ভক্তের সঙ্গে প্রীতি বিনিময়ের লক্ষণ গুলি কি?

 


ভক্তের সঙ্গে প্রীতি বিনিময়ের লক্ষণ গুলি কি?


“ভগবানের ভক্তকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রীতি পূর্বক দান, তার নিকট হতে কোন দ্রব্য প্রীতি পূর্বক গ্রহণ, নিজের মনের কথা ভক্তের নিকট ব্যক্ত করা এবং তার নিকট হতে ভজন বিষয়ক গুহ্য তত্ত্বাদি জিজ্ঞাসা করা। ভক্তের কাছ থেকে প্রসাদ গ্রহণ এবং ভক্তকে প্রীতি পূর্বক প্রসাদ গ্রহণ করানো— ভক্তের সঙ্গে প্রীতি বিনিময়ের এই ছয়টি প্রধান লক্ষণ।


আমরা  জাগতিক  জীবনে দেখতে পাই যে  সাধারণত ব্যাবসায়ীরা যখন কারো কাছ থেকে কোন কিছু প্রত্যাশা করে বা কারোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তখন তারা কি করে? তারা নিমন্ত্রণ করে। কি খায়, কি পান করে সেগুলি আলাদা কথা, কিন্তু তারা এটা করে, তারপরে কি করে উপহার দেয়, এইভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এমনিতে যদি শুধু ব্যাবসার খাতিরে, শুধু ব্যাবসা করা হয় তখন সেরকম কোন সম্পর্ক থাকে না, কিন্তু যার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা আছে, তাকে ডেকে এনে হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়ায় এবং তারফলে কি হয়, তাদের সম্পর্কটা গড়ে উঠে। এমনিতে অফিসে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার মধ্যে আর এই রকম মিলনের মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। তখন তারা মনে করে ও আমাকে নিমন্ত্রণ করে খুব খাইয়েছে,পান করিয়েছে,এইভাবে উপহার  আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে। তাহলে ওরা সব কিছু ভক্তদের কাছ থেকে শিখেছে, তাই না?


দেখ রূপ গোস্বামী ৫০০ বৎসর আগে যে পন্থাটি দিয়ে গেছেন আজকে ওরা এটা প্রয়োগ করছে, কিন্তু ভক্তরা দৈনন্দিন জীবনে কি করবে? কৃষ্ণ ভক্তি লাভের জন্য একজন ভক্ত আর একজন ভক্তের সঙ্গে এইভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবে । 


প্রভুপদ বললেন, এই আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ স্থাপিত হয়েছে  ভক্ত সঙ্গ প্রদান করার জন্যে ।  এখানে সমস্ত ভক্তরা একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং তারফলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমরা সকলে যদি নিজের নিজের বাড়ীতে থাকতাম তাহলে কি এই সম্পর্ক হত? না, কিন্তু এখানে কি হচ্ছে? আমরা কি চেষ্টা করছি? পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছি। আর সেই সম্পর্কটা কিসের ভিত্তিতে স্থাপিত হচ্ছে — কৃষ্ণ ভক্তির আদান- প্রদানের মাধ্যমে। 


ভক্তের সঙ্গে ভক্তের কি রকম সম্পর্ক? প্রীতির সম্পর্ক তাই তো, নাকি অপ্রীতিকর সম্পর্ক হচ্ছে? তোমরা ঝগড়া-ঝাটি করছো না তো নিজদের মধ্যে? মাঝে মাঝে (একজন ভক্ত বললেন), সেই মাঝে মাঝে টা কত ঘনঘন (গুরু মহারাজ  জিজ্ঞাসা করলেন)? তবে ঝগড়া হলে কি করবে? ঝগড়া হলে প্রসাদ রেখে দিও এবং সেই প্রসাদ খাইয়ে দিও। আর তোমার কাছে যদি কিছু থাকে সেটা তাকে দিয়ে দিও। তাহলে যার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে তার মনের ভাব কি রকম হবে? আরে ও আমাকে কিছু দিল তাহলে আমাকে তো প্রতিগৃহ্নতি করতে হবে। এইভাবে ঝগড়ার অবসান হয়ে যাবে, ঠিক আছে? মনে থাকবে? কার কার মনে থাকবে? সুতরাং ঝগড়া হলে মনে করিয়ে দিও। 

মনের কথা বলো এবং ভক্তি বিষয়ক যদি কোন প্রশ্ন থাকে সেগুলি করো। আর কেউ যদি গোপনীয় কিছু বলে বন্ধুত্বের খাতিরে, অনেক সময় মনটা হালকা করার জন্য আমরা অনেক কিছু বলি, কিন্তু সেটা যদি অন্যের কাছে গিয়ে রটিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আর কেউ আমাদের বিশ্বাস করবে না। তাইজন্য গুহ্য বিষয়টি গোপন রাখাটাও একটা গুন।   


তোমরা সকলে কখনও কখনও প্রসাদ পরিবেশন করো? এটা  ভুঙক্তে ভোজয়তে হচ্ছে, একদিন তোমরা পরিবেশন করলে আর একদিন অন্যরা পরিবেশন করলো। 


প্রভুপদ ইস্কন সম্বন্ধে বলছেন যে ইস্কনের ভক্তদের মধ্যে যে প্রীতির সম্পর্ক সেটা বিদ্যান সমাজ যারা চিন্তাশীল ব্যক্তি তারা এটার প্রশংসা করছে। বিদ্যান সমাজ এই কৃষ্ণ ভাবনামৃতের গুনগ্রাহী হয়ে উঠেছে।  

ভক্তদের মধ্যে এই ছয় রকমের বিনিময়ের ফলে আমাদের সঙ্ঘটা আরো সবল হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ভক্তদের মধ্যে সম্পর্ক যত ঘনিষ্ট হবে ISKCON তত সবল এবং সতেজ হয়ে উঠবে। আর ভক্তদের মধ্যে যদি ঝগড়া ঝাটী হয় তাহলে ISKCON দুর্বল হয়ে যাবে। তা আমরা কি করবো ISKCON কে সবল করবো না দুর্বল করবো? সঙ্ঘ অনুসারে ইচ্ছা বা কামনার উদয় হয়, যারা অসৎ সঙ্ঘ করে তাদের অসৎ কর্মে প্রবৃত্তি হয়। যারা ভক্ত সঙ্ঘ করবে তাদের মধ্যে ভক্তির উন্মেষ হবে তাইনা, আমরা কোনটা করবো? সৎসঙ্গ করবো, “সাধুসঙ্গ,‘সাধুসঙ্গ’—সর্বশাস্ত্রে কয়। লবমাত্র সাধুসঙ্গে সর্বসিদ্ধি হয় (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্য লীলা ২২/৫৪)” —ভক্তসঙ্গ করলে কি হবে? যারা ভক্তসঙ্গ করছে তারাও ভক্ত হতে পারবে। ভক্ত সঙ্গের প্রভাবে সকলেই কৃষ্ণভক্ত হয়ে যাবে। কৃষ্ণ প্রেমের বিকাশ কিভাবে হয়? কৃষ্ণ প্রেম কি অনুশীলনের দ্বারা লাভ হয়? না।



শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী

Post a Comment

0 Comments