*কৃপালু* 

সমস্ত বৈষ্ণবের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে তারা হচ্ছে  অত্যন্ত কৃপালু, করুণাময়। আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে  আমাদের প্রিয় গুরু মহারাজ কত করুণাময়। এখন তিনি এই পরিস্থিতিতে আছেন তবে যখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ  ছিলেন, ভাল ছিলেন সেই সমস্ত দিনগুলোতেও তিনি নিজের ওপর কত চাপ প্রয়োগ করতেন যে কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় । আমরা গুরুমহারাজের কত লীলা শুনতে পাই যে কিভাবে তিনি হাসপাতালে নার্সদের কাছে, ডাক্তারদের কাছে, বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছেন । কিন্তু সবরকম পরিস্থিতিতেই গুরুমহারাজ কত দয়ালু । এমনকি যখন তিনি গুরু ছিলেন না, এমনকি যখন তিনি সন্ন্যাসী ছিলেন না, এমনকি যখন তিনি একজন নতুন ভক্ত হিসেবে ইসকনে যুক্ত হয়েছিলেন তখনও সবার জন্য তাঁর ধৈর্য ও সহানুভূতি ছিল। এমনকি আগের দিনগুলোতে মায়াপুরে তিনি মোটর সাইকেলে করে ৪০ কিলোমিটার যেতেন নির্মাণ কার্যে ব্যবহৃত জিনিসপত্র আনার জন্য, মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য । যেকোন ভাবে তিনি সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকতেন । আমার মনে হয় তাঁর এরকম একটা রেকর্ড আছে যে তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি বেশিরভাগ সময়ই বিমানে ভ্রমণরত থাকেন, তিনি কত যে ভ্রমণ করেছেন । আমার মনে হয় না বিশ্বে এমন কোন জায়গা আছে যেখানে তিনি যাননি, তিনি সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং সকলকে তাঁর কৃপা দান করার চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো আমরা দেখি যে তিনি কত ক্লান্ত এমনকি এখনও যখন আমরা তাঁর সচিবকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি যে, উনি আজকে সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে বিশ্রাম নেওয়া পর্যন্ত কি করেছেন? আমি নিশ্চিত যে উনি এক দিনে যা কিছু করেছেন তা আমরা বেশিরভাগ মানুষই এক মাসেও করিনি । প্রত্যেকদিন তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মিনিট প্রতিটি সেকেন্ড কৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করতে চান এবং আমার মনে পড়ে এটা বোধহয় নব্বইয়ের দশকে হবে যখন আমি গুরুমহারাজের ভাগবত ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম, গুরুমহারাজ ব্যাসাসনে বসেছিলেন এবং অন্য একজন জয় রাধামাধব কীর্তন করছিলেন, গুরুমহারাজ বসেছিলেন, তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন, কোনো স্থান ভ্রমণ করে তিনি এসেছিলেন এবং তাঁর ভাগবত থেকে প্রবচন দেওয়ার কথা ছিল । তিনি এত ক্লান্ত ছিলেন যে, চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন এবং সবাই দেখতে পারছিল যে তিনি ঘুমোচ্ছিলেন । যখনই জয় রাধামাধব কীর্তন শেষ হল, আপনি জানেন ঠিক শেষ মুহূর্তে তখনই তিনি চোখ খুললেন এবং দেড় ঘন্টার মতো খুব সুন্দর এক প্রবচন দিলেন, প্রশ্নের উত্তর দিলেন । কতটা উদ্যমী, এটিই হল ব্যাপার । এরপর একজন ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে আপনি কিভাবে এই সমস্ত কিছু করেন? আমরা দেখলাম যে আপনি কত ক্লান্ত এবং তিনি বললেন আমার এই রহস্য হচ্ছে আমি যখন গৌরাঙ্গ নাম বলি তখন আমি সমস্ত শক্তি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কাছ থেকে পাই কারণ এটিই হচ্ছে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর লক্ষ্য যে তিনি সকলের কাছে পৌঁছাতে চান । সুতরাং এটি আমরা আমাদের গুরুমহারাজের মধ্যে দেখতে পাই । উনার মনের ভাব চৈতন্য মহাপ্রভুর মত, যিনি প্রত্যেকটি কোণায় কোণায় প্রত্যেকের কাছে, প্রত্যেক জীবের কাছে পৌঁছে যেতে চান । যারাই তাঁর সংস্পর্শে আসেন তাদের ওপরও তিনি সুন্দর প্রভাব ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাঁর সাথে যুক্ত হয়ে যান । সেই করুণার ধারা প্রবাহিত হয় তাঁর কথার মাধ্যমে, তাঁর চোখের মাধ্যমে, তাঁর ব্যবহারে, কিভাবে সবাইকে তিনি প্রসাদবিতরণ করেন। সুতরাং তিনি করুণাসাগর । আমার বিশেষভাবে মনে পড়ে, আমার মনে হয় গুরুমহারাজ অনেকবার এটি নিজেই বলেছিলেন বা মহাবরা প্রভু বলেছেন যে, যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নে তাঁর যে সমস্ত গুরুভাইয়েরা নিত্যধামে গেছেন, তাঁরা তাঁকে ডাকছেন যে তুমি কেন আসছ না আমাদের কাছে? গুরুমহারাজ বলছিলেন, যে জগৎ তিনি। দেখেছিলেন সেটি কত সুন্দর ছিল। আমার গুরুভাইরা কত এ আনন্দিত ছিল এবং তাদের মুখে এক উজ্জ্বল হাসি ছিল। তাঁরা  আমাকে বলছিলো ফিরে যেতে। কিন্তু তিনি বললেন যে, না আমি এখানে থাকতে চাই এবং মহাবরাহ প্রভু বিশেষভাবে বলেছিলেন যে, যদি কেউ গুরুমহারাজের মতো অবস্থায় থাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই এই সুযোগটি গ্রহণ করে। নিতেন। কারণ এখন গুরুমহারাজ কৃষ্ণের কৃপায় ভালো আছেন, কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা খুবই সঙ্কটাপন্ন ছিল, কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল । তবুও তিনি থাকতে চেয়েছেন । কারণ, তিনি ত আমাদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন । আমাদের সবাইকে তিনি ম খুব ভালোবাসেন ও তিনি সবাইকে সাহায্য করতে চান । তিনি একা কখনোই ফিরে যেতে চান না । তিনি চান সবাইকে নিয়ে। একসাথে ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে ।






❤️ *অকৃতদ্রোহ* 🌻

“অকৃতদ্রোহ” কথাটির অর্থ হল যিনি কলহ এড়িয়ে চলেন। যেমনটা আমরা দেখতে পাই যে, গুরুমহারাজ শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ খুব পছন্দ করেন । তাঁর স্বভাব কত সুন্দর । আমার মনে হয় না, এমন কেউ আছেন যিনি গুরুমহারাজকে কখনো অন্যের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুনেছেন। আমার মনে হয়না কোন ভক্ত এরকম বলতে পারবেন যে, গুরুমহারাজের সাথে কথোপকথনে তিনি কখনো কারোর সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে শুনেছেন। তিনি কখনোই কারো সম্পর্কে খারাপ কোন মন্তব্য করেননি, তিনি কখনো কারো মধ্যে কোন দোষ দর্শন করেন না । আসলে যখন আপনি কারোর মধ্যে কোন দোষ দেখছেন তার মানে হচ্ছে আপনি সেগুলি পর্যবেক্ষণ করছেন যে দোষগুলি আপনার মধ্যে আছে। যারা ভগবানের শুদ্ধভক্ত তারা অন্যের মধ্যে কোনরকম দোষ লক্ষ্য করেন না কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে সেই ধরণের কোন দোষ নেই । তাই তারা সমস্ত বিশ্বকে সুন্দর দেখেন । আমরা দেখতে পাই যে গুরুমহারাজ কখনো কারোর মধ্যে ত্রুটি দেখতে পান না। এমনকি আমার মনে হয় আমি শচীনন্দন মহারাজের কথা শুনছিলাম । তিনি বলছিলেন যে আমরা ভাবতে পারি যে হয়ত আমাদের সাথে গুরুমহারাজ অন্য কারোর ত্রুটি সম্পর্কিত কোন কথোপকথন করেন না কিন্তু হয়তো তাঁর সমকক্ষ ভক্তদের সাথে, বিভিন্ন সভাতে গুরুভাইদের মধ্যে এই রকম আলোচনা করে থাকেন । শচীনন্দন মহারাজ বলছিলেন যে আমি কখনো শুনিনি জয়পতাকা স্বামী অন্য কারো সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করছেন । তার সেই স্বভাবই নেই । তিনি কখনোই কারো মধ্যে কোন ত্রুটি দেখতে পান না । তার একটি খুব সুন্দর হৃদয় রয়েছে । তিনি সব সময় সাধারণত যেটি চিন্তা করেন সেটি হল- আমি কিভাবে এই ভক্তকে কৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করব, এটাই শুধু তিনি ভাবেন । তিনি যখন আপনার দিকে তাঁকিয়ে আছেন বা অন্য কারো দিকে তাকিয়ে আছেন তখন তাঁর মনে শুধু এই চিন্তা চলে যে কিভাবে এই ব্যক্তিকে আমি কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করব আর এটিই হল তার একমাত্র ভাবনা ।


বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, *সত্যসার* , সম । 
নির্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।

৩য়  গুন------------------





           
 ❤❤️❤️❤️ “সত্যসার" 🌻🌻🌻


"সত্যসার" মানে এই নয় যে, যিনি সত্য কথা বলেন, মূলত এর অর্থ হচ্ছে যার কৌতুহল হল সত্যসার। এর মানে কি? এর মানে হল- পরম সত্য কৃষ্ণকে দর্শন ও তার কৌতুহল শুধু কৃষ্ণের প্রতি এবং তিনি সত্য সম্পর্কে বলতে চান। কারণ এই জগতের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী ও এই জগতের একমাত্র সত্য বস্তু হল কৃষ্ণের সাথে আমাদের সম্পর্ক। ভক্তের একমাত্র লক্ষ্য হল কৃষ্ণপ্রাপ্তি, এজন্য তিনি সত্যসার। এমন বলা যেতে পারে যে কৃষ্ণ ছাড়া যা কিছুই বলা হয় সেটিই মিথ্যা। এমন কি আমি বলতে পারি এটি হল আমার শাড়ী, এটিও মিথ্যে। এটি আমার নয়, এটিও আমার নয়। কারণ আমি হলাম আত্মা । আমি এই দেহ নই । যদি এমনটি বলি এটি আমার ঘর । কিন্তু এটি আমার নয় । এর মানে হল যা কিছুই আমরা বলি সেই সব মিথ্যে। যখন আমি বলি আমি কৃষ্ণের দাস তার মানে এটি সত্য এবং সেটি একমাত্র বিষয় যা আপনি সত্য বলছেন । বাকি সবকিছু আমার ছেলে, আমার কন্যা, আমার বর, আমার সম্পত্তি এই সবকিছু আসলে আপনার নয় । এই সবকিছুই কৃষ্ণের । সত্যসার মানে একজন ভক্ত যিনি সবসময় কৃষ্ণ চিন্তা করেন । যিনি সব সময় কৃষ্ণভাবনাময় । আমার মনে পড়ে এই সুন্দর লীলার কথা যেখানে গুরুমহারাজ সিঙ্গাপুর থেকে পার্থে এসেছেন । যখন তিনি ওখানে পৌঁছালেন তখন ছিল মধ্যরাত প্রায় ১২:৩০ । ভক্তরা তাঁর জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন । বিমানবন্দর থেকে তিনি একজন ভক্তের গৃহে গিয়েছিলেন । বিশ্রাম নেওয়ার জন্য উনাকে যে শতরঞ্জি দেওয়া হয়েছিল তা তেমন সুখকর ছিল না । কারণ গুরুমহারাজের শ্বাসযন্ত্রে কিছু সমস্যা থাকার কারণে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট কোণ করে শুতে হয় । কিন্তু সেই শতরঞ্জিটা তাঁকে নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছিল । তারপর ভক্তরা শতরঞ্জিটা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল । কিন্তু ওই শতরঞ্জিও কোন কাজ করছিল না। দুজন ভক্ত মন্দিরে গিয়েছিলেন অন্য একটি শতরঞ্জি আনার জন্য । যেই ভক্তের গৃহে গুরুমহারাজ ছিলেন সেই ভক্তের অন্য একটি ঘরে আলাদা আরেকটি শতরঞ্জি ছিল। তারা সেটি আনার ব্যবস্থা করেছিলেন গুরুমহারাজের জন্য । ভক্তরা এমনকি সেই শতরঞ্জির ওপর শুয়ে দেখার চেষ্টা করছিল সেটি পিছলে যায় কিনা। এইরকম সব হাঙ্গামা চলছিল। গুরুমহারাজ এই সমস্ত তামাশা দেখছিলেন যে কি হচ্ছে এবং সবশেষে রাত্র ৩:৩০ নাগাদ তারা শতরঞ্জির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হল। তারপর তারা গুরুমহারাজকে হুইলচেয়ার থেকে এনে শোয়ানোর চেষ্টা করছিলেন ওই শতরঞ্জির ওপর। যখন তারা এটি করছিলেন তখন গুরুমহারাজ বললেন যে আমি চৈতন্যচরিতামৃত থেকে শ্রীচৈতন মহাপ্রভুর ीা বলতে চাই। যেটি হল বেড়া লালা, যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু কীর্তন করেছিলেন । গুরুমহারাজের সেবক খুব বিন্নভাবে গুরুমহারাজকে বললেন যে গুরুমহারাজ অনেক রাত হয়েছে। মনে হয় আপনার বিশ্রাম নেওয়া উচিত। গুরুমহারাজ খুব মর্মাহত হলেন এবং বললেন শেষ দুই ঘণ্টা ধরে তোমরা সবাই বেড... বেড... বেড... বেড... এরকম কথা বলে চলেছ। আমি এরকম বেড ভাবনা নিয়ে শুতে চাই না। আমি বেড়া ভাবনা নিয়ে শুতে চাই, চৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবনা নিয়ে শুতে চাই। আমি হলাম সন্ন্যাসী । আমি এই বেড ভাবনা নিয়ে শুতে চাই না, আমি কৃষ্ণভাবনা নিয়ে শুতে চাই। আমি সেই লীলাটি বলবো । তারপর সেই সেবকটি বললেন ঠিক আছে গুরুমহারাজ। তারপর গুরুমহারাজ সেই লীলা বর্ণনা করলেন। বেড থেকে বেড়া তো এইভাবে গুরুমহারাজ সেই লীলা সম্পর্কে বললেন এবং তারপর তিনি বিশ্রাম নিতে গেলেন। সত্যসার, তিনি সবসময় কৃষ্ণ স্মরণ করতে চান, তিনি কৃষ্ণ সম্পর্কে বলতে চান এবং তিনি কৃষ্ণ সম্পর্কে শ্রবণ করতে চান ।

[29/03, 10:13] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার, সম । 
নির্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।

