ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা ♥ পর্ব - ১৭ ♥ শ্রীজগন্নাথদেবের লীলাকথামৃত বিদ্যাপতি নীলাচলের মহিমা রাজার নিকট বর্ণনা করলেন

ধারাবাহিক শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা
 পর্ব - ১৭
 শ্রীজগন্নাথদেবের লীলাকথামৃত
বিদ্যাপতি নীলাচলের মহিমা রাজার নিকট বর্ণনা করলেন





বিদ্যাপতি রাজপ্রসাদের তোরণদ্বারে উপনীত হবার পূর্বেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সানন্দে এই বার্তা গ্রহণ করেছিলেন যে অগ্রগামী দলটি ভগবানের আবাস-স্থান নির্ধারণ করতে পেরেছে। বিশ্বাবসুর দেওয়া পুষ্পমাল্য হাতে নিয়ে আনন্দোজ্জ্বলমূর্তি বিদ্যাপতি রাজার নিকট গেলেন। রাজা তাঁর সেবককে অভ্যর্থনা করতে উঠে দাঁড়ালেন এবং ভক্তিভাবের আকস্মিক আবেশে তিনি মুহ্যমান হয়ে পড়ছিলেন। আবেগরুদ্ধ কন্ঠে তিনি বললেন, "এই মাল্য দর্শন করে আমার জন্ম সার্থক হয়েছে। আমি এই প্রসাদ-মালা দর্শনের মাধ্যমে ভগবান শ্রীমাধবকে দর্শন করছি। আমি এই মাল্যকে আমার বিনম্র প্রণতি নিবেদন করছি, যা ভগবানকে তাঁর পাদপদ্মাশ্রিত শরণাগত ভক্তগণ নিবেদন করে থাকেন।এই মালার সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড উদ্ধারের সামর্থ্য রয়েছে।" রাজা অনুভব করলেন-তাঁর হৃদয়কন্দর দিব্য প্রেমে মথিত হচ্ছে। "হে প্রভু! অনুগ্রহ করে আমাকে উদ্ধার করুন। আপনাকে বারবার আমার প্রণাম নিবেদন করছি।"

অশ্রুপূর্ণ নয়নে রাজা ভূমিতে পতিত হয়ে সাষ্টাঙ্গে তাঁর প্রণতি নিবেদন করলেন। তাঁর সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত হচ্ছিল। বিদ্যাপতি তাঁকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন এবং মাল্যটি যথাযথভাবে তাঁর গলদেশে পরালেন। কেবল সেই দিব্য সুগন্ধে সুরভিত পুষ্পমালা পরে রাজা অনুভব করলেন যেন স্বয়ং ভগবান তাঁর হৃদয়ে প্রবেশ করেছেন। সেই সময়ে বহু গৃহস্থ, ব্রহ্মচারী ও সন্ন্যাসী এসে চতুর্দিকে সমবেত হলেন। সকলেই রাজার শুদ্ধভক্তি-প্রভাবে সৃষ্ট বিমল পরিবেশ অনুরঞ্জিত হচ্ছিলেন।

অন্যান্য ব্রাহ্মণগণসহ রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিদ্যাপতির পূজা করলেন এবং তাঁকে রাজসিংহাসনের সামনে একটি আসন প্রদান করলেন। প্রগাঢ় আন্তরিকতা সহকারে রাজা বিদ্যাপতির কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু বিদ্যাপতি নিজের সংবাদের চেয়ে পুরুষোত্তমক্ষেত্র এবং নীলমাধবের মহিমা বলার জন্য অধিকতর ব্যাকুল ছিলেন। তাঁর উপলব্ধি ও স্মৃতি অনুসারে তিনি তাঁর সেই পবিত্র ধামে অভিযাত্রা ও পরিদর্শনের সময় যা-কিছু ঘটেছিল সব বিশদভাবে বর্ণনা করলেন। বিদ্যাপতির গভীর মহিমা-স্তুতিতে সমবেত সকলের চিত্ত আনন্দে আবিষ্ট হল, প্রত্যেকেই সেই ব্রাহ্মণের মুখনিঃসৃত কথামৃত পান করতে লাগলেন, সকলেই আাকাঙ্খা করতে থাকলেন তিনি যেন আরো বলতে থাকেন।

পরিশেষে, রাজা তাঁকে ভগবানের ইন্দ্রনীলমণিময় বিগ্রহ, নীলমাধব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। বিদ্যাপতি তাঁর নয়নদ্বয় বন্ধ করে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করলেন। "প্রিয় রাজন্, আমি এখন সেই অপ্রাকৃত দিব্য বিগ্রহ সম্বন্ধে বলব, যিনি যে-ই তাঁর দর্শন গ্রহণ করুক, তাঁকে মুক্তি প্রদান করেন। ভগবানের এই শ্রীবিগ্রহ অত্যন্ত প্রাচীন। তাঁর শ্রীমূর্তি অতি মূল্যবান ইন্দ্রনীল-মণি দ্বারা নির্মিত। স্বৰ্গাধিপতি ইন্দ্র এবং কমলাসনা ব্রহ্মা প্রতিদিন অন্যান্য দেবগণসহ ভগবানের এই শ্রীবিগ্রহের পূজা করার জন্য নীলাদ্রি শিখরে আগমন করেন। আমি যে পুষ্পমালা আপনাকে অর্পণ করেছি, সেটি দেবগন শ্রীমাধবকে নিবেদন করেছিলেন। এটি কখনাে শুষ্ক হবে না, এবং এর দিব্য সৌরভও সময়ের প্রভাবে হ্রাস পাবে না, সর্বদা একই রকম থাকবে।"

বিদ্যাপতি তাঁর নয়ন উন্মীলিত করলেন এবং নির্মল প্রশান্তি ও আনন্দপূর্ণ চিত্তে রাজার দিকে তাকালেন। শ্রীভগবানের প্রসাদ গ্রহণকরে বিদ্যাপতি বললেন, “আমি সর্বপাপ হতে বিমুক্ত হয়েছি। আমি দেবগণের মতাে জ্যেতির্ময় হয়ে উঠেছি, লক্ষ্য করেছেন কি?” রাজা সপ্রশংসচিত্তে তাঁর মস্তক নাড়ালেন। প্রিয় রাজন্, কাম বা ইন্দ্রিয়তৃপ্তি ও মােক্ষ বা মুক্তি, উভয়ই সেখানে সুলভ। নীলাচলধামে কোন জরা বা ব্যাধি নেই, অন্য কোনরূপ দুঃখক্লেশও নেই। ঐ তীর্থে বিশাল নীল আঁখি বিশিষ্ট পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং সেখানে বিরাজ করেছেন। তিনি অভিযুক্ত সেবার দ্বারা অত্যন্ত প্রীত হন। যিনিই তাঁর শরণ করেন, তাঁকেই তিনি মােক্ষ প্রদান করেন।




Post a Comment

0 Comments