আমরা সাধারণত দেখতে পাই যে আমার প্রশংসা করলে আমরা গলে যায়, আমাদের আরও শুনতে ইচ্ছে করে। আর কেউ যদি এসে বলে শিষ্যত্ব বরন করতে চাইছি, তাহলে তো আর কথায় নাই। খুব আনন্দ হয়। ৫/১০ জন শিষ্য হলে যথেষ্ট। আর গুরু মহারাজের সামনে হাজার হাজার ভক্ত দীক্ষা গ্রহণ করছে। আমাদের অনেক সময় চারিদিকে লোক দেখে মন ভরে যায়। কিন্তু গুরু মহারাজ যখন আসেন,তখন তিনি দীক্ষা অনুষ্ঠানে শিষ্য কে দেখেন তার ভিতর টা, সে কি ভাবছেন, তার জন্য প্রার্থনা করেন,মালা দেন,নাম টাও শুনেন তারপর তার জন্য ১ মালা হরে কৃষ্ণ জপ করেন।এভাবে তিনি সর্বদা কৃষ্ণ ভাবনামৃত থাকেন।

আপনারা হয়তো অনেকে জানেন তিনি যখন কোন অনুষ্ঠানে বা মিটিং এ থাকেন তখন উনাকে সাইক্লিং করানো হয়।আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এটি একটি ব্যায়াম। কিন্তু ১ জন থাকেন যিনি সাইক্লিং করেন আত অন্য জন হরে কৃষ্ণ জপ কাউন্ট করেন।

যখন তিনি কাউকে জগন্নাথের টুথব্রাশ দিয়ে আশীর্বাদ করেন, প্রতি বার তিনি জপ করেন।প্রতিদিন সকাল ৫:৩০ টায় গুরু মহারাজ কে ফিজিওথেরাপি দেয়া হাত ও পায়ের।প্রতিবার যখন তিনি হাতল টানেন আর হরে কৃষ্ণ জপ করেন। যখন প্রসাদ বানানো হয়,প্রতি চামচে উনি ১ বার জপ করেন। এমনকি তিনি যখন বিছানায় শুয়ে থাকেন উনার হাতে কাউণ্টার থাকে। 

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, কিবা শয়নে,কিবা ভোজনে,কিবা জাগরণে,আর নিশ্চিন্তে কর কৃষ্ণ ভজনে।গুরু মহারাজ তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এবং চিন্তা ও করছেন। 

এখন আমরা কিভাবেই শিষ্য হিসেবে পরিচিত করব?গুরুদেব যা করছেন আমি তার বিপরীতে করছি।সারাদিন ১ বার ও কৃষ্ণ নাম করি না। গুরু মহারাজ সব জানেন।তিনি নিত্য সিদ্ধ পুরুষ। এটি শ্রীল প্রভুপাদ বলে গেছেন। শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি লীলা করে যাচ্ছেন। 

একবার অডিও ক্লিপে প্রভুপাদ প্রবচনে শুনা যায়, 

১২ ই অক্টোবর, ১৯৭৭ বৃন্দাবন,কক্ষ প্রবচন, যেখানে প্রভুপাদের ভগ্নি ভবতারিণী দেবী,ভক্তি চারু স্বামী গুরু মহারাজ, তমাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ, গুরুমহারাজ ছিলেন। গুরু মহারাজ তখন মায়াপুর থেকে বৃন্দাবন গিয়ে পৌছালেন।তমাল কৃষ্ণ মহারাজ বললেন,জয়পতাকা স্বামী এসেছেন। তখন কিছু সমস্যা চলছিল।সব শুনে প্রভুপাদ উদ্বিগ্ন ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এটা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। তার নাম স্বার্থক।আমাদের আর কিছু বলার নাই।প্রভুপাদ নিজেই বলে গেছেন।

২০১৪ সালের ১ দিন সন্ধ্যা বেলা জনানন্দ মহারাজ এলেন কিছু ডকুমেন্টস প্রিন্ট আউট করতে।জিজ্ঞেস করলেন গুরু মহারাজ কোথায়। তখন আমি গুরু মহারাজের সব সময় সূচি জানালাম।শুনে তিনি বললেন, অবিশ্বাস্য। তোমার গুরুদেব অপ্রতিরোধ্য। এমনকি কৃষ্ণ ও তোমার গুরু মহারাজ কে থামাতে পারবেন না। যদি ও কৃষ্ণ সব কিছু করতে পারেন। 

তো গুরু মহারাজ তো শিষ্য গ্রহণ করে চলেছেন। ৫০০০০ শিষ্য গ্রহণ করার কথা ছিল গুরু মহারাজের। আমরা মনে করতে পারি গুরুর আদেশ তো মানা হয়ে গেছে, আর কি দরকার শিষ্য নেওয়ার। ২০২০ সালের পর যাদের দীক্ষা হয়েছে, গুরু মহারাজ যদি প্রভুপাদের নির্দেশ পালন করতেন তবে এরা কেউ আর দীক্ষা পেত না। 

একটা সংক্ষেপ পরিসংখ্যান দীক্ষার।তো আমরা দেখি ১৯৭৮ সালে প্রথম দীক্ষা দেয়া শুরু। (৭৮-৮০) ৩ বছরে ১৮৭ জন।