আজ হতে শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।

১ম গুন-----------------------------





                             🙏কৃপালু🌻

সমস্ত বৈষ্ণবের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে তারা হচ্ছে  অত্যন্ত কৃপালু, করুণাময়। আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে  আমাদের প্রিয় গুরু মহারাজ কত করুণাময়। এখন তিনি এই পরিস্থিতিতে আছেন তবে যখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ  ছিলেন, ভাল ছিলেন সেই সমস্ত দিনগুলোতেও তিনি নিজের ওপর কত চাপ প্রয়োগ করতেন যে কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় । আমরা গুরুমহারাজের কত লীলা শুনতে পাই যে কিভাবে তিনি হাসপাতালে নার্সদের কাছে, ডাক্তারদের কাছে, বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছেন । কিন্তু সবরকম পরিস্থিতিতেই গুরুমহারাজ কত দয়ালু । এমনকি যখন তিনি গুরু ছিলেন না, এমনকি যখন তিনি সন্ন্যাসী ছিলেন না, এমনকি যখন তিনি একজন নতুন ভক্ত হিসেবে ইসকনে যুক্ত হয়েছিলেন তখনও সবার জন্য তাঁর ধৈর্য ও সহানুভূতি ছিল। এমনকি আগের দিনগুলোতে মায়াপুরে তিনি মোটর সাইকেলে করে ৪০ কিলোমিটার যেতেন নির্মাণ কার্যে ব্যবহৃত জিনিসপত্র আনার জন্য, মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য । যেকোন ভাবে তিনি সবাইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকতেন । আমার মনে হয় তাঁর এরকম একটা রেকর্ড আছে যে তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি বেশিরভাগ সময়ই বিমানে ভ্রমণরত থাকেন, তিনি কত যে ভ্রমণ করেছেন । আমার মনে হয় না বিশ্বে এমন কোন জায়গা আছে যেখানে তিনি যাননি, তিনি সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং সকলকে তাঁর কৃপা দান করার চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো আমরা দেখি যে তিনি কত ক্লান্ত এমনকি এখনও যখন আমরা তাঁর সচিবকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি যে, উনি আজকে সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে বিশ্রাম নেওয়া পর্যন্ত কি করেছেন? আমি নিশ্চিত যে উনি এক দিনে যা কিছু করেছেন তা আমরা বেশিরভাগ মানুষই এক মাসেও করিনি । প্রত্যেকদিন তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মিনিট প্রতিটি সেকেন্ড কৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করতে চান এবং আমার মনে পড়ে এটা বোধহয় নব্বইয়ের দশকে হবে যখন আমি গুরুমহারাজের ভাগবত ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম, গুরুমহারাজ ব্যাসাসনে বসেছিলেন এবং অন্য একজন জয় রাধামাধব কীর্তন করছিলেন, গুরুমহারাজ বসেছিলেন, তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন, কোনো স্থান ভ্রমণ করে তিনি এসেছিলেন এবং তাঁর ভাগবত থেকে প্রবচন দেওয়ার কথা ছিল । তিনি এত ক্লান্ত ছিলেন যে, চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন এবং সবাই দেখতে পারছিল যে তিনি ঘুমোচ্ছিলেন । যখনই জয় রাধামাধব কীর্তন শেষ হল, আপনি জানেন ঠিক শেষ মুহূর্তে তখনই তিনি চোখ খুললেন এবং দেড় ঘন্টার মতো খুব সুন্দর এক প্রবচন দিলেন, প্রশ্নের উত্তর দিলেন । কতটা উদ্যমী, এটিই হল ব্যাপার । এরপর একজন ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে আপনি কিভাবে এই সমস্ত কিছু করেন? আমরা দেখলাম যে আপনি কত ক্লান্ত এবং তিনি বললেন আমার এই রহস্য হচ্ছে আমি যখন গৌরাঙ্গ নাম বলি তখন আমি সমস্ত শক্তি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কাছ থেকে পাই কারণ এটিই হচ্ছে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর লক্ষ্য যে তিনি সকলের কাছে পৌঁছাতে চান । সুতরাং এটি আমরা আমাদের গুরুমহারাজের মধ্যে দেখতে পাই । উনার মনের ভাব চৈতন্য মহাপ্রভুর মত, যিনি প্রত্যেকটি কোণায় কোণায় প্রত্যেকের কাছে, প্রত্যেক জীবের কাছে পৌঁছে যেতে চান । যারাই তাঁর সংস্পর্শে আসেন তাদের ওপরও তিনি সুন্দর প্রভাব ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাঁর সাথে যুক্ত হয়ে যান । সেই করুণার ধারা প্রবাহিত হয় তাঁর কথার মাধ্যমে, তাঁর চোখের মাধ্যমে, তাঁর ব্যবহারে, কিভাবে সবাইকে তিনি প্রসাদবিতরণ করেন। সুতরাং তিনি করুণাসাগর । আমার বিশেষভাবে মনে পড়ে, আমার মনে হয় গুরুমহারাজ অনেকবার এটি নিজেই বলেছিলেন বা মহাবরা প্রভু বলেছেন যে, যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নে তাঁর যে সমস্ত গুরুভাইয়েরা নিত্যধামে গেছেন, তাঁরা তাঁকে ডাকছেন যে তুমি কেন আসছ না আমাদের কাছে? গুরুমহারাজ বলছিলেন, যে জগৎ তিনি। দেখেছিলেন সেটি কত সুন্দর ছিল। আমার গুরুভাইরা কত এ আনন্দিত ছিল এবং তাদের মুখে এক উজ্জ্বল হাসি ছিল। তাঁরা  আমাকে বলছিলো ফিরে যেতে। কিন্তু তিনি বললেন যে, না আমি এখানে থাকতে চাই এবং মহাবরাহ প্রভু বিশেষভাবে বলেছিলেন যে, যদি কেউ গুরুমহারাজের মতো অবস্থায় থাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই এই সুযোগটি গ্রহণ করে। নিতেন। কারণ এখন গুরুমহারাজ কৃষ্ণের কৃপায় ভালো আছেন, কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা খুবই সঙ্কটাপন্ন ছিল, কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল । তবুও তিনি থাকতে চেয়েছেন । কারণ, তিনি ত আমাদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন । আমাদের সবাইকে তিনি ম খুব ভালোবাসেন ও তিনি সবাইকে সাহায্য করতে চান । তিনি একা কখনোই ফিরে যেতে চান না । তিনি চান সবাইকে নিয়ে। একসাথে ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে ।
[29/03, 10:18] Mukunda Bhakti: শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজ 

প্রথম গুন কৃপালু আগে দেওয়া হয়েছে, এখন অকৃতদ্রোহ ২য় গুন দেওয়া হলো।





                    ❤️❤️❤️ অকৃতদ্রোহ 🌻🌻🌻

“অকৃতদ্রোহ” কথাটির অর্থ হল যিনি কলহ এড়িয়ে চলেন। যেমনটা আমরা দেখতে পাই যে, গুরুমহারাজ শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ খুব পছন্দ করেন । তাঁর স্বভাব কত সুন্দর । আমার মনে হয় না, এমন কেউ আছেন যিনি গুরুমহারাজকে কখনো অন্যের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করতে শুনেছেন। আমার মনে হয়না কোন ভক্ত এরকম বলতে পারবেন যে, গুরুমহারাজের সাথে কথোপকথনে তিনি কখনো কারোর সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে শুনেছেন। তিনি কখনোই কারো সম্পর্কে খারাপ কোন মন্তব্য করেননি, তিনি কখনো কারো মধ্যে কোন দোষ দর্শন করেন না । আসলে যখন আপনি কারোর মধ্যে কোন দোষ দেখছেন তার মানে হচ্ছে আপনি সেগুলি পর্যবেক্ষণ করছেন যে দোষগুলি আপনার মধ্যে আছে। যারা ভগবানের শুদ্ধভক্ত তারা অন্যের মধ্যে কোনরকম দোষ লক্ষ্য করেন না কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে সেই ধরণের কোন দোষ নেই । তাই তারা সমস্ত বিশ্বকে সুন্দর দেখেন । আমরা দেখতে পাই যে গুরুমহারাজ কখনো কারোর মধ্যে ত্রুটি দেখতে পান না। এমনকি আমার মনে হয় আমি শচীনন্দন মহারাজের কথা শুনছিলাম । তিনি বলছিলেন যে আমরা ভাবতে পারি যে হয়ত আমাদের সাথে গুরুমহারাজ অন্য কারোর ত্রুটি সম্পর্কিত কোন কথোপকথন করেন না কিন্তু হয়তো তাঁর সমকক্ষ ভক্তদের সাথে, বিভিন্ন সভাতে গুরুভাইদের মধ্যে এই রকম আলোচনা করে থাকেন । শচীনন্দন মহারাজ বলছিলেন যে আমি কখনো শুনিনি জয়পতাকা স্বামী অন্য কারো সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করছেন । তার সেই স্বভাবই নেই । তিনি কখনোই কারো মধ্যে কোন ত্রুটি দেখতে পান না । তার একটি খুব সুন্দর হৃদয় রয়েছে । তিনি সব সময় সাধারণত যেটি চিন্তা করেন সেটি হল- আমি কিভাবে এই ভক্তকে কৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করব, এটাই শুধু তিনি ভাবেন । তিনি যখন আপনার দিকে তাঁকিয়ে আছেন বা অন্য কারো দিকে তাকিয়ে আছেন তখন তাঁর মনে শুধু এই চিন্তা চলে যে কিভাবে এই ব্যক্তিকে আমি কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করব আর এটিই হল তার একমাত্র ভাবনা ।
[29/03, 11:01] Mukunda Bhakti: *শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজের দীক্ষা প্রদানের একটা সংক্ষেপ পরিসংখ্যান ।* 
.......….......................
 *আজ ২৪ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত* 
...........…...................
আমরা দেখছি ১৯৭৮ সালে প্রথম দীক্ষা দেয়া শুরু করেন।
 
