‘শয়ন’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য


‘শয়ন’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য


আসছে আগামী ০১/০৭/২০২০ ইং তারিখ রোজ বুধবার ‘শয়ন’ একাদশী ব্রত উপবাস। পারণ কোলকাতার সময় পর দিন বৃহষ্পতিবার ০৪.৫৫ মিঃ থেকে ০৯.২৫ মিনিট এর মধ্যে। আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

‘শয়ন’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
====================­=

মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন--'হে কৃষ্ণ! আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি এবং এর মহিমাই বা কি তা আমাকে কৃপা করে বলুন।'

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ব্রহ্মা এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে যা বলেছিলেন আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি। শ্রী ব্রহ্মা বললেন--হে নারদ! এই সংসারে একাদশীর মতো পবিত্র আর কোন ব্রত নেই। সকল পাপ বিনাশের জন্য এই বিষ্ণু ব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক। যে ব্যক্তি এই প্রকার পবিত্র পাপনাশক ও সকল অভিষ্ট প্রদাতা একাদশী ব্রত করে না তাকে নরকগামী হতে হয়। 

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী 'শয়ন' নামে বিখ্যাত। শ্রী ভগবান ঋষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের সম্বন্ধে এক পরম মঙ্গলময় পৌরাণিক কাহিনী আছে। আমি এখন তা বলছি। 

বহু বছর পূর্বে সূর্য বংশে মান্ধাতা নামে এক রাজর্ষি ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্য প্রতিজ্ঞ এবং প্রতাপশালী চক্রবর্তী রাজা। প্রজাদেরকে নিজের সন্তানের মতো প্রতিপালন করতেন। সেই রাজ্যে কোনরকম দুঃখ, রোগ-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, আতঙ্ক, খাদ্যাভাব অথবা কোন অন্যায় আচরণ ছিল না। এই ভাবে বহু দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু একসময় হঠাৎ দৈবদুর্বিপাকে ক্রমাগত তিন বছর সে রাজ্যে কোন বৃষ্টি হয়নি। দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে দানমন্ত্রের 'স্বাহা' 'স্বধা' ইত্যাদি শব্দও বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল।

তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগল--মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। শাস্ত্রে জলকে নার বলা হয় আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস। তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ। মেঘরূপে ভগবান বিষ্ণু সর্বত্র বারিবর্ষণ করেন। সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগন জীবন ধারন করেন। এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। অতএব হে মহারাজ আপনি এমন কোন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন হয়। 

রাজা মান্ধাতা বললেন--তোমারা ঠিকই বলেছ। অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব। অন্ন থেকেই প্রজার পালন। তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হয়। আবার রাজার দোষেও রাজ্য নষ্ট হয়। আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার নিজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব। 

তারপর রাজা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে সৈন্যসহ বনে গমন করলেন। সেখানে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমণ করলেন। এভাবে একদিন তিনি ব্রহ্মার পুত্র মহাতেজস্বী অঙ্গিরা ঋষির সাক্ষাৎ লাভ করলেন। তাকে দর্শন মাত্রই রাজা মহানন্দে ঋষির চরণবন্দনা করলেন। মুনিবর তাকে আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং কুশল বার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে ঋষির কাছে জানালেন। 

ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ থাকার পর বলতে লাগলেন--'হে রাজন! এটি সত্যযুগ। এই যুগে সকল লোক বেদপরায়ণ এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কেউ তপস্যা করে না। এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এক শুদ্র এই রাজ্যে তপস্যা করছে। তার এই অকার্যের জন্যই রাজ্যের এই দুর্দশা। তাই তাকে হত্যা করলেই সকল দোষ দূর হবে। রাজা বললেন--হে মুনিবর! তপস্যাকারী নিরপরাধ ব্যক্তিকে আমি কিভাবে বধ করব?  আমার পক্ষে সহজসাধ্য অন্য কোনো উপায় থাকলে আপনি তা দয়া করে আমাকে বলুন। 

তদুত্তরে মহর্ষি অঙ্গিরা বললেন--আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়নী নামে প্রসিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করুন। এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে। এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী ও সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী। হে রাজন! প্রজা ও পরিবারবর্গ সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন। 

মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন। আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সাথে এই একাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। ব্রত প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হল। কিছুকালের মধ্যেই অন্নাভাব দূর হল। ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজাগণ সুখী হল। 

এ কারণে সুখ ও মুক্তি প্রদানকারী এই উত্তম ব্রত পালন করা সকলেরই কর্তব্য। ভবিষ্যোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ-ব্রহ্মা সংবাদ রূপে একাদশীর এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments