শিক্ষানীয় পোস্ট, আশা করি সবাই পড়বেন

" বাবা বালতি টা একটু ছাঁদে নিয়ে দিবি? কাপড় গুলো শুকাতে দিবো।  

" আমি পারবো না।  আমি ব্যাস্ত আছি।  

" তুই তো মোবাইল টিপছিস ।  

" হ্যাঁ, যাও তো নিজের কাজ নিজেই করো। একটু দেখলেই এটা নয়তো ওটা কাজের কথা বলো শুধু।  

মা কে ঝাড়ি দিয়ে এসে রুমের দরজা আটকে শুয়ে ফেসবুক করতে লাগলাম। দরজা খোলা রাখলে যখন তখন এসে আবার কাজের কথা বলবে।  


সন্ধ্যায় ছাঁদে বসে বসে চারপাশটা একটু নজর বুলিয়ে নিচ্ছি। হঠাৎই মোবাইলটা বেজে উঠলো। মা!  

" হ্যালো!

" কোথায় আছিস বাবা?  

" আমি তো বলেই আসলাম আমি ছাঁদে যাচ্ছি তারপরও ঘর থেকে ফোন করার কোনো মানে হয়?  

" ঘর একা একা ভালো লাগছে না। আয় না একটু ঘরে।  

" ধূর কোথাও গিয়ে একটু শান্তি নেই। যাচ্ছি,  তবে কোনো কাজের কথা বলা যাবে না।  

মুচকি একটা হাসি দিয়ে মা বললো-  আচ্ছা আয়।  


ঘরে আসলাম ।  

মা রান্না ঘরে  রান্না করছে  আর আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছি।  একটু পরেই আবার মা রান্না ঘর থেকে আমার কাছে এসে বললো- বাবা! 

" কিছু বলবা?  

" রান্নাঘরের ট্যাবে জল আসছে না।  একটু জল এনে দিবি ঐ ট্যাব থেকে?  

" আমি আগেই বলেছি আমায় কোনো কাজের কথা বলা যাবে না। এগুলো রান্না বান্না করা মেয়েদের কাজ আমি ওসব করতে পারবো না। তুমি যাও তো আমায় কার্টুন দেখতে দাও।  

মা ভার ভার মুখ করে চলে গেলো।  


প্রায় ২০ মিনিট চলে গেলো।  টিভির সাউন্ড একটু বেশিই দেওয়া ছিলো ।  হঠাৎই নজর পড়লো ট্যাবের কাছে বালতি পড়ে আছে ছিপছিপে জলও দেখা যাচ্ছে!

- এক বালতি জল নিয়ে আসতে পুরো রুম জল দিয়ে ভিজিয়ে দিছো? কথা গুলো বলছি আর রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম কেউ নেই।  

" মা! মা! 

কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই।  

বাইরের ট্যাবের কাছে এলাম।  একটু এগোতেই আমার চক্ষু কপালে উঠলো । মা মেঝেতে পড়ে আছে। চারদিকে রক্তে লাল হয়ে আছে।  

দৌড়ে আসলাম মা র কাছে - মা! ও মা! কি হইছে তোমার?  মা কথা বলো!  

কি করবো মাথায় ঠিক কিছুই আসছে না।  কোলে করে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে একটা টোটা নিয়ে পাশের হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।  বাবার বন্ধু এই হাসপাতালের ডাক্তার।  

মা কে নিয়ে আসতেই তাকে ওটি তে নেওয়া হলো।  


নিজের উপর আজ খুবই রাগ হচ্ছে।  এক বালতি জল নিয়ে এসে দিলে কি এমন ক্ষতি হতো? মা র কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।  

একটু পরেই একজন নার্স এসে একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো- এগুলো নিয়ে আসুন। তাড়াতাড়ি।  

আমি দৌড়ে ডিসপেনসারিতে গিয়ে ঔষধ গুলো নিয়ে আসলাম। আমি এসে দেখি  আংকেল ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।  

- আংকেল মা র অবস্থা কেমন এখন?  

