এসবিবি : মহাভারত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু এটা যে শুধুই ধর্মগ্রন্থ তা কিন্তু নয়। এটি বিশ্বের সর্ববৃহত্ মহাকাব্য। এটাকে ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তাই বলে মহাভারতের ইতিহাস যে কাল্পনিক বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে মহাভারতের শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর। আজ আমরা জানবো সেই শহরগুলির বর্তমান অবস্থা কোথায় তার অবস্থান।
হস্তিনাপুর: মেরুত ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি বিখ্যাত স্থান। মহাভারত আমলের আর এই মেরুতকেই বলা হতো হস্তিনাপুর। কৌরব এবং পাণ্ডব উভয়েরই রাজধানী ছিল হস্তিনাপুর। এই শহরকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে মহাভারত। এর অবস্থান দিল্লীর পূর্বে। মিরাটের নিকট, গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে।
কুরুক্ষেত্র: মহাভারতের ঐতিহাসিক কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ এখানেই হয়েছিল। দিল্লীর উত্তরে বর্তমানে হরিয়ানা প্রদেশের একটি জেলা। থানেশ্বরের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। বর্তমানে এই জায়গা কুরুক্ষেত্র নামে পরিচিত। কুরুক্ষেত্রের প্রচীন নাম সমস্ত পঞ্চক।
গান্ধার: মহাভারতে বর্ণিত গান্ধার শহরটি সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত। ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারী ছিলেন গান্ধার শহরের রাজা সুবলের কন্যা। সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর হতে আফগানিস্তের অধিকাংশ অঞ্চলকে প্রাচীনকালে গান্ধার দেশ নামে ডাকা হত। আফগানিস্তানের কান্দাহার হল প্রাচীন গান্ধার নগরী।
তক্ষশীলা: গান্ধার দেশের রাজধানীর নাম ছিল তক্ষশীলা। বর্তমানে পাকিস্তানের রওয়ালপিন্ডিতে এই শহরের অবস্থান ছিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা যখন হিমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলেন তখন রাজা হিসেবে পরীক্ষিতের অভিষেক ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সাপের কামড়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষিত পুত্র জনমেজয় তক্ষশীলার দিকে নাগরাজকে পাঠান এবং সেই নাগরাজের আক্রমনে বহু সাপ মারা যায়।
উজ্জয়নী: ভারতের বর্তমান উত্তর প্রদেশের প্রাচীন নাম ছিল উজ্জয়নী। নৈনিতাল জেলার কাশিপুরের নিকটে এই শহরটি ছিল। অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য এখানেই তার শিষ্য পাণ্ডবদের ধনুর্বিদ্যা শিখাতেন। পাণ্ডুপুত্র ভীম এই শহরে শিবের মূর্তি স্থাপন করেছিলেন বলে অনেকে এই শহরকে ভীমশঙ্কর বলেও জানতেন।
মাদ্রা দেশ: হিমালয়ের দিকের উত্তরের দেশকে বলা হতো মাদ্রা দেশ। বর্তমানে নেপাল এবং ভারতের একাংশে এর অবস্থান ছিল। সেসময় শল্য মাদ্রা দেশের রাজা ছিলেন। হস্তিনাপুরের রাজা পান্ডু তার বোন মাদ্রিকে বিয়ে করেন। মাদরি ছিলেন সহদেব এবং নকুল মাতা।
শিবি দেশ: মহাভারতে ভারতের উত্তরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পাঞ্জাবকে বলা হত হলো শিবি দেশ। এখানকার রাজা ছিলেন ঊষীণার। তার নাতি দেবিকাকে যুধিষ্ঠির বিয়ে করেছিলেন। ঊষীণারের সন্তান শৈব্য কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় পান্ডবদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ইন্দ্রপ্রস্থ: ইন্দ্রপ্রস্থ শহরটি পান্ডবদের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রসিদ্ধ শহর। প্রাচীনকালে খান্ডব বন ধ্বংস করে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছিল। দিল্লীর প্রাচীন নাম ইন্দ্রপ্রস্থ । বর্তমান দিল্লীতে এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ডিসকভারী চ্যানেল ইন্দ্রপ্রস্থের উপর একটা সুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক ডকুমেন্টরি তৈরি করেছে ।
নৈমিষারণ্য: গোমতি নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলায়। আধুনিক নাম নিমসার।
দ্বারকা: গুজরাটের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত। বর্তমানেও এটা দ্বারকা নামে পরিচিত। এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিষ্ঠিত। তার দেহ রাখবার পর মূল দ্বারকা নগরী সমুদ্রের জলে প্লাবিত হয়। বর্তমানে জলধিমগ্ন দ্বারকা নগরীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বর্তমান অবস্থিত দ্বারকা থেকে বেশ খানিকটা আরব সাগরের নীচে।
মগধ:বর্তমান দক্ষিণ বিহারের প্রাচীন নাম। মগধ প্রাচীন ভারতে ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে মগধ বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই রাজ্য বর্তমানের বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। রাজগৃহ ছিল মগধের রাজধানী। তারপর পাটলিপুত্র রাজধানি বানিয়ে গিয়েছিলো। রাজা বিম্বসার ছিলেন মগধের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা। তিনি অঙ্গ দখল করেন।
মত্স্যদেশ: বিরাট রাজার দেশ যেখানে পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। এর অবস্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে বর্তমান জয়পুরের নিকট অঞ্চলকে মত্স্যদেশ হিসাবে অনুমান করা হয় ।
পুন্ড্রদেশ: হল রাজশাহী-দিনাজপুর-বগুড়া নিয়ে উত্তরবঙ্গ। বগুড়ার মহাস্থাংড়ের প্রাচীন নাম পুন্ড্রনগর। উন্নত সভ্যতার সবকিছু রয়েছে সেখানে।
বানগঙ্গা: মহাভারতে ভারতের প্রাচীন নগর হরিয়ানাকে বলা হত বানগঙ্গা। কুরুক্ষেত্র থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এই শহর অবস্থিত। ভারতের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে হরিয়ানা অন্যতম। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসেন।
অঙ্গদেশ: বর্তমান মুঙ্গের ও ভাগলপুর।
পাঞ্চাল: পাঞ্জাবকে এই নামে ডাকা হত। হস্তিনাপুরের নিকটবর্তী স্থানও এর সাথে যুক্ত ছিল। পণ্ডিতগণের মতে দিল্লী থেকে উত্তর ও পশ্চিমে বিস্তৃত স্থান। যে দ্রৌপদীকে ঘিরে তৈরি মহাভারতের প্রেক্ষাপট, তিনি ছিলেন পাঞ্চাল পাঞ্চালের রাজকন্যা তাই তাঁকে পাঞ্চালী বলা হত। আর রাজা দ্রুপদের কন্যা বলে নাম দ্রৌপদী।
0 Comments