(৭৮-২৩) আর ২৫ দিন পর ১ম দীক্ষার ৪৫ বছর পূর্ণ হবে।আমরা সাধারণত দেখি,কেউ সাইকেল চালানো শুরু করলে প্রথমে বেশী চালায়,তারপর আস্তে আস্তে। কিন্তু গুরু মহারাজ উল্টো। 

১৯৮১-১৯৮৮ মোট ১৫৯৪ জন দীক্ষা। 

১৯৯১-১৯৯৯ মোট ৩৭১৫ জন

২০০০-২০০৯ মোট ১৪২৩০ জন

২০১০-২০১৯ মোট ৩০৪৪২ জন(২০০৮ সালে স্ট্রোক এর পর)

২০২০-বর্তমান মোট ১৫৬৪৩ জন (করোনাকালীন)

করোনাতে সারা পৃথিবী বন্ধ ছিল।কিন্তু গুরু মহারাজ বন্ধ ছিলেন না। তিনি প্রথম দেখিয়ে দেন,জুমেও দীক্ষা দেয়া যায়।বর্তমানে ৬৫৮১১ জন অফিসিয়ালি দীক্ষিত শিষ্য রয়েছেন গুরু মহারাজের। এছাড়াও রয়েছে আরও অজানা আনঅফিসিয়ালি। স্ট্রোকের আগে ১৯৭৮-২০০৮ এ-ই ৩০ বছরে ১৫৬১২ জন কে দীক্ষা দিয়েছেন। আর ২০০৮-২০২৩ এ-ই ১৫ বছরে দিয়েছেন ৫০১৯৯ জনকে।

আরও ৮১১ জন কাল  দীক্ষা পাবেন। এটাই গুরু মহারাজের অর্জন। এ-ই ৬৫৮১১ জনকে তিনি প্রভুপাদের ছায়াতলে এনেছেন।কিন্তু গুরু মহারাজের জন্য আমরা কি করছি?? উনার সেলিব্রেশন হচ্ছে, যদি উনি সবাইকে ভগবদ্ধামে নিয়ে যেতে পারেন।যেটা প্রভুপাদ বলতেন। প্রভুপাদ বলেছেন, ১ চাঁদ সব অন্ধকার দূর করতে পারে। আমাদের প্রচার হচ্ছে ১ টি চাঁদ পাওয়া। কিন্তু আমি অনেক চাঁদ পেয়েছি।

অনেকে জিজ্ঞেস করেন,গুরু মহারাজ কে কোথায় প্রভুপাদ বলেছিলেন,৫০০০০ শিষ্য নিতে।তো ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ অনুসন্ধান করে জেনেছেন, যখন প্রভুপাদ বলেছিলেন তখন ভবানন্দ প্রভু সেখানে ছিলেন।কিন্তু ভবানন্দ প্রভু দীক্ষা দিচ্ছেন না।তো তিনি বললেন জয়পতাকা স্বামী নিজে ৫০০০০ শিষ্য নিবে আর আমার ৫০০০০ শিষ্য ও তিনি নেবেন।

গুরু মহারাজ চাইলে উনার কোন এক শিষ্যকে মনোনীত করতে পারেন,দীক্ষা প্রদানের জন্য দীক্ষা গুরু হিসেবে। কিন্তু গুরু মহারাজ নিজে দীক্ষা দেওয়া বন্ধ করবেন না।তিনি চালিয়ে যাবেন। বিভিন্ন ক্লাসে গুরু মহারাজ বলেছেন, উনি চান সবাই গুরু হোক।গুরু কৃষ্ণ ভাবনামৃত প্রদান করা।যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ নাম।এমন না যে দীক্ষা গুরু হতে হবে। 

গুরু মহারাজ শিষ্য গ্রহণ করছেন, এটি কিন্তু আনন্দের নয়।ভাবুন,তিনি কর্মফল  গ্রহণ করছেন।এতে বোঝা বাড়ে। ২ রকমের বোঝা র‍য়েছে।

১.মায়ের কোলে আনন্দময় বাচ্চা যা প্রেমের বোঝা 

২.মায়ের কোলে দুষ্ট ছেলের বোঝা 

গুরু মহারাজ সবার জন্য বলেছেন। একটা প্রশ্ন ছিল, কিসে গুরু মহারাজ সব চাইতে বেশি আনন্দ পান।উত্তরে গুরু মহারাজ  বলেছিলেন যখন শিষ্যরা কৃষ্ণ এর প্রতি শুদ্ধ প্রেম জন্মায়। (২০২২,২৭ মার্চ আটলান্টা) 

এবার আমরা তো বুঝি,শুদ্ধ কৃষ্ণ প্রেম গুরু মহারাজ কে বেশি আনন্দ দেয়।প্রত্যেক শিষ্য থেকে তিনি এটাই চান,যাতে সবাই ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারে।আর এ সব কিছুই প্রভুপাদ গ্রন্থে আছে। যা প্রতিদিন পড়তে হবে। আর শুদ্ধ প্রেম জাগরণের শর্টকাট পদ্ধতি হচ্ছে, প্রভুপাদের গ্রন্থাবলি পঠন।

------শ্রীপাদ মণিগোপাল প্রভু

Post a Comment

0 Comments