথে দেখা করা কিংবা যোগাযোগ করা শুরু করার চেষ্টা করো না।


প্রত্যাশা বিনিময়ের সময় তোমাদের জন্য সহায়ক হবে যদি কোন প্রবীণ অভিজ্ঞ গৃহস্থ ভক্ত থাকে যিনি তোমাদের উভয়ের উত্তরগুলি প্রক্রিয়াকরণ করতে সাহায্য করতে পারেন। মাঝে মাঝে কিছু প্রত্যাশা অবাস্তব হয় অথবা কিছু প্রত্যাশার পরিবর্তন হতে পারে। আমার একজন পুরুষ শিষ্য আছে, যে তার প্রত্যাশিত পত্নীকে বলেছিল যে, যখন তাদের বাচ্চা হবে তখন তাকে (পত্নীকে) বাচ্চাদের সামলাতে হবে এবং সে তাদের কোলে নিয়ে ঘুরতে পারবে না। কিন্তু যখন তার বিবাহ হল এবং একটা বাচ্চা হল, আমি দেখেছিলাম যে, সে আনন্দের সাথে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ঘুরছিল। এটার মতই কিছু প্রত্যাশার পরিবর্তন হতে পারে। এই বিষয়ে প্রবীণ অভিজ্ঞ গৃহস্থ ভক্তরা বলতে পারবে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কিছু অন্য বিষয়ও দেখতে পারবে যা তোমরা দেখতে সমর্থ নাও হতে পার। সুতরাং এভাবে তাদের জ্ঞান উভয় সঙ্গীর ক্ষেত্রে প্রশ্নাবলির উত্তর দিতে উপকারী হতে পারে।


যখন তুমি উত্তর দ্বারা সন্তষ্ট হবে, তখন তুমি সেই প্রত্যাশিত সঙ্গীর সাথে দেখা করতে পারবে এবং তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, এই প্রস্তাবটি বিবাহে পরিণতি পাবে কি না। আবারো এই ধাপে প্রবীণ অভিজ্ঞ ভক্তের জ্ঞান তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।


আশা করছি তোমরা উপযুক্ত কৃষ্ণভাবনাময় জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে সমর্থ হবে। এক্ষেত্রে তোমাদের প্রতি আমার সকল আশীর্বাদ রইল।


অনেক সময় শিষ্যরা ভাবে যে, আমি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে তাদের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করে দেব। একজন সন্ন্যাসী হিসাবে শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে যুক্ত না হতে। তাই আমি আমার কোন শিষ্যের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করে দিই না। আমার ব্যক্তিগত সচিবেরা আমাকে বলেছিল যে, কিছু শিষ্য ভাবে যে, যদিও আমি সাধারণভাবে আমার শিষ্যদের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে দিই না, আমি হয়ত তাদের জন্য কোন ব্যতিক্রম করব। আমি শ্রীল প্রভুপাদের একজন অনুসারী সুতরাং তারা কেন মনে করবে যে, শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে যা বলেছেন আমি তার অবজ্ঞা করব এবং তাদের জন্য ব্যতিক্রম কিছু করব? তাদের এইসব ভাবনা বর্জন করা উচিত এবং এই ধরণের অযৌক্তিক কল্পনা দ্বারা বিবাহের চেষ্টায় দেরী না করে তাদের উচিত আমি উপরে যেসব ধাপগুলি বলেছি তা গ্রহণ করা।


কখনো কখনো শিষ্যরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তাদের জন্য কোন প্রত্যাশিত সঙ্গী জানি কিনা। যেহেতু আমি সারাবিশ্ব ভ্রমণ করি, আমি বিভিন্ন ভক্তদের চিনি এবং যদি কাউকে আমার মনে আসে আমি হয়তো একটা নাম উত্থাপন করতে পারি। কিন্ত সেই ধরণের উত্থাপনকে তোমাদের গুরুদেব থেকে প্রাপ্ত কোন বিশেষ নির্দেশ হিসাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। এটা আমার ইচ্ছা কিংবা নির্দেশও নয় যে, তোমাদের বিবাহ আমার দ্বারা উত্থাপিত সেই প্রত্যাশিত সঙ্গীর সাথে নির্ধারিত হোক। আমি শুধুমাত্র যে তথ্যটি জানি সেটা বলছি। তো এটাকে সেইভাবে বিবেচনা করবে এবং আমি উপরে যেভাবে বর্ণনা করেছি সেই প্রস্তাবটিকেউ সেই সাধারণ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে।


মাঝে মাঝে ভক্তরা বিশেষ করে ছেলেরা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর শেষে পুনরায় জ্যোতিষশাস্ত্র দেখে এবং প্রস্তাবটা বাতিল করে দেয়। এতে করে মেয়েটির উপর খুব বিধ্বংসী প্রভাব পড়ে। বৈষ্ণবীদেরকে মর্মপীড়ার মধ্যে ফেলার আচরণ বর্জন করা উচিত। এই কারণে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, উপরে উল্লেখিত ধারাবাহিক পর্যায়গুলি অনুসরণ করা এবং কোন পার্শ্বপদক্ষেপ গ্রহণ অথবা পুনরায় শেষে এসে কোন ধাপ বাতিল করা উচিত নয়। অবশ্য ভক্ত মেয়েরাও হয়ত পুনরায় শেষে এসে জ্যোতিষশাস্ত্র দেখে এবং ছেলেটাকে প্রভাবিত করে প্রস্তাবটা বাতিল করে দেয়, এটাও আবার অনুচিত। সুতরাং দয়া করে এসব গুলি বর্জন কর।


তোমাদের নিত্য হিতাকাঙ্ক্ষী,

জয়পতাকা স্বামী।

Post a Comment

0 Comments