বৃন্দাবনের একটি সত্য ঘটনা - VERY HEART TOUCHING - 

একবার বৃন্দাবনে এক সাধু ছিলেন,নিম্বার্ক সম্প্রদায়ে দীক্ষিত -কদম্বখণ্ডীজি মহারাজ (কেউ কেউ 'নাগা' বাবা বলে)।তাঁর মাথায় বড়ো জটা ছিল। বৃন্দাবনের বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন, "হা রাধে-গোবিন্দ" বলে কেঁদে বেড়াতেন।

       একদিন পথের কাঁটা ঝোপের মধ্যে তাঁর মাথার জটা আটকে গেল। অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারলেন না।

 আর ক্লান্ত হয়ে বসে বসে গুনগুন করতে লাগলেন - 

"হে মুরলীধর ছলিয়া মোহন

 কব কৃপা হোগা তেরা"।

ব্রজবাসীরা এসে বলল বাবা  -"আপনার চুলের জটা আমরা কাঁটাবন থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছি"।তখন বাবা সবাইকে ধমক দিয়ে বললেন, যে সমস্যায় ফেলেছে সে এসেই সমাধান করবে।

বাবা বসে আছেন কাঁটাবনে- 1 দিন হয়ে গেছে,2 দিন হয়ে গেছে,3 দিন হয়ে গেছে।তিনি মনের আনন্দে গাইছেন -

 "রাধে কব কৃপা করোগি?

তেরে বিন সব জগ শুনা,

কব কৃপা করোগি ?" ।

তখন সামনে থেকে 15-16 বছরের এক সুদর্শন কিশোরকে হাতে একটি লাঠি নিয়ে একা আসতে দেখলেন।তাঁর চালচলন দেখে কোটি কোটি দেবতাকেও  লজ্জায় পড়তে হবে এমনই তাঁর সৌন্দর্য।তাঁর মুখটা কোটি সূর্যের মত জ্বলজ্বল করছিল,আর মুখে মৃদুমন্দ হাস্য।

তিনি ওই কাঁটাবনে বাবার নিকটে আসলেন, বাবাকে বললেন -"বাবা, মাথার জটা খুলে দিই"।

বাবা বললেন তুমি কে?

তিনি  বললেন -"আমি ঠাকুরজী ব্রজবিহারী"।

বাবা বললেন আমি কোন ব্রজবিহারীকে চিনি না।

ভগবান কিছুক্ষণ পরে আবার আসলেন,

এসে বললেন বাবা, - "এবার মাথার জটা খুলে দিই"।

বাবা বললেন এখন কে তুমি?

 ঠাকুরজী বললেন আমি 'বৃন্দাবন বিহারী'।

 বাবা বললেন, আমি কোনো বৃন্দাবন বিহারীকে চিনি না।

ঠাকুরজী তখন বললেন "তাহলে বলুন বাবা কাকে আপনি চেনেন?"

তখন বাবা বলে উঠলেন -"আমরা নিত্য নিকুঞ্জ বিহারীকে চিনি"।

ভগবান তখনই নিকুঞ্জ বিহারী স্বরূপ ধারণ করলেন  - হাতে বংশী, মাথায় মৌর মুকুট,শরীরে পিতাম্বর, বাঁকেবিহারি ঝলক।

বললেন  -"এবার মাথার জটা খুলে দিই"।

তখন বাবা বললেন -"আমাকে পাগল ভেবেছো!লালা!নিকুঞ্জ বিহারী তো আমার শ্রী রাধা জু ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না" আর তুমি একা এসে আমাকে ভোলাচ্ছ!!!"

তখন পেছন থেকে মিষ্টি সরস কণ্ঠস্বর ভেসে এল- "বাবা, এই তো আমি" - প্রকট হলেন আমাদের রাধারানী।

আর তখন গোবিন্দ বললেন - " বাবা এবার মাথার জটা খুলে দিই"।

বাবা মৃদু হেসে উত্তর দিলেন- "হে রাধে,যখন তোমাদের যুগল দর্শনই পেয়ে গেলাম,

তখন আর মাথার জটার কি কথা !!ওটা কাঁটাবন থেকে খুলুক আর নাই বা খুলুক,জীবন আমার ধন্য" ।


রাধে রাধে।।


#বি.দ্র - (এই স্থানটি এখনো আছে,বরসনা থেকে গাড়িতে করে আধ ঘন্টা দূরে যেতে হয় -কদম্বখন্ডি -ভক্তরা দর্শন করতে আসেন,আমি গিয়েছি।জানা যায় শ্রীকৃষ্ণ নিজ হাতে বাবার মাথার জটা খুলে দিয়েছিলেন,রাধারানী নিজ হাতে ওই বাবাকে পেট ভরে অনেক সুস্বাদু প্রসাদ খাইয়ে দিয়েছিলেন।ওখানে সুন্দর মন্দির আছে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের রাধাকৃষ্ণ নিকুঞ্জ বিহারীর,রাধাকৃষ্ণ এর পাশে পাথরে 'কাঁটাবন থেকে কৃষ্ণের নিজ হাতে বাবার মাথার জটা খুলে দিবার দৃশ্য' ওই মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা আছে)

Post a Comment

0 Comments