আজ শ্রী গোবিন্দ ঘোষের তিরোভাব


শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর একজন পার্ষদ ছিলেন গোবিন্দ ঘোষ। শ্রীমন্মহাপ্রভু বৃন্দাবনযাত্রাকালে তাঁর কয়েকজন পার্ষদদের নিয়ে পথে এক গৃহস্থের  আলয়ে মধ্যাহ্নভোজন করেন। ভোজন শেষে তিনি কিছু মুখশুদ্ধি চাইলে গৃহকর্তা হরিতকি দেন। গোবিন্দ ঘোষ সেই হরিতকি টুকরো করে কিছু অংশ মহাপ্রভুকে দেন ও বাকিটা পরের দিন মহাপ্রভুর জন্যে রেখে দেন। পরের দিন মহাপ্রভু মুখশুদ্ধি চাইলে গোবিন্দ আগের দিনের সঞ্চিত হরিতকি দেন। এই সঞ্চয় করা দেখে মহাপ্রভু গোবিন্দকে গৃহী জীবন যাপনের মধ্যে দিয়ে ভগবদভজনের নির্দেশ দেন। 


 ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের ফাল্গুনে বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপে ভক্ত গোবিন্দ ঘোষের কাছে এসে ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু । গোবিন্দ ঘোষ এই অগ্রদ্বীপেই নিজের বসতবাটি স্থাপন করেন। এখানেই শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণের একটি বিগ্রহ নির্মাণ করিয়ে প্রতিষ্ঠা করে তাঁর নাম দেন "গোপীনাথ"। এই গোপীনাথের সেবার দায়িত্ব  গোবিন্দ ঘোষের হাতে দিয়ে তিনি নীলাচলে চলে যান। 


কিছু দিনের মধ্যেই গোবিন্দ ঘোষ গার্হস্থ্যজীবনে পদার্পণ করেন। কিন্তু সন্তানের জন্মকালে তাঁর স্ত্রীর  প্রাণবিয়োগ ঘটে। গোবিন্দ নিজ পুত্রের লালন পালন করতে থাকেন । কিন্তু ভগবদিচ্ছায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অকালে তাঁর সেই পুত্রটিরও মৃত্যু হয়।   ভগবানের উপর অভিমানে গোবিন্দ গোপীনাথের নিত্যসেবা বন্ধ করে দেন ও নিজে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। মহাপ্রভুর সকল পার্ষদই ছিলেন নিত্যসিদ্ধ, গোলকের জন। ভগবান তাঁদের কাছে বাঁধা। এই পরিস্থিতিতে গোপীনাথ স্বয়ং এসে গোবিন্দকে সান্তনা দেন। গোপীনাথ নিজে গোবিন্দকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, তিনি নিজে তাঁর পুত্রের কাজ করবেন ও কোনোদিন পুত্রের অভাব বোধ হতে দেবেন না। গোবিন্দ অভিমানভরে গোপীনাথকে বলেন যে তিনি কোনো দিনও তাঁর পুত্রের অভাব পূরণ করতে পারবেন না। কারণ এই পুত্রই তাঁর মৃত্যুর পর পিতার শ্রাদ্ধ করতো,যেটাতে পুত্র ব্যতীত অন্য কারোর অধিকার নেই ।ভক্তের এই কথা শ্রবণ করে ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু গোপীনাথ বলেন, তিনি গোবিন্দর সেই ইচ্ছাও পূরণ করবেন। গোবিন্দ ঘোষের মৃত্যুর পর সেই থেকে এখনও পর্যন্ত চৈত্র মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে গোপীনাথ শ্রাদ্ধের বসন পরে ভক্তের শ্রাদ্ধ করেন ও পিন্ডদান করেন। সেই লীলাকে স্মরণ রাখতে প্রতিবছরই এই তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় গোবিন্দ ঘোষের পারলৌকিক অনুষ্ঠান বা "চিঁড়া মহোৎসব"। স্বয়ং গোপীনাথ এক মাস ধরে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন এবং শ্রাদ্ধকালীন উত্তরীয় ধারণ করেন। 


ভক্তপ্রবর গোবিন্দ ঘোষের পারলৌকিক ক্রিয়ায় পিণ্ডদানের জন্যই এই আয়োজন। এখনো এই দিন অগ্রদ্বীপের ঘোষ ঠাকুর বা গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধ করেন স্বয়ং গোপীনাথ যিনি স্থানীয় ভাষায় ‘গুপিনাথ’ নামেই পরিচিত। গোপীনাথকে মন্দির থেকে বার করে নিয়ে আসা হয় গোবিন্দ ঘোষের সমাধি মন্দিরে। সেখানে শ্রাদ্ধের সব কাজ সেরে আবার নিয়ে যাওয়া হয় নিজ মন্দিরে। একমাত্র এখানেই ভগবান তাঁর প্রিয় ভক্তের শ্রাদ্ধ করেন। সেই প্রথা আজও অটুট রয়েছে । এই উৎসব  উপলক্ষ্যে প্রতি বছর চৈত্রমাসের কৃষ্ণা একাদশীতে এখানে মেলা বসে।।এই মেলাটিই অগ্রদ্বীপের গোপীনাথের মেলা হয়।

Post a Comment

0 Comments