ভক্তি বড়ো নাকি সেবা ?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে এই দৃশ্যটি একান্তই বিশ্লেষণ প্রয়োজন,,একদিন মহাপ্রভু ভোজনের পর গম্ভীরার ছোট্ট কুঠিরে শয়ন বিশ্রাম করছিলেন,,,মহাপ্রভুর ঐকান্তিক সেবক গোবিন্দাদাস প্রভুর নিত্য দিন প্রভুর চরণ সেবা করতেন,,
কিন্তু সেদিন মহাপ্রভু এমন ভাবে দরজা আগলে শুয়েছেন যে প্রভুর পদন্তসেবা করতে হলে প্রভুকে ডিঙিয়ে যেতে হবে,,,
এই পরিস্থিতে সেবক গোবিন্দ দাস নির্দ্বিধায় প্রভুকে ডিঙিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পদসেবা করলেন,,
অন্তর্যামী ভগবান সবটাই নীরবে অনুধাবন করলেন,,
কিন্তু যখন সেবা শেষে বেরিয়ে যাবেন,,তখন গোবিন্দ দাস দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবছিলেন এবার কি প্রভুকে ডাকবো যাতে প্রভু বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পরিসর তৈরি করে দেন,,যখন গোবিন্দ দাস গম্ভীর হয়ে ভাবছেন, মহাপ্রভু শয়ন অবস্থায় নয়ন মুদ্রিত অবস্থা বললেন,,,
গোবিন্দ প্রবেশ করার সময় যেভাবে প্রবেশ করেছিল সেভাবেই প্রস্থান কোরো,,এখন কেনো দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছো,,প্রবেশ করার সময় তো তোমার অপরাধ বোধ হয় নি; তখন গোবিন্দ দাস নতশির কুণ্ঠিত লজ্জিত কন্ঠে হয়ে বললেন,,প্রভূ তখন আপনার সেবায়াই মুখ্য কর্তব্য বোধ হয়েছিলো,,কিন্তু এখন সেবা সম্পন্ন হয়েছে,,তাই ভক্তি ভাবনায় অপরাধ বোধ হচ্ছে এটা কি পুনরাবৃত্তি করা উচিত ?
মহাপ্রভু উঠে গোবিন্দ দাসকে বক্ষে জড়িয়ে ধরে বললেন ,,, গোবিন্দ তুমি ভক্তির সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান দিলে,,প্রভুর প্রীতি সাধনে যদি কখনো কখনো প্রভুকেও ডিঙ্গতে হয় তথাপিও তাই করতে হবে,,
কারণ-(আত্মন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছা তারে বলি কাম,, কৃষ্ণেরন্দ্রীয় প্রীতিবাঞ্ছা ধরে প্রেম নাম)
তার জ্বলন্ত প্রমাণ স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ লীলায় শিরপিড়ায় গোপীদের চরণ রেনু মস্তকে ধারণ করার উদ্দেশ্য শ্রীনারদ মুনিকে ভক্তদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন,, নারদমুনি ত্রিভুবন ঘুরেও যখন ব্যার্থ হলেন,,অন্তিমে ব্রজের গোপীদের কাছে কৃষ্ণের মাথা ব্যথার সংবাদ শ্রবণ মাত্র গোপী গণ তাদের চরণ রেনু ঔষধ রূপে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় নি,,,অর্থাৎ প্রভুর প্রীতিবাঞ্ছায় ভক্তরা রীতিনীতি নিয়মকে উলঙ্ঘন করতে দ্বিধা করেন না,! আমি প্রেম করি সেটা কখনো কখনো স্ব সুখ হতে পারে,,কারণ আমি প্রেম করে সুখ পাই,, কিন্তু অহৈতুকি নিষ্কাম স্বসুখ রোহিত হয়ে শুধুই প্রিয়র প্রীতি সাধনে সেবা করা হয় সেটাই প্রকৃত প্রেমভক্তি,,অর্থাৎ নিঃস্বার্থ সবাই শ্রেষ্ঠ,,,
তাই আমাদের ধর্মের স্বরুপ হলো 'সেবাধর্ম'🙏🏾
0 Comments