তিলক ধারণ বিধি

তিলক ধারণ বিধি


জলপূর্ণ পঞ্চপাত্রে পুষ্প দিয়া গঙ্গাদি স্মরণ করিয়া তীর্থসমূহ আবাহন করিবে।
গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতী।

নর্মদে সিন্ধো কাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু॥



শ্রীনারায়ণ স্মরণ পূর্বক (ওঁ নারায়ণায় নমঃ, উচ্চারণ করিয়া) ঐ জল তিনবার কিঞ্চিৎ মুখে ও মস্তকে দিয়া শ্রীগুরু স্মরণ করিবেন।
শ্রীকৃষ্ণচরণ হইতে গঙ্গাধারা নিজ মস্তকে পতিত হইয়া ব্রহ্মরন্ধে প্রবেশ পূর্বক দেহান্তর্গত সমস্ত মল বিধৌত করিয়া দিতেছেন-এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে 'ওঁ নারায়ণঃ' নাম কীর্তন পূর্বক শ্রীনারায়ণ স্মরণ করিবেন। ইহা গৃহস্নান ও সর্বপ্রধান।

বামহস্তের তালুতে ঐ জল কিঞ্চিৎ লইয়া উহাতে গোপীচন্দন (দ্বারকা মৃত্তিকা), তদভাবে তুলসীমৃত্তিকা ঘষিয়া উহাদ্বারা কেশবাদি দ্বাদশ অঙ্গে 'ঊর্দ্ধপুণ্ড্র' বা 'হরিমন্দির' অর্থাৎ তিলক রচনা করিতে হইবে। তিলকের মধ্যস্থলে অন্তরাল বা ফাঁক হইবে। ঐরূপ অন্তরালযুক্ত তিলকের নাম 'হরিমন্দির'। ভ্রূ-মূল হইতে নিম্নদিকে নাসিকার তিনভাগ পর্যন্ত 'নাসামূল' হইতে আরম্ভ করিয়া ললাটে কেশমূল পর্যন্ত উর্দ্ধপুণ্ড্র অঙ্কিত
করিবে, এবং তন্মধ্যে ভ্রূ-মূল হইতে কেশমূল পর্যন্ত অন্তরাল করিবেন। ললাটের পরে যথাক্রমে উদরে, বক্ষঃস্থলে, কণ্ঠকুপকে, দক্ষিণ কুক্ষিতে, দক্ষিণ বাহুতে, দক্ষিণ কন্ধরে, বাম কুক্ষিতে, বাম বাহুতে, বাম কন্ধরে, পৃষ্ঠদেশে ও কটিতে তিলক করিতে হইবে। মধ্যমা বা অনামিকা দ্বারা তিলক অঙ্কিত করিবেন। চন্দন ও ভষ্ম দ্বারা তিলক নিষিদ্ধ। কারণ চন্দন রাজসিক এবং ভস্ম তামসিক। মৃত্তিকা সাত্ত্বিক।

তিলক স্থান সমূহের অধিষ্ঠিত শ্রীবিষ্ণু বিগ্রহগণের ধ্যান-ক্রম
ললাটে কেশবং ধ্যায়েন্নারায়ণমথোদরে।
বক্ষঃস্থলে মাধবং তু গোবিন্দং কণ্ঠকূপকে॥
বিষ্ণুঞ্চ দক্ষিণে কূক্ষৌ, বাহৌ চ মধসূদনম্।
ত্রিবিক্রমং কন্ধরে তু, বামনং বামপার্শ্বকে॥
শ্রীধরং বামবাহৌ তু হৃষিকেশঞ্চ কন্ধরে।
পৃষ্ঠে তু পদ্মনাভঞ্চ, কট্যাং দামোদরং ন্যসেৎ।
তৎপ্রক্ষালনতোয়স্তু বাসুদেবায় মূর্দ্ধনি॥

ঐ শ্লোক সমূহের প্রয়োগ-বিধি
০১I ললাটে―ওঁ কেশবায় নমঃ
০২I উদরে―ওঁ নারায়ণায় নমঃ
০৩| বক্ষস্থলে―ওঁ মাধবায় নমঃ
০৪I কণ্ঠে―ওঁ গোবিন্দায় নমঃ
০৫I দক্ষিণ পার্শ্বে―ওঁ বিষ্ণুবে নমঃ
০৬I দক্ষিণ বাহুতে―ওঁ মধুসূদনায় নমঃ
০৭I দক্ষিণ স্কন্ধে―ওঁ ত্রিবিক্রমায় নমঃ
০৮। বাম পার্শ্বে―ওঁ বামনায় নমঃ
০৯I বাম বাহুতে―ওঁ শ্রীধরায় নমঃ
১০I বাম স্কন্ধে―ওঁ হৃষীকেশায় নমঃ
১১I পৃষ্ঠে―ওঁ পদ্মনাভায় নমঃ
১২I কটিতে―ওঁ দামােদরায় নমঃ

বামহস্তের অবশেষ ধুইয়া ঐ জল “ওঁ বাসুদেবায় নমঃ” বলিয়া মস্তকে দিবেন।
আচমন
তিলক করিবার পর আচমন অবশ্য কর্তব্য। 'ওঁ কেশবায় নমঃ’, ‘ওঁ নারায়ণায় নমঃ’, ‘ওঁ মাধবায় নমঃ―এই তিন মন্ত্রে তিনবার আচমন করিবেন। আচমনান্তে পাঠ করিবেন―
“ওঁ তদ্‌বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়াে দিবীব চক্ষুরাততম্।"

Post a Comment

0 Comments