🌏১৯৭৮-২০২৩ সাল আর ২৫ দিন পর ১ম দীক্ষার ৪৫ বছর পূর্ণ হবে।  
🌏 ১৯৭৮-১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে ১৮৭ জন।

🌏 ১৯৮১-১৯৮৮ মোট ১৫৯৪ জন দীক্ষা। 

🌏১৯৯১-১৯৯৯ মোট ৩৭১৫ জন দীক্ষা 

🌏 ২০০০-২০০৯ মোট ১৪২৩০ জন দীক্ষা 
 
🌏২০১০-২০১৯ মোট ৩০৪৪২ জন দীক্ষা (২০০৮ সালে স্ট্রোক এর পর)

 🌏 ২০২০ হতে আজ আজ পর্যন্ত মোট ১৫৬৪৩ জন দীক্ষা  (করোনাকালীন)
করোনাতে সারা পৃথিবী বন্ধ ছিল। কিন্তু গুরু মহারাজ বন্ধ ছিলেন না। তিনি প্রথম দেখিয়ে দেন, জুমেও দীক্ষা দেয়া যায়।বর্তমানে ৬৫৮১১ জন অফিসিয়ালি দীক্ষিত শিষ্য রয়েছেন গুরু মহারাজের। এছাড়াও রয়েছে আরও অজানা আনঅফিসিয়ালি। স্ট্রোকের আগে 
🌏🌏 *১৯৭৮-২০০৮ এই ৩০ বছরে ১৫৬১২ জন কে দীক্ষা দিয়েছেন।* 

 *🌏🌏আর ২০০৮-২০২৩ এ-ই ১৫ বছরে দিয়েছেন ৫০১৯৯ জনকে।* 
আরও ৪১১ জন আজ দীক্ষা পাবেন। এটাই গুরু মহারাজের অর্জন। এই মোট *৬৫৮১১* জনকে তিনি প্রভুপাদের ছায়াতলে এনেছেন।

------শ্রীপাদ মণিগোপাল প্রভু,মায়াপুর, জেপি এস অফিস
[29/03, 11:02] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, *সত্যসার* , সম । 
নির্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।

৩য়  গুন------------------

           
 ❤❤️❤️❤️ “সত্যসার" 🌻🌻🌻


"সত্যসার" মানে এই নয় যে, যিনি সত্য কথা বলেন, মূলত এর অর্থ হচ্ছে যার কৌতুহল হল সত্যসার। এর মানে কি? এর মানে হল- পরম সত্য কৃষ্ণকে দর্শন ও তার কৌতুহল শুধু কৃষ্ণের প্রতি এবং তিনি সত্য সম্পর্কে বলতে চান। কারণ এই জগতের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী ও এই জগতের একমাত্র সত্য বস্তু হল কৃষ্ণের সাথে আমাদের সম্পর্ক। ভক্তের একমাত্র লক্ষ্য হল কৃষ্ণপ্রাপ্তি, এজন্য তিনি সত্যসার। এমন বলা যেতে পারে যে কৃষ্ণ ছাড়া যা কিছুই বলা হয় সেটিই মিথ্যা। এমন কি আমি বলতে পারি এটি হল আমার শাড়ী, এটিও মিথ্যে। এটি আমার নয়, এটিও আমার নয়। কারণ আমি হলাম আত্মা । আমি এই দেহ নই । যদি এমনটি বলি এটি আমার ঘর । কিন্তু এটি আমার নয় । এর মানে হল যা কিছুই আমরা বলি সেই সব মিথ্যে। যখন আমি বলি আমি কৃষ্ণের দাস তার মানে এটি সত্য এবং সেটি একমাত্র বিষয় যা আপনি সত্য বলছেন । বাকি সবকিছু আমার ছেলে, আমার কন্যা, আমার বর, আমার সম্পত্তি এই সবকিছু আসলে আপনার নয় । এই সবকিছুই কৃষ্ণের । সত্যসার মানে একজন ভক্ত যিনি সবসময় কৃষ্ণ চিন্তা করেন । যিনি সব সময় কৃষ্ণভাবনাময় । আমার মনে পড়ে এই সুন্দর লীলার কথা যেখানে গুরুমহারাজ সিঙ্গাপুর থেকে পার্থে এসেছেন । যখন তিনি ওখানে পৌঁছালেন তখন ছিল মধ্যরাত প্রায় ১২:৩০ । ভক্তরা তাঁর জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন । বিমানবন্দর থেকে তিনি একজন ভক্তের গৃহে গিয়েছিলেন । বিশ্রাম নেওয়ার জন্য উনাকে যে শতরঞ্জি দেওয়া হয়েছিল তা তেমন সুখকর ছিল না । কারণ গুরুমহারাজের শ্বাসযন্ত্রে কিছু সমস্যা থাকার কারণে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট কোণ করে শুতে হয় । কিন্তু সেই শতরঞ্জিটা তাঁকে নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছিল । তারপর ভক্তরা শতরঞ্জিটা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল । কিন্তু ওই শতরঞ্জিও কোন কাজ করছিল না। দুজন ভক্ত মন্দিরে গিয়েছিলেন অন্য একটি শতরঞ্জি আনার জন্য । যেই ভক্তের গৃহে গুরুমহারাজ ছিলেন সেই ভক্তের অন্য একটি ঘরে আলাদা আরেকটি শতরঞ্জি ছিল। তারা সেটি আনার ব্যবস্থা করেছিলেন গুরুমহারাজের জন্য । ভক্তরা এমনকি সেই শতরঞ্জির ওপর শুয়ে দেখার চেষ্টা করছিল সেটি পিছলে যায় কিনা। এইরকম সব হাঙ্গামা চলছিল। গুরুমহারাজ এই সমস্ত তামাশা দেখছিলেন যে কি হচ্ছে এবং সবশেষে রাত্র ৩:৩০ নাগাদ তারা শতরঞ্জির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হল। তারপর তারা গুরুমহারাজকে হুইলচেয়ার থেকে এনে শোয়ানোর চেষ্টা করছিলেন ওই শতরঞ্জির ওপর। যখন তারা এটি করছিলেন তখন গুরুমহারাজ বললেন যে আমি চৈতন্যচরিতামৃত থেকে শ্রীচৈতন মহাপ্রভুর ीা বলতে চাই। যেটি হল বেড়া লালা, যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু কীর্তন করেছিলেন । গুরুমহারাজের সেবক খুব বিন্নভাবে গুরুমহারাজকে বললেন যে গুরুমহারাজ অনেক রাত হয়েছে। মনে হয় আপনার বিশ্রাম নেওয়া উচিত। গুরুমহারাজ খুব মর্মাহত হলেন এবং বললেন শেষ দুই ঘণ্টা ধরে তোমরা সবাই বেড... বেড... বেড... বেড... এরকম কথা বলে চলেছ। আমি এরকম বেড ভাবনা নিয়ে শুতে চাই না। আমি বেড়া ভাবনা নিয়ে শুতে চাই, চৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবনা নিয়ে শুতে চাই। আমি হলাম সন্ন্যাসী । আমি এই বেড ভাবনা নিয়ে শুতে চাই না, আমি কৃষ্ণভাবনা নিয়ে শুতে চাই। আমি সেই লীলাটি বলবো । তারপর সেই সেবকটি বললেন ঠিক আছে গুরুমহারাজ। তারপর গুরুমহারাজ সেই লীলা বর্ণনা করলেন। বেড থেকে বেড়া তো এইভাবে গুরুমহারাজ সেই লীলা সম্পর্কে বললেন এবং তারপর তিনি বিশ্রাম নিতে গেলেন। সত্যসার, তিনি সবসময় কৃষ্ণ স্মরণ করতে চান, তিনি কৃষ্ণ সম্পর্কে বলতে চান এবং তিনি কৃষ্ণ সম্পর্কে শ্রবণ করতে চান ।
[29/03, 12:20] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , সম । 
 *নির্দোষ* , বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।

বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , *সম* । 
নির্দোষ, বদান্য, মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।
----------------------------------------------
৪র্থ  গুন------------------
--------------------------------------------         


 
     ❤️❤️❤️ “সম" 🌻🌻🌻


"সম" মানে হল সমান । তিনি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন । এই সুন্দর লীলাটি বলেছেন ভদ্রচারু প্রভু। একবার তিনি একজন সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী পণ্ডিতকে এনেছিলেন যিনি গুরুমহারাজের গুণমহিমার উপর খুব সুন্দর ৮টি সংস্কৃত শ্লোক রচনা করেছিলেন । তিনি নিচে বসেছিলেন এবং সেই শ্লোকগুলি পাঠ করছিলেন । গুরুমহারাজকে শুনছিলেন, কিন্তু তিনি এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছিলেন, জল পান করছিলেন, টিস্যু পেপার নিচ্ছিলেন এবং সেই ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করছিলেন যে আমি কত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি এবং আমি তাঁর জন্য কত সুন্দর শ্লোক রচনা করেছি । আমি আশা করছি তিনি আমার কথা শুনছেন । কারণ তিনি এদিকে ওদিকে তাঁকাচ্ছেন । অন্য অনেক উনার কান কাজ নিয়ে তিনি ব্যস্ত। কিন্তু আমরা সকলে জানি যে, গুরুমহারাজ যেখানেই তাঁকিয়ে থাকুন না কেন, অত্যন্ত তীক্ষ্ণ । তিনি কান দিয়ে প্রত্যেকটি শব্দ শুনছেন । সেই ব্যক্তি সেটা জানতেন না । তিনি শুধু একজন পণ্ডিত ছিলেন এবং সেই শ্লোকগুলি বর্ণনা করার পর গুরুমহারাজ তার দিকে তাঁকিয়ে বললেন, হয়ে গেছে? এই ব্যক্তি বললেন, “হ্যাঁ হয়ে গেছে ।” সেই ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করছিলেন- কে জানে তিনি আদৌ শুনেছেন কিনা। তারপর গুরুমহারাজ বললেন যে, আচ্ছা পঞ্চম শ্লোকটিতে একটি ভুল আছে । এটা শুনে সেই ব্যক্তিটি অত্যন্ত অবাক হলেন কারণ তিনি এতক্ষণ চিন্তা করছিলেন যে তিনি আদৌ সেটি শুনেছেন কি শোনেননি । এখন গুরুমহারাজ বলছেন যে পঞ্চম শ্লোকটিতে একটি ভুল আছে। তিনি বললেন কি ভুল আছে? গুরুমহারাজ বললেন যে, পঞ্চম শ্লোকটিতে আপনি যখন আমার গুণকীর্তন করেছেন তখন আপনি বলেছেন যে- আমি আমার শিষ্যদের সমস্ত পাপ কর্মের ভার গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এটা ভুল । আপনার এটি পরিবর্তন করা উচিত। আমি পুরো বিশ্বের সমস্ত পাপ কর্মের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে রাজি আছি। শুধু আমার শিষ্যদের নয় । এই কথাটির পরিবর্তন করুন । এই কথা শুনে সেই ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি এটি পরিবর্তন করে দেবো। সুতরাং সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন । আমরা এরকমটা ভাবতে পারি যে গুরুমহারাজ আমাদের ভালবাসেন কারণ আমরা তাঁর শিষ্য। আসলে তিনি সকলকে ভালোবাসেন । তিনি সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসেন। তাঁর শিষ্য হোক বা না হোক তিনি সকল জীবকে সমানভাবে ভালোবাসেন। একটি বিশেষ ব্যাপার গুরুমহারাজকে নিয়ে কখনো কখনো আমরা সন্দেহ প্রকাশ করি তিনি আমাকে শুনেছেন কিনা । তিনি আমার দিকে তাঁকিয়ে আছেন কিনা । কোনো কোনো সময় ১০-১৫ জন একই ঘরের মধ্যে থাকলে যা হয় । আমার মনে পড়ে, যখন গুরুমহারাজ বিশাখাপত্তনমে এসেছিলেন, আমি ভীষণ উৎসাহিত ছিলাম উনাকে আমার স্কুল দেখানোর জন্য । তো আমার স্কুলে নিচের এক তলা বাদে তিনটে উপরের তলা, তার মধ্যে উচ্চ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ নিচের তলায় ছিল । হুইল চেয়ারের জন্য তিনি উপরে উঠতে পারবেন না । তাই তিনি বিদ্যালয় ভবনের প্রথম তলাতে ছিলেন । আমি তাঁকে প্রাইমারি শ্রেণিটি দেখাচ্ছিলাম- যেমন লোয়ার কিণ্ডার গার্ডেন, আপার কে.জি, নার্সারি। নার্সারি শ্রেণিটি ভীষণই সুন্দর, আপেল ঝুলানো, গ্রহ এবং বিভিন্ন তরি তরকারি । আমি গুরুমহারাজকে খুশি করার চেষ্টা করছিলাম । আমি অত্যন্ত উৎসাহীভাবে তাঁকে আমার স্কুলের কাজকর্ম সব বলছিলাম । আমি বললাম গুরুমহারাজ আমাদের স্কুলে শুধু বই দেখে পড়ানো হয় না, আমরা হাতে কলমে শেখাই, হাতে ধরে শেখাই । আমরা যখন এ ফর অ্যাপেল পড়াই তখন আমরা আপেল তুলে আনি, সেটাকে কাটি, বাচ্চাদেরকে আপেল খাওয়াই, আপেল কি জিনিস সেটা অনুভব করাই। এইরকম আমরা যদি বলি বি ফর বল, তখন আমরা বাচ্চাদেরকে বল হাতে ধরিয়ে দিই, গুরুমহারাজ এদিক ওদিক দেখছিলেন এবং আমিও এরকম বলেই যাচ্ছিলাম । আমি যখন থেমে গেছি আর যখন উনারা হুইল চেয়ার ঘুরিয়ে গুরুমহারাজকে নার্সারি কক্ষ থেকে নিয়ে আসছিলেন তখন গুরুমহারাজ সঙ্গে সঙ্গে আমার স্কুলে দিকে তাঁকালেন এবং বললেন তুমি যখন তাদের এল সম্পর্কে শেখাও তখন তুমি কি করো? এল ফর লায়ন, তুমি কি সিংহ নিয়ে আসো? আমি তো পুরো হতভম্ব! এবং বিশ্বাস করুন, আমি পি. এইচ. ডি. পাস হওয়া সত্ত্বেও সেই মুহুর্তে আমি সম্পূর্ণ ভুলে গেছি এল ফর কি । আমি তাঁকে উত্তর পর্যন্ত দিতে পারিনি যে এল ফর ল্যাম্প বা অন্য কিছু তবে আমি তাঁকে কিছুই বলতে পারিনি । গুরুমহারাজ হাসছিলেন এটা বলে যে তুমি সিংহ ধরে আনো এল ফর লায়ন বোঝানোর জন্য । সুতরাং এটাই হল গুরুমহারাজ । যখন আমরা ভাবি যে তিনি শুনছেন নাকি, কিন্তু উনি সব শুনছেন । উনি শুধু আমরা যা বলি সেটা শোনেন না আমাদের না বলা কথাগুলোও উনি শোনেন। আমাদের হৃদয়ে কি আছে সেটাও উনি শুনতে পারেন ।

