বারো বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে মতি করানো যায়? আধ্যাত্মিক গভীর তত্ত্ব তাদের কিভাবে বোঝানো যায়?


বারো বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে মতি করানো যায়? আধ্যাত্মিক গভীর তত্ত্ব তাদের কিভাবে বোঝানো যায়?


উত্তরঃ সরলমতি বালক-বালিকারা অতি সহজেই ভগবানের কথা গ্রহণ করতে পারে, জটিলমতি বয়স্ক ব্যক্তিরা তা পারে না। এক আচার্যের মুখে শুনেছিলাম---একজন বয়স্ক পণ্ডিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, "মশাই বলুন তো---ভগবান কে?" তখন তথাকথিত পণ্ডিত ব্যক্তি মুখ কুঁচকিয়ে বলতে লাগলেন---"তা সহজে বলা সম্ভব নয়। ভগবৎ-তত্ত্ব! সেটি খুব কঠিন তত্ত্ব। খুব গভীর তত্ত্ব। সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।" অথচ, কাছেই ছিল এক ছোট্ট শিশু। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, "বল তো---ভগবান কে?" অমনি সে চিৎকার করে বলতে লাগল---"কৃষ্ণ! কৃষ্ণ! ভগবান কৃষ্ণ!" শ্রীমদ্ভাগবতের কথা "কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং"--- তা পণ্ডিত ব্যক্তিটি জটিলবুদ্ধি হওয়ার জন্য বলতে না পারলেও সরলমতি শিশুটি সহজে বলতে পেরেছিল।

এমন কি, প্রত্যক্ষ দেখছি যে, ইসকন মন্দিরে যে সমস্ত শিশুরা আসে তারা অনেকেই অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে শ্রীবিগ্রহ, দেওয়াল চিত্র, ভক্তবৃন্দকে দর্শন করে। কেউ বলে---"কত সুন্দর রাধাকৃষ্ণ! এত সুন্দর! বাবা, আমাকে ছোট ছোট রাধাকৃষ্ণ এনে দেবে, আমি রোজ পুজো করব।" কখনও দেখি বড়রা ধমক দিয়ে বাচ্চাদের বকে---"চল্ চল্ আর দেখতে হবে না।" কারণ তাদের কাছে এমন কিছু আকর্ষণীয় নয়। বেশির ভাগ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে নানা প্রজল্প, জড়জাগতিক আহার বিহার মৈথুন ইত্যাদি। বড়রা যদি ভক্তি সহকারে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে মতি রেখে চলেন, তবে ছোটরা স্বাভাবিকভাবেই বড়দের কাছে ভক্তি শিক্ষার আলো লাভ করবে। বড়দের আচরণ যদি ভক্তবিরোধী হয়, তবে বড়দের কাছে ছোটরা সেই বদ-অভ্যাসই শিখবে। এই হচ্ছে আসল কথা। সেইজন্য ছোটদের ভক্তি-আনুকূল্যে রাখতে হলে সযত্নে বড়দের ভক্তি-আনুকূল্যে থাকতে হবে।

শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা কথা, তাঁর মধুর রূপ, ভগবানের কাছে প্রার্থনা, মহামন্ত্র কীর্তন, প্রণাম মন্ত্র---এই সব সহজেই শিখিয়ে দেওয়া যায়। শিশুদের বোধগম্য করে রামায়ণ মহাভারত আদি গ্রন্থের ভক্তিমূলক কাহিনী নিয়মিত বলতে হবে। এতে শিশুরা আকৃষ্ট হয়। ভগবানের সুন্দর সুন্দর ছবি, ভগবানের সুস্বাদু মহাপ্রসাদ, মধুর ভগবৎ-প্রীতি এবং উচ্চস্বরে হরিনাম কীর্তন ও নৃত্যের প্রতিও শিশুরা আকৃষ্ট হয়। অনেক সময় জটিল তত্ত্বকেও সহজ করে বোঝানো যায়। এই জন্য বড়দের দক্ষ এবং নিষ্ঠাপরায়ণ হতে হবে।

বাইবেলেও দেখা যায়, যিশুখ্রিস্ট ঘোষণা করেছিলেন---"শিশুর মতো সরল না হলে ভগবানের রাজ্যে প্রবেশ করা যাবে না।" আধুনিক জড় শিক্ষায় শিক্ষিত জটিল মস্তিষ্কসম্পন্ন বিষয়ী ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। কিন্তু শিশুরা সরল ও কোমলমতি হওয়ার জন্য সহজে ভক্তিরাজ্যে প্রবেশ করতে পারে। তাদের শুধু কুসঙ্গ-দুঃসঙ্গ থেকে সরিয়ে সযত্নে কৃষ্ণসেবায় যুক্ত করাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের কাজ। অবশ্য কখনও কখনও অভিভাবকের চেষ্টা এবং যত্ন সত্ত্বেও সন্তানেরা ভক্ত না-ও হতে পারে। তবুও অভিভাবকের কর্তব্য অভিভাবককে করতেই হবে।

Post a Comment

0 Comments