➡️ দেবর্ষি শ্রীশ্রীনারদ ভগবানের আবির্ভাব।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন নারদ। নার শব্দের অর্থ জল। নারদ সবসময় জলতর্পণ করে পূজা সারতেন বলে তার নাম হয় নারদ। ইনি ত্রিকালজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও তপস্বী। নারদ চৌষট্টি কলায় পারদর্শী ছিলেন। সর্বপ্রকার বিজ্ঞানে পণ্ডিত ছিলেন। দেবতা হয়েও ঋষি স্বভাবের জন্য নারদকে বলা হয় দেবর্ষি। বিষ্ণুর পরমভক্ত নারদ পূজার পদ্ধতি জানতেন না, তিনি কেবল নামগান আর পুষ্পদানেই পেয়েছিলেন বিষ্ণুর কৃপা। নারদের মুখে সর্বদা ‘নারায়ণ নারায়ণ'। সম্ভাষণে 'নারায়ণ নারায়ণ', সম্মতিতে 'নারায়ণ নারায়ণ', বিদায়বেলাতেও 'নারায়ণ নারায়ণ'। বীণা ও করতাল বাজিয়ে ‘নারায়ণ নারায়ণ’ করে ত্রিলোকে বিচরণ করেন নারদ।

ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে আবির্ভাব হেতু নারদ জন্ম থেকেই সঙ্গীতপ্রিয় এবং সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তবে পূর্বে নারদের গানে বা রাগে কোথাও না কোথাও একটু ত্রুটি থাকত। এটি তিনি সহজাতভাবেই করতেন। নারদ ভুল রাগ গেয়েও গর্ব করতেন। একবার রাগ-রাগিনীরা বিকলাঙ্গ নর-নারীর রূপ ধরে নারদের পথে এসে দাঁড়ান। নারদকে তাদের এ দশার জন্য দায়ী করেন। নারদ এতে মর্মাহত হন এবং তাদের সুস্থ করার উপায় জানতে চান। তারা বলে যে, একমাত্র দেবাদিদেব মহাদেব সূক্ষ্মভাবে তাদের গাইতে পারবেন। তিনি যদি সঙ্গীত পরিবেশন করেন, তবে তাদের বিকলাঙ্গতা দূর হয়।

নারদ মহাদেবকে গিয়ে ধরলে মহাদেব বলেন, "প্রকৃষ্ট শ্রোতা না পেলে প্রকৃষ্ট গীত কীভাবে বের হবে ? আগে শ্রোতা যোগাড় করো।" এরপর নারদ মহাদেবের পরামর্শ অনুসারে  ব্রহ্মা ও বিষ্ণু-কে অনুরোধ করে আসরে নিয়ে আসেন। মহাদেবের গান শোনার পর রাগ-রাগিণীদের বিকলাঙ্গতা দূর হয়। এই সঙ্গীতের মর্ম ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন না। কিন্তু বিষ্ণু কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে ইনি আংশিক দ্রবীভূত হন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশ ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত হয়। নারদের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করে, বিষ্ণু উলুকেশ্বর নামক এক গন্ধর্বের কাছে তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য পাঠান। নারদের সঙ্গীতে পারদর্শিতার কথা ত্রিভুবন বিদিত হয়।

পিতা ব্রহ্মা তাকে সংসারধর্ম পালন করে সৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলে নারদ বৈষয়িক ব্যাপারে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লে ঈশ্বর চিন্তা বিঘ্নিত হবে বিবেচনা করে বললেন, "হে পিতা, আমি সৃষ্টির জটিল প্রক্রিয়ায় নিজেকে জড়াতে চাই না। ঈশ্বরের নামগান, গুণকীর্তন করেই জীবন নির্বাহ করতে চাই।" পুত্রের কথায় ব্রহ্মা রেগে গিয়ে তাকে তখন অভিশাপ দেন - "তবে আর দেবতা হয়ে কি করবে ? তুমি বরং গন্ধর্বযোনিতে জন্ম নাও। আর সংসারের প্রবাহকে তুমি বিড়ম্বনা ভাবলে। তাই, সংসারের সকল ঝঞ্ঝাটের মূলে থাকবে তুমি।"

