÷<{||♣অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ♣||}>÷


শ্রীমন মহাপ্রভূর প্রীয় ভক্তদের মধ্যে  মধ্যে "গোবিন্দ ঘোষের"  নাম উল্লেখ যোগ্য।প্রভূর জন্য মুখশুদ্ধির হরিতকি সঞ্চয়ের কারণে মহাপ্রভূ তাকে আর সঙ্গে নিলেন না। মহাপ্রভূ তাকে আর সঙ্গে নেবেন না এই কথা শ্রবণ মাত্র গৌরবিরহের কথা ভেবে গোবিন্দ ঘোষ হা গৌরাঙ্গসুন্দর বলে  আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়লেন। প্রভূ গোবিন্দের অঙ্গে হাত রেখে বললেন তুমি শান্ত হও।তুমি এখানেই থাকবে,  তোমার দ্বারা আমি অনেক কাজ সাধন করব। আমি তোমাকে ত্যাগ করে কোথাও যাবো না।

         প্রভূ আমাকে ত্যাগ করবেন না এই আশা নিয়ে গোবিন্দ ঘোষ গঙ্গার তীরে একটি কুটির নির্মান করে দিবানিশি ভজন করতে লাগলেন।গোবিন্দ  একদিন ধ্যানে আছেন ঠিক এমন সময় গঙ্গার স্রোতে ভেসে আসা কিছু একটা বস্তু গোবিন্দকে স্পর্শ করলো। শ্মশানের পোড়া কাঠ ভেবে তিনি সেঠিকে তুলে তীরে ফেলে দিয়ে ধ্যানে বসলেন। কিছু পরেই তিনি অনুভব করলেন, শ্রী গৌরাঙ্গ যেন তার হৃদয়ে  বলছেন, " গোবিন্দ আমি আসিতেছি।তুমি যেখানি পোড়া কাঠ ভাবিতেছ  উহা যত্ন করিয়া কুটিরে রাখিয়া দাও। "। ধ্যান ভঙ্গ হতেই গোবিন্দ সেই কাঠটি তুলে রাখলেন। পরদিন দেখলেন সেটা কাঠ নয় সেটা একটা কালো পাথর। একদিন মহাপ্রভূ অগ্রদ্বীপে এসে উপস্থিত হলেন। গোবিন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন,..... গোবিন্দ প্রস্তর খানি পাইয়াছ তো? " গোবিন্দ করজোড়ে বলিলেন "আজ্ঞে হাঁ "। তখন প্রভূ বললেন কাল ওই প্রস্তর দিয়ে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করবো।পরদিন কোথা থেকে অচেনা অজানা একজন ভাস্কর এসে বিগ্রহ প্রস্তুত করে দিলেন। মহাপ্রভূ সেই বিগ্রহ নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করলেন। নাম রাখলেন..... "গোপীনাথ"। গোবিন্দকে বললেন তুমি বিবাহ করে সংসার কর আর এই বিগ্রহের সেবা কর।তোমার দ্বারা শ্রীভগবানের করুণার সীমা দেখানো হবে। প্রভূর আদেশ মেনে গোবিন্দ ঘোষ বিবাহ করলেন। কিছুদিন পর তার এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় কিন্তু পুত্র রেখে তার স্ত্রী পরলোক গমন করে ।গোবিন্দ খুব কষ্টের সঙ্গে মাতৃহারা শিশুটির পালন করেন আর অন্যদিকে গোপীনাথের সেবা এই নিয়েই থাকেন। হঠাৎ একদিন মাতৃহারা শিশুটিও মারা গেল। পুত্রশোকে অনেক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দার্ড়িয়ে থেকে মনে মনে সংক্ল্প করলেন যে,গোপিনাথের ঘরে হত্যা দিয়ে পরে থেকে উপবাস করে প্রাণ ত্যাগ করেবেন। আর গোপীনাথকে মনে মনে বলতে লাগলেন,....... আমি কি অন্যায় করেছি, আমি তো দিবানিশি তোমার সেবা নিয়েই থাকি।তুমি এতোই অকৃতজ্ঞ যে আমার মাতৃহারা সন্তানটাকেও কেড়ে নিলে। আমি তোমার সেবা করবো না। সারাদিন পর যখন নিশি উপস্থিত তখন গোপিনাথ বললেন,..... গোবিন্দ বাপ আমার আমি যে ক্ষুধায় মরি। তোমার কি মায়া দয়া নেই?  গোবিন্দ ও গোপীনাথের মধ্যে এইরকম কথাবার্তা প্রায়ই চলত। যখন গোপীনাথ বলতেন তখন গোবিন্দ ভাবতেন সত্যিই গোপীনাথ কথা বলছেন আবার পরক্ষণেই ভাবতেন এ বুঝি তার মনের ভ্রম। গোপীনাথ বললেন,...দৈবাৎ কারণে লোকের একটা ছেলে মরলে কি সে আর একটা ছেলেকে অনাহারি রেখে বধ করে?তোমার এক সন্তান গেলেও আমি তো আছি তোমার সন্তান হয়ে। গোবিন্দ তখন বললেন ঠাকুর আমার একমাত্র সন্তানকে তুমি কেড়ে নিলে কেন?তুমি আমার সর্বাঙ্গ সুন্দর পুত্র মানলাম কিন্তু  তুমি যে আমাকে বাপ বাপ করে ডাকছো তুমি কি আমার সন্তানের মতো তুমি কি আমার মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করবে?আমার সমস্ত কাজ তুমি করবে? তখন গোপীনাথ মধুর স্বরে বললেন গোবিন্দ, তুমি আমার পিতা তাই শাস্ত্র মতো সমস্ত কর্মই আমি করব। গোপীনাথের কথা শ্রবণ করে গোবিন্দ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমি অন্যায় করেছি অপরাধ করেছি তোমাকে ভোগ না দিয়ে। এই বলে স্নান সেরে গোপীনাথের জন্য ভোগ রান্না করলেন।

