বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি ঋণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
১) দেবঋণঃ দেবতাদের কাছে ঋণ; দেবতাদের পূজা প্রার্থনা ও হােম-যজ্ঞাদি দ্বারা এই ঋণ শােধ করতে হয়।
উদাহরনঃ দেবতা সূর্যনারায়ন, সূর্য ছাড়া জন্মই হতাে না, আলাে না থাকলে।
(২) ঋষিঋণঃ মুনি-ঋষিদের কাছে ঋণ; ঋষি প্রণীত শাস্ত্রাদি পাঠের দ্বারা এই ঋণ শােধ করতে হয়।
উদাহরনঃ আমার মা আমাকে কথা বলতে শিখাতেই পারতাে না, ভাষা শিক্ষাও থাকতাে না, এটাও মুনি-ঋষিদের অবদান।
(৩) পিতৃঋণঃ পিতা-মাতা ও পিতৃপুরুষদের কাছে ঋণ; জীবিত পিতা-মাতা ও পিতৃপুরুষদের সেবা এবং মৃতদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধ ও তর্পণাদি দ্বারা এই ঋণ শােধ করতে হয়।
উদাহরনঃ তাদের মাধ্যমেই তাে পুরাে জীবন গঠন।
(৪) নৃ-ঋণঃ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদের কাছে ঋণ; অতিথি সেবা এবং দুঃস্থ, আর্ত, পীড়িত নরনারায়নের সেবার দ্বারা এই ঋণ শােধ করতে হয়।
উদারনঃ প্রতিবেশি না থাকলে আমায় স্বীকৃতি দিতাে কে?কোথা থেকে প্রতিষ্ঠিত হতাম? কে দিতাে আমায় মূল্যায়ন।
(৫) ভূতঋণঃ পশুপাখি ও উদ্ভিদাদির নিকট ঋণ; মনুষ্যেতর প্রাণী, পশুপাখি এবং বৃক্ষ-লতাদির সেবা দ্বারা এই ঋণ শােধ করতে হয়।
উদাহরনঃ শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছি কার কাছ থেকে? কে প্রদান করে আমায়? জীবিকা নির্বাহ করতে খাদ্য যােগানে কারা অথবা কে সহায়তা করতাে যদি এগুলােই না থাকতাে?
এই পাঁচটি ঋণকে একত্রে পঞ্চঋণ বলে এবং এই ঋণসমূহ শােধ করাকে পঞ্চযজ্ঞ বলে। প্রত্যেক ব্যাক্তিকে এই ঋণ শোধ করতে না হলে কখনোই সে ভগবানের ধাম প্রাপ্ত হতে পারেন না। বার বার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এই জগতে বিভিন্ন যোনি প্রাপ্ত হয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকেন।
এক জনমে সবার ঋণ শোধ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং অসম্ভবই বলা চলে। ঋণগুলো শোধ করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা আছে।
এই ঋণ শোধ করবেন কিভাবে❓
দেবর্ষিভৃতাপ্তণাং পিতৃণাৎ
ন কিঙ্করাে নায়মৃণী চ রাজন্ ।
সর্বাত্মনা যঃ শরণং শরণ্যং
গতাে মুকুন্দং পরিহৃত্য কৰ্তম্ ॥
(ভাগবত ১১.৫.৪১)
যিনি সমস্ত জাগতিক কর্তব্য পরিত্যাগ করে, সকলের আশ্রয় পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত হন, তখন আর তিনি দেবতাদের কাছে, ঋষিদের কাছে, অন্য প্রাণীদের কাছে, আত্মীয়- স্বজনদের কাছে, সাধারণ মানুষদের কাছে এবং পিতৃপুরুষদের কাছে ঋণী থাকেন না।
তাই কৃপা করে ভগবানের শ্রীচরণে আত্মসমর্পন করুন এবং সমস্ত প্রকার ঋণ থেকে মুক্ত হোন।
0 Comments