★★★শিব চতুর্দশী কি? শিবরাত্রি ব্রত কিভাবে পালন করতে হবে ? এবং শিবের নিকট কি প্রার্থনা করতে হবে?


 

★★★শিব চতুর্দশী কি? শিবরাত্রি ব্রত কিভাবে এবং কোনদিন ১১ই মার্চ নাকি ১২ই মার্চ পালন করতে হবে ? এবং শিবের নিকট কি প্রার্থনা করতে হবে? 


★★ ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিব পার্বতী কে বিবাহ করেছিলেন। আর সেই কারণেই এই দিনটি বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং সকলেই শিবরাত্রি ব্রত পালন করে থাকেনএই তিথিতে।

 যারা শিবের অনুসারী রয়েছেন বা যারা শাক্তমতে  রয়েছেন, তারা এই তিথিতে পূর্ণদিবস উপবাস থেকে   শিবের আরাধনা করে, অভিষেক করে এই ব্রতটি পালন করেন।

 কিন্তু যারা বৈষ্ণব তারা কিভাবে এই দিনটি পালন করবেন এবং তাদের জন্য কি রকম বিধি শাস্ত্রে রয়েছে--

★★ হরি ভক্তি বিলাস--১৪/৬৩ নং শ্লোক উল্লেখ রয়েছে--- শ্রীহরির প্রীতি বিধানার্থে এই শিবরাত্রি ব্রত পালন বৈষ্ণবদের ও কর্তব্য।

★★ কূর্ম পুরাণে ভৃগমুনির প্রতি শ্রীহরির উক্তি ---

হরিপরায়ণ ব্যক্তিদের বৈকুন্ঠধাম প্রাপ্তি হয় সত্য কিন্তু মহাদেবদ্বেষী না হলেই তাদের এই বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্তি হয়। মহাদেবের নিন্দাপূর্বক নিরন্তর আমার অর্চনা করলেও অযুত সংখ্যক নরকে গমন করতে হয়।মদ্ভক্ত শিবদ্বেষী হলে কিংবা শিব ভক্ত মদ্ভদ্বেষী হলে চন্দ্র সূর্য স্থিতি যাবৎ নরক পচ্যমান হতে হয়।


তাই যারা ভগবানের ভক্ত রয়েছেন তারা শিবের কাছে শ্রদ্ধাপূর্ণ চিত্তে প্রার্থনা করবেন, যেন কৃষ্ণপ্রেম ভক্তি লাভ করতে পারি।

★★ পদ্মপুরাণের ব্রতখন্ডে উল্লেখ রয়েছে--

 কি সূর্যোপাসক, কি বৈষ্ণব, কি অন্যউপাসক, শিবরাত্রি বিমুখ হলে তাদের কৃত পূজ্য বলবতী হয় না।


 ★★হয়শীর্ষ পঞ্চরাত্রে উল্লেখ রয়েছে--

 বৈষ্ণব প্রাধান্যরূপে শ্রেষ্ঠত্বা ও সদাচার হেতু বৈষ্ণবদের শিবরাত্রি ব্রত করা কর্তব্য।

শিবজী হচ্ছেন বৈষ্ণব  শিরোমণি। বৈষ্ণবদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন প্রধান। সেই কারণে শিবরাত্রি ব্রত পালন করা সকল বৈষ্ণবদের কর্তব্য।

★★ ভাগবতে বলা হয়েছে--১২/১৩/১৬

 "বৈষ্ণবাং যথা শম্ভুঃ"


★★স্কন্ধপুরাণের নাগর খন্ডে উল্লেখ রয়েছে --

ধরাতলে স্থাবর চর যত শিবলিঙ্গ বিদ্যমান আছে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর নিশাযুগে দেবদেব মহাদেব সেই সমুদয়ে অধিষ্ঠিত হন।


★★ স্কন্ধপুরাণে বলা হয়েছে ---

বৈষ্ণব হয়ে শিবরাত্রি ব্রত করলে হরিভক্তি সারবর্ষী শংকরের প্রসাদে (কৃপায়) শ্রী হরির প্রতি প্রেমভক্তি বর্ধিত হয়ে থাকে।


★★★ শিবরাত্রি ব্রত কিভাবে এবং কোন দিন পালন করতে হবে ১১ ই মার্চ নাকি ১২ ই মার্চ ?  


