চলছে আলোর উৎসব দামোদর মাস
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বাধিক জনপ্রিয় উৎসব হচ্ছে দীপাবলি যা কার্তিক মাসে পালিত হয়। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরের বর্ননা অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দামোদর লীলা এই দীপাবলির দিনেই সম্পাদন করেছিলেন।
এ লীলা বিলাস শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক মাখনপাত্র ভেঙে কৃষ্ণ মা যশোদাকে ক্রোধিত করেছিলেন, তখন কৃষ্ণ দৌড়ে পলায়ন করলেন এবং দেখলেন যে, ক্র্দ্ধু যশোদা মা তাঁকে তাড়া করছেন। এক অক্লান্ত প্রচেষ্টার পর মা যশোদা বালক কৃষ্ণকে আবদ্ধ করতে সক্ষম হলেন এবং এক রজ্জু দ্বারা তাঁকে এক উদুখলের সঙ্গে বন্ধনে প্রয়াসী হলেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তার ব্যবহৃত রজ্জু দুই আঙ্গুল কম পড়ছে। যদিও তিনি অধিক রজ্জু ব্যবহার করেছিলেন কিন্তু প্রতিবারই ঠিক দুই আঙ্গুলই রজ্জু কম পড়ে, কৃষ্ণকে বন্ধন আর করা যায় না। অবশেষে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মাতার তাকে বন্ধনের এ কঠোর এবং অসীম প্রয়াসকে স্বীকৃতি প্রদান করে তাঁর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যান। ভক্তরা তখন তাকে দামোদর বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন, ‘যার উদর (পেট) দাম (রজ্জু) দ্বারা বন্ধন করা হয়েছে এমন।
শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন- যোগীরা কৃষ্ণকে পরমাত্মারূপে ধরতে চায়, এবং কটোর তপস্যার দ্বারা তাকে পাওয়ার চেষ্টা করেও তারা সফল হন না। কিন্তু এখানে আমরা দেখছি যে, মা যশোদা কৃষ্ণকে ধরে ফেলবেন সেই ভয়ে কৃষ্ণ ছুটে পালাচ্ছেন। এটি ভক্ত এবং যোগীর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে। যোগীরা কৃষ্ণকে পায় না, কিন্তু মা যশোদার মতো শুদ্ধ ভক্তের কাছে কৃষ্ণ ইতিমধ্যেই ধরা পড়ে গেছেন। এমন কি কৃষ্ণ মা যশোদার হাতের ছড়ির ভয়ে ভীত হয়েছিলেন ... শ্রীকৃষ্ণ মা যশোদার ভয়ে ভীত, আর যোগীরা কৃষ্ণের ভয়ে ভীত। (ভাগবত ১০/৯/৯ তাৎপর্য)
যখন ভক্তরা দেখেন যে, অনন্ত কোটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রভু তাঁর ভক্তের প্রেমভক্তির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন তখন তাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কৃষ্ণের বিভু গুণাবলীর দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে তাদের হৃদয় নিয়ন্ত্রনহীনভাবে কৃষ্ণের দিকে ধাবিত হয়। যদিও ভক্তরা চায় না যে, কৃষ্ণ তাদের বশীভূত হোক কিন্তু ভগবান কৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার আনন্দ রস আস্বাদন করেন। প্রত্যেকেই অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার প্রয়াস করে কারণ যেথা প্রেম বর্তমান সেথায় সুখের জয়লাভের অধিষ্ঠান অপেক্ষা প্রেমের কাছে পরাভূতি স্বীকার করে। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভাগবত (৬/১৬/৩৪) শ্লোকের তাৎপর্যে ব্যাখ্যা করেছেন। ভগবান এবং ভক্ত উভয়েরই জয় হয়। ভগবান ভক্তের দ্বারা এবং ভক্ত ভগবানের দ্বারা বিজিত হন। পরস্পরের দ্বারা বিজিত হওয়ার ফলে, তারা উভয়েই তাদের সেই সম্পর্কের মাধ্যমে অপ্রাকৃত আনন্দ আস্বাদন করেন।
কারণ এ সুমধুর লীলা কার্তিক মাসে সম্পাদিত হয়েছিল। তাই কার্তিক মাসকে বলা হয়- দামোদর মাস। সমস্ত মাস ব্যাপী ভগবানের এই মনোরম এবং অনবদ্য লীলা রসে নিমজ্জিত থেকে ভক্তরা ভগবানের অধিক ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য অনুভব করে। আপনি এ নিমজ্জনে প্রয়াস করতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে কোনো ইসকন্ মন্দিরে আসুন এবং সমগ্র কার্তিক মাসব্যাপী সান্ধ্যাকালীন দামোদর অষ্টকম্ প্রার্থনায় যোগদান করুন এবং দীপ সহযোগে আপনি আপনার ভক্তিসেবা ভগবান দামোদরকে নিবদন করুন। যদি আপনি ইসকন্ মন্দির পরিদর্শনে অসমর্থ হন তাহলে অনুগ্রহ করে নিজ গৃহেই এ প্রার্থনা এবং দীপদানে ব্রতী হোন।
0 Comments