ব্রহ্মার শাপে নারদ গন্ধর্ব হয়ে জন্মালেন। তার নাম হল উপবর্হণ। উপবর্হণের সাথে গন্ধর্বশ্রেষ্ঠ চিত্ররথের অর্ধশত কন্যার বিবাহ হল। গন্ধর্ব হওয়ায় নারদ সঙ্গীতকে জীবনের একমাত্র অবলম্বন করেন। স্বর্গসভায় গীত পরিবেশন করে দেবতাদের মনোরঞ্জনই ছিল তার ধর্ম। একদিন ইন্দ্রসভায় অপ্সরা রম্ভার নৃত্য দেখে উপবর্হণের অসংযমী আচরণের জন্য ব্রহ্মা আরও ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে মানুষ হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দেন।

ব্রহ্মার এই অভিশাপে কলাবতী নামক এক নারীর গর্ভে নারদ জন্মগ্রহণ করেন। কান্যকুব্জের গোপরাজ দ্রুমিলের বন্ধ্যা স্ত্রী ছিলেন কলাবতী। কলাবতী ঋষিদের সেবা করতেন। একদিন আকাশপথে স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে যেতে দেখে ঋষি কশ্যপের বীর্যস্থলন হয়, কলাবতী তা পান করলে জন্ম হয় নারদের। পিতা তাঁর কোনও দায়িত্বই নেননি, নারদ ও তার মা কলাবতীকে দ্রুমিল ত্যাগ করেন। কলাবতী ঋষিগণের পদসেবা করে দিনযাপন করতেন। নারদও মায়ের সাথে আশ্রমে আশ্রমে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন কলাবতীরও মৃত্যু হয় সর্পাঘাতে। অনাথ নারদকে ঋষিগণ প্রতিপালন করেন। ঋষিদের পরিধেয় পড়ে, ঋষিদের এঁটোকাঁটা খেয়ে নারদ জীবনযাপন করতে থাকেন। ঋষিদের উচ্ছিষ্ট ছিল মূলত বিষ্ণুর প্রসাদের অবশিষ্টাংশ। নিয়মিত সেগুলো সেবনের ফলে নারদের দেহমনে গভীর বিষ্ণুভক্তির সঞ্চার হয়।

ঋষিরা নারদ পূর্বজন্মে ব্রহ্মার পুত্র জানতে পেরে তাঁকে বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত করে তাঁকে জ্ঞান এবং শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করেন। দাসবৃত্তি ছেড়ে নারদ ঋষিদের সাথে তপ শুরু করেন। ধীরে ধীরে নারদ পূর্বজন্মের কথা জানতে পারেন এবং দিব্যজ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় দেবর্ষির আসনে অধিষ্ঠিত হন।

ত্রিলোকের সবখানে ছিল নারদের অবাধ বিচরণ। নারদের বাহন ঢেঁকি। ঢেঁকিতে চড়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন বা পরিবেশন করতেন। কোনো জায়গায় যেতে তিনি নিমন্ত্রণের তোয়াক্কা করতেন না।

তিনি যেকোনো স্থানে দণ্ডকালের বেশি থাকতে পারতেন না। এটিও এক অভিশাপের ফল। ব্রহ্মার আরেক মানসপুত্র দক্ষের পুত্রদের নারদ ভক্তিরসে সিক্ত করে সংসারী থেকে যোগী করেছিলেন। তারা সবাই গৃহত্যাগ করেছিল। এতে দক্ষ ক্রুদ্ধ হয়ে নারদকে অভিশাপ দেন যে, "তোমার জন্য আমার পুত্রেরা গৃহ ছেড়েছে। তুমিও দণ্ডকালের বেশি কোথাও থাকতে পারবে না।"

