নবকলেবরও বিগ্রহ সমাধি


#নবকলেবরওবিগ্রহসমাধি✅


জগন্নাথদেবের দইতাপতি সেবকরাই নব

 কলেবর ও ব্রহ্ম পরিবর্তনের দায়িত্ব পালন করেন। নবকলেবর ও ব্রহ্ম পরিবর্তন- পুরীর মন্দিরের দুটো পবিত্রতম কর্ম সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা হয়ে থাকে।


দইতাপতি সেবকরা এই কলিযুগেও দেবী মঙ্গলার স্বপ্নাদেশ পান। এভাবেই জানা যায় বিগ্রহ নির্মাণের উপযুক্ত নিমগাছ কোন কোন জায়গায় পাওয়া যাবে। আর নবকলেবরের সময় ব্রহ্ম পরিবর্তন সাধারণত রাতে হয়। অবশ্য তা তিথি, নক্ষত্র বিচার করেই করা হয়। 


পুরীর মন্দিরের প্রাক্তন এক প্রশাসককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ব্রহ্ম বস্তুটি কি জিনিস। তিনি বলেন, "ব্রহ্ম যে কী জিনিস তা কেউ জানে না। ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজটি একজন দইতাপতি সেবকই করেন, যখন পুরীর মন্দিরে কেউ থাকেনা।"


পুরীর মন্দিরের ৪০কিমি পূর্বে কাকটপুর নামে এক গ্রামে দেবী মঙ্গলার পূজো অর্চনা করেন একদল দইতাপতি সেবক। প্রাচী নদীর তীরে একসময় দেবী মঙ্গলার মন্দির ছিল। বন্যার জন্য ওই মন্দির কিছুটা দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। 


এখন মন্দিরটি মঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেবী মঙ্গলার পুজোর পর দইতাপতি সেবকরা ওই মঠে নৃসিংহ মন্ত্র, স্বপ্নাবতী মন্ত্র বারংবার জপ করেন। এরপর স্বপ্নাদেশ পাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। তারপর চারটি দলে বিভক্ত হয়ে দইতাপতিরা বেরিয়ে পড়েন সেই বৃক্ষগুলির সন্ধানে।


এই বিশেষ নিমগাছগুলো খু্ঁজে পাওয়ার পর সেগুলোর নিচে তিনদিন ধরে ব্রাহ্মণরা যজ্ঞ করবেন। একে বনযজ্ঞ বলে। যজ্ঞে নৃসিংহদেবের নামে আগুনে ঘৃত অর্পণ করা হয়। যথোচিত পূজো অর্চনার পর গাছগুলোকে কেটে কাঠের গাড়িতে চাপিয়ে পুরীর মন্দিরের কোইলি বৈকুণ্ঠে আনা হয়।


এরপর দইতাপতি সেবকদের কড়া নজরদারিতে কোইলি বৈকুণ্ঠের নির্মাণ মণ্ডপে নতুন দারু বিগ্রহের নির্মাণ পর্ব শুরু হয়। যাঁরা (চারজন) বিগ্রহগুলো নির্মাণ করেন তাঁদের বিশ্বকর্মা বলা হয়। এঁরাও দইতাপতি সেবক। বিগ্রহ নির্মাণ শুরুর আগে আরও একবার পূজো হয়। বিগ্রহগুলো নির্মাণের জন্য মোট ১৩ দিন সময় দেওয়া হয়। 


বিগ্রহ নির্মাণ পদ্ধতি অনুযায়ী জগন্নাথদেব,বলভদ্র ও সুভদ্রার শ্রীঅঙ্গগুলোকে চার/পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়-শ্রীমুখ, হিয়া (হৃৎপিন্ড), পরিধাপানা (কোমর) ও শ্রীপায়ার (শ্রীচরণ)।


বিগ্রহগুলোর ব্রহ্ম পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি শ্রীঅঙ্গে একটি ছোট গর্ত থাকে। শুদ্ধ আষাঢ় মাসের অমাবস্যার দিন চোখ বেঁধে ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজ সুসম্পন্ন করেন এক প্রবীন দইতাপতি। শোনা যায়, ব্রহ্ম পরিবর্তন কাজটি করার পর সেই দইতাপতি বেশিদিন বাঁচেন না।


এদিকে কোইলি বৈকুণ্ঠেই প্রায় ৯ হাত গভীর ও ৬ হাত ব্যসার্ধের একটি গর্তে রেশমের বস্ত্র ও তুলোর বালিশে তিন বিগ্রহ ও সুদর্শনকে শুইয়ে সমাধি দেওয়া হয়। আরেকটি কথা, 


কোইলি বৈকুণ্ঠে বিগ্রহগুলোর নির্মাণ শেষ হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে রত্নবেদিতে প্রতিষ্ঠার আগে তাঁদের অবয়বগত আরও কিছু প্রক্রিয়া থাকে।

Post a Comment

0 Comments