শ্রীমন্ নিত্যানন্দ প্রভুর বাল্যলীলা ও তীর্থযাত্রা

শ্রীমন্ নিত্যানন্দ প্রভুর বাল্যলীলা ও তীর্থযাত্রা



শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু যিনি স্বয়ং শ্রীবলদেব, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বেই ১৩৯৫ শকাব্দে মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীহাড়াই পণ্ডিত ও পদ্মাবতীদেবীর পুত্ররূপে রাঢ়দেশে যা বর্তমান বীরভূম জেলার বীরচন্দ্রপুর গ্রাম বা একচক্র গ্রামে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবের সাথে সাথেই রাঢ়দেশে সমস্ত প্রকার অমঙ্গল দূর হয়। তিনি রূপে ও গুণে অতুলনীয়।
যেদিন নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হলেন, সেদিন একচক্র থেকে শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু আনন্দে এক হুঙ্কার দেন। সেই হুঙ্কারের শব্দ সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল, সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড মূর্চ্ছা প্রাপ্ত হল, কেউ বলতে লাগলেন বজ্রপাত হল, আবার কেউ মনে করল কোন অমঙ্গল হবে। বিভিন্ন লোক বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা করতে লাগল। এইভাবে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু নিজেকে গুপ্তরেখে শিশুগণের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের বাল্যীলা করতে লাগলেন।
কখনও তিনি কৃষ্ণলীলার অনুকরণে দেবতাদের সভায় পৃথিবী কর্তৃক আসুরিক অত্যাচারের বর্ণন, কংসের কারাগারে কৃষ্ণজন্ম লীলা, পুতনা বধ, শকট ভঞ্জন, মাখন চুরি, কালীয় দমন, ধেনুকাসুর বধ, অঘাসুর বধ, বৎসাসুর বধ, গোবর্ধন ধারণ, গোপীবস্ত্র হরণ, যজ্ঞপত্নীদের দর্শন, অক্রুর কর্তৃক কৃষ্ণ-বলরামকে মথুরায় আনয়ন, কংসবধ ইত্যাদি লীলা অভিনয় করতেন। কখনও বা রামলীলার অনুকরণে সেতুবন্ধন, লক্ষ্মনের শক্তিশেল, ইন্দ্রজিৎ বধ। আবার কখনও শ্রীবামনরূপে বলির সর্বস্ব হরণ ইত্যাদি যাবতীয় লীলা শিশুগণের সঙ্গে করতেন।
একদিন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু লক্ষ্মনের ভাবে শক্তিশেলে অজ্ঞান হয়ে গেলেন, শরীরে কোন চেতনার চিহ্ন নেই। খবর পেয়ে পিতামাতা ছুটে এলেন এবং পুত্রের এই দশা দেখে ক্রন্দন করতে শুরু করলেন। সাথীরাও এই ঘটনায় ভুলে গিয়েছিলেন তারপর কি করতে হবে। হঠাৎ কারো কাছে হনুমানের কথা শুনে একজন হনুমান সেজে গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে এলেন এবং আরেকজন কবিরাজ হয়ে শ্রীরাম স্মরণ করে ঔষধ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর নাকে ধরলেন এবং সাথে সাথে তিনি উঠে বসলেন। পিতামাতা আশ্বস্ত হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন এই লীলাগুলি কে শিখিয়েছে। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু জানালেন এগুলি তাঁর নিত্যলীলা। কিন্তু বিষ্ণু মায়াবশে কেউ তার অর্থ বুঝতে পারলেন না। এইভাবে বার বৎসর তিনি পিতামাতার নিকটে থেকে বাল্যলীলা করলেন।
তারপর কুড়ি বৎসর বয়স পর্যন্ত (দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের) উত্তরে বদ্রীনাথ থেকে
দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত যত তীর্থ রয়েছে সব তীর্থে ভ্রমণ করলেন। ভ্রমণ পথে দৈবযোগে একদিন শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। তাঁর সঙ্গে কিছুদিন কৃষ্ণকথারসে অতিবাহিত করলেন। তারপর রামেশ্বর হয়ে শ্রীনীলাচল জগন্নাথ পুরীতে আসেন এবং সেখান থেকে বৃন্দাবনে ফিরে আসেন। এইভাবে যতদিন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করলেন না ততদিন তিনি গুপ্তভাবে থাকলেন।
জয় জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য কৃপাসিন্ধু।
জয় জয় নিত্যানন্দ অগ্রগতির বন্ধু।।১।।
নিত্যানদে যাহার তিলেক দ্বেষ রহে।
ভক্ত হইলেও সে কৃষ্ণের প্রিয় নহে।।১৮৬।।
যদ্যপিহ নিত্যানন্দ ধরে সর্ব্ব শক্তি।
তথাপিহ কারেহ না দিলেন বিষ্ণুভক্তি।।২১১।।
চৈতন্যের কৃপায় হয় নিত্যানন্দে রতি।
নিত্যানন্দে জানিলে আপদ্ নাহি কতি।।২২০।।
(
শ্রীচৈতন্য ভাগবত, আদিলীলা, নবম অধ্যায়)
!!নিতাই নিতাই!!

Post a Comment

0 Comments