সবাই কে পড়ার অনুরোধ রইলো 


একটি ছেলে ছিল, মা-বাবা ভালোবেসে তার নাম রেখেছিল কৃষ্ণ। প্রতি বছর গরমের ছুটিতে তার মা-বাবা তাকে তার দাদুর বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যেতেন। দাদু থাকতেন দেশের বাড়ি; অনেকটা দূর, তাই ট্রেনে করে যেতে হত। 


এক বছর গরমের ছুটিতে বেড়ানোর তোড়জোড় চলছে; কৃষ্ণ বলল, বাবা, আমি তো এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি, আর তোমাদের যাবার দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারব। বেশ খানিকক্ষণ আলোচনার পর ঠিক হল, এবার কৃষ্ণ একাই যাবে, তার বাবাকে আর অফিস কামাই করে তাকে পৌঁছে দিতে হবে না।


কৃষ্ণকে জানলার ধারের সিটে বসিয়ে বাবা প্ল্যাটফর্মে নেমে এলেন। কৃষ্ণ বলল, তোমরা চিন্তা কোরো না, আমি ঠিক পৌঁছে যাব। 


ট্রেন যখন ছাড়ব-ছাড়ব করছে, কৃষ্ণর বাবা তার জামার পকেটে একটা কিছু গুঁজে দিলেন। দিয়ে বললেন, যদি রাস্তায় ভয় পাস বাবা, এই জিনিসটা বার করে দেখিস। 


ট্রেন ছেড়ে দিল, কৃষ্ণর জীবনে এই প্রথমবার যে সে একেবারে একা। সঙ্গে মা-বাবা নেই, দরকার পড়লেও তাদের সাহায্য এখন পাওয়া যাবে না। অস্বস্তি কাটাবার জন্য জানলার বাইরে মন দিল সে। পৃথিবীর নানা রঙের টুকরো টুকরো ছবি সেখানে ছিটকে ছিটকে পেরিয়ে যাচ্ছে। কখনও দেখা গেল একলা কৃষক আনমনে পথ হেঁটে চলেছে তার হাল আর বলদ নিয়ে, কখনও দেখা গেল আকাশের বুকে আলপনা এঁকে উড়ে চলেছে একসারি বলাকা, আবার কখনও বা সূর্যকে আড়াল করা মেঘের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে একফালি রোদ।


এইভাবে অপরাহ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এল। ট্রেনের ভেতর লোকজনের হট্টগোল, হকারদের যাওয়া-আসা, চিৎকার-চেঁচামেচি ক্রমশ স্তিমিত হতে লাগল। কৃষ্ণর জানলার আকাশে এখন চাপ চাপ অন্ধকার শুধু। সেই মুহূর্তে নিজেকে খুব একা মনে হতে লাগল কৃষ্ণর। ভাবল, এইভাবে জিদ করে একা না এলেই বোধহয় ভালো হত। মুখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখতে লাগল সে। সবাই কেমন যেন চুপচাপ, উল্টোদিকের যে লোকটা মাঝেমাঝেই তার দিকে তাকাচ্ছে, তার মুখে যেন একরাশ শূন্যতা! ওদিকে কয়েকটা ষন্ডামার্কা লোকজন, কী তাদের মতলব ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এবারে কৃষ্ণ বেশ ভয় পেয়ে গেল, জানলার কোণটায় আরও গুটিয়ে গেল সে। হে ভগবান, এ রাত কতক্ষণে শেষ হবে! গলা শুকিয়ে এল তার, হাত-পা কাঁপতে লাগল, চোখের কোণটা জলে ভরে এল, রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছল বারকয়েক। 


হটাৎ কৃষ্ণর মনে পড়ল, বাবা না জানি কি একটা তার পকেটে গুঁজে দিয়েছিলেন শেষমূহূর্তে! কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাতে পকেট থেকে বার করে নিয়ে এল সেটা। এক টুকরো কাগজ, আর তাতে লেখা, *ভয় পাস না বাবা, আমি তোর পাশের কম্পার্টমেন্টেই আছি।* 


আমাদের জীবনের ট্রেনটিও ঠিক এইভাবেই ছুটে চলেছে। যখন ভগবান আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠান, তিনি আমাদের পকেটে এক টুকরো কাগজ এইভাবেই গুঁজে দিয়েছেন। তাতে লেখা আছে *আমি তোমাদের সঙ্গেই চলেছি, তোমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই আছি, শুধু একবার ডাক দিও, দেখবে তোমাদের পাশেই আমি দাঁড়িয়ে আছি।*


তাহলে আর চিন্তা কী! শুধু বিশ্বাস করো, শুধু একবার প্রাণভরে ডাকো, আর দেখবে, তিনি দু-হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর মুখে একরাশ ভুবনভোলানো হাসি আর এক জোড়া ক্ষমাসুন্দর চোখ! তাহলে আর কীসের ভয়! কীসের দুশ্চিন্তা! কীসের এত ভাবনা!

সংগৃহীত পোস্ট।

🌹🌹🌹

Post a Comment

0 Comments