" তোমার মা র অবস্থা খুবই খারাপ। তোমার মা কে আমি গত সপ্তাহেও বলেছি ভারী কাজ না করতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। শরীর একেবারেই দূর্বল। ভারী কাজ থেকে দূরে থাকতে হতো তাকে।  

" এখন সে কেমন আছে?  

" পড়ে যাওয়ার জন্য অনেক রক্ত বেড়িয়ে গেছে ।  

" যত রক্ত দরকার আমার শরীর থেকে নেন। আমার সব রক্ত বের করে নেন।  

" আমাদের ব্যাংকে কিছু রক্ত ছিলো সেগুলো দিয়েছি। কিন্তু শরীর রক্ত নিচ্ছে না। তুমি নিয়ে আসতে অনেক দেরী করে ফেলছো। কষ্ট হলেও বলতে হচ্ছে এখন সব কিছু উপরওয়ালার হাতে। আমাদের করার কিছুই নেই। তবুও ডাক্তাররা শেষ চেষ্টা করছে।  

" প্লিজ আংকেল এমন বলবেন না। আমার মা কে বাচিয়ে দিন।  

আমি ওনার সাথে কথা বলছি এর মাঝেই সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে একটা নিথর দেহ নিয়ে নার্স বেরিয়ে আসলো। একজন ডাক্তার এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো - তুমি নিয়ে আসতে অনেকটা দেরি করছো নয়তো তাকে হয়তো বাঁচানো যেতো।  


আমার পুরো পৃথিবী আজ থমকে গেছে।  যাকে আমি এত অবহেলা করতাম আজ তার নিথর দেহ আমার শরীরের সমস্ত শক্তি কেঁড়ে নিয়েছে।  দুচোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে।  

কাঁপা কাঁপা হাতে মুখ থেকে কাপড় সরালাম।  কোনো দিন ভালো করে এই মায়া মুখটা দেখা হয় নি। পৃথিবীর সমস্ত মায়া যেন এই মুখে - মা!  ও মা! মা! দেখো না আমি আজ কোথাও যাই নি। তোমার কাছেই বসে আছি । চলো গল্প করি। কি হলো? গল্প করবে না? আমি আজ তোমার সব গল্প শুনবো। কোথায় কার কি হয়েছে? কোন দিন তুমি স্কুলে স্যারের বকা শুনেছো সব শুনবো। বলো মা প্লিজ বলো। আমি ! আমি তোমার সব কাজ করে দিবো। একবার কথা বলো না মা।  তুমি ছাড়া আমায় বাবা কে বলবে বলো? মা! ও মা!  এভাবে অভিমান করে না মা। চোখ খুলো না। দেখো আমি কোথাও যাই নি।  আমি তোমায় ফেসবুক চালানো শেখাবো তো। ও মা কথা বলো না একবার।  এভাবে কেন চুপ করে আছো।  প্লিজ মা। আমার কষ্ট হয় তো মা! ও মা।  তুমি না বলতে আমার চোখের জল দেখবে? 

আমি নাকি পাষাণ।  এই দেখো মা আমার চোখ আজ বাঁধা মানছে না।  একবার কথা বলো মা। আমি তোমায় রাণী করে রাখবো।  সব কিছু আমি করবো তুমি শুধু একবার বাবা বলো। প্লিজ মা আমায় ছেড়ে যেও না। 😥

সেদিন মা আর কথা বলে নি! 

(গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে 

এর কোনো মিল নেই)


নোট: ভার্চুয়াল জগতের মাঝে আমরা এতটাই ডুবে থাকি যে পরিবারের কথা ভুলে যাই। তারাও চায় আমাদের সাথে সময় কাটাতে আমাদের সঙ্গ পেতে।  তাই সবাই নিজেদের পরিবারকে সময় দিন। তাদের সাথে যেটুকু সময় থাকবেন সেটুকুই আপনার হৃদয় কে প্রশমিত করবে। মনে রাখবেন পরিবারের এক একটা সদস্য একবার হারিয়ে গেলে পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরে পাবেন না।

Post a Comment

0 Comments