শ্রীল ঠাকুর ভক্তিবিনোদের ১৪টি অজানা তথ্য 

#রূপানুগ_Rupanuga 


১। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর রাজা আদিশূরের আমন্ত্রণে কান্যকুব্জ থেকে আগত পঞ্চকায়স্থের অন্যতম প্রধান পুরুষোত্তম দত্তের বংশে আবির্ভূত হন। এই বংশেই কৃষ্ণানন্দ দত্তের পুত্ররূপে শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় আবির্ভূত হয়েছিলেন। 


ঠাকুর নরোত্তমের পিতা রাজা কৃষ্ণানন্দ দত্তের পৌত্র গোবিন্দশরণ দত্তকে দিল্লীর সুলতান পশ্চিমবাংলার গঙ্গাতীরে কিছু জমি দান করেন। গোবিন্দশরণ দত্তের নামানুসারেই ঐ স্থানের নাম হয় "গোবিন্দপুর"। পরে গোবিন্দপুরে যখন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপন করা হয়, তখন গোবিন্দশরণ এবং তাঁর পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। তাঁরা "হাটখোলা"-তে সরে যান এবং পরিচিত হন "হাটখোলার দত্ত" বংশ রূপে। 


২। গোবিন্দশরণ দত্তের পৌত্র রামচন্দ্র দত্তের পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ছিলেন মহান বৈষ্ণব। তাঁর পুত্র মদনমোহন দত্তও ছিলেন পরম বৈষ্ণব। তিনি লর্ড ক্লাইভের সমসাময়িক। গয়াক্ষেত্রে প্রেষ্ঠশীলা পাহাড়ে ইনিই ৩৯৫ টি সোপান বানিয়ে দেন। গয়াক্ষেত্রই শ্রীমন্মহাপ্রভুর দীক্ষাক্ষেত্র। মদনমোহন দত্তের পুত্র রামতনু দত্ত এবং পৌত্র রাজবল্লভ দত্ত। রাজবল্লভের পুত্র আনন্দচন্দ্র দত্তই ঠাকুর ভক্তিবিনোদের পিতা। রাজবল্লভ দত্তের বেশ কিছু যৌগিক সিদ্ধাই ছিল, তিনি ভাগ্যগণনা করতে পারতেন। তিনি ওড়িশাতে একান্তে ভজন করতেন।  শ্রীশ্রীজগন্নাথ এবং শ্রীশ্রীরাধামাধবের বিগ্রহ তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঠাকুর ভক্তিবিনোদের বিষয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, "কেদারনাথ ২৭ বছর বয়সে উচ্চস্থান লাভ করবেন।" 


৩। ঠাকুর ভক্তিবিনোদের মাতা ছিলেন শ্রীমতী জগৎমোহিনী দেবী। মাতার বংশও ছিল ঐতিহ্যশালী। জগৎমোহিনী দেবীর পিতা ঈশ্বরচন্দ্র মিত্রমুস্তাফি ছিলেন বিখ্যাত জমিদার রামেশ্বর মিত্রমুস্তাফির বংশধর। 


৪৷ ঠাকুর ভক্তিবিনোদের মাতৃবংশ ছিল শক্তির উপাসক। তাঁর মামার বাড়ি উলাগ্রামে খুব ঘটা করে দুর্গাপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা প্রভৃতি শক্তি আরাধনা হত। প্রচুর ছাগ ও মেষ বলি হত। 


৫৷ একবার পাঠশালার পণ্ডিতমশায়কে খুশী করতে বালক ভক্তিবিনোদ মামাবাড়ির রান্নাঘর থেকে একটা বড় এঁচোড় চুরি করে এনে দেন। পরে চাকর-বাকরেরা ধরে ফেলেন। পণ্ডিতমশায় শেষে আদেশ করেন, "ছোট ছোট জিনিস আনবে, বড় কিছু আনবে না।" 


৬৷ ছোটবেলায় স্কুলের শেষে বালক কেদারনাথ রামায়ণ ও মহাভারত পাঠ শুনতে যেতেন। মহাবীর হনুমানের লঙ্কাগমন আর রাক্ষসী সিংহিকার সাথে যুদ্ধের গল্প শুনতে খুব ভালবাসতেন। 