যারা শিবোপাসক রয়েছেন বা অন্য উপাসক রয়েছেন বা শাক্ত রয়েছেন তারা ১১ ই মার্চ সম্পূর্ণ দিন উপবাস থেকে শিবের উপাসনা করবেন। আর যারা বৈষ্ণব(কৃষ্ণভক্ত) রয়েছেন তারা ১২ ই মার্চ পালন করবেন এবং দুপুর পর্যন্ত উপবাস থাকতে হবে।

★★ এ প্রসঙ্গে শাস্ত্রে কি উল্লেখ রয়েছে--

★ হরিভক্তি বিলাস --১৪/১৯ শ্লোকে বলা হয়েছে --

দুই দিনে প্রদ্যেষ ব্যাপিনী চতুর্দশ হলে প্রথম দিনে ব্রত করা অন্যোপাসকের কর্তব্য। প্রথম দিন ত্রয়োদশী বিদ্ধা হলে পূর্বদিনে ব্রত করা বৈষ্ণবের অনুচিত।


এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যারা শিবের উপাসক বা অন্য দেবতাদের উপাসক রয়েছেন তারা ১১ ই মার্চ সম্পূর্ণ দিন উপবাস পালন করবেন এবং রাত্রিতে চার প্রহর ব্যাপী শিবের অভিষেক করবেন। এক প্রহর= তিন ঘন্টা। সেই কারণে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নয়টা প্রথম প্রহর এবং প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে অভিষেক করতে হবে। রাত নয়টা টা থেকে বারটা  দ্বিতীয় প্রহরে দই  দ্বারা অভিষেক করতে হবে। রাত বারোটা থেকে তিন ঘটিকা পর্যন্ত তৃতীয় প্রহরে ঘি দ্বারা অভিষেক করতে হবে। এবং রাত তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত চতুর্থ প্রহরে মধু দ্বারা শিবের অভিষেক করতে হবে।

 এবং এই চার প্রহরে পঞ্চক্ষর মন্ত্র--ওঁ নমোঃ শিবায়-- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে অভিষেক করতে হবে।

 আর যারা কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণব রয়েছেন তারা ১২ ই মার্চ  পূর্বদিন রাত বারোটা থেকে ১২ ই মার্চ দুপুর বারোটা পর্যন্ত উপবাস থাকতে  হবে এবং অভিষেক করাতে হবে।


★★ বৈষ্ণবেরা এই ব্রত পালন করে শিবজি নিকট প্রার্থনা করবেন?

বৃন্দবনিপতে! জয় সোম সোম মৌলে

সনক সনন্দন সনাতন নারদেয়।

গোপীশ্বর! ব্রজবিলাসী যুগাঙ্গ্রীপদ্মে

প্রেম পযাচ্ছ নিরুপাধি নমো নমস্তে।।


হে বৃন্দাবনের দ্বাররক্ষী,হে সোম, আপনার জয় হোক। আপনার ললাটে চন্দ্র শোভিত, আপনি সনক,সনন্দন, সনাতন এবং নারদেরও পূজনীয়।হে গোপীশ্বর(শিব),ব্রজধামে বিলাসরত যুগল শ্রী শ্রী রাধা মাধবের চরণপদ্মে যেন প্রেম বর্ধিত হয়, সেই প্রার্থনা করি। আমি আপনাকে বারবার প্রণতি জ্ঞাপন করি।


★★ শিবজি হচ্ছেন অনেক দয়ালু। সেইজন্য তার একটি নাম মীরুষ্টোম, আরেকটি নাম হচ্ছে আশুতোষ। কারণ তিনি সহজেই সন্তুষ্ট হন এবং সহজেই বর প্রদান করেন। যারা জাগতিক তারা শিবের কাছে বিভিন্ন রকম কামনা করে থাকেন--ধন- জন, সুন্দরী রমনী, বা সুন্দর স্বামী।

 কিন্তু যারা কৃষ্ণভক্ত রয়েছেন তাদের কামনা করা উচিত, তাদের প্রার্থনা করা উচিত যেন তারা কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে পারেন। এবং শিবজি সকলকে কৃষ্ণভক্তিও দান করে থাকেন।

 সেই দৃষ্টান্ত ও রয়েছে---

শিবের একজন উপাসক একদিন শিবের নিকট এসে দামী কিছু প্রার্থনা করলেন। তখন শিবজী তাকে সনাতন গোস্বামীর নিকট পাঠিয়ে সনাতন গোস্বামীর দ্বারা তাকে কৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষিত করে কৃষ্ণ ভক্তি প্রদান করেছেন। 

★★ হরে কৃষ্ণ ★★

Post a Comment

0 Comments