ভগবান প্রয়োজনে মাথায় করে জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যান ভক্তের বাড়ি। হ্যাঁ, একথা মিথ্যে নয়,,,,   এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ছিলেন, নাম -অর্জুন মিশ্র। তিনি নিয়মিত পুজো পাঠ, ধ্যান নিয়ে থাকতেন। একদিন ভাগবত পাঠ করতে করতে দেখলেন, তাতে লেখা আছে, ভগবান বলেছেন, যে ভক্ত সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর প্রতি সমর্পিত হয় ,তার জিনিস তিনি নিজে মাথায় করে বয়ে দেন।    এ কথা অর্জুন মিশ্রকে আঘাত করল-ভগবান ভক্তকে তার প্রয়োজন মত জিনিস দেন ঠিক ই, কিন্তু তাঁকে ভক্তের মুটে হতে দেওয়া যায় না কখনোই। এই ভেবে অর্জুন মিশ্র লাল কালি দিয়ে ভাগবতের #বহাম্যহম কেটে দিয়ে #দদাম্যহম লিখে দিলেন।    অন্তর্যামী ভগবান ও  কিন্তু এতে মনে আঘাত পেলেন। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, অর্জুন মিশ্রকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে ভগবান সত্যিই ভক্তের জিনিস মাথায় করে বয়ে দেন। অর্জুন মিশ্র তখন মাধুকরী করতে বেরিয়েছেন। শ্রীভগবানের লীলায় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ হলো। ব্রাহ্মণ এক পাও এগোতে পারলেন না -একটি গাছের তলায় বহু সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে খালি ঝুলি নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরতে লাগলেন। এদিকে ভগবান একটি অষ্টম বর্ষীয় বালকের রূপ ধরে ধামায় করে চাল, ডাল, তরি-তরকারী ইত্যাদি সাজিয়ে ব্রাহ্মণের বাড়ি নিয়ে এলেন।  বালকটি ব্রাহ্মণের স্ত্রী ভারতীদেবীকে কেঁদে কেঁদে  বলল তার মাথা থেকে বোঝাটি নামিয়ে দিতে-তার বড় কষ্ট হচ্ছে ,মিশ্র ঠাকুর বাজার থেকে এসব কিনে তার মাথায় চাপিয়ে দিয়েছেন।    বালকের গায়ে রক্তের দাগ দেখে ভারতীদেবী তার কারণ জানতে চাইলে বালক বলে, মিশ্র ঠাকুর তাকে মেরেছেন। ভারতীদেবী ছেলেটিকে কোলে বসিয়ে নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়ে তার গায়ের দাগ মুছিয়ে দিলেন ও তাকে পাখার বাতাস করতে লাগলেন। বালকের খিদে পেয়েছে শুনে তাকে ফল-মিষ্টি খাইয়ে দিতে লাগলেন। ভারতীদেবী কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, মিশ্র ঠাকুর কেন এই বালকটিকে এমন নিষ্ঠুর ভাবে মেরেছেন -তিনি তো এমন নন?   এদিকে ভগবান ভাবছেন, মিশ্র ঠাকুরের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এল, তাঁকে এবার যেতে হবে। তিনি ভারতীদেবীকে বললেন, মিশ্র ঠাকুর এসে হয়ত আবার মারবেন, তাই তিনি ঘরের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে বসবেন। এই বলে তিনি টুক করে গিয়ে ভাগবতের #দদাম্যহম কথাটি কেটে #বহাম্যহম লিখে অন্তর্হিত হলেন।    এদিকে অর্জুন মিশ্র বাড়ি ফিরে তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ঝড়-বৃষ্টির জন্য এক বাড়ীও মাধুকরী করতে পারেননি। কী করে ঠাকুরের সেবা হবে? ভারতীদেবী তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে মিশ্র ঠাকুরকে সব বললেন, আর জানতে চাইলেন কেন তিনি ঐ বাচ্চাটিকে অত নিষ্ঠুরভাবে মেরেছিলেন?  এত কথা শুনে ব্রাহ্মণ বিস্ময়ে হতবাক -তিনি তো কাউকে পাঠাননি? তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে তাঁরা কাউকে দেখতে পেলেন না, শুধু পদ্মগন্ধ পেলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, এ সব ভগবানের লীলা। ভাগবতটি সামনে পড়ে আছে দেখে সেটি খুলে দেখলেন-বাঁকা হাতের বাঁকা লেখায় #দদাম্যহম কথাটি কেটে দিয়ে #বহাম্যহম করা আছে। এবার নারায়ণের মন্দিরে গিয়ে দেখলেন, ঠাকুরের অঙ্গে রক্তের দাগ লেগে আছে। তখন ভক্ত অর্জুন মিশ্র নারায়ণের চরণে পড়ে কাঁদতে লাগলেন-" ঠাকুর, না বুঝে আমি অনেক অন্যায় করেছি। বেদব্যাসের ওপর আমি কলম চালিয়েছি,আমার অপরাধ ক্ষমা করো।"

Post a Comment

0 Comments