৭৷ বারো বছর বয়সে কেদারনাথের সাথে শ্রীযুক্ত মধুসূদন মিত্রের পঞ্চমবর্ষীয়া কন্যা শয়ামণি দেবীর সাথে বিবাহ হয়। গঙ্গাজল ও দুধ পান করে কেদারনাথ বিবাহ করতে গেছিলেন। ইনিই কেদারনাথের প্রথমা পত্নী। ইঁনার অপ্রকটের পর ভগবতী দেবী হন ঠাকুরের সহধর্মিণী। 


৮৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন শ্রীকেদারনাথের বন্ধুস্থানীয়। 


৯৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন শ্রীকেদারনাথের শিক্ষক। কেদারনাথকে শিক্ষকতার চাকরিতে বহাল করার জন্য স্বয়ং বিদ্যাসাগর চিঠি লিখে দিয়েছিলেন। 


১০। খ্রিষ্টাব্দ ১৮৬৮ তে শ্রীকেদারনাথ দিনাজপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিযুক্ত হন। তৎকালীন দিনাজপুরের জমিদার রায়সাহেব কমললোচন মহাশয় ছিলেন গৌরপার্ষদ রামানন্দ বসুর বংশধর। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় দিনাজপুরে বৈষ্ণব ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে। এখানেই শ্রীকেদারনাথ তাঁর এজেন্ট প্রতাপচন্দ্র রায়ের থেকে শ্রীমদ্ভাগবতের অনুবাদ এবং শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত প্রথম প্রাপ্ত হন। শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব সম্বন্ধে অধ্যয়নে তিনি ক্রমশঃ ডুবে যান। ১৮৬৮ সালেই শ্রীমন্মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের বিষয়ে বঙ্গভাষায় একটি কবিতা লেখেন। নাম দেন "সচ্চিদানন্দ প্রেমালঙ্কার"। তখন থেকেই তিনি "সচ্চিদানন্দ" নামে পরিচিত হন। 


১১। দিনাজপুর থেকে বদলি হয়ে চম্পারণে যান ঠাকুর। সেখানকার লোকেরা একটা বটগাছকে "ব্রহ্মদৈত্যের স্থান" বলে পুজো করত। ঠাকুর সেখানে নিত্য শ্রীমদ্ভাগবত পাঠের আয়োজন করেন। এতে করে ব্রহ্মদৈত্য সেই স্থান ছেড়ে পালিয়ে যায় ও গাছটি ভেঙে পড়ে।


১২। চম্পারণ থেকে শ্রীক্ষেত্র পুরীতে বদলি পান ঠাকুর মহাশয়। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীক্ষেত্রে একাকী থাকাকালীন ব্রহ্মহরিদাস ঠাকুরের উদ্দেশ্যে একটি কবিতা লেখেন ঠাকুর মহাশয়। 


১৩)  ১৮৭৮ সালের অগাস্ট মাসে ঠাকুর মহাশয় নড়াইলে বদলি হন। সেখানেই বাঘনাপাড়া পাটের শ্রীমন্ননিত্যানন্দ বংশীয় বিপিনবিহারী গোস্বামীর কাছে তিনি পাঞ্চরাত্রিকী দীক্ষা পান।


১৪) শ্রীল ঠাকুর মহাশয় কৃত কিছু টীকা: 

     মূল গ্রন্থ              টীকা

 শ্রীশিক্ষাষ্টকম্ -    সন্মোদন ভাষ্য

মনঃশিক্ষা-           ভজন দর্পণ ভাষ্য 

চৈতন্য উপনিষদ- চৈতন্য চরণামৃত 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-   বিদ্বৎ- রঞ্জন

ঈশোপনিষদ-       বেদার্ক-দীধিতি 

চৈতন্যচরিতামৃত-  অমৃতপ্রবাহ ভাষ্য

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদয়াবলী- মনঃসন্তোষিণী

ব্রহ্মসংহিতা-           প্রকাশিনী 

উপদেশামৃত-          পীযুষবর্ষিণী বৃত্তি

Post a Comment

0 Comments