পিতার অভিশাপে নারদ সকল কলহের মূলে থাকতেন। ইনি কথা গোপন করে রাখতে পারতেন না। অকস্মাৎ অবিবেচকের মতো নারদের মুখ দিয়ে এমন একটি কথা বেরিয়ে যেত, যেটি পরিস্থিতি আরো জটিল করত। শেষে অবশ্য মঙ্গলই হতো। নারদ অনেকবার দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। কোনো দেব-দানব-মানবের মনে সন্দেহ উৎপন্ন করার কাজে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নারদকে তাই কেউ খুব একটা বিশ্বাস করত না। একজনের কথা আরেকজনকে বলে তিনি কলহ সৃষ্টি করতেন। অসুরেরা স্বর্গ দখল করলে তিনি অসুরদের কাছে গিয়ে এমন ভাব দেখাতেন যে, তিনি এতদিন ধরে অসুরদের স্বর্গ দখলের অপেক্ষাতেই ছিলেন। এমনকি নারদ অসুরদের বলে দিতেন, কিভাবে দেবতাদের শক্তি নষ্ট হবে। আবার অসুরদের দুর্বলতার খবর গিয়ে দেবপক্ষকে বলে দিতেন তিনি।

নারদের ব্যাপারে পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণে অনেক ঘটনা উল্লেখ আছে। তাঁকে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। নারদ দক্ষের অহঙ্কার নাশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারদ মহাদেব-পার্বতীর বিবাহের ঘটক ছিলেন, হিমালয়ের কাছে শিবের গুণ-কীর্তন করে হিমালয়ের মনে শিবের প্রতি ভক্তির উদ্রেক করেন তিনি। আবার কৈলাসে দিব্য আম নিয়ে গিয়ে গণেশ ও কার্তিকের ভেতর দ্বন্দ্বমূলক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেন তিনি।

হিরণ্যকশিপুর গর্ভবতী পত্নী কয়াধুকে ইন্দ্র হরণ করতে এলে নারদ তাকে রক্ষা করে নিজের আশ্রমে নিয়ে আসেন। মাতৃগর্ভে শিশু প্রহ্লাদ নারদের হরিগুণ-কীর্তন শুনে বিষ্ণুভক্ত হয়ে ওঠেন। জন্মের পরেও কিছুকাল প্রহ্লাদ নারদের নিকট শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি শিশু ধ্রুবের তপস্যায় মন্ত্রদাতা ছিলেন।

রামায়ণের রচয়িতা বাল্মিকীকে দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকীতে পরিণত করতে নারদ ভূমিকা রেখেছিলেন। নারদ দস্যু রত্নাকরকে রামনাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। রামায়ণের মূল কাহিনী তিনি বাল্মীকিকে শুনিয়েছিলেন। পরে এই কাহিনী অবলম্বনে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন।

কংসের কাছে কৃষ্ণের জন্মগ্রহণ এবং কৃষ্ণকর্তৃক কংসবধের কথা বলে দেবকী ও বাসুদেবকে অন্তরীণ করতে নারদের ভূমিকা ছিল। আবার মহাভারতে দ্রৌপদীর সঙ্গকে পাঁচ স্বামীর ভেতর সমানভাবে বণ্টিত করেছিলেন নারদ। এভাবে নারদ নানা লোকে নানা ঘটন-অঘটন ঘটাতে ভূমিকা রাখেন।
-----------------------------------------------------------------------------
পোস্টটি ভাল লাগে অবশ্যই স-কলকে শেয়ার করবেন।
প্রনিপাত

সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ....

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ  হরে কৃষ্ণ  কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম  হরে রাম  রাম রাম  হরে হরে ...(১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...

জয় শ্রীল প্রভুপাদ🙌🙌🙌
জয় শ্রীল গুরুদেব🙌🙌🙌

Post a Comment

0 Comments