সাধুসঙ্গের ফল গল্পে উপদেশ____

সাধুসঙ্গের ফল



গল্পে উপদেশ

এক ভোমরা ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেল তার নিজের মত অন্য একটি পোকা মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভোমরা এসে বলল- ভাই তোমার এত দুর্দশা কেন? গোবরের পোকা বলল- কেন ভাই, আমার তো কোনো দুঃখ নাই। আমার বাসা এখানেই আছে। তুমি দয়া করে আমার বাড়ী এসো। ভোমরা আস্তে আস্তে গোবরের পোকার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল। তুমি কোথায় থাক ভাই! গোবরের পোকা বলল- আমি এই গোবরের গর্তের মধ্যে থাকি এবং গোবরের রস খাই।
ভোমরা হো হো করে হেসে উঠল। বলল-ভাই তুমি আমার স্বজাতি হয়ে এত বোকা? তোমার দুঃখ তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না? আমি কি করি জান? আমি সব ফুলের মধু খাই এবং গুন গুন করে গান গাই। সকলে আমার কত প্রশংসা করে। আমি এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পরিব্রাজকের মতো ঘুরে বেড়াই। তোমার দুঃখ-কষ্ট তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না। তুমি আমার সঙ্গে চল, তোমায় ফুলের মধু খাওয়াব।
আমি তোমার দুঃখ সহ্য করতে পারছি না।” গোবরের পোকা বলল- ভাই, আমি তোমার মতো উড়তে পারব না। কেমন করে যাব? ভোমরা বলল- তুমি আমার পিঠে ওঠ। আমি তোমায় বয়ে নিয়ে যাব। গোবরের পোকাকে এক কুমুদ পুষ্পে বসিয়ে দিয়ে বলল-“ভাই, যেমন করে তুমি গোবরের রস পান কর, ঠিক সেইভাবেই এই ফুলের মধু পান কর। আমি কয়েকটি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আসি।” এদিকে প্রভাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুমুদ পুষ্প সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে গোবরের পোকা তার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে রইল। ভোমরা বন্ধুকে খুঁজে পেল না।
এদিকে গ্রামের এক বালক শিব পূজার জন্য ফুল তুলতে এসে গোবরের পোকা সহ ফুলটা তুলে নিল।
প্রতিদিনও পূজরী অগুরু চন্দন ও কর্পূর মিশ্রিত গন্ধের সহিত পুষ্প মিশ্রিত করে শিবমন্ত্রে অর্পণ করলেন। ক্রমানুসারে যে ফুলের মধ্যে গোবরের পোকাটি আছে, সেটিও “ইদম্ সগন্ধং পুষ্পং ওঁ নমো শিবায় নমঃ। শিবমন্ত্রে অর্পণ করলেন। পরদিন প্রাতঃকালে সেই সমস্ত ফুল গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে নতুন ফুল তুলতে গেল বালকটি। গঙ্গার স্রোতে ফুলগুলি ভাসতে ভাসতে চলল। গঙ্গার জলের স্পর্শ পেয়ে মহানন্দে পোকা বলতে লাগল-“আহা! আহা! আমার জন্ম এক গোবরের স্তুপের মধ্যে।
আমি পূর্বার্জিত কোন সৌভাগ্যের ফলে এমন একজন সাধুর সঙ্গ লাভ করলাম, যার ফলে আমার পূর্বপুরুষ কেউ যা পাননি, সেই বৈষ্ণবপ্রবর মহাদেবের চরণে অর্পিত হলাম। তারপর ব্রহ্মারও দুর্লভ বস্তু যে ভগবৎ পাদপদ্ম থেকে প্রবাহিত গঙ্গা তা প্রাপ্ত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, শুধু সেই সৎ বন্ধুর কৃপা বলে। জন্ম যখন হয়েছে তখন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আমার এই মৃত্যু, উর্ধ্বগামী মৃত্যু। কেননা সাধুসঙ্গের প্রভাবে ভগবৎ পাদপদ্মে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তাই শাস্ত্র বলেন-

“সাধু সঙ্গ সাধু সঙ্গ সর্বশাস্ত্রে কয়
লব মাত্র সাধুসঙ্গে সর্বসিদ্ধি হয়।”

হিতোপদেশ

আমারা এই দুর্লভ নর দেহ লাভ করে যদি সাধুসঙ্গ না করি তাহলে আমাদের জীবন বৃথা। শাস্ত্র বলেন-

“সাধুসঙ্গে কৃষ্ণনাম এইমাত্র চাই।
সংসার জিনিতে আর কোন বস্তু নাই।
সাধুসঙ্গে কৃষ্ণভক্তে শ্রদ্ধা যদি হয়।
ভক্তির ফল প্রেম হয় সংসার যায় ক্ষয়।”

Post a Comment

0 Comments