গুরুসেবা (গল্পে উপদেশ)

গুরুসেবা (গল্পে উপদেশ)
"একজন গুরুদেব তাঁর অতি প্রিয়তম এক শিষ্যকে দুই টাকা দিয়ে বললেন, “বাজার থেকে চারটি রসগোল্লা কিনে আনো। দেখো যেন বাসী না হয়।” শিষ্যটি বাজারে গিয়ে এক দোকানদারকে দুই টাকা দিয়ে বলল, ‘আমাকে চারটি রসগোল্লা দিন।’ শিষ্যটি রসগোল্লাগুলি নিয়ে আশ্রমের দিকে রওনা দিল।
পথে আসতে আসতে চিন্তা করল, গুরুদেব তাকে বলে দিয়েছেন, “রসগোল্লা যেন বাসী না হয়। কিন্তু রসগোল্লা কেমন তাতো দেখা হলো না।” এইরূপ ভেবেই শিষ্যটি একটি রসগোল্লা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। খেয়ে দেখল “রসগোল্লাতো বেশ ভাল।” আবার পথ চলতে শুরু করল। কিছুদূর আসার পর চিন্তা করল, “তিনটি দেয় শত্রুকে।” এই ভেবেই আর একটি রসগোল্লা খেয়ে নিল। খেয়ে নিয়ে চিন্তা করল, “এখন আমার হাতে দুটো আছে। আমি গুরুদেবকে যা দিই তার অর্ধেক আমার জন্য রাখেন। তাহলে আমার ভাগেরটা আমি খেয়ে নিই।” এই ভেবে শিষ্যটি রসগোল্লাটি খেয়ে নিয়ে চিন্তা করল গুরুদেবের এই একটাই প্রাপ্য। এইরূপ মনে করে একটি রসগোল্লা গুরুদেবকে দিল।
গুরুদেব দেখেই বললেন, “এ-কি-রে! একটা রসগোল্লা কেন?” শিষ্যটি বলল, “গুরুদেব। আমি বিচার করে দেখলাম আপনি একটাই পাবেন।” গুরুদেব বললেন, “কি রকম?“ শিষ্য বলল, “আপনি বলেছিলেন পরীক্ষা করে দেখতে। পরীক্ষা করতে গিয়ে একটি খেলাম। তিনটি কোন প্রিয়জনের হাতে দিতে নেই। আপনি আমার আরাধ্য দেব, আপনাকে দিই কি করে? তাই আমি আর একটি খেয়ে নিলাম। তারপর চিন্তা করলাম, যা কিছু হয়, তার অর্ধেক আমায় দেন। তাই আমার ভাগটা আমি খেয়ে নিলাম।”
গুরুদেব বললেন-‘আরে, বোকা। তুই খেলি কি করে? শিষ্যটি হাতে রসগোল্লাটি নিয়ে “ঠিক এইভাবেই খেলাম।” বলেই নিজের মুখের মধ্যে ফেলে দিল। গুরুদেব শিষ্যের সেবা দেখেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন!
।। হিতোপদেশ ।।
কিছু শিষ্যবর্গ তারা মঠ-মন্দিরে গুরুদেবের কাছে আসে, গুরুদেবের বিত্ত অপহরণের জন্য। গুরুদেবের আসন পাওয়ার জন্য; লাভ, যশ, প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিষ্য ছাড়া সকলেই গুরুদেবের সেবার পরিবর্তে গুরুদেবের শোষণ ও নিজের ইন্দ্রিয় সেবায় ব্যস্ত হয়। প্রকৃত আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভ করতে হলে কায়, বাক্য, অর্থ ও বুদ্ধি দ্বারা সম্যকরূপে শ্রীগুরুদেবের শ্রীচরণে শরণাগত হয়ে সেবা করাই একমাত্র কাম্য।

Post a Comment

0 Comments