আমার একটি উপলব্ধি। লকডাউন সময়ে আমার গলায় ইনফেকশন হয়েছিল । হয়ত অনেক কাঁশি দেয়ার জন্য, বিশ্রাম না পাওয়ায় কারণে । আমি সেরকম ব্যক্তি নই যে গুরুমহারাজকে সব কিছু লিখবো । আমি সাধারণত যদি পরিচালনা সম্পর্কিত কোন কথা থাকে বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে তবেই আমি গুরুমহারাজকে চিঠি লিখি । অন্যথায় আমি উনাকে বিব্রত করতে চাইনা। আমি জানি যে, প্রতিদিন উনি কত ই-মেইল পেয়ে থাকেন। উনার কাছে আমার কিছু লেখার দরকার ছিল, যা ছিল পরিচালনা সম্পর্কিত । সেই চিঠিতে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে গুরুমহারাজ আমার গলাতে কিছু সমস্যা হয়েছে। আমি জানিনা কেন আমার মনে হয়েছে। তাই আমি এই কথাগুলো উনাকে বলেছিলাম । বিশ্বাস করুন আমি শুধু গুরুমহারাজকে এই কথাগুলো বলেছিলাম এবং তারপরের দিনই আমার এই সমস্যাটি চলে গিয়েছিল । এটিই হচ্ছে গুরু পরম্পরার শক্তি। কিন্তু আমি জানিনা তিনি চিঠিটি পড়েছেন কি পড়েন নি। তবে সেই দিনের পর থেকে আমার গলায় যে তীব্র যন্ত্রণা ছিল সেটি কমে যায়। গলার সেই সমস্যাটি এখনো আছে। কিন্তু এটি এত তীব্র নয়। যেই মুহুর্তে আমি তাকে ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলাম তারপরে কিছু ঘণ্টার মধ্যেই আমার এই সমস্যাটি চলে গেছে । অবশ্যই দুই-তিনদিন পর উনি আমাকে ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন এবং শুধু তিনি উত্তর দেননি তিনি আমাকে একটা অ্যামাজন লিংকও পাঠিয়েছিলেন একটা নির্দিষ্ট লজেন্স কেনার জন্য যেটা গলার জন্য ভালো । আমি এখনো ওটা খাই এবং আমি ওটা খাওয়ার পর অনেক ভালো অনুভব করছি । সুতরাং উনি সবকিছুর খেয়াল রাখেন । আপনার শারীরিক, মানসিক এবং সমস্ত সমস্যার সমাধান আছে উনার কাছে।

----------------------------------------------
৫ম  গুন------------------
--------------------------------------------          
     ❤️❤️❤️ “নির্দোষ" 🌻🌻🌻

নির্দোষ মানে হল দোষহীন । গুরুমহারাজ হলেন দোষহীন । তিনি শুধু দোষহীন তাই নয়, এমনকি তিনি অন্য কারো মধ্যেও দোষ দর্শন করেন না। এটি তাঁর সৌন্দর্য। যারা ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত তারা কখনোই অন্যের দোষ দর্শন করেন না । এটাই হল নির্দোষ । আমরা যেমন দেখি যে গুরুমহারাজ এই সব শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন অবশ্যই এটি আমাদের কারণে । আমরা নীতি এবং নিয়মগুলি সঠিকভাবে পালন করছি না এবং সেই কারণে উনাকে আমাদের কর্মফল গ্রহণ করতে হয়। তিনি যখন তাঁর চিকিৎসার জন্য চেন্নাইতে ছিলেন, অনেকবার আমরা তাঁকে বলতে শুনেছি যে আমার কোন কোন শিষ্যেরা চারটি নিয়ম ঠিকঠাক পালন করছে না এবং তার কারণে আমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। গুরুমহারাজের শিষ্য হিসেবে আমরা একটি কাজ করতে পারি, যদি আমরা তাঁর জন্য কোন সেবা না করে থাকি তাহলেও কমপক্ষে যদি আমরা ভালোভাবে জপ সম্পূর্ণ করি, সমস্ত নিয়মকানুন পালন করতে পারি যেগুলি দীক্ষার সময় অগ্নিযজ্ঞের সামনে আমরা প্রতিজ্ঞা নিয়ে থাকি । দেখবেন ভগবানের শুদ্ধভক্তরা তারা সকলের কর্মফল নিজের ওপর গ্রহণ করেন এমনকি তাদের দৃষ্টিপাতের মাধ্যমেও। যখন আপনি তাঁদের কাছে আপনার সমস্যার কথা উল্লেখ করেন সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা এটিকে নিজের কাছে গ্রহণ করেন ।
[29/03, 12:20] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , সম । 
 নির্দোষ , বদান্য , *মৃদু* , শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।
----------------------------------------------
৭ম  গুন------------------
--------------------------------------------          
     ❤️❤️❤️ “মৃদু" 🌻🌻🌻


মৃদু মানে হল কোমল। হ্যাঁ গুরুমহারাজ হলেন কোমল। হ্য হয়তো আগের দিনে তিনি লম্বা-চওড়া ছিলেন ও এক লম্ব দণ্ডধারী। হয়তো আপনি ভয় পেতে পারেন। কিন্তু উনার হৃদ এত কোমল যেমন একটি পদ্মফুল। আমার মনে পড়ে তার সেই লীলাটি যা হায়দ্রাবাদে ঘটেছিল । হায়দ্রাবাদে দাতারা একটি জমি দান করেছিলেন। এটা মনে হয় ৫০০ একর বা এরকম কিছু ছিল প্রভুপাদের সময় । তারপর যখন প্রভুপাদ আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান সেই দানকারীর ছেলেমেয়েরা সেই জমি ফেরত পেতে চাইছিল । দাতারা কোর্টে এইটা নিয়ে একটি মামলা হাজির করেছিল । তো এরকমভাবে যখন মামলাটি চলছে। সেই দানকারীরা ভক্তদেরকে অনেকভাবে কষ্ট দিচ্ছিলেন । সেই ব্যক্তিরা ভক্তদেরকে গুন্ডা দিয়ে হুমকি দিচ্ছিল । ওই গুন্ডার অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছিল, ভক্তদেরকে মারধর করছিল গুরুমহারাজ যখন হায়দ্রাবাদে আসেন, ভক্তরা গুরুমহারাজকে বলেছিলেন যে মহারাজ দেখুন কিভাবে আমাদেরকে মারধর করা হয় । যখন আমরা গরু চড়ানোর জন্য নিতে যাই, তখন তার আমাদেরকে ধাক্কা দেয়। তারপর যখন তারা পুলিশকে সমস্ত কিছু নালিশ করে পুলিশও তাদের কথা শুনতে রাজি নন । ওরা পুলিশকে ঘুষ দিয়েছে, এখন আমরা জানিনা আমাদের কি করা উচিত । ও দেখুন এই ভক্ত সে চোট পেয়েছে । যখন তারা এরকম বলছিলেন গুরুমহারাজ তখন প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন রাগে তাঁর গালগুলো লাল হয়ে গিয়েছিল । তাঁর চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল । তিনি বললেন কে এই পুলিশ অফিসার? তারপর তারা সেই পুলিশ অফিসারের সম্পর্কে উনাকে জানালেন । তখন গুরুমহারাজ বললেন এক্ষুনি চলো । আমি এক্ষুনি সেই পুলিশ- অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে চাই। সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা বলছিলেন যে ঠিক আছে গুরুমহারাজ আমরা পরেও কথা বলতে পারি। কিন্তু গুরুমহারাজ কারোর কথা শুনলেন না। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেন, গাড়ীর কাছে গেলেন, গাড়ীর দরজা খুলে বসে পড়লেন এবং গাড়ীর দরজা বন্ধ করে দিলেন। এর মানে হল তোমরা এখনই চলো কোন কথার প্রয়োজন নেই । তৎক্ষণাৎ ভক্তরাও সেই গাড়ীতে বসে পড়লেন এবং তাদের হৃদয়ে অনেক জোরে জোরে স্পন্দন হচ্ছিল। তারা ভাবছিল আজকে কিছু একটা হবেই । ক জানিনা গুরুমহারাজ কি করতে চলেছেন। তিনি এত রেগে আছেন। ভক্তদের হৃৎপিণ্ড মোটামুটি তাদের হাতে চলে এসেছে। তিনি দরজা খুলে সেই পুলিশ স্টেশনের মধ্যে ২ গেলেন । আপনারা জানেন যে ভারতে পুলিশদের নাম তাদের ই দরজার উপরে থাকে । গুরুমহারাজ পুলিশ অফিসারের নামটি দেখেছিলেন । তিনি দরজাটা খুলেই সোজা ভিতরে প্রবেশ করেছেন পুলিশ অফিসারের ঘরে । لها

