লক্ষ্মীপতি বালাজি ঋণগ্রস্ত


ভগবান তিরুপতি ব্যেঙ্কটাচলপতি লক্ষ্মীপতি শ্রীনিবাস বালাজিরূপে ত্রিজগতে বিখ্যাত। ধনসম্পদ লাভের জন্য তিনি মানুষ এমনকি দেবতাগণের দ্বারাও আরাধিত হন। কিন্তু এই লক্ষ্মীপতিও একদা ঋণগ্রস্ত হয়েছিলেন। যখন শ্রীনারায়ণ এই জগতে বালাজি রূপে লীলাবিলাস করছিলেন, তিনি পদ্মাবতী দেবীকে বিবাহ করার জন্য স্বর্গের খাজাঞ্চি কুবেরের কাছ থেকে অর্থ ধার করেছিলেন। চিত্রে বালাজির পক্ষ থেকে কুবেরকে প্রদত্ত  চুক্তিনামা দেখানো হয়েছে। এটি বর্তমানে তিরুপতি জেলায় বরাহস্বামীপীঠে সংরক্ষিত রয়েছে। স্বয়ং ভগবান ব্যেঙ্কটেশ্বর দ্বারা লিখিত এই চুক্তিনামা দর্শন সর্বমঙ্গলময়।


কুবের ভগবান ব্যেঙ্কটেশ্বরকে ১৪ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ধার দিয়েছিলেন। সেই স্বর্ণমুদ্রা শ্রীসীতা-রাম-লক্ষ্মণ-হনুমানের চিত্র খোদিত ছিল, তাই সেগুলো রামমুদ্রা নামেও আখ্যায়িত হয়। ঋণ এই শর্তে দেওয়া হয়েছিল যে, ঋণগ্রহীতাকে একটি চুক্তিনামা বা ঋণপত্র তৈরি করতে হবে। ব্রহ্মা এই ঋণপত্র লেখার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং ভগবান ব্যেঙ্কটেশ্বর স্বহস্তে এটি লিখেছিলেন। ঋণপত্রের পাঠ্যটি নিম্নরূপ:


"অদ্য কলিযুগে, বৈশাখমাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে, 

ঋণগ্রহীতা: শ্রীনিবাস

ঋণদাতা: ধনেশ্বর (কুবের)

উদ্দেশ্য: ঋণগ্রহীতার বিবাহ। 

রামমুদ্র মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ: চৌদ্দ লক্ষ। ঋণগ্রহীতাকে তা পরিশোধ করতে হবে: বিবাহের সহস্র বছর পর সুদসহ।"

সাক্ষী ছিলেন ব্রহ্মা ও শিব। 


প্রতিশ্রুতিপত্র গ্রহণ করার পর, কুবের নগদ অর্থ প্রদান করেন। এছাড়াও শ্রীনিবাস কুবেরকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্র এবং সামগ্রী ক্রয় করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। যেমন: কাপড়, ডাল, চাল, গম, মঙ্গলসূত্র ইত্যাদি।


এছাড়াও তিরুপতি অঞ্চলটি বরাহদেবের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। ব্যেঙ্কটেশ্বর বালাজি সেখানে বরাহদেবের ধামে বাস করেন, এভাবে ভগবান বালাজি তাঁর আরেক নিত্যস্বরূপের নিকট ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি বহু দেবতার নিকট ঋণ গ্রহণ করেছেন। যদিও তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডের পতি, তিনিই সবকিছুর উৎস, তবুও তিনি একটি বিশেষ কারণে এইরকম লীলা করেছেন।


ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে, শ্রীনিবাস এই সকল ঋণপরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত দেবতারা অর্থমূল্যে এই ঋণের পাওনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এই বিষয়ে দক্ষিণভারতে প্রচারকালে‌ ইসকনের অন্যতম গুরু ও সন্ন্যাসী শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ বলেছেন, দেবতারা চেয়েছিলেন যেন সারা পৃথিবীর মানুষ ভক্ত হয়ে হরিনাম করে। শ্রীনিবাস তাতে সম্মত হয়েছিলেন। মহারাজ বলেন, "এইজন্য আমাদের শ্রীনিবাসের ঋণ পরিশোধের জন্য হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র প্রচার করতে হবে।"


© Madhurjo Chondro Das

 #হরেকৃষ্ণ_সমাচার #hksamacar #সমাচার #শ্রীহরিনাম_সমাচার

Post a Comment

0 Comments