               কিছুদিন পরেই গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুরের অন্তর্দ্ধান হয়।কথিত আছে এই সময় পিতৃবিয়োগের কারণে গোপীনাথের নয়ন কমল দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল পড়েছিল।  দেহত্যাগের আগে নিজের প্রধান শিষ্যের হাতে গোপীনাথের সেবার দ্বায়িত্ব দিয়ে গেলেন। গোপীনাথ সেই সেবাইতকে স্বপ্নে বললেন,  গোবিন্দ ঘোষ আমার পিতা। আমি একমাস অশৌচ পালন করবো এবং হবিষ্যান্ন গ্রহন করবো। তুমি আগামী কাল আমাকে স্নান করিয়ে কাচা পড়াবে। একমাস পর আমি সর্ব্বসমক্ষে নিজহস্তে পিণ্ডদান করব,শ্রাদ্ধ দেব। আমি আমার পিতা গোবিন্দ ঘোষের কাছে প্রতিশ্রুত আছি।আদেশ মতো সেবাইত সমস্ত কাজই করলেন। মধুমাসে কৃষ্ণ - একাদশী তিথিতে গোবিন্দের শ্রাদ্ধের দিন গলায় কাচা পরিহত গোপীনাথকে শ্রাদ্ধ স্থানে নিয়ে আসা হল। জন সমক্ষে পিতাকে পিণ্ডদান করলেন গোপীনাথ। সকলেই গোবিন্দ ঘোষকে ধন্য ধন্য করতে লাগলেন। শ্রী গৌরাঙ্গ গোপীনাথকে বলেছিলেন..... "গোবিন্দ, তোমার দ্বারা শ্রীভগবানের ভক্তবাৎসল্যের  পরকাষ্ঠা দেখানো হইবে। তুমি এই সৌভাগ্য পরিত্যাগ করিও না। " তাই ভক্তবৎসল ভগবান ৪০০ বছরের অধিক কাল থেকে আজও গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধ দিয়ে আসছেন।

  

                   ÷<{ জয় গোপীনাথ }>÷

   জয় গৌরসুন্দর ♥ জয় গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর

Post a Comment

0 Comments