পুলিশ অফিসার গুরুমহারাজকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছিল যে, এত বিশাল দেহধারী, এত বড় একটা দণ্ডধারী মানুষ হঠাৎ ভিতরে ঢুকে পড়েছে । তিনি ভেবে উঠতে পারছিলেন না এটা কি হচ্ছে এবং ভক্তরাও সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন । গুরুমহারাজ একদম তার কাছাকাছি গেলেন এবং ভক্তরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন। তারা ভাবছিলেন হয়তো গুরুমহারাজ তাকে আঘাত করবেন বা এমন কিছু । তারপর তারা চোখ খুলে দেখেন গুরুমহারাজ সেখানে নেই এবং তারা ভাবলেন যে, তিনি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন? তারপর তারা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন গুরুমহারাজ সেই পুলিশ অফিসারকে সাক্ষাৎ দণ্ডবৎ প্রণাম জানাচ্ছেন। সেই পুলিশ অফিসার বলছিলেন স্বামীজী আপনি কি করছেন? স্বামীজী দয়া করে উঠে পড়ুন । তারপর গুরুমহারাজ উঠেপড়লেন এবং ওনার হাত জোড় করে তিনি বললেন আপনি কেন এরকমটা করছেন? আমরা সাধারণ ভক্তগণ, আমরা জানিনা কিভাবে লড়াই করতে হয় এবং এই মামলাটি কোর্টে চলছে। আপনি কি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না, আমরা বলছিনা যে আপনি আমাদেরকে সমর্থন করুন, কমপক্ষে তাদেরকে সমর্থন করবেন না। আপনি নিরপেক্ষ থাকুন । তিনি হাতজোড় করে এইরকমভাবে বলছিলেন এবং পুলিশ অফিসারটি বলছিলেন ঠিক আছে আপনি কি এখানে বসতে পারেন। কৃপা করে এখানে বসুন। আমাকে এরকমভাবে বিব্রত করবেন না। কৃপা করে এখানে বসুন স্বামীজি। আমর এই সম্পর্কে কথা বলব । তারপর গুরুমহারাজ উঠে দাড়ালেন সুতরাং তিনি হচ্ছেন মৃদু । সেরকম পরিস্থিতিতে সবাই ভেবেছিল যে তিনি হয়তো সেই পুলিশ অফিসারকে মারবেন । কিন্তু তিনি কেবলমাত্র তাকে তাঁর প্রণাম জানিয়ে ছিলেন এবং বিনীতভাবে কথাগুলো বলেছিলেন। তাঁর হৃদয় ভীষণই কোমল । আপনি জানেন তিনি হয়তো তার ক্রোধ প্রকাশ করবেন কিন্তু সেটি শু কৃষ্ণের সেবার জন্য । কারণ তিনি কৃষ্ণের সেবা করতে চান যখন ভক্তরা কষ্ট ভোগ করেন তিনি কখনোই সহ্য করতে পারেন না। তাঁর হৃদয় খুবই কোমল, ঠিক পদ্মের মতো। যেমন নারকেল বাইরের দিক থেকে শক্ত কিন্তু ভেতরে কত নরম ।
[29/03, 12:20] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , সম । 
 নির্দোষ , *বদান্য* , মৃদু, শুচি, অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
সর্বোপকারক, শান্ত, কৃষ্ণৈকশরণ । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।
----------------------------------------------
৬ষ্ঠ  গুন------------------
--------------------------------------------       



   
     ❤️❤️❤️ “বদান্য" 🌻🌻🌻


বদান্য মানে হল উদার। হ্যাঁ গুরুমহারাজ হলেন উদার। শুধু আধ্যাত্মিক জীবনে নয় এমনকি আমাদের জড়জাগতিক জীবনেও তিনি সমস্ত দিক দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে চান । তিনি সকলকে রক্ষা করতে চান। শুধু তার নিজের শিষ্যদের প্রতি নয়, তার সকলের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে। আমি শুনছিলাম যে তার একজন শিষ্য বলছিলেন যে কিভাবে একসময় গুরুমহারাজ কোন এক স্থানে যাচ্ছিলেন এবং তার সামনে একটি গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটে। সাধারণত ভারতে যখন জামরা এরকম দুর্ঘটনা দেখি তখন আমরা এর থেকে দূরে সরে যাই । আমরা চাই না আমাদের নিজেদেরকে ঝামেলায় ফেলতে কিন্তু গুরুমহারাজ সেখানে থামলেন এবং তাদের জন্য হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করলেন। কারণ কি? তারা এই দেহ ছেড়ে খাচ্ছিল। সেই কারণে তিনি তাদের জন্য হরেকৃষ্ণ কীর্তন করলেন এবং অন্যদেরকে ফোন করছিলেন। যতক্ষণ না গাড়ীতে করে তাদেরকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হল, তিনি সেখানে একাই সব কিছু করছিলেন। এই জগতে কে এমন করবে? এটাই হচ্ছেন গুরুমহারাজ, তিনি উদার । আমার মনে পড়ে একজন ভক্ত বলছিলেন যে কিভাবে তিনি গঙ্গায় ডুবে যাচ্ছিলেন। গুরুমহারাজ তাকে ডুবে যেতে দেখেছিলেন এবং আমরা সবাই জানি যে গুরুমহারাজ একজন ভালো সাঁতারু । তারপর তিনি জলের গভীরে গেলেন এবং কোনোভাবে সেই ভক্তকে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন, শুধু তাই নয় সেই ভক্ত এটাও বলেছিলেন যে গুরুমহারাজ তাকে বাঁচানোর পর, তাকে পাড়ে নিয়ে আসার পর গুরুমহারাজ শুধু তার দিকেই তাঁকাচ্ছিলেন । সেই ঘটনার পর গুরুমহারাজ দুই ঘণ্টা ধরে গঙ্গায় ক্রীড়া করছিলেন কিন্তু তাঁর চোখের দৃষ্টি শুধু সেই ভক্তের দিকেই ছিল । 
শুরুমহারাজ আশা করছিলেন যে সে আবার গঙ্গায় যেন আসে। সবশেষে উনারা যখন ফিরে আসছিলেন তপন গুরুমহারাজ জিজ্ঞাসা করছিলেন সেই ভক্ত কোথায়? কোথায় সেই ছেলেটি যে ডুবে যাচ্ছিল। কোথায় সে? সে এখন সুরক্ষিত তো৷ অবশ্য সেই ভক্ত ব্যাসপূজা শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বলেছিলেন সে গুরুমহারাজ আপনি যেমন আমার এই দেহকে রক্ষা করেছিলেন। কৃপা করে আমার আত্মাকেও রক্ষা করুন। যেরকম আপান থেকে আমাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন সেরকমই কৃপা করে আমাকে এই ভব সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আমি আপনাকে ধরে থাকতে চাই। এইভাবেই গুরুমহারাজ হলেন। উদার । আমি বলতে চাইছি কে এইভাবে তার নিজের জীবনকে সংকটে ফেলবে? সেই ভক্ত সে অনেক গভীর জলে ছিল গুরুমহারাজ সেখানে গেলেন এবং তাকে কোনভাবে বাঁচিয়ে নিলেন । শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ বলছিলেন যে মায়াপুরে যেকোন ধরণের সংকট হলে, গুরুমহারাজ ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁর দণ্ড নিতেন । তিনি সেখানে ছিলেন এবং অন্যান্য সবাই তার পেছনে লুকিয়ে পড়তেন । সকলেই অনেক সুরক্ষিত অনুভব করত যখন জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ সেখানে থাকতেন। তিনি সবার প্রথমে থাকতেন সবাইকে রক্ষা করার জন্য । তার হৃদয়টি এরকমই । আপনারা জানেন যে তিনি সব সময় সবাইকে রক্ষা করতে চান । সুতরাং তিনি উদার ।
[31/03, 06:44] Mukunda Bhakti: বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , সম । 
 নির্দোষ , বদান্য , মৃদু , শুচি , অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
 সর্বোপকারক , শান্ত , *কৃষ্ণৈকশরণ* । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।
----------------------------------------------
১২তম  গুন------------------
------------------------         
   ❤️❤️❤️ “ *কৃষ্ণৈকশরণ*" 🌻🌻🌻


