১৬। আত্মার বৈশিষ্ট্য কি?
উঃ আত্মার কখনো জন্ম হয় না বা মৃত্যু
হয় না, আত্মার পুনঃপুনঃ উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না। আত্মা জন্মরহিত নিত্য এবং
নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মার কখনো বিনাশ হয় না। (আত্মার কখনো জন্ম হয় না
তাই অজ। মৃত্যু হয় না-- তাই নিত্যতা/পুনঃপুনঃ উৎপত্তি হয় না তাই শাশ্বত)।
আত্মা অচ্ছেদ্য অর্থাৎ অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না। আত্মা অদাহ্য অর্থাৎ
আগুনে তাকে পোড়ানো যায় না। আত্মা অক্লেদ্য অর্থাৎ জলে ভেজানো যায় না। আত্মা
অশোষ্য অর্থাৎ আত্মাকে শুকানো যায় না।
১৭। সাংখ্যযোগ কথাটির অর্থ কি?
উঃ সাংখ্য শব্দটির অর্থ হচ্ছে-- যা কোনো কিছুর বিশদ্ বিবরণ দেয় এবং সাংখ্য
বলতে সেই দর্শনকে বোঝায় যা আত্মার স্বরূপ বর্ণনা করে বা আত্মা সম্বন্ধে
বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞান প্রদান করে। যোগ হচ্ছে ইন্দ্রিয়কে দমন করার পন্থা।
সাংখ্যযোগ হচ্ছে চেতন এবং জড়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণমূলক বিষয়বস্তু।
১৮। বুদ্ধিযোগ কাকে বলে?
উঃ জীব যখন নিজের ইন্দ্রিয়ের সুখ দুঃখ তৃপ্তি অতৃপ্তির কথা বিবেচনা না করে
ভগবানের সেবায় নিজেকে সর্বতোভাবে নিয়োজিত করে, যখন তার সমস্ত
কর্তব্যকর্মের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় ভগবানের তৃপ্তিসাধন করা, তখন তার সেই
কর্তব্যকর্ম ভগবানের সেবায় উৎসর্গীকৃত হয়। তাই সেই সকল কাজকর্মের ভালো অথবা
মন্দ কোনোরকম ফলেরই কোনো প্রশ্ন ওঠে না। সেইসব কর্তব্যকর্ম তখন হয়ে ওঠে
অপ্রাকৃত কর্ম, এরই নাম বুদ্ধিযোগ। বুদ্ধিযোগকে নিষ্কাম কর্মযোগ বা
ভক্তিযোগ নামেও আচার্যরা অভিহিত করে থাকেন।
১৯। জড় জাগতিক কর্মের ফল ও ভগবৎ সেবার ফলের মধ্যে কি পার্থক্য আছে?
উঃ জড়দেহের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে সবরকমের জড়জাগতিক প্রচেষ্টা এবং সেই সঙ্গে
সমস্ত প্রচেষ্টা লব্ধ ফলের বিনাশ ঘটে কিন্তু ভগবানের সেবায় মানুষ--যে
সমস্ত কাজকর্ম করে, তার ফলে সে আবার ভালোভাবে ভগবানের সেবা করার সুযোগ পায়।
ভগবানের সেবা কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যদি কেউ দেহত্যাগ করে তবে পরজন্মে
সে আবার সৎকুলে মনুষ্য জন্মলাভ করে তার অসম্পূর্ণ ভগবদ্ভক্তিকে সম্পূর্ণ
করে ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়। জড়জাগতিক স্তরে যে কোনো কাজকর্ম
যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ না হয়, ততক্ষণ তার কোনো তাৎপর্য থাকে না। কিন্তু
অপ্রাকৃত কর্ম বা ভগবৎ-সেবা সম্পূর্ণ না হলেও তা বিফলে যায় না। তাই
শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেছেন-- ভক্তিযোগ অনুশীলন কখনো ব্যর্থ হয় না এবং
তার কোনো ক্ষয় নেই। তার স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে
পরিত্রাণ করে।
২০। মানুষ বিষয়ভোগের বাসনা থেকে কি করে মুক্ত হতে পারে?
উঃ ভগবানের সেবার মাধ্যমে উন্নত রস আস্বাদন করতে পারলেই অতিশয় তুচ্ছ জড়রস
আস্বাদনের বাসনাকে পরিত্যাগ করা যায়--রসবর্জ্যং রসোপস্য পরম দ্রষ্টা
নিবর্ততে।
0 Comments