বৈষ্ণবের ২৬ গুণ

কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যসার , সম । 
 নির্দোষ , বদান্য , মৃদু , শুচি , অকিঞ্চন ॥৭৮॥ 
 সর্বোপকারক , শান্ত , *কৃষ্ণৈকশরণ* । 
অকাম, অনীহ, স্থির, বিজিত-ষড়গুণ ॥৭৯॥
মিতভুক্, অপ্রমত্ত, মানদ, অমানী । 
গম্ভীর, করুণ, মৈত্র,কবি, দক্ষ, মৌনী॥৮০॥  

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত-মধ্য ২২/৭৮-৮০) 
এই হচ্ছে বৈষ্ণবের ২৬ টি গুণ ।
 শ্রীল জয়পতাকা স্বামী  গুরুমহারাজের এক একটি গুন আপনাদের জন্য দেওয়া হবে ধারাবাহিক ভাবে, যা 
শ্রীমতি ড. নিতাই সেবিনী  মাতাজী আলোচনা করছেন।
----------------------------------------------
১২তম  গুন------------------
------------------------         
   ❤️❤️❤️ “ *কৃষ্ণৈকশরণ*" 🌻🌻🌻


কৃষ্ণের প্রতি নিজেকে সমর্পণ। কৃষ্ণৈকশরণ মানে প্রত্যেকটি পরিস্থিতিতে একজন শুদ্ধ ভক্ত সব সময় কৃষ্ণের আশ্রয় নেন । কৃষ্ণ ছাড়া তার আর কোন আশ্রয় নেই। তিনি জড়জাগতিক ধন-সম্পদের আশ্রয় নেন না বা জাগতিক যা কিছুই তার রয়েছে। সেইসব কোন কিছুর আশ্রয় তিনি গ্রহণ করেন না। তিনি শুধু কৃষ্ণের ওপর নির্ভরশীল । এটি হচ্ছে একটি গুণ কৃষ্ণৈকশরণ । আমরা আরেকটি ভাবেও ব্যাপারটিকে নিতে পারি যে, যিনি সবসময় অন্যদেরকে কৃষ্ণৈকশরণ করে তোলেন। তাদেরকে কৃষ্ণের কথা স্মরণ করানোর মাধ্যমে। তিনি সবসময় কৃষ্ণ

চিন্তন করেন এবং কৃষ্ণভাবনায় মগ্ন । আমার মনে পড়ে একটা সুন্দর লীলার কথা শ্রীল রাধানাথ স্বামী মহারাজের সেবক এটি প্রকাশ করেছিলেন। এই ভক্তটি আমেরিকার একজন ডাক্তার এবং তিনি স্নায়ু চিকিৎসক । তিনি আমাদের গুরুমহারাজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। গুরুমহারাজ উনাকে বলছিলেন যে, তুমি হচ্ছ একজন স্নায়ু চিকিৎসক- তুমি কত রোগীদেরকে পাও চিকিৎসা করার জন্য । তবে কেন তুমি তাদের সবাইকে ভগবানের নাম নিতে উৎসাহিত করো না? তিনি তখন বললেন যে আমি এটা কিভাবে করতে পারি? তারা আমার রোগী । তখন গুরুমহারাজ বললেন হ্যাঁ সেই কারণেই তুমি এটা করতে পার। কারণ তুমি একজন ডাক্তার । সেই ডাক্তার ভক্ত বললেন যে গুরুমহারাজ আমি আমার কাজের এইরকম সুযোগ গ্রহণ করতে পারি না । এটা আমার কাজ এবং তারা আসে আমার কাছে । তখন গুরুমহারাজ বললেন না আমি তোমাকে বলছি যে কি করতে হবে । দেখ তুমি একজন স্নায়ু চিকিৎসক তাইতো? তিনি বললেন হ্যাঁ । তখন উনি বললেন যে, তুমি কি কাজ করো? তখন ডাক্তার বললেনযে আমি তাদেরকে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি । তখন গুরুমহারাজ বললেন, আমি উপায় বলছি । সুতরাং তোমাকে পরীক্ষা করতে হয় তাই তো যে একটা পেশীগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা? তিনি বললেন হ্যাঁ । তারপর গুরুমহারাজ তাকে একটি উপায় বললেন যে যখনই তুমি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সেই পরীক্ষার সময় তাদেরকে এরকম করতে হবে যে ডাক্তার বলবে আপনাদের হাত উপরে তুলুন, আপনাদের হাত নিচে নামান, আপনাদের হাত এইরকম করুন, ঐরকম করুন এইরকমভাবে শুধু পরীক্ষা করুন যে পেশীগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা । তারপর গুরুমহারাজ বলেছেন এরপরে যখন তুমি এরকম পরীক্ষা করবে তুমি তাদেরকে বলবে যে তুমি হাত দিয়ে হাটু দেখাও। এটা হল তোমার নি তাইতো? আমেরিকায় যারা চাকরি করেন বা যারা ব্যবসা করেন তারা সবসময় টাই পরেন । তো উনি বললেন যে তুমি তাদেরকে বলবে যে আপনারা হাত দিয়ে নি দেখান এবং টাই দেখান এইভাবে বারংবার করতে করতে এটি হবে নিতাই...নিতাই...নিতাই...তারপর ডাক্তারটি বললেন কি দারুন! দেখ হয়ে গেল, এইভাবে তারা নিতাই এর নাম নিচ্ছে । ডাক্তার বললেন মাতাজিদের ক্ষেত্রে কি করব? এবং উনি বললেন যে মাতাজিদের ক্ষেত্রে তুমি তাদেরকে বলবে ধরে নিতে যে তারা টাই পরিধান করে আছেন । এটি একটি স্নায়ু পরীক্ষা যা আমি করছি । তো নিতাই.... নিতাই....। তারপর তিনি বললেন বাহ খুব ভালো! তারপর গুরুমহারাজ বললেন এখানে কি? তিনি বললেন হৃদয়। সুতরাং এই হৃদয় কার? তিনি বললেন আমার হৃদয় । তুমি তাদেরকে বলবে যে আপনাদেরকে দুটো কাজ করতে হবে একটি হল নিতাই এবং আরেকটি হল নিমাই । নিমাই... ১. ব্যস। এটা হল আমার হৃদয়। সরলভাবে তুমি নিমাই .... তাদেরকে বলবে নিতাই, নিমাই । তুমি তাদেরকে বলবে এটা একের পর এক ভাবে করে যেতে যাতে আমি আপনাদের পেশীর কাজ করার ক্ষমতাটা বুঝতে পারি । কিরকমভাবে সেগুলি কাজ করছে। তো নিতাই নিমাই নিতাই নিমাই । তারপর তিনি বললেন বাহ খুব ভালো! তারপর গুরুমহারাজ বললেন এর মাঝে মাঝে তুমি তাদেরকে বলতে পার হরি হরি হরি হরি । এর মানে হল হারি আপ, আপনাদেরকে পরীক্ষাটি তাড়াতাড়ি করতে হবে । তুমি বলবে হরি হরি নিতাই নিমাই হরি হরি । নিতাই নিমাই আর হরি হরি এবং তিনি বললেন কি দারুন! তো এরকম নৃসিংহ পুরাণে বর্ণনা করা আছে যে, যদি কেউ হাতে তালি দিতে দিতে হরি হরি বলেন তাহলে যা কিছু কুকর্ম আগের জন্মে করা হয়েছে সেসব কর্মফল চলে যায় । এবার চিন্তা করুন যে সেই ডাক্তার তার কাছে যে সমস্ত রোগীরা আসবে তারা সবসময় নিতাই নিমাই এবং হরি হরি বলবে। এটাই হল গুরুমহারাজ । তিনি জানেন যে কি করতে হবে, কিভাবে কৃষ্ণকে সবার জীবনে আনতে হবে, ২৪ ঘণ্টা ধরে তার মাথায় কেবল এই চিন্তা ঘুরে বেড়ায়, কিভাবে আমি সবাইকে কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করব, কিভাবে আমি তাদেরকে কৃষ্ণের নাম উচ্চারণ করতে উৎসাহিত করব ।

Post a Comment

0 Comments